মহাভারত:বনপর্ব-১১১-১১৫

১১১. সাবিত্রীর বুঝিয়া রাজা তনয়ার মন
একান্ত বুঝিয়া রাজা তনয়ার মন।
বন হৈতে সত্যবানে আনেন তখন।।
বিধিমতে পরিণয় দেন নরপতি।
সত্যবান গেল তবে আপন বসতি।।
পুত্রের বিবাহবার্ত্তা মহোৎসব শুনি।
হরিষ বিষাদ মনে কহে রাজা রাণী।।
নিদারুণ বিধি কৈল এমত সংযোগ।
নিরাশ করিল মোরে দিয়া বহুভোগ।।
ইন্দ্রের বৈভব জিনি ত্যজি নিজ দেশ।
বনেতে নিবাস করি তপস্বীর বেশ।।
বধূ মম অশ্বপতি নৃপতির বালা।
কিরূপে এ হেন জন রবে বৃক্ষ তলা।।
অনেক কহিল এইমত রাজা রাণী।
সাবিত্রী দেখিতে যত আইল ব্রাহ্মণী।।
অনেক প্রশংসা করি কহে সর্ব্ব জন।
সমানে সমানে বিধি করিল মিলন।।
তুমি রাণী ভাগ্যবতী, রাজা মহাসাধু।
সে কারণে লভিলে গো সাবিত্রীকে বধূ।।
অনেক লক্ষণ দেখি ইহার শরীরে।
এত বলি সবে গেল নিজ নিজ পুরে।।
পরম আনন্দ মনে রহে চারি জন।
নিত্য নিত্য সত্যবান প্রবেশিয়া বন।।
নানাবিধ ফল মূল করণ্ডেতে ভরে।
প্রতিদিন আনি দেয় সাবিত্রী গোচরে।।
সাবিত্রী মাহাত্ম্য কথা অতি চমৎকার।
যাঁর নামে ধন্য ধন্য জগৎ সংসার।।
শ্বশুর শাশুড়ী সেবে দেবের সমানে।
নানা সেবা করে নিত্য পতি সত্যবানে।।
লক্ষ্মীর সমান হয় সতী পতিব্রতা।
নিত্য নিয়মিত পূজে ব্রাহ্মণ দেবতা।।
দেবতা সেবিয়া শ্রেষ্ঠ পুরুষ পাইল।
মধুর সম্ভাষে বনবাসী বশ কৈল।।
অত্যন্ত তুষিল সর্ব্বভূতে দয়াবতী।
তাঁর গুণে তুল্য দিতে নাহি বসুমতী।।
যত্নে আচরিল যত নানাবিধ ধর্ম্ম।
নিত্য আচরিল যত নানাবিধ কর্ম্ম।।
ইষ্টেতে একান্ত মতি করে আচরণ।
শিল্প কর্ম্ম করে নিত্য বিচিত্র রচন।।
দেখিয়া সানন্দ রাজা রাণী সত্যবান।
সাবিত্রী বসতি করে বর্ষ সেই স্থান।।
নারদের বাক্য সতী স্মরে অনুক্ষণ।
লোকলাজে নানা কাজে নিবারিয়া মন।।
নিমেষে মুহূর্ত্ত দণ্ড পল আদি করি।
দণ্ডে দণ্ডে গণি যায় দিবস শর্ব্বরী।।
পঞ্চদশ দিনে পক্ষ, দ্বিপক্ষেতে মাস।
হেনমতে যায় মাস, বাড়য়ে নিরাশ।।
এইমত অনুক্ষণ সাবিত্রীর মনে।
রাজা রাণী সত্যবান কিছুই না জানে।।
এমন প্রকারে শুন ধর্ম্ম নরবর।
বৎসরের শেষমাত্র দ্বিতীয় বাসর।।
চিন্তায় আকুল হৈল ভূপতির সুতা।
বিচারিল, পূর্ণ হৈল নারদের কথা।।
অবশ্য হইবে যাহা, করিবে ঈশ্বর।
আমার একান্ত ভার তাঁহার উপর।।
হেনমতে মনে মনে ভাবি সারোদ্ধার।
আরম্ভ করিল ব্রত সংসারের সার।।
জ্যৈষ্ঠ মাসে কৃষ্ণ পক্ষে পেয়ে চতুর্দ্দশী।
লক্ষ্মী নারায়ণে সতী পূজে অহর্নিশি।।
শুদ্ধভাবে একমনে বসিয়া সুন্দরী।
