মহাভারত:কর্ণপর্ব-০০১-০০৫

০১. কর্ণকে সেনাপতিত্বে বরণ
বীর যোদ্ধা ক্রমে সবে পড়িল সমরে।
দৈবের বিপাকে যেন বিধাতা সংহারে।।
ভীষ্ম দ্রোণ হত হৈল চিন্তে দুর্য্যোধন।
কারে সেনাপতি করি, কে করিবে রণ।
এতেক ভাবিয়া রাজা আকুল পরাণ।
মন্ত্রিগণে আনি তবে করয়ে বিধান।।
শকুনি কহিল কর্ণ আছে মহামতি।
সেনাপতি পদে তারে বর শীঘ্রগতি।।
সমর করুক কর্ণ, বলে বীরগণ।
কি ছার পাণ্ডব, করে তার সহ রণ।
রণজয়ী হবে কর্ণ, ভাবি দুর্য্যোধন।
সৈনাপত্যে অভিষেক করে সেইক্ষণ।।
কর্ণে অভিষেক করি সানন্দ হৃদয়।
অবশ্য জিনিবে কর্ণ, ভাবিল নিশ্চয়।।
দুর্য্যোধন বলে, সখা কহি যে তোমারে।
ভীষ্ম দ্রোণ রণে পড়ে উপেক্ষি সমরে।।
ক্ষমা করি না যুঝিল, জানিনু এখন।
নৈলে কেন মোর সৈন্য হইবে নিধন।।
এখন করহ সখা মোত হিত কার্য্য।
যুধিষ্ঠিরে জিনি মোরে দেহ সব রাজ্য।।
হেনমতে বহুরূপ করিল বিনয়।
দুর্য্যোধন-বাক্য শুনি সূর্য্যপুত্র কয়।।
আমার প্রতাপ তুমি জান ভালমতে।
অবশ্য জিনিব আমি পাণ্ডবের নাথে।।
তোমার বিজয় যশ করি দিব আমি।
সসাগরা পৃথিবীতে তুমি হবে স্বামী।।
কর্ণের এতেক বাক্য শুনি দুর্যোধন।
আনন্দে রজনী বঞ্চে লয়ে বীরগণ।
পরদিন প্রভাতে কর্ণের আজ্ঞা ধরি।
অস্ত্র লয়ে বীর সব গেল অগ্রসরি।।
গজবাজী ধ্বজছত্র শত শত যায়।
সাজিল কৌরবগণ সমুদ্রের প্রায়।।
নানা অস্ত্রে সাজি কর্ণ চড়ে গিয়া রথে।
চলিল সংগ্রাম ভূমি ধনুঃশর হাতে।।
কটক চলিল বহু, রথী হৈল কর্ণ।
বাসুকী জিনিতে যেন চলিল সুপর্ণ।।
দ্রোণপুত্র চলিল সে মহাধনুর্দ্ধর।
অস্ত্র ধরি অশ্বথামা সংগ্রামে প্রখর।।
অবশিষ্ট রাজার যতেক অনুচর।
চলিল সংগ্রাম ভূমি মূর্ত্তি ভয়ঙ্কর।।
মধ্যে রাজা দুর্য্যোধন সংগ্রামে প্রচণ্ড।
কৃতবর্ম্মা রহিলেন বামপাশে দণ্ড।।
নারায়ণী সেনা আর কৃপ মহাশয়।
রহিল দক্ষিণদিকে সংগ্রামে নির্ভয়।।
ত্রিগর্ত্ত সৌবল আদি যত মহাবীর।
বামভাগে রহিলেন নির্ভয় শরীর।।
সাজিল কৌরবদল দেখি যুধিষ্ঠির।
অর্জ্জুনে কহেন তবে ধর্ম্মমতি ধীর।।
দেবাসুরে নাহি সহে যাহার প্রতাপ।
সেই কর্ণ আইল করিয়া বীরদাপ।।
এই যে আইসে কর্ণ করিতে সংগ্রাম।
দেবাসুর ভয় করে শুনি যার নাম।।
কণেরে জিনিয়া ভাই ঝাটি যশ লও।
ত্রিভুবন মধ্যে যদি মহাবীর হও।।
যুধিষ্ঠির বাক্য শুনি ধনঞ্জয় বীর।
অর্দ্ধচন্দ্র নামে ব্যূহ করিলেন স্থির।।
বামশৃঙ্গে ভীমসেন সমরে দুর্জ্জয়।
দক্ষিণ শৃঙ্গেতে ধৃষ্টদ্যুন্ন মহাশয়।।
মধ্যবর্ত্তী ধনঞ্জয় বীর ধনুর্দ্ধর।
পৃষ্ঠে রাজা যুধিষ্ঠির দুই সহোদর।।
যুদ্ধসাজে রহিলেন দুই মহাবীর ।
অর্জ্জুনের কাছে রহে নির্ভয় শরীর।।
ব্যূহমধ্যে বীর সব করে সিংহনাদ।
দুই দলে বাদ্য বাজে নাহি অবসাদ।।
কর্ণের বিক্রম দেখি কুরু করে গর্ব্ব।
দ্রোণের বীরত্ব যত করিলেক খর্ব্ব।।
দুই দলে যুদ্ধ হয় অতি অসম্ভব।
দুই দলে হানাহানি উঠে কলরব।।
রথে রথে গজে গজে পদাতি পদাতি।
আসোয়ারে আসোয়ারে অব্যাহত গতি।।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণ আর ক্ষুর তীক্ষ্ম শর।
অক্ষয় সন্ধান করি এড়িছে তোমর।।
ঝাঁকে ঝাঁকে অস্ত্র পড়ে ঘেরিয়া গগন।
ধূলায় ধূসর, নাহি দেখি দিনমণি।।
ক্রোধ করি ভীমসেন ধরে ধনুঃশর।
লম্ফ দিয়া উঠিলেন মাতঙ্গ উপর।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সাত্যকি শিখণ্ডী চেকিতান।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র বিক্রমে প্রধান।।
ভীমসেনে বেড়ি ডাকে সিংহনাদ করি।
রোষে বীর যায় যেন হস্তীকে কেশরী।।
বাহিনী মথিয়া আসে বীর বৃকোদর।
দেখিয়া রুষিল ক্ষেমমূর্ত্তি নৃপবর।।
কুলুত দেশের রাজা ক্ষেমমূর্ত্তি নাম।
বিক্রমে সিংহের প্রায় রণে অবিরাম।।
মহাগজে আরোহিয়া আসে ক্রোধমনে।
প্রথমে তোমর বাণ মারে ভীমসেনে।।
শর মারি তোমর, করিল খণ্ড খণ্ড।
ছয় বাণে বিন্ধে বীর সমরে প্রচণ্ড।।
ক্রোধ করি ভীমসেন বরিষয়ে শর।
বাণ মারে ক্ষেমমূর্ত্তি হস্তীর উপর।।
শরাঘাতে ভঙ্গ দিল গজেন্দ্র বিশাল।
রাখিতে নারিল ক্ষেমমূর্ত্তি মহীপাল।।
