সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-৫

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-৫
মনুস্মৃতিতেও আছে-
দেবত্বং সাত্ত্বিকা যান্তি মনুষ্যত্বঞ্চ রাজসাঃ।
তির্য্যকত্বং তামসা নিত্যমিত্যেষা ত্রিবিধা গতিঃ।।
অর্থঃ মনুষ্য সাত্ত্বিক হলে দেবত্ব, রাজসিক হলে মনুষ্যত্ব এবং তমোগুণাবলম্বী হলে তির্য্যকযোনী প্রাপ্ত হয়।; লোকের এই ত্রিবিধ গতি নির্ধারিত আছে।
এখানেও দেখা যাচ্ছে সাত্ত্বিক গুণের জয় গান।
হরিভক্তিবিলাস এ আছে-
পূষ্পাক্ষতৈর্ব্বিমিশ্রেণ বলিং যস্তু প্রযচ্ছতি।
বলিনা বৈষ্ণবে নাথ তৃপ্তাঃ সন্তো দিবৌকসঃ।
শান্তিং তস্য প্রযচ্ছন্তি শ্রিয়মারোগ্যমেবচ।।
অর্থঃ পূষ্প ও আতপতন্ডুল মিশ্রিত বলি দিবে; দেবতারা এরূপ বলিতে তৃপ্ত হন; এতে তাঁরা শান্তি, লক্ষ্মীশ্রী, আরোগ্য প্রদান করেন।

ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে এ শ্লোকটিতে কি বলা হয়েছে-
বলিদানেন বিপ্রেন্দ্র দূর্গা প্রীতি ভবেন্নৃণাং।
হিংসাজন্যঞ্চ পাপঞ্চ লভতে নাত্র সংশয়।।
উৎসর্গকর্তা দাতা চ ছেত্তা পোষ্টা চ রক্ষকঃ।
অগ্রপশ্চান্নিরোদ্ধা চ সপ্তৈতে বধভাগিনঃ।।
যোহয় হন্তি স তং হন্তি চেতি বেদোক্তমেবচ।
কুর্ব্বন্তী বৈষ্ণবীং পূজাং বৈষ্ণবাস্তেন হেতুনা।। (প্রকৃতি ৬৫ অধ্যায়)
অর্থঃ বলিদান দ্বারা দূর্গাদেবী প্রীতা হন বটে, কিন্ত সেই কার্য্যে মনুষ্যগণ হিংসার জন্য পাপও অর্জন করে, এ বিষয়ে সংশয় নেই। বলির পশুর উৎসর্গকর্তা, যিনি দান করেন, যে ছেদন করে, পালনকারী, রক্ষক, বলি ছেদন কালে অগ্রপশ্চাৎধারণকারী, ইহারা সপ্তজনেই বধ-পাপের ভাগী। যে ইহাকে হনন করছে সে ইহা দ্বারা হত হবে, ইহা বেদে উক্ত আছে; সেই হেতু বৈষ্ণবগণ বৈষ্ণবী পূজা অর্থাৎ জীবহত্যা বিহীন নিরামিষ পূজা করে থাকেন।

এখানেও দেখা যাচ্ছে বলির সাথে যে সাত জন ব্যক্তি জড়িত তাদের পশু বলির জন্য পাপের ভাগী হতে হচ্ছে।
দেবরাজ ইন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞে পশু বধের উদ্যোগ গ্রহণকালে ঋষিগণ তার ঘোর আপত্তি করে বলেন-
অধর্মো বলবানেষ হিংসাধর্মেপ্সয়া তব।
নায়ং ধর্মে হ্যধর্মোহয়ং ন হিংসা ধর্ম উচ্যতে।। (মৎস্য পুরাণে ১১৯ অধ্যায়)
অর্থঃ ধর্ম কর্ম করতে ইচ্ছুক হয়ে হিংসা প্রবৃত্তি ঘোরতর অধর্ম, ধর্ম কর্মে পশু হিংসা কখনই কর্তব্য নয়, ইহা নিশ্চয় অধর্ম; হিংসাকে কখনই ধর্ম বলা যেতে পারে না।
শ্রীমদ্ভাগবতে দেখা যায়-“ স্বর্গকামী (ক্ষত্রিয় রাজাগণ) ব্যক্তি না বুঝে নির্দয় হয়ে যজ্ঞে পশুহিংসা কর, তার ফলে তাদের নরকে লাভ হয় এবং যে যে পশুকে হনন করা হয়ে থাকে, পরলোকে সেই সেই পশু তাহাদিগকে ভীষণ তাড়না করে।” (শ্রীমদ্ভাগবত ৪ স্কন্দ ২৫।২৮)

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে আছে-
প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমত্মনা।
বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদৌ গোলোকে রাসমন্ডলে।। ৫৭।২৯
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তাঃ।
ত্রিপুরপ্রেষিতেণৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।। ৫৭।৩০
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেণ শাপাদুর্বাসসঃ পুরা।
চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী।। ৫৭।৩১
অর্থঃ জগৎ সৃষ্টির আদিমকালে প্রথমে পরমাত্ম কৃষ্ণ গোলোকধামের বৃন্দাবন মধ্যগত রাসমন্ডলে সেই দূর্গাদেবীর পূজা করেছিলেন। পরে দ্বিতীয় বারে ব্রহ্মা মধূকৈটভ দৈত্যভয়ে ভীত হয়ে সেই পরমা দেবীর আরাধনা করেন। তারপর তৃতীয় বারে ত্রিপুরাসুর বধের জন্য দেবাদিদেব কর্তৃক তিনি পূজিতা হন। দূর্বাসা মুনির শাপে ভ্রষ্টশ্রী হয়ে ইন্দ্র চতুর্থ বারে দেবীর পূজা করেন।
এখানে উল্লেখ্য, এ চারটি পূজায় পশু বলির কোন কথা বলা নেই। আমরা ধরে নিতে পারি দেবীর পূজার কোন পশু বলি হয়নি।
(চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র