মহাভারত-আদিপর্ব-৬২-৬৬

৬২.পুত্রোৎপাদনে কুন্তীর প্রতি
 পাণ্ডুর অনুমতি
কুন্তীরে বলেন তবে পাণ্ডু নৃপবর।
আপনি শুনিলা মুনিগণের উত্তর।।
দেবহৈতে পুত্র হবে, বলে মুনিগণ।
আপনি করহ কুন্তী ইহার বিধান।।
মৃগ-ঋষি শাপে শক্তি নাহিক আমার।
উপায় করিয়া পিতৃ-ঋণে কর পার।।
আর হেন আছে পূর্ব্বশাস্ত্রের বিধান।
বিবরিয়া কহি তাহা কর অবধান।।
স্বংমুৎপাদিত কেহ সহজে নন্দন।
নতুবা কাহারে পুত্র দেয় কোন্ জন।।
মূল্য লৈয়া পৌষ্য করে পুত্রবৎ করি।
আপনি প্রবেশে কেহ অন্নহেতু মরি।।
পুত্রহীনে কোন্ জন কন্যা করে দান।
তার পুত্র হইলে সে হয় পুত্রবান।।
নতুবা স্বামীর আজ্ঞা লৈয়া কোন জনে।
আপন সদৃশ কিম্বা উচ্চজন স্থানে।।
তাহাতে জন্মিলে হয় আপন নন্দন।
পূর্ব্বাপর আছে হেন ব্রহ্মার বচন।।
সেই অনুসারে কহি বংশের কারণ।
শ্রেষ্ঠ জন হৈতে কর বংশের রক্ষণ।।
কুন্তী বলে, রাজা তুমি পরম পণ্ডিত।
কি কারণে কহ তুমি বচন কুৎসিত।।
আমি ধর্ম্মপত্নী তুমি ধর্ম্মজ্ঞ আপনে।
তোমা বিনা অন্যজন না দেখি নয়নে।।
তুমি বল, শ্রেষ্ঠ হৈতে জন্মাহ নন্দনে।
তোমা হৈতে শ্রেষ্ঠ কেবা আছে ত্রিভুবনে।।
পূর্ব্বে শুনিয়াছি রাজা কহে মুনিগণ।
ব্যুষিতাশ্ব রাজা ছিল পৌরব-নন্দন।।
মহারাজ ব্যুষিলেক ধর্ম্মেতে তৎপর।
যজ্ঞ করি তুষিলেক যতেক অমর।।
তাঁর দক্ষিণায় তুষ্ট হৈল দ্বিজগণ।
বাহুবলে জিনিল সকল রাজগণ।।
ভদ্রা যে তাঁহার ভার্য্যা পরমা সুন্দরী।
রাজারে সেবয়ে সদা পুতকাম করি।।
পত্নীতে আশক্ত সদা স্ত্রৈণ নরবর।
অকাল হৈল ব্যাধিযুক্ত কলেবর।।
যক্ষ্মা-কাশ-রোগে রাজার হইল মরণ।
ভদ্রা হৈল শোকের সাগরে নিগমন।।
স্বামী বিনা ভার্য্যা জীয়ে, ধিক তার প্রাণ।
স্বামী বিনা ঘর দ্বার শ্মশান সমান।।
স্বামীর বিহনে নারী জীয়ে যেই জনা।
নিত্য নিত্য ভুঞ্জে সেই বিবিধ যন্ত্রণা।।
স্বামীপুত্রহীনা নারী লোকে অনাদর।
গণনা না করে কেহ মনুষ্য ভিতর।।
হেন মতে ভদ্রা বহু করিছে ক্রন্দন।
ডাকিয়া তাহারে শব বলে ততক্ষণ।।
না কান্দহ ভদ্রা তুমি উঠি যাহ ঘরে।
আমি জন্মাইব পুত্র তোমার উদরে।।
শবের বচনে ভদ্রা গেল নিজ স্থান।
শবেরে রাখিল করি যতন বিধান।।
ঋতু যোগে ভদ্রা তবে শবের সঙ্গমে।
সপ্ত পুত্র উদরে ধরিল ক্রমে ক্রমে।।
শব-স্বামী হৈতে ভদ্রা পুত্র জন্মাইল।
হেনমত আছ পূর্ব্ব মুনিরা কহিল।।
তুমিও এখন রাজা যোগ কর বনে।
আমার উদরে জন্ম করাহ নন্দনে।।
পাণ্ডু বলিলেন, সে মানুষে না সম্ভব।
দৈববলে শব হৈতে পুত্রের উদ্ভব।।
সেইরূপ শক্তি কুন্তী নাহিক আমার।
পূর্ব্ব-ধর্ম্ম-উক্তি কুন্তী কহি শুন আর।।
পূর্ব্বেতে না ছিল কুন্তী এ সব নিয়ম।
যারে ইচ্ছা তার হয় করিত সঙ্গম।।
ইচ্ছামত স্ত্রীগণ যাইত যথাস্থানে।
নাহিক বিরোধ পূর্ব্বে ব্রহ্মার সৃজনে।।
নিয়ম করিল ঋষিপুত্র একজন।
তাহার বৃত্তান্ত কহি শুন দিয়া মন।।
উদ্দালক নামে এক মহা-তপোধন।
শ্বেতকেতু নামে ধরে তাঁহার নন্দন।।
পিতৃমাতৃকোলে ক্রীড়া করে অনুক্ষণ।