কতক্ষণে ক্ষেমমূর্ত্তি সুযোগ পাইল।
ভীমেরে বিন্ধিতে বীর সমরে ধাইল।।
খরবাণে ভীমের কাটিল শরাসন।
আর ধনু নিল হাতে ভীম বিচক্ষণ।।
নারাচ মারিয়া কৈল হস্তীর নিধন।
লাফ দিয়া এড়াইল বীর বিচক্ষণ।।
ধন্য ধন্য করি সবে বাখানে তখন।
ধন্য বীর ক্ষেমমূর্ত্তি বলে কুরুগণ।।
গদা হাতে ভীমসেন পেয়ে বড় লাজ।
ক্ষেমমূর্ত্তি রাজায় মারিল গজরাজ।।
লাফ দিয়া ক্ষেমমূর্ত্তি হস্তী এড়াইল।
গদা মারি ভীমসেন ভূতলে পাড়িল।।
সিংহের প্রতাপে যেন পড়িল মাতঙ্গ।
ক্ষেমমূর্ত্তি পড়িল বাহিণী দিল ভঙ্গ।।
তবে কর্ণ মহাবীর পাণ্ডবে ধাইল।
অতি ক্রোধে পাণ্ডব সৈন্যেতে প্রবেশিল।।
বাছিয়া বাছিয়া বাণ বরিষয়ে কর্ণ।
সর্পের সভায় যেন পরিল সুপর্ণ ।।
ভঙ্গ দিল ‍বাহিনী পড়িল সব গজ।
ছয়বাণে কাটি পাড়ে যত রথধ্বজ।।
নিরন্তর কর্ণবীর বরিষয়ে বাণ।
লক্ষ লক্ষ বীর পড়ে ভীম বিধ্যমান।।
অশ্বথামা বীর সনে যুঝে বৃকোদর।
শ্রুতকর্ম্মা সনে চিত্রসেন ধনুর্দ্ধর।।
বিন্দ অনুবিন্দ সহ সাত্যকির রণ।
প্রতিবিন্ধ্য সহ যুঝে চিত্র যশোধন।।
দুর্য্যোধন সহিত যুঝেন যুধিষ্ঠির।
নারায়ণী সেনার সহিত পার্থ বীর।।
কৃপ আর ধৃষ্টদ্যুন্নে সমর দুর্জ্জয়।
কৃতবর্ম্মা সহিত শিখণ্ডী মহাশয়।।
মদ্রপতি প্রতি শ্রুতকীর্ত্তির বিক্রম।
দুঃশাসন সহ সহদেব যম সম।।
বিন্দ অনুবিন্দ সহ হইল সংগ্রাম।
মহাবীর সাত্যকি রণেতে অনুপম।।
দুই বীর হানাহানি ছাড়ে হুহুঙ্কার।
বীরে বীরে মহাযুদ্ধ বলে মার মার।।
বিন্দ অনুবিন্দ বীর বাণ বরিষয়।
শত শত বাণ পড়ে নাহি করে ভয়।।
কাটিলেন সাত্যকির দিব্য শরাশন।
আর ধনু হাতে নিল বীর বিচক্ষণ।।
ক্ষুরপা বাণেতে তবে সাত্যকি প্রবীর।
তৃণবৎ করি কাটি পাড়ে তার শির।।
অনুবিন্দ পড়িল দেখিল সহোদর।
মহাকোপে বিন্দ বীর বরিষয়ে শর।।
সাত্যকির শরীরে রুধির পড়ে ধারে।
দুইজনে মহাযুদ্ধ সংগ্রাম ভিতরে।।
পরস্পর সারথি কাটিল অশ্বরথ।
দোঁহে মহা বীর্য্যবান বিখ্যাত জগত।।
দোঁহে হৈল বিবর্ণ করিয়া মহারণ।
পরস্পর মহাযুদ্ধ করে দুইজন।।
বাণে হানাহানি দোঁহে করে মহাবীর।
বলহীন হৈল দোঁহে নিস্তেজ শরীর।।
দুইজনে মিশামিশি দৃঢ় বাজে রণ।
বাণেতে জর্জ্জর তনু হৈল অচেতন।।
শ্রুতবর্ম্মা চিত্রসেনে হৈল মহারণ।
দুই জনে মহাবীর যুদ্ধে বিচক্ষণ।।
ধ্বজ কাটা গেল তবে পরস্পর শরে।
দুই বীরে মিশামিশি সংগ্রাম ভিতরে।।
তবে শ্রুতবর্ম্মা বীর মহা ধনুর্দ্ধর।
মাথা কাটি বিচিত্রের পাড়ে ভূমিপর।।
পড়িল বিচিত্রসেন কৌরবের ত্রাস।
প্রতিবিন্ধ্য মহাবীর পাইল প্রকাশ।।
পড়িল বিচিত্রসেন চিত্রসেন রোষে।
তাহার বিক্রম দেখি প্রতিবিন্ধ্য হাসে।।
রথের কাটিল ধ্বজ বিন্ধিল সারথি।
রণেতে ফাঁপর হৈল চিত্রসেন রথী।।
তাহার বিক্রম দেখি প্রতিবিন্ধ্য হাসে।
রথের কাটিল ধ্বজ বিন্ধিল সারথি।।
রণেতে ফাঁপর হৈল চিত্রসেন রথী।
তবে শক্তি ফেলিয়া মারিল তার মাথে।
প্রতিবিন্ধ্য মহাবীর কটে অর্দ্ধপথে।।
মহাগদা লয়ে বীর মারে আরবার।
রথের সারথি তবে করিল সংহার।।
পুনরপি রথে চড়ি মহাধনুর্দ্ধার।
বিংশতি তোমর মারি ভেদিল অন্তর।।
দুই বাহু প্রসারিয়া পড়িল মহাবীর।
প্রতিবিন্ধ্য মহাবীর সমরে সুধীর।।
শরে শরে নিবারিয়া মারে কুরুবল।
ক্রোধেতে আইসে অশ্বথামা মহাবল।।
সেইক্ষণে ভীমসেন হাতে নিল ধনু।
শরবৃষ্টি করি বিন্ধে দ্রোণপুত্র তনু।।
বলি সঙ্গে ইন্দ্র যেন করিল সংগ্রাম।
দুই বীর মহামত্ত যুঝে অবিশ্রাম।।
দিব্য অস্ত্র সন্ধান করয়ে দুই বীর।
নানা অস্ত্র বিন্ধে দোঁহে নির্ভয় শরীর।।
সর্ব্বদিকে বিজলি চমকে হেন দেখি।
তারা যেন গগনেতে ছুটয়ে নিরখি।।
বাণে বাণে আবরিল নাহিক সঞ্চার।
দুই বীরে মহাযুদ্ধ হয় অন্ধকার।।
মহারণ দুই বীর করে মহাবলে।
প্রলয়কালেতে যেন সমুদ্র উথলে।।
সাধু সাধু প্রশংসা করয়ে মহাজন।
আকাশ বিমানে দেখে যত দেবগণ।।
দুই বীর বিকল হইল অচেতন।
কেহ কারে নাহি পারে সম দুই জন।।
বাসুদেব সারথি অর্জ্জুন হাতে ধনু।
নবজলধর যেন ধরিলেক তনু।।
বরিষাকালেতে যেন বরিষে নির্ঝর।
শরবৃষ্টি করেন অর্জ্জুন ধনুর্দ্ধর।।