অনায়াসে বঞ্চিলেক দিবস শর্ব্বরী।।
প্রভাতে উঠিয়া সতী হয়ে সযতন।
বিধিমতে করাইল ব্রাহ্মণ ভোজন।।
দক্ষিণান্ত করি কার্য্য কৈল সমাপন।
আশীর্ব্বাদ করি গেল যত দ্বিজগণ।।
এইরূপে বঞ্চিলেক দ্বিতীয় প্রহর।
সেই দিনে পূর্ণ সত্যবানের বৎসর।।
তাহাতে ‍নৃপতি সুতা চিন্তাকুল মনা।
হেনকালে শুন রাজা দৈবের ঘটনা।।
নিত্য নিত্য সত্যবান প্রবেশিয়া বন।
ফল মূল কাষ্ঠ যত করে আহরণ।।
দিবসের শেষ দেখি রাজার তনয়।
বিচারিল বনে যেতে হইল সময়।।
করণ্ড কুঠার নিল আপনার করে।
বিদায় লইল গিয়া মায়ের গোচরে।।
রাণী বল, শুন পুত্র দিবা অবশেষ।
এমত সময়ে বনে না কর প্রবেশ।।
সত্যবান বলে, মাতা না করিহ ভয়।
এখনি আসিব মাতা, জানিহ নিশ্চয়।।
এত বলি চলিলেন রাজার কুমার।
সাবিত্রী পাইয়া বার্ত্তা দেখে অন্ধকার।।
শোকাকুলা বিবেচনা করে মনে মন।
পূর্ণ হৈল, যাহা কৈল ব্রহ্মার নন্দন।।
কাল পূর্ণ হৈল আজি রাজার নন্দনে।
কর্ম্মসূত্রে টানি এবে লয় মৃত্যুস্থানে।।
জনম বিবাহ মৃত্যু যথা যেই মতে।
সময়ে আপনি সবে যায় সেই পথে।।
সে হেতু যেখানে তার আছে মৃত্যুস্থান।
নৃপতি-নন্দন তথা করিছে প্রয়াণ।।
সতী ভাবে কাল প্রাপ্ত যদি মম পতি।
আমার উচিত হয় যাইতে সংহতি।।
কারে না কহিল কিছু নৃপতির সুতা।
শীঘ্রগতি গেল তবে পতি যায় যথা।।
নৃপতি শুনিয়া বলে নিষেধ বচন।
সাবিত্রী নিষেধ নাহি মানে কদাচন।।
রাজরাণী বার্ত্তা পান, বধূ যায় বন।
চিন্তাকূল মহারাণী আসি সেইক্ষণ।।
সাবিত্রীর প্রতি কহে মধুর বচন।
কহ বধূ, চিন্তা কর কিসের কারণ।।
ফলমূল লয়ে স্বামী আসিবে এখন।
কি কারণে মহাকষ্টে যাবে তুমি বন।।
অন্য কেহ নাহি তাহে, ভীষণ কানন।
কি কারণে চিন্তা কর স্বামীর কারণ।।
দুই দিন হল তাহে আছ উপবাসী।
ভোজন করহ ঘরে আসি সুখে বসি।।
শাশুড়ীর মুখে শুনি এতেক বচন।
কহিতে লাগিল করযোড়ে সেইক্ষণ।।
আসিয়া পশ্চাতে আমি করিব ভোজন।
আজ্ঞা দেহ ঠাকুরাণী দেখে আসি বন।।
বিশেষতঃ আছে হেন শাস্ত্রের প্রসঙ্গ।
ব্রতশেষে আছে হেন শাস্ত্রের প্রসঙ্গ।।
দেখিয়া বনের শোভা দিবস বঞ্চিব।
আনন্দে স্বামীর সঙ্গে এখনি আসিব।।
সাবিত্রীর অভিলাষ বুঝি রাজরাণী।
নিবৃত্ত হইল, আর না কহিল বাণী।।
সাবিত্রী চলিল তবে সহ সত্যবান।
নিবিড় কানন মাঝে করিল প্রয়াণ।।
বিবিধ কৌতুক দেখি যান দুই জন।
বহুবিধ ফল মূল কৈল আহরণ।।
মুনিবাক্য মনে করি নৃপতির সুতা।
স্বামী হেতু অন্তরে হইল চিন্তাযুতা।।
না জানি কেমনে হবে পতির মরণ।