হেনকালে আসে তথা মুনি একজন।।
বিমোহিত হৈয়া মুনি ধরে তার মায়।
স্বামী-পুত্র কোলে হৈতে ধরি লয়ে যায়।।
বিস্ময় হইয়া শিশু চাহে পিতৃপানে।
ক্রোধ-মুখে জিজ্ঞাসিল জনকের স্থানে।।
কোথা হৈতে আসে দ্বিজ, বড় দুরাচার।
জননীরে লয়ে যায় কোথায় আমার।।
শুনিয়া বালকে মুনি করেন প্রবোধ।
পূর্ব্বাপর আছে বাপু না করিও ক্রোধ।।
যারে যার ইচ্ছা হয় করিতে বিহার।
টানি লয়ে যায় তারে বিধি বিধাতার।।
শুনিয়া হইল শিশু অধিক কুপিত।
এ হেন কুৎসিত কর্ম্ম বিধির সৃজিত।।
সৃষ্টি করে প্রজাপতি, নিয়ম না জানে।
হেন অনুচিত কর্ম্ম করে সে কারণে।।
আজি হৈতে সৃষ্টি মধ্যে করিব নিয়ম।
দেখ পিতা আজি মম তপঃ পরাক্রম।।
নিজ নিজ স্বামী ভার্য্যা ত্যজি যেই জন।
পরনারী পরস্বামী করিবে গমন।।
সংসারে যতেক পাপে হইবেক পাপী।
নরক হইতে পার না হবে কদাপি।।
স্ত্রী হইয়া স্বামীর বচন নাহি শুনে।
স্বামী যদি নিয়োজয় বংশের রক্ষণে।।
অজজ্ঞায় স্বামী-কার্য্য করে অনাদর।
চিরকাল মজিবে সে নরক-ভিতর।।
হেনমতে মুনিপুত্র নিয়ম করিল।
পূর্ব্বমত ত্যজি তাই হেন মত হৈল।।
আর পূর্ব্বকথা, কুন্তী শুনহ বচন।
সূর্য্যবংশে ছিল নামে সৌদাস-রাজন।।
মদয়ন্তী ভার্য্যা তাঁর পরমা-সুন্দরী।
অপত্য বিহনে দোঁহে সদা চিন্তা করি।।
বশিষ্ঠের স্থানে ভার্য্যা নিযুক্ত করিল।
মুনির ঔরসে তাঁর শ্রেষ্ঠ পুত্র হৈল।।
আমা সবাকার জন্ম জানহ আপনে।
ব্যাস করিলেন যথা পিতার বিহনে।।
বংশ হেতু হেনমত আছে পূর্ব্বাপর।
বিস্ময় না কর ইথে, ধর্ম্মের উত্তর।।
সেই হেতু আজি আমি কহি যে তোমারে।
পুত্রার্থে নাহিক শক্তি কি বল আমারে।।
কৃতাঞ্জলি করি কুন্তী নিবেদি তোমায়।
পুত্র জন্মাইতে কর আপনি উপায়।।
রাজার কাতর বাক্যে কুন্তী-ভোজসুতা।
কহিতে লাগিল পূর্ব্ব আপনার কথা।।
বাল্যকালে পিতৃগৃহে ছিলাম যখন।
অতিথি সেবনে ছিল মম নিয়োজন।।
অকস্মাৎ আইল দুর্ব্বাসা মুনিবর।
মুনিরে সেবন করিলাম সুবিস্তর।।
পরম পণ্ডিত সেই মুনি মহাশয়।
সেবাবশে আমা প্রতি হইল সদয়।।
মন্ত্র দিয়া আমারে কহিল সেই মুনি।
যেই দেবে ইচ্ছা তব হবে সুবদানি।।
এই মন্ত্র জপি তারে করিবা আহ্বান।
অবিলম্বে সেই দেব আসিবে তব স্থান।।
যেই বর ইচ্ছা হয়, পাবে সেই বর।
এত বলি দুর্ব্বাসা গেলেন দেশান্তর।।
এখন যেমত আজ্ঞা কর দণ্ডধর।
আজ্ঞা কর, দেবস্থানে মাগি পুত্রবর।।
যে তোমারে কহিলাম পুত্রের বিধান।
আজ্ঞা কর কোন্ দেবে করিব আহ্বান।।
রাজা বলে, মুনি যদি দিয়া থাকে বর।
তবে কেন বৃথা চিন্তা করহ অন্তর।।
হোম যজ্ঞ পূজা করি যাঁহার উদ্দেশ্যে।
নানা ব্রতে অর্চ্চ যাঁরে অতিশয় ক্লেশে।।
তথাপি দেবের নাহি পাই দরশন।
উদ্দেশে মাগি যে বর যার যেই মন।।
হেন দেব সাক্ষাতে চাহিবা তুমি বর।
শুভকার্য্যে সুবদনি বিলম্ব না কর।।
দেবতার মধ্যে জ্যেষ্ঠ ধর্ম্ম মহাশয়।
সর্ব্বপাপ হবে যাঁর লইলে আশ্রয়।।
সেই ধর্ম্মদেবে তুমি করহ আহ্বান।
পুত্রবর কুন্তী তুমি মাগ তাঁর স্থান।।