নারায়ণী সেনারে মারেন পার্থ রোসে।
দিবাকর যেমন খদ্যোৎগণে নাশে।।
লক্ষ লক্ষ বীরের কাটিল পার্থ মাথা।
কাটা গেল ধনুঃশর কত দণ্ড ছাতা।।
বাণেতে কাটিয়া বাণ করিলেন রাশি।
সারি সারি মাথা পড়ে গগন পরশি।।
গজবাজী পড়ে সব রথী সারি সারি।
পড়িল যতেক সৈন্য লিখিতে না পারি।।
ক্রুদ্ধ হয়ে এল অশ্বথামা মহাবীর।
দিব্য অস্ত্র অরোপিয়া সৈন্য কৈল স্থির।।
তবে দুই মহাবীর কৈল মহারণ।
শরে অন্ধকারাচ্ছন্ন নর নারায়ণ।।
অতি ক্রোধে অর্জ্জুন করেতে লয়ে শর।
করিলেন দ্রোণী তনু বাণেতে জর্জ্জর।।
মগধাধিপতি তার দণ্ডধর নাম।
হস্তী অশ্ব লইয়া আইল অনুপম।।
মহাবলি দণ্ডধর করিলেন রণ।
সেইক্ষণ অর্জ্জুন কাটিল হস্তীগণ।।
বজ্রাঘাত পড়ে যেন পর্ব্বত উপর।
অর্জ্জুনের বাণে গজ পড়িল বিস্তর।।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণে তারে করেন সংহার।
হস্তী হৈতে ভূমিতে পড়িল দণ্ডধর।।
অনিবার মহাযুদ্ধ করয়ে অর্জ্জুন।
যুগান্ত প্রলয় যেন সংগ্রামে নিপুণ।।
পাণ্ডবের সেনাপতি আর বীরবর।
যুঝিতে লাগিল সবে নির্ভয় অন্তর।।
অশ্বথামা বীর করে সৈন্যের সংহার।
ক্রোধ করি আইলেন অর্জ্জুন দুর্ব্বার।।
দুই দলে মহাযুদ্ধ বাণ বরিষণ।
কর্ণ সহ কুরুবল আইল তখন।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
০২. কর্ণের সহিত যুদ্ধে নকুলের পরাভব
দুঃশাসনে জিনি তবে নকুল প্রবীর।
কর্ণের নিকটে গেল নির্ভয় শরীর।।
তীক্ষ্ণ বাণ এড়ি বীর কর্ণের উপরি।
সদর্পে নকুল কর্ণে বলে আগুসরি।।
যাহা ছিল কর্ণ তুই করিলি প্রকাশ।
তোমা হতে ক্ষত্রকুল হইল বিনাশ।।
আজি রণমধ্যে তোরে করিব সংহার।
কৃতকৃত্য হইবেন ধর্ম্ম-অবতার।।
হাসিয়া বলিল কর্ণ, তুই অল্পবুদ্ধি।
কিছু না জানিস তুই, বচনের শুদ্ধি।।
কি কর্ম্ম করিয়া প্রশংসহ আপনাকে।
আজি ছন্ন হৈলে দেখি কর্ম্মের বিপাকে।।
নকুলে এতেক বলি রুষে কর্ণবীর।
পঞ্চশত শরে বিন্ধে তাহার শরীর।।
শর হানি কর্ণে তার কাটিলেক ধনু।
আর শত বাণে তার বিন্ধিলেক তনু।।
আর ধনু লয়ে তবে নকুল সুমতি।
ত্রিশ বাণ কর্ণ বীরে বিন্ধে শীঘ্রগতি।।
তিন বাণ সারথিরে মারিল প্রচণ্ড।
ক্ষুরবাণ মারি তারে কৈল খণ্ড খণ্ড।।
ঊণত্রিশ বাণ তারে মারিলেক কর্ণ।
সর্ব্বগাত্রে রক্ত পড়ে, দেখিতে বিবর্ণ।।
ত্বরিত হইয়া বাণ মারিল নকুল।
কর্ণের ধনুক কাটি করিল আকুল।।
আর ধনু নিল কর্ণ সংগ্রাম ভিতরে।
সে ধনুও কাটিল নকুল তীক্ষ্ণশরে।।
আর ধনু লয়ে কর্ণ যুড়িলেক শর।
শরে সমাচ্ছন্ন নকুলের কলেবর।।
শরে শর নিবারয়ে নকুল প্রচণ্ড।
মহাবীর কর্ণ-শর করে খণ্ড খণ্ড।।
কর্ণবাণে নভোমার্গ হৈল অন্ধকার।
সূর্য্যের কুমার বীর সূর্য্য-অবতার।।
কাটিল হাতের ধনু, রথের সারথি।
চিন্তিত হইল তবে নকুল সুমতি।।
চারি ঘোড়া কাটে বীর সমরে প্রচণ্ড।
তৃণবৎ করি রথ করে খণ্ড খণ্ড।।
ধ্বজ পতাকাদি কাটে, কাটে অলঙ্কার।
শর হানি কর্ণবীর করে মহামার।।
নকুল পরিঘ লয়ে ধাইল সত্বর।
পরিঘ কাটিল শরে কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
ভয় পেয়ে মাদ্রীপুত্র চাহে চারিভিত।
পরিহাস করে কর্ণ সংগ্রামে পণ্ডিত।।
গলায় ধনুক দিয়া বান্ধিয়া রাখিল।
অন্তরে নকুল মহা সঙ্কট গণিল।।
হাসিয়া বলয়ে কর্ণ, শুন হীনরথী।
যুদ্ধ না করিহ আর গুরুর সংহতি।।
আপনার সমকক্ষ সহ কর রণ।
বলবান সহ নাহি যুঝ কদাচন।।
কভু না করিহ রণ, চলি যাহ ঘরে।
কহ গিয়া এবে তব যত সহোদরে।।
এত বলি কর্ণবীর নকুলে ছাড়িল।
কুন্তির বচন মানি তারে না মারিল।।
লজ্জিত নকুল বীর কর্ণের বচনে।
চলিল আপন দলে বিরস বদনে।।
পাঞ্চালে দেখিয়া তবে সূর্য্যের নন্দন।
হাতে যমদণ্ড ধায় করিয়া গর্জ্জন।।
পাণ্ডবের সেনাপতি পাঞ্চাল-নৃপতি।
কৌরবের সেনাপতি কর্ণ যে সুমতি।।
দুই দলে মহারণ করে দুই জন।
পশিল সমর মাঝে পাঞ্চাল রাজন।।
তুমুল বাধিল রণ বীর দুই জনে।
সকল পাঞ্চালগণ ধায় এক সনে।।
নিবারিল শরজাল কর্ণ বীরবর।
সন্ধান করিল বাণ নির্ভয় অন্তর।।
একে এক করে কর্ণ বাণের প্রহার।
রথধ্বজ পদাতিক করিল সংহার।।