সত্যবান নাহি জানে এত বিবরণ।।
ভ্রমণে করিয়া সুখে তুলে ফলমূল।
পাত্র পরিপূর্ণ হৈল নাহি আর স্থল।।
রাখিয়া আঁকশি সাজি সাবিত্রীর কাছে।
কাষ্ঠ হেতু সত্যবান উঠে গিয়া গাছে।।
কুঠারে কাটিল তবে বৃক্ষসহ ডাল।
উপস্থিত হৈল আসি ক্রমে মৃত্যুকাল।।
অকস্মাৎ শিরঃপীড়া করিল অস্থির।
সহস্র নাগেতে যেন দংশিলেক শির।।
সত্যবান বলে, শুন রাজার তনয়া।
বুঝিতে না পারি কিবা হৈল দেবমায়া।।
দশদিক অন্ধকার দেখি অকস্মাৎ।
সহস্র সহস্র শেল মারয়ে নির্ঘাত।।
দেহ হৈতে যায় বুঝি এবে মোর প্রাণ।
নিস্তার নাহিক আর, হইনু অজ্ঞান।।
সাবিত্রী কহিল, আমি জানি পূর্ব্বকথা।
ধৈর্য্য ধর, অবিলম্বে যাবে শিরোব্যথা।।
এক কথা বলি আমি, শুন দিয়া মন।
বৃক্ষ হৈতে শীঘ্র তুমি নামহ এখন।।
শয়ন করিয়া সুখে থাকহ ঠাকুর।
হইবেক সকল পীড়া মুহূর্ত্তেকে দূর।।
নিজ অঙ্গ বস্ত্র পাতি সতী পুণ্যবতী।
ঊরুতে রাখিয়া শির শোয়াইল পতি।।
১১২. সত্যবানের মৃত্যু এবং যমের
নিকট সাবিত্রীর বরপ্রাপ্তি
চেতন রহিল হৈল রাজার তনয়।
ক্রমে ক্রমে আয়ু শেষ হইল তথায়।।
দেখিয়া নৃপতি-সুতা ভাবে মনে মন।
কাল পরিপূর্ণ হৈল রাজার নন্দন।।
অবশ্য আসিবে হেথা কৃতান্ত কিঙ্কর।
দেখিব কেমনে লয় আমার ঈশ্বর।।
সাবিত্রী এতেক ভাবি রহে ঘোর বনে।
হেথায় ডাকিল যম যত দূতগণে।।
সত্যবানে আনিবারে কহে ধর্ম্মরাজ।
আজ্ঞাতে আসিল শীঘ্র দূতের সমাজ।।
যথায় কাননে পড়ি নৃপতি নন্দন।
তাহার নিকটে গেল যমদূতগণ।।
পরশিতে না পারিল সাবিত্রীর তেজে।
নিরস্ত হইয়া দূত কহে ধর্ম্মরাজে।।
দূত-মুখে ধর্ম্মরাজ পাইয়া বারতা।
আপনি আসিল শীঘ্র সত্যবান যথা।।
দেখিয়া সাবিত্রী বলে, তুমি কোন্ জন।
ধর্ম্মরাজ বলে, আমি সবার শমন।।
রাজপুত্র সত্যবান এই তব স্বামী।
কালপূর্ণ হৈল আজি, লয়ে যাই আমি।।
শুনিয়া সাবিত্রী কহে, যে আজ্ঞা তোমার।
বিধির নির্ব্বন্ধ লঙ্ঘে, শক্তি আছে কার।।
মায়াতে মোহিত সব, কেবা কার পতি।
সবে সত্যধর্ম্ম মাত্র অখিলের গতি।।
এতেক কহিয়া সতী ছাড়ি সত্যবানে।
করযোড়ে রহিলেন যম বিদ্যবানে।।
সত্যবান পাশে আসি তবে সূর্য্যসুত।
শরীর হইতে লৈল পুরুষ অদ্ভূত।।
অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ তনু দেখিতে সুন্দর।
বন্ধন করিয়া নিয়া চলিল সত্বর।।
দেখিয়া পতির দশা হয়ে দুঃখমতি।
কিছু না কহিয়া চলে যমের সংহতি।।
দেখিয়া কৃতান্ত তবে জিজ্ঞাসিল তারে।
কে তুমি, কি হেতু, বল যাবে কোথাকারে।।
কালেতে হইল তব পতির মরণ।