ধর্ম্মবন্ত হইবেক তেঁই সে কুমার।
মহা-ধর্ম্মবন্ত হবে সর্ব্ব গুণাধার।।
নিয়ম করিবা ধর্ম্মে করহ স্মরণ।
আজিকার বিলম্ব না সহে একক্ষণ।।
স্বামীর বচনে কুন্তী করিল স্বাকার।
স্বামীর প্রদক্ষিণ করি করে নমস্কার।।
আদিপর্ব্ব ভারতের ব্যাসের রচিত।
পরমপবিত্র পুণ্য, শ্রবণে অমৃত।।
আয়ুর্যশ-পুণ্য বাড়ে যাহার শ্রবণে।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কাশীরাম দাস ভণে।।
৬৩. যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম
মুনি বলে, শুন কুরুকল-অধিকারী।
বৎসরেক গর্ভ যবে ধরিল গান্ধারী।।
সেই ত সময়ে তবে ভোজের নন্দিনী।
পূর্ব্বে মন্ত্র বর দিল যে দুর্ব্বাসা মুনি।।
সেই মন্ত্র জপি ধর্ম্মে করিল আহ্বান।
তৎক্ষণে আইল ধর্ম্ম কুন্তী বিদ্যমান।।
ধর্ম্মের সঙ্গমে হৈল গর্ভের উৎপত্তি।
পরম-সুন্দর পুত্র প্রসবিলা সতী।।
ইন্দ্র-চন্দ্র-সম কান্তি, তেজে দিবাকর।
উজ্জ্বল করিল শতশৃঙ্গ গিরিবর।।
দিন দুই প্রহরেতে পুণ্য-তিথি-যুত।
অতি শুভক্ষণেতে জন্মিলা কুন্তীসুত।।
সেই ক্ষণে ধ্বনি হইল আকাশ উপর।
সকল ধার্ম্মিক-শ্রেষ্ঠ এই পুত্রবর।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় হবে মহারাজা।
জগতের লোকে তাঁরে করিবেক পূজা।।
এতেক আকাশবাণী শুনিয়া রাজন।
কুন্তীরে ডাকিয়া পুনঃ বলেন বচন।।
শুনিলা আকাশবাণী বলে দেবগণ।
ধার্ম্মিক সুবুদ্ধি শান্ত হইবে নন্দন।।
ক্ষত্রিয়ে প্রধান গণি বলিষ্ঠ কোঙর।
ধার্ম্মিক গণি যে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ ভিতর।।
সে কারণে অন্য দেবে ভজ পুনর্ব্বার।
যাঁহা হৈতে হইবেক বলিষ্ঠ কুমার।।
রাজার বচনে কুন্তী ভাবে মনে মনে।
দেবগণ মধ্যে দেখি বলিষ্ঠ পবনে।।
মন্ত্র জপে কুন্তী করি বায়ুর উদ্দেশ।
সেইক্ষণে বায়ু তথা করিল প্রবেশ।।
বায়ুর সঙ্গমে পুত্র লভিল জনমে।
জন্মমাত্র তাহার যে শুনহ বিক্রম।।
পুত্র প্রসবিয়া কুন্তী কোলে লইতে চায়।
তুলিতে নারিল ভারি পর্ব্বতের প্রায়।।
কিছুমাত্র ভূমি হৈতে তুলিল যতনে।
সহিতে না পারি ভার ফেলে ততক্ষণে।।
অশক্তা হইয়া ফেলে পর্ব্বত উপর।
শতশৃঙ্গ-পর্ব্বত কাঁপিল থরথর।।
শিলা বৃক্ষ গিরিশৃঙ্গ হৈল চূর্ণময়।
বালকের শব্দে পায় গিরিবাসী ভয়।।
সিংহ ব্যাঘ্র মহিষাদি যত পশুগণ।
পর্ব্বত ত্যজিয়া সবে গেল অন্য বন।।
হেনকালে শূন্যবাণী হৈল ততক্ষণ।
শুন কুন্তী পাণ্ডু এই তোমার নন্দন।।
যতেক বলিষ্ঠ আছে পৃথিবী-ভিতর।
সবা হৈতে শ্রেষ্ঠ এই মহা-বলধর।।
নির্দ্দয় নিষ্ঠুর এই দুষ্টজন-রিপু।
অস্ত্রেতে অভেদ্য এই, বজ্রসম বপু।।
দেখিয়া শুনিয়া পাণ্ডু হইল বিস্ময়।
আশ্চর্য্য মানিল কুন্তী দেখিয়া তনয়।।
পুনরপি কুন্তীরে বলেন নৃপবর।
দুই মত জন্ম হৈল যুগল-কোঙর।।
এক হৈল ধার্ম্মিক, র্নিদ্দয় আর জন।
সর্ব্ব-গুণ-যুত এক জন্মাহ নন্দন।।
কুন্তী বলে হেন পুত্র হইবে কেমনে।
সর্ব্বগুণী পুত্র পাব কার আরাধনে।।
ইহা শুনি পাণ্ডু জিজ্ঞাসিল মুণিগণে।