ভঙ্গ দিয়া সব দল চারিভিতে ধায়।
মৃগেন্দ্র দেখিয়া যেন হরিণী পলায়।।
কেহ কারে নাহি চায়, পলায় সত্বর।
রাখিবারে নাহি পারে পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
ক্রোধমুখে ধনঞ্জয় কর্ণ পানে চায়।
ক্ষুধার্ত্ত শার্দ্দূল যেন গজরাজে ধায়।।
কর্ণ বাণ বরিষয়ে, নিবারে অর্জ্জুন।
শিশির পাইয়া যেন শোষেন তপন।।
অর্জ্জুন মারেন বাণ, উঠয়ে আকাশ।
অন্ধকার হৈল, সূর্য্য নাহিক প্রকাশ।।
কোথাও মুষল বৃষ্টি পরিঘ বিশাল।
কোথায় পড়িছে শেল, কোথা ভিন্দিপাল।।
অর্জ্জুনের বাণ পড়ে যমের সোসর।
ভয়ে চক্ষু মুদি রহে যত কুরুবর।।
অশ্ব গজ রথ রথী পরে সারি সারি।
কুরুদল ভঙ্গ দিল সহিবারে নারি।।
যুগান্ত কালেতে যেন প্রলয় তরঙ্গ।
ত্রাস পেয়ে কুরুদল রণে দিল ভঙ্গ।।
দিন অবশেষে হৈল, রজনী প্রবেশে।
সকল কৌরব গেল আপনার বাসে।।
বিজয় দুন্দুভি বাজে পাণ্ডবের দলে।
শিবিরে চলিল রাজগণ কুতূহলে।।
মহাভারতের কথা সর্ব্বধর্ম্ম সার।
কাশী কহে, শুন যদি হবে ভবপার।।
০৩. কর্ণ-দুর্য্যোধন সংবাদ
শিবিরেতে গেল দুর্য্যোধন মহারাজ।
অর্জ্জুনের সহ রণে পেয়ে বড় লাজ।।
কাহার বাহন নাহি, কার নাহি ধনু।
অর্জ্জুনের বাণে সবে ছিন্নভিন্ন তনু।।
মুখে গদ গদ বাণী, বদন বিবর্ণ।
অপমানে বসিলেন ভূমিতলে কর্ণ।।
দশন ভাঙ্গিয়া যেন বারণ পলাল।
মহা ভূজঙ্গমে যেন বারণ পিষিল।।
সে মত কৌরবগণ মহালজ্জা পায়।
মনোদুঃখ দুর্য্যোধন শিবিরেতে যায়।।
নিঃশ্বাস ছাড়িয়া রাজা দুর্য্যোধন বলে।
কি করিব, কি হইবে, বলহ সকলে।।
দুর্য্যোধন বলে, শুন রাধার তনয়।
তোমা হৈতে হৈল মম কুরুবল ক্ষয়।।
প্রতিজ্ঞা করিলে তুমি জিনিবে পাণ্ডবে।
সেনাপতি করিলাম বুঝি অনুভবে।।
তোমার বচনে আমি যুদ্ধ কৈনু পণ।
তুমি জয় করি দিবে পাণ্ডুর নন্দন।।
পুনঃ পুনঃ কহিলে যে করি অহঙ্কার।
আমার সাক্ষাতে যে পাণ্ডব কিবা ছার।।
তোমার সামর্থ্য যত, সব ব্যর্থ হৈল।
তব আগে পার্থ মোর সৈন্য নিপাতিল।।
যদ্যপি কহিতে আগে জিনিতে নারিবে।
শরণ লৈতাম আমি পাণ্ডবের তরে।।
অনেক নিন্দিয়া তবে রাজা দুর্য্যোধন।
ভূমিতলে বসিলেন বিরস-বদন।।
দেখিয়া শুনিয়া বীর কর্ণ মহাবল।
ক্রোধেতে জ্বলয়ে যেন জ্বলন্ত অনল।।
হাতে হাতে কচালয়ে, ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস।
অহঙ্কারে কর্ণ বীর চাহিছে আকাশ।।
দুর্য্যোধন-মুখ চাহি বলে বীর কর্ণ।
দেবাসুর মধ্যে যেন রুষিল সুপর্ণ।।
যোদ্ধা মধ্যে বুদ্ধিমন্ত অর্জ্জুন-বিশেষ।
সতত শ্রীকৃষ্ণ তারে দেন উপদেশ।।
করযোড়ে বলে কর্ণ, শুন মহাশয়।
কালি তার গর্ব্ব আমি ঘুচাব নিশ্চয়।।
কর্ণের বচনে হৃষ্ট হৈল দুর্য্যোধন।
উল্লাসিত হইলেক কৌরবের গণ।।
মহাবীর কর্ণ যুদ্ধে অপমান গণি।
ফুকারি ফুকারি চিত্তে কাটায় রজনী।।
প্রভাতে চলিয়া গেল সভা বিদ্যমানে।
মূত্তিমন্ত সর্প যেন, আপনা বাখানে।।
মোর সম বীর নাহি ভুবন ভিতরে।
কোন্ গুণে গুণী পার্থ, কিবা বল ধরে।।
আজি তোরে আমি পাঠাইব যমঘরে।
কিংবা সে মারুক মোরে সংগ্রাম ভিতরে।।
গাণ্ডীব নামেতে ধনু আছে তার করে।
বিজয় নামেতে ধনু রাম দিল মোরে।।
বিশ্বকর্ম্মা নির্ম্মিত বিজয় শরাসন।
ইন্দ্র যারে ধরি কৈল অসুর নিধন।।
বাসবেরে আরাধিয়ে পায় ভৃগুরাম।
রাম মোরে অর্পিলেন ধনু অনুপাম।।
দিব্যদিব্য অস্ত্র দিল রাম মহাবীর।
অক্ষয় কবচ যাহে অভেদ্য শরীর।।
অর্জ্জুনেরে মারি বাড়াইব তব যশ।
সাগরান্ত বসুমতী করি দিব বশ।।
পার্থের সারথি নিজে সেই নারায়ণ।
আমা হৈতে অধিক সে এইত কারণ।।
কৃষ্ণের সমান গুণ, সেই সে বিশাল।
আমার সারথি হোক শল্য মহীপাল।।
তবে সে নিমিষে আমি অর্জ্জুনে জিনিব।
অপর পাণ্ডবগণে বান্ধিয়া আনিব।।
মহা মহা রথী আর যত মহারাজে।
মুহূর্ত্তেকে জিনি দিব নিজ ভুজতেজে।।
শল্যেরে সারথি যদি করি দেহ মোরে।
নিষ্পাণ্ডব করি রাজ্য দিব ত তোমারে।।
ইহা শুনি দুর্য্যোধন চলে শীঘ্রগতি।
যথা বসিয়াছে রাজা মদ্র-অধিপতি।।
রাজারে দেখিয়া শল্য জিজ্ঞাসে কারণ।
কহ মহারাজ হেথা কেন আগমন।।
রাজা বলে, নিকটেতে আসিনু তোমার।