তার জন্য বৃথা চিন্তা কর কি কারণ।।
জগতে নিয়ম আছে সবে এইমত।
কালপূর্ণ হৈলে, সবে যায় মৃত্যুপথ।।
আমার বচনে ঘরে যাহ গুণবতি।
ত্বরায় স্বামীর এবে চিন্ত ঊর্দ্ধগতি।।
ধর্ম্মরাজ মুখে শুনি এতেক উত্তর।
রাজার নন্দিনী কহে করি যোড়কর।।
যে কিছু কহিলে প্রভু, সব জানি আমি।
কেবা কার ভাই বন্ধু, কেবা কার স্বামী।।
সহজে সংসার মিথ্যা, বিশেষ আমার।
মায়াবশে কি কারণে যাব পুনর্ব্বার।।
কাল পূর্ণ, মরে পতি দুঃখ নাহি ভাবি।
সকলে মরিবে, কেহ নহে চিরজীবী।।
এইমত বিশ্বমাঝে আছে যত জন।
জনম লভিলে হয় অব্যশ্য মরণ।।
ধর্ম্মাধর্ম্ম অনুসারে সুখ দুঃখ ভোগ।
নিজ ইচ্ছা নহে, ইহা বিধির সংযোগ।।
স্বকর্ম্ম ভুঞ্জিবে এবে এই মম পতি।
আমার কি সাধ্য করি তাঁর ঊর্দ্ধগতি।।
আপনি আপন বন্ধু, যদি রাখে ধর্ম্ম।
আপনি আপন শত্রু করিলে কুকর্ম্ম।।
সুখ দুঃখ ধর্ম্মাধর্ম্ম সদা অনুগত।
পূর্ব্বাপর আছে এই নীতি শাস্ত্রমত।।
সে কারণে প্রাণপণে করিবেক ধর্ম্ম।
সতের সঙ্গতি হৈলে করে নানা কর্ম্ম।।
সংসারের সার সঙ্গ, বলে মুনিগণে।
সঙ্গদোষে চোর হয়, সাধু সঙ্গগুণে।।
সাবিত্রীর মুখে শুনি এতেক ভারতী।
পরম সন্তুষ্ট হয়ে বলে মৃত্যুপতি।।
পৃথিবীতে সাধ্বী তুমি, নৃপতির সুতা।
তোমার জননী ধন্যা, ধন্য তব পিতা।।
শ্রবণে শুনিনু তব বাক্য সুধারস।
বর লহ গুণবতি, হৈনু তব বশ।।
সত্যবানে ছাড়ি তুমি মাগ অন্য বর।
যাহা ইচ্ছা মাগি লহ আমার গোচর।।
সাবিত্রী কহিল, যদি হলে কৃপাবন।
অপুত্রক আছে পিতা, দেহ পুত্রদান।।
যম বলে, তারে আমি দিনু পুত্রবর।
যাহ শীঘ্রগতি তুমি আপনার ঘর।।
সাবিত্রী কহিল, শুন মম নিবেদন।
তব সঙ্গ ছাড়িবারে নাহি চায় মন।।
সতের সংসর্গে যেন স্বর্গেতে নিবাস।
আমারে করিতে চাহ ইহাতে নিরাশ।।
পূর্ব্ব পিতৃ পুণ্যবলে নিজ ভাগ্যবশে।
তোমা হেন শুননিধি পাই অনায়াসে।।
ইহা হৈতে কর্ম্মবন্ধ না হইল ক্ষয়।
জানিনু আমারে বাম বিধাতা নিশ্চয়।।
এত শুনি তুষ্ট হয়ে বলে মৃত্যুপতি।
অমৃত অধিক শুনি তোমার ভারতী।।
পুনঃ পুনঃ মহানন্দ জন্মাতেছ মনে।
বর মাগ, বিনা সত্যবানের জীবনে।।
সাবিত্রী কহিল, যদি কৃপা হৈল মোরে।
শ্বশুর আছেন অন্ধ, চক্ষু দেহ তাঁরে।।
শমন কহেন, চক্ষু হইবে তাঁহার।
রজনী অধিক হয়, যাও নিজাগার।।
রাজার নন্দিনী কহে, সব জান তুমি।
সংসার বাসনা কভু নাহি করি আমি।।
নাহি চাহি পুত্র বন্ধু, নাহি চাহি পতি।
আজ্ঞা কর, সদা যেন ধর্ম্মে রহে মতি।।
এত শুনি তুষ্ট হয়ে কহে দণ্ডপাণি।