সর্ব্ব-গুণ-যুত দেব আছে কোন জনে।।
তাঁরে আরাধিয়া আমি লভিব নন্দন।
এত শুনি বলিল যতেক মুনিগণ।।
সর্ব্ব-গুণ-যুত দেখ ইন্দ্র দেবরাজ।
তাঁহারে সেবিলে রাজা সিদ্ধ হবে কাজ।।
ইন্দ্রের উদ্দেশে তপ কর নৃপবর।
নিয়ম করিয়া রাজা কর সম্বৎসর।।
বিনা তপে নহে তুষ্ট দেব পুরন্দর।
এত শুনি তপ আরম্ভিল নৃপবর।।
ঊর্দ্ধবাহু একপদে রহে দাঁড়াইয়া।
সম্বৎসর করে তপ বায়ু আহারিয়া।।
তপে তুষ্ট বাসব যে আইল তথায়।
কহিলেন পাণ্ডুরে শুনহ কুরুরায়।।
আপন বাঞ্ছিত ফল মাগ মহাশয়।
ইচ্ছা তব পূর্ণ হবে না কর সংশয়।।
বর দিয়া ইন্দ্র হইলেন অন্তর্ধান।
তপ নিবর্ত্তিয়া পাণ্ডু গেল নিজস্থান।।
কুন্তীরে কহিল পাণ্ডু হরিষ-অন্তর।
তুষ্ট হয়ে মোরে বর দিল পুরন্দর।।
স্ববাঞ্ছিত ফল রাজা হইবে তোমার।
সর্ব্ব-গুণ-যুত তুমি পাইবে কুমার।।
তপস্যায় করিলাম প্রসন্ন বাসবে।
মুনি-মন্ত্রে স্মরণ করহ তাঁরে এবে।।
স্মরণ করিল কুন্তী স্বামীর বচনে।
দেবরাজ কুন্তীপাশে আইল তৎক্ষণে।।
সঙ্গম করিয়া ইন্দ্র দিয়া গেল বর।
ইন্দ্রের ঔরসে জন্ম হইল কুমার।।
জাতমাত্র শূন্যবাণী হইল গম্ভীর।
সুরাসুরে এই পুত্র হবে মহাবীর।।
অদিতির যেমন তনয় নারায়ণ।
তেমতি তোমার কুন্তী হইবে নন্দন।।
পরাক্রমে হবে তুল্য কার্ত্তবীয্যার্জ্জুন।
তিনলোকে হৈবে খ্যাত এই পুত্র ধন।।
পৃথিবীর লক্ষ রাজা জিনি বাহুবলে।
যুধিষ্ঠিরে অভিষেক করিবে ভূতলে।।
ভ্রাতৃসহ করিবেক তিন অশ্বমেধ।
ভৃগুরাম সদৃশ শিখিবে ধনুর্ব্বেদ।।
শিখিবেক দিব্য-অস্ত্র দিব্য-মন্ত্র-মতে।
এ পুত্র না জানে, হেন নাহিক জগতে।।
পিতৃলোকে উদ্ধারিবে এই পুত্রবর।
খাণ্ডব দহিয়া এ তুষিবে বৈশ্বানর।।
এতেক আকাশ-বাণী হৈল শূন্য হৈতে।
অমর কিন্নর সব আইল দেখিতে।।
ইন্দ্র সহ আইল যতেক দেবগণ।
চন্দ্র সূর্য্য পবন শমন হুতাশন।।
দেখিতে আইল যত গন্ধর্ব্ব কিন্নর।
সিদ্ধ ঋষিগণ যত অস্পরী অপ্সর।।
একাদশ রুদ্র ঊনপঞ্চাশ পবন।
অশ্বিনী-কুমার আর বিশ্বাবসুগণ।।
যতেক অমরগণ আইল সত্বর।
মহা-কলরব হৈল শূন্যের উপর।।
দক্ষ-আদি প্রজাপতি আইল দেখিতে।
দেবাঙ্গনা যতেক আইল নৃত্য-গীতে।।
গন্ধর্ব্বেতে গীত গায় নাচে বিদ্যাধরী।
ঝাঁকে ঝাঁকে পুষ্পবৃষ্টি আচ্ছাদিল গিরি।।
দেবগণ ঋষিগণ করিলা কল্যাণ।
নিবর্ত্তিয়া সবে গেল যার যেই স্থান।।
হরষিত হৈল পাণ্ডু ভোজের নন্দিনী।
সর্ব্ব দুঃখ পাসরিল পুত্র-গুণ শুনি।।
তবে কত দিনে পাণ্ডু একান্তে বসিয়া।
কুন্তী প্রতি বলিলেন একান্ত ভাবিয়া।।
আমার পুত্রের বাঞ্ছা পূর্ণ নাহি হয়।
পুনর কহিতে তোমায় যোগ্য নয়।।
চতুর্থ পুরুষে নারী হয় যে স্বৈরিণী।
পঞ্চম পুরুষ হৈলে বেশ্যা মধ্যে গণি।।
সে কারণে তোমায় কহিতে না যুয়ায়।
পুত্র-বাঞ্ছা পূর্ণ হয় না দেখি উপায়।।
হেনমতে কুন্তী সহ কথোপকথনে।
পুত্র-চিন্তা নরবর সদা ভাবে মনে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
একমনে শুনিলে বাড়য়ে দিব্য-জ্ঞান।।
৬৪. নকুল ও সহদেবের জন্ম