ভয়ার্ত্ত জনের তুমি হবে কর্ণধার।।
অবধান কর রাজা, করি নিবেদন।
পার্থ হতে বলাধিক রাধার নন্দন।।
পার্থের সারথি যেই নিজে নারায়ণ।
মহাবুদ্ধি সেই রথে মন্ত্রী বিচক্ষণ।।
যেন কৃষ্ণ তেন তুমি মহা মতিমান।
মহাতেজোবন্ত তুমি, ইথে নাহি আন।।
কর্ণ-রথে মন্ত্রী তুমি হও মহাশয়।
তবে পরাজিবে কর্ণ, কৃষ্ণ-ধনঞ্জয়।।
শল্য রাজা বলে, আমি বিদিত ভুবন।
কি ছার মনুষ্য কর্ণ, কহত রাজন।।
রথেতে সারথি আমি হইব তাহার।
হেন অপমান আর না কর আমার।।
পৃথিবী সহিতে নারে মোর অস্ত্রবল।
প্রতাপে শুষিতে পারি সমুদ্রের জল।।
মোর অপমান নাহি কর দুর্য্যোধন।
আজ্ঞা কর মহারাজ যাই নিকেতন।।
ইহা বলি শল্যরাজ উঠিয়া চলিল।
স্তুতি করি দুর্য্যোধন কহিতে লাগিল।।
আপনা হইতে যার হয় শ্রেষ্ঠ গুণ।
তাহারে সারথি করি সংগ্রামে নিপুণ।।
ত্রিপুর দহিতে যবে যান শূলপাণি।
ব্রহ্মারে সারথি কৈল পরাক্রম জানি।।
জানি তুমি মহাবীর পুরুষ-প্রধান।
মোর দলে বীর নাই তোমার সমান।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ কর্ণ শকুনি সৌবল।
অশ্বত্থামা ভদগত্ত তুমি মহাবল।।
এই সব বীর লয়ে মোর অহঙ্কার।
কৃপায় সারথ্য কর্ম্মে কর অঙ্গীকার।।
তুমি আর কর্ণ বীর দুই অবশেষ।
অর্জ্জুনে মারিতে যত্ন করহ বিশেষ।।
০৪. শল্যের সারথ্য স্বীকার ও কর্ণের আত্মশ্লাঘা
দুর্য্যোধন নৃপতির শুনিয়া বচন।
সারথি হইতে শল্য করিল মনন।।
নানা অস্ত্র পরিপূর্ণ, পতাকা নিচয়।
চড়িল কর্ণের রথে শল্য মহাশয়।।
হাতেতে পাঁচনি লয়ে চলিল সারথি।
যুদ্ধ করিবারে যায় কর্ণ মহামতি।।
শল্যের অগ্রেতে কর্ণ আপনা বাখানে।
চিত্ররথ আসে যদি বিনাশিব বাণে।।
যদি যম আদি সঙ্গে আসে দেবরাজ।
জিনিব সবারে আমি সংগ্রামের মাঝ।।
সবারে মারিয়া আজি মারিব অর্জ্জুন।
দুই দলে দেখিবেক আজি মোর গুণ।।
শুনিয়া কর্ণের বাণী বলে শল্যপতি।
বিষম বীরত্ব তব, অহঙ্কার অতি।।
শৌর্য্যে বীর্য্যে কভু তুমি নহ পার্থ সম।
ধনঞ্জয় মহাবীর পুরুষ উত্তম।।
যদুসেনা জিনি আনে সুভদ্রারে হরি।
শঙ্করে তুষিল হিমালয়ে যুদ্ধ করি।।
দহিল খাণ্ডববন জিনি দেবগণে।
গন্ধর্ব্বে জিনিয়া রাখে রাজা দুর্য্যোধনে।।
আপনি হারিলে তুমি উত্তর গোগৃহে।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ আদি প্রতাপ না সহে।।
প্রাণপণে পার্থ সহ যদি কর রণ।
জানি যে নিশ্চয় আজি তোমার মরণ।।
শল্যেরে চাহিল অনাদরে কর্ণ বীর।
জয় জয় করি চলে রণকর্ম্মে ধীর।।
রথ চালাইল বীর পবনের বেগে।
প্রবেশিল কর্ণবীর সংগ্রামেরে আগে।।
পাণ্ডবের রথ আদি পূর্ব্বভাগে দেখে।
অহঙ্কারে কর্ণবীর সংগ্রামের আগে।।
পাণ্ডবের রথ আদি পূর্ব্বভাগে দেখে।
অহঙ্কারে কর্ণবীর বলয়ে কৌতুকে।।
যে মোরে দেখাবে আজি ধনঞ্জয় বীর।
সুবর্ণে ভূষিত তার করিব শরীর।।
যে মোরে দেখাবে আজি পার্থ ধনুর্দ্ধর।
এক শত গ্রাম দিব পরম সুন্দর।।
যে মোরে দেখাবে পার্থে সংগ্রাম ভিতর।
সুবর্ণে মণ্ডিত হস্তী দিব মনোহর।।
পঞ্চ শত অশ্ব দিব মণিতে মণ্ডিত।
চারি শত গবী দিব বৎসের সহিত।।
ছয় শত রথ দিব রত্নে সুশোভিত।
এক শত দাসী দিব রত্নেতে ভূষিত।।
যে আমারে দেখাইবে অর্জ্জুন দুর্জ্জয়।
যাহা চাবে তাহা দিব, বলিনু নিশ্চয়।।
অর্জ্জুন সহিত কৃষ্ণে করিব সংহার।
যত ধন পাই আমি, সকলি তাহার।।
ইহা বলি কর্ণবীর ছাড়ে সিংহনাদ।
সকল কৌরব করে জয় জয় নাদ।।
তবলা দুন্দুভি বাজে মৃদঙ্গ বহুল।
সৈন্য করে সিংহনাদ শব্দেতে তুমুল।।
পুনঃ বলে শল্যরাজ, শুন কর্ণবীর।
দেখিবে অর্জ্জুন বীরে, না হও অস্থির।।
কি কারণে দিবে ধন অশ্ব হস্তীগণ।
কৃষ্ণ সহ ধনঞ্জয় দেখিবে এক্ষণ।।
কৃষ্ণার্জ্জুনে কহ তুমি করিবে সংহার।
হেন ছার বাক্য কহ করি অহঙ্কার।।
বন্ধুগণ তোমারে না করে নিবারণ।
কাল পরিপূর্ণ হৈল, তোমার মরণ।।
গলায় বান্ধিয়া শিলা সমুদ্র তরিতে।
একেশ্বর ইচ্ছা তুমি করিতেছ চিতে।।
একত্র হইয়া যুঝে সকল কৌরবে।
অর্জ্জুনের ঠাঁই তবু পরাভব পাবে।।
দুর্য্যোধন আদি করি বলি সবাকারে।
শুন কর্ণ যদি বাঞ্ছা আছে বাঁচিবারে।।