পরম সুশীলা তুমি রাজার নন্দিনী।।
তব বাক্যে হর্ষ পূর্ণ হৈল মোর মন।
বর মাগ বিনা সত্যবানের জীবন।।
সাবিত্রী কহিল, আর না করিব লোভ।
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু, পাছে হয় ক্ষোভ।।
সে কারণে বর নিতে ভয় বাসি মনে।
শুনিয়া কৌতুকে যম কহে সেইক্ষণে।।
পতির জীবন ছাড়ি মাগ অন্য বর।
দিব তাহা, যাহা চাহ আমার গোচর।।
সাবিত্রী কহিল, বর মাগি যে শমন।
রাজ্যহীন শ্বশুরের দেহ রাজ্য ধন।।
যম বলে, হৃত রাজ্য পাবে নৃপবর।
বিলম্বে নাহিক কার্য্য, যাহ নিজ ঘর।।
সাবিত্রী কহিল, শুন মম নিবেদন।
অবশ্য হইবে যাহা বিধির লিখন।।
মায়াতে মোহিত সবে সত্যপথ ত্যজে।
ঘোর পাপ পঙ্ক-হ্রদে ইচ্ছাবশে মজে।।
আমার আমার করি বলে সর্ব্ব জন।
মিথ্যা ঘর পরিবারে মজাইয়া মন।।
বান্ধব শ্বশুর নারী পুত্র পিতা মাতা।
অনর্থের হেতু সব মহা দুঃখদাতা।।
এ সব পালন হেতু ত্যজে নিজ ধর্ম্ম।
ভরণ পোষণ করে করিয়া কুকর্ম্ম।।
পশ্চাতে অধর্ম্মভাগী হয় সেই জনা।
নিজ অঙ্গে ভোগ করে বিবিধ যন্ত্রণা।।
নয়ন থাকিতে অন্ধ প্রায় যত লোক।
কর্ম্মসূত্রে বদ্ধ যেন তসরের পোক।।
বিধির নির্ব্বন্ধ সেই বৃক্ষপত্র খায়।
যথাকালে আপনার কর্ম্মফল পায়।।
জানিয়া তথাপি তারা থাকে অনায়াসে।
পাছে বিপরীত বুদ্ধি হয় কালবশে।।
সুখেতে থাকিব হেন ভাবিয়া অন্তরে।
নিজসূত্রে বন্দী হয়ে অবশেষে মরে।।
সেই মত পৃথিবীতে হৈল যত লোক।
মায়ামোহে মজি সবে শেষে পায় শোক।।
সংসার অসার প্রভু, সার ধর্ম্মপথ।
তাহা বিনা নাহি মম অন্য মনোরথ।।
গৃহ ঘোর মহাবন্ধে যেতে কদাচন।
নিশ্চয় জানিহ দেব, নাহি মম মন।।
সর্ব্বহারা কাঁদে প্রাণ চিন্তার হুতাশে।
শীতল হউক দেব তোমার আবাসে।।
আজ্ঞা কর মুহূর্ত্তেক থাকিব সংহতি।
এত শুনি তুষ্ট হয়ে বলে মৃত্যুপতি।।
তোমার চরিত্র ধন্য লাগে চমৎকার।
অগোচর নহে মম অখি সংসার।।
অল্পকালে ধমর্ম প্রতি হেন তব মতি।
তোমার তুলনাযোগ্য নাহি দেখি ক্ষিতি।।
পৃথিবীতে খ্যাত হৈল তোমার সুযশ।
মধুর বচনে তব হইলাম বশ।।
পতির জীবন ভিন্ন মাগ অন্য বর।
যাহা ইচ্ছা মাগি লহ আমার গোচর।।
কন্যা বলে, এই সত্যবানের ঔরসে।
হইবেক এক পুত্র পঞ্চম বরষে।।
হেনমতে দেহ মোরে শতেক নন্দন।
অঙ্গীকৃত নিজবাক্য করহ পালন।।
কৃতান্ত কহিল, ঘরে যাহ গুণবতি।
মম বরে হবে তব শতেক সন্ততি।।
এত বলি শীঘ্রগতি চলিল শমন।
সাবিত্রী তাঁহার পাছে করেন গমন।।
যম বলে, কি কারণে, যাহ তুমি কোথা।
চারি বর দিনু, কেন ত্যক্ত কর বৃথা।।