একদিন পাণ্ডু-নৃপে একান্তে দেখিয়া।
বলিতে লাগিল মাদ্রী নিকটেতে গিয়া।।
কুরুবংশে তিন বধূ যে আছে সম্প্রতি।
ইতি মধ্যে দুই জন হৈল পুত্রবতী।।
শুনিলাম গান্ধারীর শতেক নন্দন।
প্রত্যক্ষে কুন্তীর পুত্র দেখি তিন জন।।
অভাগিনী আমি ইথে হইনু বঞ্চিত।
তোমায় কি কব, মম কর্ম্মের লিখিত।।
দয়া করি কুন্তী যদি অনুগ্রহ করে।
মন্ত্রবলে জপি পুত্র লব দেব-বরে।।
সহজে সতিনী কুন্তী, কি বলিতে পারি।
দেয় বা না দেয় আমি চিত্তে ভয় করি।।
আপনি বলহ যদি কুন্তীরে এ কথা।
তোমায় বচন নাহি করিবে অন্যথা।।
মাদ্রীর বচন শুনি বলে নরবর।
মম চিত্তে এই কথা জাগে নিরন্তর।।
স্বামী-বাক্য কভু সেই না করে হেলন।
অবশ্য করিবে মম আদেশ পালন।।
তোমারে প্রকাশ আমি তেঁই নাহি করি।
শুন কি না শুন তুমি, হও ধর্ম্মনারী।।
আপনি এখন তুমি কহিলা আমারে।
তোমার কারণে আমি কহিব কুন্তীরে।।
মম বাক্য কুন্তী কভু না করিবে আন।
মাদ্রীরে কহিয়া রাজা যান কুন্তী-স্থান।।
কুন্তীরে একাত্নে পেয়ে কহেন নৃপতি।
কুলের কল্যাণ হেতু কহি, শুন সতি।।
ইন্দ্রত্ব পাইয়া ইন্দ্র নিত্য যজ্ঞ করে।
যশের কারণে আর শাস্ত্র-অনুসারে।।
বেদে তপে পারগ হইয়া দ্বিজগণ।
তথাপিহ করে তাঁরা গুরুর সেবন।।
সতী পতিব্রতা যেই অতি সুচরিত।
তাহার যতেক ধর্ম্ম জনিহ নিশ্চিত।।
সেই হেতু কুন্তী, আমি কহি যে তোমারে।
মাদ্রীরে উদ্ধার কর এ ভব-সংসারে।।
মাদ্রীর বংশের হেতু করহ উপায়।
তার পুত্র হৈলে হবে এ পুত্রের সহায়।।
এতেক শুনিয়া কুন্তী কহিল রাজায়।
একবার দিব মন্ত্র তোমার আজ্ঞায়।।
মাদ্রীরে ডাকিয়া তবে কুন্তী পাণ্ডুপ্রিয়া।
মন্ত্র বলি দিল তারে প্রসন্ন হইয়া।।
একবার দিব রাণী বলেন বচন।
চিন্তিত হইয়া মাদ্রী ভাবে মনে মন।।
একবার বিনা কুন্তী না দিবেক আর।
কি উপায়ে হবে তবে অধিক কুমার।।
হৃদয়ে ভাবিয়া মাদ্রী যুক্তি কৈল সার।
দেব মধ্যে যুগ্ম হয় অশ্বিনী-কুমার।।
অশ্বিনী-কুমারদ্বয়ে করিল স্মরণ।
মন্ত্রের প্রভাবে দোঁহে এল এতক্ষণ।।
তাঁদের ঔরসে গর্ভ হইল সঞ্চার।
প্রসবিল মাদ্রী দেবী যুগল কুমার।।
জন্মমাত্র শুনি শব্দ আকাশ উপরে।
রূপে গুণে শোভা দোঁহে করিবে সংসারে।।
হেনমতে ক্রমে পঞ্চ নন্দন হইল।
পর্ব্বত-নিবাসী ঋষি আসি নাম দিল।।
জ্যেষ্ঠ হেতু নাম তার হৈল যুধিষ্ঠির।
ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি সেই হৈল ভীমবীর।।
তৃতীয় অর্জ্জুন নাম রাখে ঋষিগণ।
চতুর্থ নকুল নাম মাদ্রীর নন্দন।।
সহদেব নাম রাখে পঞ্চম কুমার।
দিনে দিনে বাড়ে যেন দেব-অবতার।।
সিংহগ্রীব সিংহচক্ষু, কটি সিংহ সম।
মহা-বীর্য্যবন্ত পঞ্চ সিংহের বিক্রম।।
পঞ্চ পুত্র নৃপতির দেখিতে সুন্দর।
উজ্জ্বল করিল শতশৃঙ্গ গিরিবর।।
পুত্র নিরখিয়া রাজা হরিষ অপার।
হরষিত কুন্তী মাদ্রী দেখিয়া কুমার।।
পুত্র-সঙ্গ তিন জন তিলেক না ছাড়ে।
ক্ষণেক না করে রাজা নয়নের আড়ে।।
হেনমতে পঞ্চ পুত্র করেন পালন।