সবান্ধবে গিয়া লহ ধর্ম্মের শরণ।
তবে সে অর্জ্জুন-হাতে এড়াবে মরণ।।
শল্যের বচনে কহে কর্ণবীর রোষে।
না বুঝিয়া জ্ঞানহীন মহাজনে দোষে।।
অর্জ্জুনে প্রশংসা করে, মোরে নাহি বলে।
আজি অর্জ্জুনেরে আমি মারিব সমূলে।।
যদি বজ্রহস্তে আসে দেবের ঈশ্বর।
না গণিবে তাহারেও কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
শল্য বলে কর্ণবীর না করিহ দাপ।
আপনি জানহ মনে অর্জ্জুন-প্রতাপ।।
দুই জনে বিসম্বাদ হইল বিস্তর।
ক্রুদ্ধ হয়ে কর্ণ যায় সংগ্রাম ভিতর।।
সৈন্যগণ সঙ্গে গেল রাজা দুর্য্যোধন।
শকুনি সৌবল কর্ণ দ্রোণের নন্দন।।
দুঃশাসন কৃতবর্ম্মা উলূক নৃপতি।
সাজিয়া আসিল রণে সব নরপতি।।
ব্যূহ করি কর্ণবীর হৈল আগুয়ান।
দুই পার্শ্বে দুই বীর কর্ণের সমান।।
অর্জ্জুনে কহিল তবে রাজা যুধিষ্ঠির।
সংগ্রামে সাজিয়া আসে কর্ণ মহাবীর।।
প্রতিব্যূহ করি শীঘ্র কর নিবারণ।
সৈন্য যেন না লঙ্ঘয়ে রাধার নন্দন।।
রাজার আদেশ পেয়ে বীর ধনঞ্জয়।
প্রতিব্যূহ করিলেন বিপক্ষ বিজয়।।
অগ্নিদত্ত রথে বীর আরোহণ করি।
কৃষ্ণ সনে সাজিলেন নানা অস্ত্র ধরি।।
দুন্দুভি মৃদঙ্গ শঙ্খ বাজয়ে মাদল।
সিংহনাদ করি সৈন্য করে কোলাহল।।
নারায়ণী সেনা আর সংশপ্তকগণ।
চতুর্দ্দিকে বেড়ি অস্ত্র করে বরিষণ।।
মহাবলবান্ সেই সংশপ্তকগণ।
একেশ্বর যুঝে বীর ইন্দ্রের নন্দন।।
অর্জ্জুনে দেখিয়া কর্ণ মহাহৃষ্ট হৈল।
সৈন্যে সৈন্যে রথ সহ বহুযুদ্ধ কৈল।।
সৈন্য-সাগরের মধ্যে গেল ধনঞ্জয়।
সেই যুদ্ধে অর্জ্জুনের পরাভব হয়।।
মহাভারতের কথা সুধার সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।
০৫. কর্ণের সহিত যুদ্ধে
যুধিষ্ঠিরের পরাভব
কর্ণের বচন শুনি শল্য বলে দাপে।
বিস্তর কহিলে তুমি অতুল প্রতাপে।।
এই দেখ রথে আইল সর্ব্ব সৈন্যগণ।
কাহার সামর্থ্য করে ‍পার্থে নিবারণ।।
হের দেখ ভীমসেন পবনকুমার।
সহদেব বীর দেখ ভুবনের সার।।
মহারাজা যুধিষ্ঠির দেখ বিদ্যমান।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সেনাপতি অগ্নির সমান।।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র কি দিব তুলনা।
ইহাদের অগ্রসর হবে কোন জনা।।
শিখণ্ডী সাত্যকি দেখ রাজা আগুয়ান।
চলহ সমরে আজি হয়ে সাবধান।।
সিদ্ধ হৈল মনোরথ দেখ ধনঞ্জয়।
সংগ্রামে করহ আজি অর্জ্জুনের ক্ষয়।।
এই কথা কহিতে মিশিল দুই দল।
মহাযুদ্ধ বাধিল হইল কোলাহল।।
ক্রোধ করি কর্ণ বীর প্রবেশিল রণে।
সিংহ যেন চলে যায় কুতুহল মনে।।
প্রবেশিয়া কর্ণ বীর করে মহারণ।
বাছিয়া বাছিয়া মারে বড় বীরগণ।।
সংগ্রামেতে প্রবেশিল কর্ণের কুমার।
দশ বাণে ভীম তারে করিল সংহার।।
সাক্ষাতে দেখিয়া কর্ণ ‍আপনা পাসরে।
পুত্রের কাটিল মাথা বীর বৃকোদরে।।
কর্ণপুত্রে নাশিয়া কৃপের কাটে ধনু।
তিন বাণে বিন্ধিলেন দুঃশাসন-তনু।।
ছয় বাণে শকুনিরে করিল বিকল।
রথ কাটি বিন্ধেন উলুক মহাবল।।
থাক থাক সুষেণ কাটিব তব শির।
এত বলি বাণ মারে ভীম মহাবীর।।
তিন বাণে বিন্ধিলেন ভীমবীর তাকে।
সুষেণ সুতীক্ষ্ম অস্ত্র মারে ঝাঁকে ঝাঁকে।।
নকুল সহিত যুদ্ধ বাড়িল বহুল।
দুঃশাসন সাত্যকিতে সংগ্রাম তুমুল।।
অতি ক্রোধে কর্ণবীর রণে প্রবেশিল।
ইন্দ্র দেবরাজ যেন সমরে আইল।।
একে কর্ণ মহাবীর পেয়ে অপমান।
নিজ পুত্র পড়িল আপনি বিদ্যমান।।
যুধিষ্ঠির বধে যুক্তি কৈল কর্ণবীর।
ক্রোধে পরিপূর্ণ কর্ণ কাঁপয়ে শরীর।।
একেবারে যুড়ি মারে শত শত বাণ।
বিন্ধি পাণ্ডবের সৈন্য কৈল খান খান।।
মহাধনুর্দ্ধর বীর বরিষয়ে শর।
বিচিত্র বিক্রম দেখি কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
মহারথিগণে বিন্ধে নিবারিতে নারে।
একেশ্বর কর্ণ যুঝে পাণ্ডব সমরে।।
গজ বাজী ধ্বজ ছত্র রথ সারি সারি।
অযুত অযুত পাড়ে লিখিতে না পারি।।
মুণ্ড কাটি পাড়ে কার কুণ্ডল সহিত।
অশ্ব রথ কাটিয়া যে পাড়িল ত্বরিত।।
যুধিষ্ঠিরে রাখিতে ধাইল বহু দল।
দৃষ্টিমাত্র কাটি পাড়ে কর্ণ মহাবল।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন কর্ণে উচৈঃস্বরে।
