পান্ড্যরাজ পান্ডব পক্ষের একজন মহাযোদ্ধা। তিনি ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, অর্জুন এমনি কৃষ্ণকেও নিজের সম পর্যায়ে মনে করতেন না। তিন মনে করতেন তিনি তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এমনকি ভীষ্ম ও দ্রোণের সহিত তার তুলনাও তিনি পছন্দ করতেন না। নিজের শক্তির উপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।
যোড়শ দিবসের যুদ্ধে লোকবিশ্রুত মহাধনুর্ধর পান্ড্যরাজ কর্ণের সেনাদের না করতে লাগলেন। বায়ু যেমন মেঘমন্ডল ছিন্ন ভিন্ন করে তেমনি অরাতিঘাতন পান্ড্যের শর নিক্ষেপে অশ্ব, রথ, ধ্বজ, আয়ুধ, মাতঙ্গ ও সারথি প্রভৃতিকে বিধ্বস্ত করে সৈন্যগণকে ছিন্ন ভিন্ন করতে লাগলেন। পান্ড্যের শর নিক্ষেপে অশ্বারূড় মহাবল পরাক্রান্ত পুলিন্দ, খশ, বাহ্লীক, নিষাদ, অন্ধ্রক, কুন্ডল, দাক্ষিণাত্য ও ভোজগণ নিহত হলেন। তখন অশ্বত্থামা পান্ড্যের কাছে গিয়ে সহাস্যে যুদ্ধের আহ্বান করে বললেন,” হে কমললোচন মহারাজ! তুমি সদ্বংশে জন্ম গ্রহণ করেছে, তোমার বল ও পৌরুষ সর্বত্র বিধিত, ইন্দ্রসম পরাক্রম। তোমার সুগঠিত বাহু ও বিশাল বাহু যুগল দ্বারা শক্রগণের উপর শর নিক্ষেপ করছ। এক্ষণে আমি ছাড়া অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পারছি না। অরণ্যে সিংহ যেমন নির্ভীকচিত্তে মৃগগণকে শিকার করে, তেমনি তুমি একাকী অসংখ্য হাতি, অশ্ব, রথ ও পদাতির প্রাণ সংহার করেছে, তোমার ভীষণ রথ নিস্বনে ভূমন্ডল ও আকাশমন্ডল কম্পিত শস্যষ্ম শব্দ শরৎকালীন মহামেঘের ন্যায় শোভা পাচ্ছে। অতএব, তুমি তূণী হতে সর্প সদৃশ সুনিশিত শরনিকর সজ্জিত করে অন্ধক যে রূপ ত্র্যম্বকের সাথে যুদ্ধ করেছিল সেরূপ আমার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হও।” পান্ড্যরাজ অশ্বত্থামার বাক্যবাণে রুষ্ট হয়ে অশ্বত্থামাকে কর্ণি দ্বারা বিদ্ধ করলেন। অশ্বত্থামা পান্ড্যরাজের প্রতি “নারাচ” বাণ নিক্ষেপ করলে পান্ড্যরাজ তা ধ্বংস করেন।
তারপর মহাবীর অশ্বত্থামা গ্রীষ্মাবসানে পর্বত পাদপ পরিপূর্ণ পৃথিবী বারি বর্ষণ করে তেমনি পান্ডবসেনাদের উপর শর বৃষ্টি করতে লাগলেন। কিন্ত মহাবীর পান্ড্যরাজ “বায়ব্যাস্ত্র” দ্বারা দ্রোণপুত্র নিক্ষেপিত শরজাল নিবারণ করে সিংহনাদন করতে লাগলেন। পান্ড্য মহীপতির সিংহনাদন গর্জন শ্রবণ করে ক্রুদ্ধান্বিত হয়ে মহাবীর অশ্বত্থামা পান্ড্য’র সারথীকে হত্যা ও রথ চূর্ণ-বিচূর্ণ করলেন। কিন্তু হত্যার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দ্রোণতনয় তাকে হত্যা কররেন না। তিনি তার সাথে আরও যুদ্ধ করতে বাসন করছিলেন। ঠিক ঐ একটি হস্তী অশ্বত্থামার শরে আহত হয়ে পান্ড্য’র দিকে ধাবিত হলে হস্তীযুদ্ধে নিপুণ পান্ড্য তাতে আরোহন করে অশ্বত্থামার দিকে “তোমর” শর নিক্ষেপ করলেন। তোমরের আঘাতে অশ্বত্থামার মণিমুক্তাভূষিত কিরীট ভূতলে লুটিয়ে পড়ল। তখন পদাহত ভূজঙ্গের ন্যায় ক্রুদ্ধান্বিত হয়ে অশ্বত্থামা চতুর্দশ শর ব্যবহার করে তার হস্তী, অনুচর এবং পান্ড্যর বাহু ও মস্তক ছেদন করেলেন।
সূত্র : মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরানিক গ্রন্থ।
ConversionConversion EmoticonEmoticon