একদিন কুন্তী প্রতি বলেন রাজন।।
পুত্র সম সুখ নাহি সংসার ভিতর।
বঞ্চিত সকল সুখে পুত্রহীন নর।।
রাজ্যবন্ত ধনবন্ত বিদ্যাবন্ত জন।
পুত্র বিনা তার হয় সব অকারণ।।
ইহকালে সুখদায়ী, লোকেতে গৌরব।
পরকালে নিস্তারয়ে নরক রৌরব।।
ভাগ্যবন্ত ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্র-পিতা।
সে কারণে কহি শুন ভোজের দুহিতা।।
পুনরপি মন্ত্র দেহ মদ্র-তনয়ারে।
বহুপুত্রে বহু সুখ হয় এ সংসারে।।
শুনিয়া বলেন কুন্তী যুড়ি দুই কর।
আর না করিবা আজ্ঞা শুন নৃপবর।।
পরম কপটী মাদ্রী, দেখহ আপনে।
একবার মন্ত্র সে পাইলা মম স্থানে।।
তাহে জন্মাইল মাদ্রী যুগল-নন্দন।
মাদ্রীরে আমার ভয় হয় সে কারণ।।
কৃতাঞ্জলি করি আমি নিবেদি তোমারে।
মাদ্রীর কারণে আর না কহ আমারে।।
মৌনী রহিলেন পাণ্ডু কুন্তীর বচনে।
আর পুত্র-বাঞ্ছা ত্যাগ করিলেন মনে।।
পাণ্ডবের জন্মকথা অপূর্ব্ব কথন।
স্ববাঞ্ছিত ফল লভে, শুনে যেই জন।।
ব্যাসের বচন ইথে নাহিক সংশয়।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কাশীরাম দাস কয়।।
৬৫. পাণ্ডুরাজার মৃত্যু ও মাদ্রীর সহমরণ
সুখেতে থাকেন রাজা পুত্রের সহিত।
ঋতুরাজ বসন্ত হইল উপনীত।।
বসন্ত-কালেতে বন হইল শোভিত।
নানা বৃক্ষগণ সব হইল পুষ্পিত।।
পলাশ চম্পক আম্র অশোক কেশর।
পারিভদ্র কেতকী করবী পুষ্পবর।।
হৃদে আনন্দিত পাণ্ডু দেখিয়া কানন।
গহন নিকুঞ্জ বনে করেন ভ্রমণ।।
কুন্তীসহ পুত্রগণে রাখিয়া মন্দিরে।
মাদ্রীসহ ভ্রমে রাজা অরণ্য-ভিতরে।।
রাজার সহিত মাদ্রী, কুন্তী নাহি জানে।
গহন-কানন মধ্যে ভ্রমে দুই জনে।।
সঙ্গেতে যুবতী ভার্য্যা, বসন্ত-পবন।
বিমোহিত হইল যে তাহে প্রাণ মন।।
মদনের শরে হৈল অবশ রাজন।
সঘনে মাদ্রীর রূপ করে নিরীক্ষণ।।
বিকচ-কমল -সম সুচারু বদন।
শ্রবণে পরশে চারু পঙ্কজ-নয়ন।।
যুগল দাড়িম্ব সম দুই পয়োধর।
বিপুল নিতম্বভারে গমন মন্থর।।
কোমল মধুর ভাষে বরিষয়ে সুধা।
নিরখিয়া পাণ্ডুর জন্মিল কামক্ষুধা।।
মদনে অবশ রাজা হয়ে অচেতন।
হইলেন বিস্মৃত সে মুনির বচন।।
নিবৃত্ত হইতে নাহি পারিল রাজন।
তবে মাদ্রীর অঙ্গ করেন পরশন।।
নিবৃত্ত নিবৃত্ত ডাকে মদ্রের নন্দিনী।
অতি উচ্চৈঃস্বরে করে হাহাকার ধ্বনি।।
হাত পা আছাড়ে মাদ্রী ছটফট করে।
কটু ভাষে তবে মাদ্রী র্ভৎসে নৃপবরে।।
মৃগঋষি-শাপ প্রভু নাহিক স্মরণ।
ক্ষণেকে প্রমাদ হবে, না জান কারণ।।
তথাপি মদন-রসে হইয়া বিহ্বল।
পাণ্ডু নাহি শুনিল মাদ্রীর যত বোল।।
কালেতে যে করে তাহা কে খণ্ডিতে পারে।
পরম-পণ্ডিত বুদ্ধি কালেতে সংহারে।।
স্বরূপে জানহ তুমি এ সব বচন।
জানিয়া শুনিয়া কেন করিলে এমন।।
বিহার করিতে রাজা মাদ্রীর সহিত।
ঋষি-শাপে মৃত্যু আসি হৈল উপনীত।।
শরীর ত্যজেন রাজা দেখিল সুন্দরী।
ক্রন্দন করিছে মাদ্রী হাহাকার করি।।
পাণ্ডু না শুনিলা সতী মাদ্রীর বচন।
কাশী কহে, ব্রহ্মশাপ বড়ই ভীষণ।।
এখানে ভোজের কন্যা উচাটিত মন।
মাদ্রীর সহিত গেছে নাহিক রাজন।।