শুন কর্ণ এক কথা বলি যে তোমারে।।
দুর্য্যোধন বাক্যে কর মম সহ রণ।
শুদ্ধ অভিলাষ তোর খণ্ডাব এখন।।
এত বলি ধর্ম্ম মারিলেন দশ শর।
তাঁর শরাশন কাটে কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
ক্রোধভরে যুধিষ্ঠির যেন হুতাশন।
টঙ্কারিয়া লইলেন অন্য শরাসন।।
যম দণ্ড সম ধনু অতি ভয়ঙ্কর।
মহেশের শূল যেন জ্বলে বৈশ্বানর।।
বজ্রের সমান সেই বাণে যুধিষ্ঠির।
কর্ণের দক্ষিণ ভাগে বিন্ধিলেন বীর।।
বেদনা পাইল তাহে কর্ণ ধনুর্দ্ধর।
মূর্চ্ছিত হইয়া পড়ে রথের উপর।।
হাহাকার কুরুদলে প্রচার হইল।
পাণ্ডবের সৈন্যে জয়ধ্বনি প্রকাশিল।।
মহা সিংহনাদ করে পাণ্ডবের দল।
চেতনা পাইয়া উঠে কর্ণ মহাবল।।
যুধিষ্ঠির নিধন চিন্তিল মনে মন।
টঙ্কারিয়া হাতে নিল দিব্য শরাসন।।
বিজয় নামেতে ধনু নিল আরবার।
যাহাতে আছয়ে চন্দ্র সূর্য্যের আকার।।
সত্যষেণ সুষেণ কর্ণের দুই সুত।
তিন বাণে ধর্ম্মে বিন্ধে বিক্রমে অদ্ভূত।।
বিন্ধিল নৃপতি সত্যষেণের শরীরে।
তিন বাণে বিন্ধিলেক কর্ণ মহাবীরে।।
সর্ব্ব অস্ত্র নিবারিল কর্ণ একেশ্বর।
সপ্তবাণে বিন্ধিলেক ধর্ম্ম নৃপবর।।
রাজারে রাখিতে এল এত যোদ্ধাগণ।
ধৃষ্টদ্যুন্ন ভীম সেন দ্রুপদ নন্দন।।
সহদেব সুষেণ নকুল কাশীপতি।
শিশুপাল তনয় আইল শীঘ্রগতি।।
একেবারে অস্ত্র এড়ে কর্ণের উপর।
সর্ব্ব অস্ত্র নিবারিল কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
পাণ্ডবের সৈন্য সর্ব্ব করে পরাজয়।
কালান্তক যম যেন কর্ণ মহাশয়।।
যুধিষ্ঠির রাজার হাতের কাটে ধনু।
সন্ধান পূরিয়া বীর বিন্ধিলেক তনু।।
কবচ কাটিয়া পাড়ে ধরণী উপরে।
রুধির পড়িছে ধারে ধর্ম্ম-কলেবরে।।
শক্তি অস্ত্র মারিলেন রাজা যুধিষ্ঠির।
শক্তি নাহি ভেদিল সে কর্ণের শরীর।।
অতি ক্রোধে কর্ণবীর মারে তীক্ষ্মশর।
সেই শরে বিন্ধিলেক ধর্ম্ম-কলেবর।।
হৃদয়ে বিন্ধিল আর বিন্ধিল কপাল।
ধ্বজছত্র কাটিলেন বিক্রমে বিশাল।।
গজ অঙ্গ কাটা গেল হইল প্রমাদ।
ছিন্ন ভিন্ন সৈন্য সব করে আর্ত্তনাদ।।
অন্য রথে চড়িলেন ধর্ম্ম নৃপবর।
রথ চালাইয়া দেন কর্ণের গোচর।।
জিনিলেন কর্ণ বীর পাণ্ডবের নাথ।
উপহাস করে কর্ণ ধর্ম্মের সাক্ষাৎ।।
ক্ষন্ত্রকুলে জন্মিয়াছ তুমি মহাজন।
কাণেতে কাতর হয়ে পরিহর রণ।।
ক্ষন্ত্রধর্ম্মে তোমারে সুদক্ষ নাহি গণি।
ব্রহ্মচর্য্য ধর্ম্মেতে তোমাকে বাখানি।।
আর যুদ্ধ না করহ কর্ণবীর সনে।
যদি প্রাণে রক্ষা পাও যাও নিজস্থানে।।
এত বলি কর্ণবীর ছাড়িল নৃপতি।
ক্ষমিল সকল বীরে কর্ণ সেনাপতি।।
কোপেতে ধাইল ভীম মহাবলধর।
রাজারে করিল পাছু দুই সহোদর।।
কর্ণ ভীম সমাগমে হৈল মহারণ।
বিমানে চড়িয়া দেখে দেবঋষিগণ।।
কালদণ্ড সম যেন বিজলী ঝঙ্কার।
কর্ণেরে মারিল ভীম অস্ত্র খরধার।।
শরে কর্ণ বীরবরে করে ছারখার।
মহাশব্দে ভীমসেন করে মার মার।।
হাতে ধনু লয়ে বীর সমরে প্রচণ্ড।
হানিয়া রাজার পুত্রে করে খণ্ড খণ্ড।।
দুই বীরে শরবৃষ্টি করিল প্রকাশ।
অন্ধকারময় শূণ্য না চলে বাতাস।।
আকর্ণ, পূরিয়া কর্ণ করিল সন্ধান।
ভীমের হাতের ধনু করে খান খান।।
গদাঘাত কর্ণে করিল বৃকোদর।
মুর্চ্ছিত হইল কর্ণ রথের উপর।।
রথ বাহুড়িল তবে সারথি সত্বর।
ক্ষণেকে চেতন পায় কর্ণ ধনুর্দ্ধার।।
বাহুযুদ্ধ করে দোঁহে মহাবীর।
অশ্বথামা বীর তবে প্রতিজ্ঞা করিল।।
রাজার গোচরে গিয়া এমত কহিল।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বীর বটে মম পিতৃবৈরী।।
তোমারে তুষিব আজি তাহারে সংহারি।
বিনা ধৃষ্টদ্যুন্ন বধে যুদ্ধ যদি করি।।
আজিকার যুদ্ধে আমি হব পিতৃবৈরী।
প্রতিজ্ঞা করিয়া বীর আসিলেক রণে।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সেনাপতি আসিল তখনে।
হুহুঙ্কার করি যুঝে দ্রোণপুত্র সনে।।
অশ্বথামা মহাবীর মিলিল সমানে।
মহাবীর অশ্বথামা সংগ্রামে নিপুণ।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বীরের কাটিল ধনুগুণ।
অশ্বসহ সারথিরে করিল সংহার।।
নাহিক সম্ভ্রম কিছু দ্রোণের কুমার।