সাবিত্রী কহিল, দেব উত্তম কহিলে।
জন্মিবে শতেক পুত্র, নিজে বর দিলে।।
অলঙ্ঘ্য তোমার বাক্য কে পারে লঙ্ঘিতে।
আমার হইবে পুত্র সত্যবান হৈতে।।
ইহার বিধান আগে কহ ধর্ম্মরাজ।
তোমার সংহতি মম নাহি কোন কাজ।।
সাবিত্রীর মুখে শুনি এতেক ভারতী।
পরম লজ্জিত হয়ে কহে মৃত্যুপতি।।
এ তিন ভুবনে তুমি সতী পতিব্রতা।
পবিত্র হইবে লোক শুনি তব কথা।।
বিশেষ করিলে ব্রত চতুর্দ্দশী দিনে।
পাইলে এ চারি বর তাহার কারণে।।
দ্বিতীয় তোমার কর্ম্ম কহনে না যায়।
নতুবা শুনেছ কোথা মৈলে প্রাণ পায়।।
লহ ত তোমার পতি রাজা সত্যবান।
কৌতুকে গমন কর আপনার স্থান।।
যেই ব্রত সাধিলে সতি বসিয়া অহর্নিশি।
লোকে পরে করিবে সাবিত্রী চতুর্দ্দশী।।
ভক্তিভাবে এই ব্রত করে যেই জন।
পাইবে পরম পদ না যায় খণ্ডন।।
তোমার মহিমা যেবা করিবে স্মরণ।
আমা হৈতে ভয় তার না রবে কখন।।
তোমার গুণেতে বশ হইলাম আমি।
যাহ শীঘ্র, গৃহে যাও লয়ে নিজ স্বামী।।
পৃথিবীতে ভোগ কর পরম কৌতুকে।
অন্তকালে দুই জনে যাবে বিষ্ণুলোকে।।
এত বলি মৃত্যুপতি ছাড়ি সত্যবানে।
আনন্দ বিধানে যান আপনার স্থানে।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।
১১৩. সত্যবানের পুনর্জ্জীবন লাভ
পুনঃ পতি পেয়ে সতী হরষিত মতি।
স্বামীর নিকটে যান অতি শীঘ্রগতি।।
মহানন্দে লয়ে সেই অঙ্গুষ্ঠ পুরুষে।
স্বামী-অঙ্গে নিয়োজিল পরম হরিষে।।
চৈতন্য পাইয়া উঠে রাজার নন্দন।
নিদ্রা হতে হৈল যেন পুনঃ জাগরণ।।
হেনকালে শুন যুধিষ্ঠির নৃপমণি।
অস্ত গেল দিবাকর, আইল রজনী।।
দেখি সত্যবান অতি চিন্তাকুল মনে।
কহিতে লাগিল সাবিত্রীরে সম্বোধনে।।
কহ প্রিয়ে কি করিব, অতি ঘোর নিশি।
কিমতে পাইব রক্ষা অরণ্যেতে বসি।।
চিনিতে নারিব পথ, অন্ধকার ঘোর।
কেন প্রিয়ে না করিলে নিদ্রাভঙ্গ মোর।।
হায় বিধি কালনিদ্রা মোরে আনি দিল।
কান্দিবেক মাতাপিতা হয়ে শোকাকুল।।
সাবিত্রী কহিল, প্রভু শুন মম কথা।
হইল যে কর্ম্ম, তাহা চিন্তা কর বৃথা।।
নিদ্রাভঙ্গ করি যদি পাপ বড় হয়।
সেই জন্য জাগাইতে মনে হৈল ভয়।।
বিচার করিনু মনে, আছে কিছু বেলা।
নিশ্চিন্তে রহিনু আমি মনে করি হেলা।।
মেঘেতে আচ্ছন্ন, বেলা নারিনু বুঝিতে।
মম দোষ নাহি কিছু, না ভাবিহ চিতে।।
অকারণে গৃহে যেতে কর মনোরথ।
রাত্রিকালে বনস্থলে না জানিব পথ।।
চল প্রভু এই বৃক্ষে আরোহণ করি।
কোনমতে বঞ্চি প্রভু এ ঘোর শর্ব্বরী।।
প্রভাতে উঠিয়া কালি করিব গমন।
যে আজ্ঞা তোমার, এই মম নিবেদন।।