হইল অনেক বেলা, গেল কোথাকারে।
পুত্র সহ গেল কুন্তী দেখিতে রাজারে।।
কতদূর যাইতে শুনিল উচ্চধ্বনি।
হাহাকার শব্দে কান্দে মন্দ্রের নন্দিনী।।
শব্দ-অনুসারে যায় অতি শীঘ্রগতি।
দেখিল কান্দিছে মাদ্রী, কোলে নরপতি।।
বজ্রাঘাত মুণ্ডে যেন হৈল আচম্বিতে।
মূর্চ্ছিতা হইয়া কুন্তী পড়িল ভূমিতে।।
সঘনে নিশ্বাস ছাড়ে, উচাটন মন।
কান্দিয়া মাদ্রীর প্রতি বলিছে বচন।।
কি কর্ম্ম করিলা মদ্রকন্যে স্বামী বধি।
এই হেতু তোমারে ভোগাব নিরবধি।।
কেন একা এলে তুমি রাজার সংহতি।
কি হেতু নিবৃত্ত না করিলে নরপতি।।
যদি এই বনে সঙ্গে আনিতে নন্দন।
তবে কেন নৃপতির হইবে নিধন।।
হেন কর্ম্ম জানি তুমি করিলা কেমনে।
হারালে গুণের স্বামী মাতিয়া মদনে।।
মৃগ-ঋষি শাপ তোর না ছিল স্মরণে।
সকল ত্যজিয়া বনে বঞ্চ এ কারণে।।
অনিমিষে থাকি আমি রাজার রক্ষণে।
সঙ্গে আসিয়াছি তুমি জানিব কেমনে।।
আপনা খাইয়া মোর হেন হৈল গতি।
হারাইব কেন স্বামী থাকিলে সংহতি।।
বড়ই পাপিষ্ঠা তুই পতি-বিগাতিনী।
তোর জন্য হইলাম অমি অনাথিনী।।
মাদ্রী বলে, কুন্তী মোরে নিন্দ অকারণ।
বার বার তাঁরে দেবী করেছি বারণ।।
দৈবে যাহা করে তাহা খণ্ডে কোন্ জন।
না রাখি আমার বাক্য ঘটিল নিধন।।
কুন্তী বলে, ভাবী কর্ম্ম, না যায় খণ্ডন।
সম্প্রতি শুনহ তুমি আমার বচন।।
পঞ্চপুত্রে পালন করিহ ভাল মতে।
সহমৃতা হৈব আমি রাজার সহিতে।।
মাদ্রী বলে, হেন তুমি না বল আমারে।
তিলেক না জীব আমি না দেখি রাজারে।।
তোমার বিলম্বে এতক্ষণ আছে প্রাণ।
এখনি শরীর ত্যজি যাব প্রভু স্থান।।
আমা হেতু নৃপবর হারাইল জীবনে।
সেই হেতু আমি যাইব সহ-মরণে।।
তোমার নিকটে করি এক নিবেদন।
বিদায় তোমার কাছে মাগি যে এখন।।
পুনঃ পুনঃ তোমারে যে করি পরিহার।
যত্নেরে পালিবা দুটি কুমার আমার।।
ইহা বিনা আর কিছু না কহি তোমারে।
বিভেদ না ভেব দুটী আমার কুমারে।।
পিতৃ মাতৃ বিনা পুত্র সহজে অনাথ।
তুমি সর্ব্ববন্ধু জেন, তুমি মাতা তাত।।
এতেক বলিয়া মাদ্রী নিঃশব্দ হইল।
নিবিড় করিয়া শবে আলিঙ্গন দিল।।
আলিঙ্গন করি মাদ্রী ত্যজিল পরাণ।
শুনি শতশৃঙ্গ-বাসী এল সেই স্থান।।
ঋষিগণ মিলিয়া করিল এ বিচার।
পুত্র সহ ছিল পাণ্ডু আশ্রমে আমার।।
এখন শরীর ত্যাগ করিল রাজন।
অনাথ হইল কুন্তী, শিশু পঞ্চজন।।
রাজ-পুত্রগণে স্থিতি না শোভে কাননে।
দেশেতে লইয়া রাখ পাণ্ডু-পুত্রগণে।।
তবে সবাকার ধর্ম্ম থাকে, হেন বাসি।
বিচার করিল এই শতশৃঙ্গ-বাসী।।
মৃত শব কান্ধে করি লয় চরগণ।
পুত্র সহ কুন্তী লয়ে গেল ঋষিগণ।।
অল্প দিনে গেল কুন্তী হস্তিনা-নগর।
প্রবেশ করিল সবে নগর-ভিতর।।
রাজ-অন্তঃপুরেতে হইল সমাচার।
কুন্তী সহ এল পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।।
ভীষ্ম সোমদত্ত আর বাহ্লীক বিদুর।
ধৃতরাষ্ট্র-আদি যত বৈসে অন্তঃপুর।।
সত্যবতীসহ বধূ গান্ধারী সুন্দরী।
গৃহেতে বৈসেন আর যত বৃদ্ধা নারী।।
ঋষিগণে প্রণমিয়া দিলেন আসন।
