আমাদের এ সসাগড়াকে শান্তিময় করে দাও প্রভু

বিশ্বে প্রায় চার হাজারের উপর ধর্ম আছে। এর মধ্যে বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-হিন্দু-মুসলিম ধর্ম প্রধান। মানুষ যার যার বিশ্বাস থেকে ধর্ম পালন করে। মানুষ কেন ধর্ম পালন করে? কিছু কি প্রাপ্তির আশায়? না-কি নিজের পাপের স্খলন কমানোর জন্য। না-কি মনের সান্তনা খুঁজে পাওয়ার জন্য। না-কি আত্ম-পরমাত্নাকে জানার জন্য। কে কি উদ্দেশ্যে ধর্ম পালন করে তা নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ কোন মানুষ অন্য মানুষের মনের খবর রাখে না। কেহ নিজের সুখের জন্য সৃষ্টিকতার কাছে প্রার্থনা করে, কেহ অন্যের সুখের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে, আবার কেহ বা বিশ্বের সকল প্রাণির জন্য প্রার্থনা করে, বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা করে। যেমন-সনাতনীরা প্রার্থনা করে-

সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখভাগভবেৎ।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ (উপনিষৎ)
ভাবার্থ:জগতের সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। অর্থাৎ সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ ভোগ না করেন। সকলের শান্তি লাভ করুন।

এখানে সকল প্রাণির জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। কোন সম্প্রদায়ের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে না। বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। সকল প্রাণির সুখের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। সকল প্রাণি দু:খ নিবারণের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। হাজার হাজার বছর আগেও আমাদের মুনি-ঋষিরা মানবিকতার জয় গান গেয়েছেন। বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হয় যে মানুষের সুখ, শান্তির জন্য এমন প্রার্থনা বিরল। এত বছর পরও এর প্রয়োজনীয়তা আমরা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করতে পারছি। বর্তমান যুগে আমরা কত নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছি, কত স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি। রাষ্ট্রে জন্য, সমাজের জন্য আমরা কোন প্রার্থনা করি না। শুধু নিজের জন্য প্রার্থনা করি, নিজের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি, সমাজের জন্য প্রার্থনা করি না, রাষ্ট্রের জন্য প্রার্থনা করি না। এত সুন্দর কথা, এত সুন্দর বাক্য, এত সুন্দর এর মর্মগাথা, এত সুন্দর এর মর্মবাণী, এত গভীরতা এর বিশ্লেষণ। আমরা হতবাক না হয়ে পারি না। সুন্দর এ শ্লোকটি আমরা কন্ঠে ধারণ করে চিৎকার করে কেন বলতে পারি না। মানুষ কি মানুষের জন্য প্রার্থনা করবে না, মানুষ কি মানুষের শান্তির জন্য প্রার্থনা করবে না, মানুষ কি মানুষের দু:খ নিবারণের জন্য প্রার্থনা করবে না। আমরা কি ভুলে গিয়েছি মানবতা, আমরা কি ভুলে গিয়েছি মানুষ মানুষের জন্য, আমরা কি ভুলে গেয়েছি সমাজের সবচেয়ে হতদরিদ্র মানুষটি কথা, আমরা কি ভুলে গিয়েছি পশু-পাখিদের সুখ-দু:খের কথা। তারও তো আমাদের সমাজের একটা অংশ। তাদের তো সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমরা যেমন সৃষ্টিকর্তার অংশ তারাও তো সৃষ্টিকর্তার অংশ।

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে সম্মান জানানো, শ্রদ্ধা জানানো আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধং দেহী ভাব আমাদের মধ্যে অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ক্রমশ: হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে উগ্রতা ও হিংস্রতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মানবিকতা ভুলে যাচ্ছি।

অতএব, এ সসাগড়াকে শান্তির নিবাস নির্মাণ করার জন্য, আমাদের উগ্রতা ও হিংস্রতা দূর করার জন্য, দু:খকে নিবারণ করার জন্য, সুখকে ধারণ করার জন্য এবং হৃদয়ে মানবিকতার আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত করে প্রতিদিন আমাদের সনাতনীদের ঘরে ঘরে সৃষ্টিকর্তার চরণে শির নত করে হাত জোর করে দীপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করি.“হে সৃষ্টিকর্তা! আমাদের প্রার্থনা তুমি পূর্ণ কর, পূর্ণ কর, পূর্ণ কর।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র