সত্যবান বলে, হবে যাহা আছে ভালে।
ইহা না করিয়া কোথা যাব রাত্রিকালে।।
এত বলি উঠি দোঁহে বৃক্ষের উপরে।
চিন্তায় আকুল রহে দুঃখিত-অন্তরে।।
হেথায় হইল চক্ষু অন্ধ নৃপতির।
পুত্রের বিলম্ব দেখি হলেন অস্থির।।
শোকাকুলে কান্দে যত রাজার ঘরণী।
কোথায় রহিল পুত্র, এ ঘোর রজনী।।
তিন দিন উপবাসী বধূ গেল সাথে।
না জানি কেমনে নষ্ট হইল বা পথে।।
এতদিনে স্বামী যদি পেলে চক্ষুদান।
হারাইল রত্ননিধি পুত্র সত্যবান।।
হায় বধু গুণবতী, নন্দিনী সমান।
তোমা দোঁহে না দেখিয়া ফাটে মোর প্রাণ।।
ঘোর বনে বনজন্তু শত শত ছিল।
অভাগীর কর্ম্মদোষে দোঁহারে হিংসিল।।
নাম ধরি কান্দি উঠে দম্পতি দুজনে।
কারণ জানিতে আসে যত মুনি স্থানে।।
একে একে কহে তবে যত ‍মুনিগণ।
কি হেতু তোমরা এত করিছ রোদন।।
আশ্বাস করিয়া কয়, না করিহ ভয়।
সুখের লক্ষণ রাজা জানিহ নিশ্চয়।।
আমা সবাকার বাক্য কভু নহে আন।
পাইবে সাবিত্রী আর পুত্র সত্যবান।।
সান্ত্বনা করিয়া সবে চলি গেল ঘর।
চিন্তাকুল রহে দোঁহে দুঃখিত অন্তর।।
এতেক কষ্টেতে বঞ্চিলেক সেই নিশি।
হেনকালে সূর্য্যোদয় হয় পূর্ব্বদিশি।।
প্রভাত জানিয়া তবে রাজার নন্দন।
ফল মূল কাষ্ঠ লয়ে করিল গমন।।
হেথা রাজা রাণী করে পথ নিরীক্ষণ।
হেনকালে সন্নিধানে আসে দুই জন।।
তিতিল দোঁহার অঙ্গ প্রেম-অশ্রু-জলে।
সেই মত হর্ষ হৈল সর্ব্ব বনস্থলে।।
আশ্রমে আসিল দোঁহে প্রফুল্ল বদনে।
সত্যবান বধূ সহ আসিল ভবনে।।
শুনিয়া আসিল বনে ছিল যত জন।
বিস্ময় মানিয়া সবে জিজ্ঞাসে কারণ।।
কহিল সাবিত্রী সবাকারে বিবরণ।
আদি অন্ত যত সব বনের কথন।।
এত শুনি সর্ব্বজন সাবিত্রীর কথা।
জানিল মানবী নহে অশ্বপতি-সুতা।।
অনেক প্রশংসা করে মিলি সর্ব্বজন।
আশীর্ববাদ করি সবে করিল গমন।।
সাবিত্রী-চরিত্র-কথা শুনি রাজরাণী।
আপনারে কৃতকৃত্যা ভাগ্যবতী মানি।।
স্নান দান করি রহে হরিষ অন্তরে।
শুন ধর্ম্মরাজ, তার কত দিনান্তরে।।
অশ্বপতি নরপতি হৈল পুত্রবান।
শত্রু জিনি নিজ রাজ্য নিল সত্যবান।।
সাবিত্রীর শত পুত্র হৈল যথাকালে।
নিজ রাজ্যে একত্র বঞ্চিল কুতূহলে।।
সাবিত্রীর তুল্য নাই এ তিন ভুবনে।
দুই কুল উদ্ধারিল আপনার গুণে।।
অন্ধ পায় চক্ষু, মৃতজনে পায় প্রাণ।
অপুত্রক ছিল রাজা হৈল পুত্রবান।।
জন্মাইল আপনার শতেক সন্ততি।
ভ্রষ্ট রাজ্য উদ্ধারিল সতী গুণবতী।।
এই হেতু সর্ব্বজন, ভুব্ন ভিতরে।
সাবিত্রী সমান হও আশীর্ব্বাদ করে।।