কহিতে লাগিল বার্ত্তা সব ঋষিগণ।।
শতশৃঙ্গ-পর্ব্বতে ছিলেন পাণ্ডুরাজ।
ব্রহ্মচর্য্য করিতেন ঋষির সমাজ।।
দেব-বরে পঞ্চ পুত্র হইল তাঁহার।
কালেতে তাঁহারে কালে করিল সংহার।।
মদ্রকন্যা অতি ধন্যা ভুবনে মানিতা।
হইলেন সহমৃতা পাণ্ডুর বনিতা।।
এই কুন্তী সহ দেখ পুত্র পঞ্চজন।
পাণ্ডু-মাদ্রী-শব এনেছি করি বহন।।
যে মত বিচার হয় করহ বিধান।
এত বলি মুনিগণ করিল প্রস্থান।।
এত শুনি রোদন করেন সর্ব্বজন।
হাহাকার শব্দ মুখে, কাতর বচন।।
কান্দে সত্যবতী কান্দে অম্বিকা জননী।
শ্রীভীষ্ম বিদুর কান্দে, অন্ধ নৃপমণি।।
নগরের লোক করে বিলাপ ক্রন্দন।
বালবৃদ্ধ তরুণী কান্দয়ে সর্ব্বজন।।
ক্রন্দনের শব্দ উঠে গগন-উপরে।
মহা-কোলাহল হৈল হস্তিনা-নগরে।।
তবে ধৃতরাষ্ট্র বলে বিদুরে ডাকিয়া।
দুই শব দগ্ধ কর গঙ্গাতীরে লৈয়া।।
রাজ বিধান যেমন আছে পূর্ব্বাপর।
শুনিয়া বিদুর তবে হইল সত্বর।।
দুই শব কান্ধে করি লয়ে ক্ষত্রগণে।
চতুর্দ্দোল বিভূষিত বিবিধ বিধানে।।
উপরে ধরিল ছত্র যে রাজনীত।
শত শত চামর ঢুলায় চারিভিত।।
অগুরু চন্দনকাষ্ঠ আনিল বিস্তর।
কলসী কলসী ঘৃত আনে ভারে-ভার।।
মন্ত্র পড়ি দ্বিজগণ পাবক জ্বালিয়া।
অগ্নিহোত্রে রাজার করিল দাহক্রিয়া।।
পঞ্চ ভাই দিলা পিণ্ড ক্ষত্রিয়-বিধান।
এয়োদশ দিনে করে শ্রাদ্ধ শান্তি দান।।
স্বর্ণদান ভূমিদান করে গবীদান।
কাঞ্চন-রজত-দান বিবিধ-বিধান।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।
৬৬. সত্যবতীর প্রাণ ত্যাগ
তবে কত দিনে তথা আসে বেদব্যাস।
একান্তে কহেন মুনি জননীর পাশ।।
অবধানে শুন মাতা আমার বচন।
ধর্ম্মকাল গেল, হৈল পাপ-উপাসন।।
তোমার বংশেতে হবে বড় দুরাচার।
কপট হইবে সব হিংসা অহঙ্কার।।
এই সবাকার পাপে মজিবে সকল।
পৃথিবী হরিবে শস্য, মেঘে অল্প জল।।
ধন লুপ্ত হবে, লুপ্ত হবে ক্রিয়াচার।
আত্ম হিংসা সবে তবে করিবে বিস্তার।।
ধৃতরাষ্ট্র কপটে করিবে কুলক্ষয়।
ধর্ম্ম ত্যজি নর লবে অধর্ম্ম আশ্রয়।।
সে কারণে মাতা আমি কহি যে তোমায়।
কুলক্ষয় নয়নে দেখিতে না যুয়ায়।।
গৃহ ত্যজি জননী চলহ তপোবন।
সংসার ত্যাজিয়া মাতা তপ দেহ মন।।
এত বলি ব্যাস-মুনি হৈল অন্তর্দ্ধান।
শুনি সত্যবতী চিত্তে চিন্তেন বিধান।।
দুই বধূ ডাকিয়া আনিল নিজ পাশ।
কহিতে লাগিল যত কহিলেন ব্যাস।।
তোমার নন্দন বধূ করিবে দুণীতি।
কপট হিংসক হবে করিবে দুষ্কৃতি।।
কুলক্ষয় হইবেক তার কদাচারে।
এসব শুনিয়া আমি জানাই তোমারে।।
সে কারণে এবে আমি যাই তপোবনে।
করহ বিধান বধূ যেই লয় মনে।।
শুনিয়া যুগল বধূ চলিল সংহতি।
ভীষ্মে ডাকি সব কথা কহিলেন সতী।।
অন্তঃপুরে ছিল যত বৃদ্ধা নারীগণ।
সত্যবতী সহ সবে গেল তপোবন।।
ফল-মূলাহারী হৈয়া তপ আচরিল।
যোগে মন দিয়া সবে শরীর ত্যজিল।।
মহাভারতের কথা অমৃত প্রসবে।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দেবে।।
 

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র