ক্রোধভরে আসে অশ্বথামা মহাবীর।।
মনে ভাবি কাটিবেন ধৃষ্টদ্যুন্ন শির।
ভীমসেন করিল তাঁহার পরিত্রাণ।।
আকাশে অমরগণ করয়ে বাখান।
মহাবীর কর্ণে তবে বরিষয়ে শর।।
বরিষার মেঘ ঘেন বরিষে নির্ঝর।
ভাঙ্গিল নারেন সৈন্য ধর্ম্ম নৃপবরে।।
পুনঃ যুধিষ্ঠিরে ধায় কর্ণ মহাবীর।
নারাচ বাণেতে বিন্ধে রাজার শরীর।।
যুধিষ্ঠির হৃদয়ে বিন্ধিল সাত বাণ।
ধর্ম্মের শরীর বিন্ধি কৈল খান খান।।
রাখিবারে রাজারে এল যোদ্ধাগণ।
কর্ণবীর বাণেতে করিল নিবারণ।।
সহদেব নকুল ধর্ম্মের পাশে থাকে।
দুই ভাই বিপক্ষে মারিল লাখে লাখে।।
ত্রিভুবনে বীর নাই কর্ণের সোসর।
কাটিল রাজার ধনু কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
এক বাণে কাটিয়া পাড়িল শরাসনে।
শর ধনু কাটিয়া পাড়িল সেইক্ষণে।।
অবিলম্বে অশ্ব রথ কাটেন কর্ণবীর।
অস্ত্র বৃষ্ঠি করিলেন ধর্ম্মের উপর।।
দুই ভাই চড়িলেন সহদেব রথে।
পুনরপি কর্ণবীর ধনু নিল হাতে।।
পাণ্ডবের মাতুল মদ্রের অধিপতি।
কর্ণের সারথী সেই বীর মহামতি।।
ভাগিনার দুঃখ দেখি হৃদয়ে আকুল।
বিস্তর বলিল পাণ্ডবের অনুকূল।।
শুন কর্ণ মহাশয় আমার বচন।
আপনি প্রতিজ্ঞা কৈলা বিস্মর এখন।।
অর্জ্জুনের সঙ্গে রণ প্রতিজ্ঞা করিলে।
ধর্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির সঙ্গে আরম্ভিলে।।
হীন অস্ত্র যুধিষ্ঠির কবচ রহিত।
তাহাকে বিন্ধিতে কর্ণ না হয় উচিত।।
পার্থে এড়ি যুধিষ্ঠিরে মারিবার আশ।
কৃষ্ণসনে অর্জ্জুন করিবে উপহাস।।
শল্যের বচন শুনি ফিরে কর্ণবীর।
লজ্জা পেয়ে শিবিরে গেলেন যুধিষ্ঠির।।
রথ হৈতে নামিলেন ধর্ম্ম নরপতি।
সরক্ত শরীর রাজা সবিকল মতি।।
সহদেব নকুলেরে পাঠান সত্বর।
যথা যুদ্ধ করে মহাবীর বৃকোদর।।
যুধিষ্ঠিরে এড়ি কর্ণ অন্যেকে ধাইল।
মৃগযুথ মধ্যে যেন গজেন্দ্র পশিল।।
যত অস্ত্র ভৃগুরাম দিল মহাবীরে।
মারিলেন কর্ণবীর নির্ভর অন্তরে।।
পাণ্ডবের সৈন্যেতে করিল হাহাকার।
যুগান্তের যম যেন করিল সংহার।।
অর্জ্জুন অর্জ্জুন বলি মহাশব্দ করে।
ধনঞ্জয় ধনুর্দ্ধর গেল কোথাকারে।।
সংসপ্তকগণ সঙ্গে সংগ্রাম দুষ্কর।
আসিতে অর্জ্জুন নাহি পান অবসর।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন শুন ধনঞ্জয় বীর।
সৈন্য সব সংহার করিল কর্ণ মহাবীর।।
পরশুরামের অস্ত্র করিল সন্ধান।
লক্ষ কোটী বাণ মারে দেখ বিদ্যমান।।
যুগান্তের যম যেন কর্ণবীর ধায়।
হের দেখ সৈন্য সব সম্ভ্রমে পলায়।।
কৌরবের সৈন্য সব করে সিংহনাদ।
পাণ্ডবের সৈন্য করে বহুল বিষাধ।।
প্রাণ উপেক্ষিয়া যুদ্ধ করে বৃকোদর।
যুধিষ্ঠিরে নাহি দেখি সংগ্রাম ভিতর।।
শুনিয়া কহেন ধনঞ্জয় গদাধরে।
সত্বরে চালাও রথ দেখি যুধিষ্ঠিরে।।
সংসপ্তকগণ মম আছে অবশিষ্ট।
শীঘ্রগতি চল প্রভু দেখি মোর জ্যেষ্ঠ।।
অর্জ্জুন বচনে কৃষ্ণ দেন অনুমতি।
যুধিষ্ঠির স্থানে ত্বরা যান শীঘ্রগতি।।
শঙ্খনাদ করিয়া চলেন ধনঞ্জয়।
অর্জ্জুনে রোধিল অশ্বথামা মহাশয়।।
দিব্য অস্ত্র দুই বীর করিল সন্ধান।
দেবাসুর যুদ্ধ যেন নাহি অবসান।।
দ্রোণপুত্রে জিনিয়া অর্জ্জুন মহাবীর।
ভীমের পশ্চাতে আইলেন অতি ধীর।।
জিজ্ঞাসেন ভীমসেনে রাজার বৃত্তান্ত।
কর্ণযুদ্ধ কথা ভীম কহিল আদ্যন্ত।।
কর্ণ শরে বিহবল হইল কলেবর।
গেলেন বিষাদে রাজা শিবির ভিতর।।
দেবে বাঁচিলেন ভাই ধর্ম্ম নরপতি।
এত বলি নিশ্বাস ছাড়িল মহামতি।।
শুনিয়া বিকল কৃষ্ণ অর্জ্জুন দুর্জ্জয়।
ভীমেরে বলেন তবে বীর ধনঞ্জয়।।
কৃপকর্ণ দ্রোণপুত্র রাজা দুর্য্যোধন।
উহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিব এখন।।
আমি হেথা যুদ্ধ করি তুমি যাও তথা।
বৃত্তান্ত করিয়া এস নৃপবর যথা।।
ভীমসেন বলিলেন আমি আছি রণে।
যুদ্ধ হইতেছে মম কুরুসৈন্য সনে।।
হেনকালে এড়ি যাই যদি আমি রণ।
নিন্দিবে পলাল বলি যত কুরুগণ।।
যুদ্ধ ছাড়িবার এই নহেত সময়।
দেখিয়া আইস যুধিষ্ঠির মহাশয়।।
ভীমেরে রাখিয়া তবে সংগ্রাম ভিতরে।
কৃষ্ণ পার্থ আইলেন দেখিতে রাজারে।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র