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত এই ধর্ম্মের নন্দন।
দ্রৌপদীতে দেখি আমি তাহার লক্ষণ।।
এত বলি নিজস্থানে গেল মুনিরাজ।
আনন্দ বিধানে রহে পাণ্ডব সমাজ।।
ভারত-চরিত্র রচে মহামুনি ব্যাস।
পাঁচালি প্রবন্ধে বিরচিল কাশীদাস।।
১১৪. যুধিষ্ঠিরের কাম্যবন ত্যাগ
এবং দ্রৌপদীর দর্প বিবরণ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, শুন কুরুবর।
কৃষ্ণা সহ কাম্যবনে পঞ্চ সহোদর।।
মার্কণ্ডেয় মুনি যদি করিল গমন।
হইল বিষাদে মগ্ন, সবাকার মন।।
কাম্যবন ত্যাগ হেতু বিচারয় মনে।
হেনকালে আসিলেন দেব নারায়ণে।।
দিন কত সেই স্থানে রহে যদুবীর।
আনন্দসাগরে মগ্ন রাজা যুধিষ্ঠির।।
আর দিন সর্ব্ব জন বসি একযোগে।
কহিলেন যুধিষ্ঠির গোবিন্দের আগে।।
মম এক নিবেদন দেবকীতনয়।
অতঃপর হেথা থাকা উপযুক্ত নয়।।
নষ্ট চেষ্টা আরম্ভিবে যত ‍দুষ্টগণ।
পুনঃ পুনঃ আসি সবে করিবে হিংসন।।
আর দেখ সমাগত অজ্ঞাত সময়।
এ সময়ে শত্রু কাছে থাকা ভাল নয়।।
এ বন ত্যজিয়া যাব অন্য দূরদেশ।
খুঁজিয়া কৌরব যথা না পায় উদ্দেশ।।
সে কারণে নিবেদন করি ভগবান।
বুঝিয়া করহ কার্য্য, যে হয় বিধান।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যাহা কেহিতেছ তুমি।
ইহার বিচার পূর্ব্বে করিয়াছি আমি।।
চল সবে অজ্ঞাতে রহিবে অনায়াসে।
কৌরব চণ্ডাল নাহি যায় যেই দেশে।।
শুনিয়া কৃষ্ণের মুখে এতেক উত্তর।
আনন্দিত যুধিষ্ঠির পঞ্চ সহোদর।।
ধৌম্য পুরোহিত সঙ্গে করি ধর্ম্মরাজ।
নিকটে আনিয়া যত ব্রাহ্মণ-সমাজ।।
করযোড়ে কহিলেন রাজা দুঃখমনে।
অবধান কর সবে মম নিবেদনে।।
সবে জান হৈল আসি অজ্ঞাত সময়।
সে কারণে নিবেদিতে মনে করি ভয়।।
কৃপা করি যাও সবে হস্তিনা নগর।
যাবত না হয় পূর্ণ অজ্ঞাত বৎসর।।
করিবে সবার সেবা মম জ্যেষ্ঠতাতে।
কহিবে পাণ্ডব গেল বঞ্চিতে অজ্ঞাতে।।
তথায় রহিতে সবে যদি নাহি মন।
পাঞ্চাল দেশেতে তবে করিহ গমন।।
আশীর্ব্বাদ কর যেন সবার প্রসাদে।
অজ্ঞাত বৎসর মোরা বঞ্চি অপ্রমাদে।।
এত শুনি বিদায় হইল সর্ব্বজন।
হলেন বিশেষ দুঃখী ধর্ম্মের নন্দন।।
আশীর্ব্বাদ করি তবে বিপ্রকুল চলে।
কতক হস্তিনা গেল, কতক পাঞ্চালে।।
সবারে বিদায় করি রাজা যুধিষ্ঠির।
কাম্যবন হৈতে তবে হলেন বাহির।।
আগে ধর্ম্ম চলিলেন, বিপ্র কত জন।
গোবিন্দ সহিত যান পাছে চারি জন।।
চলিলেন যাজ্ঞসেনী পাকপাত্র হাতে।
ত্রৈলোক্য-মোহিনীরূপা সবার পশ্চাতে।।
বহু দিন নিবসতি ছিল কাম্যবন।
ছাড়িয়া যাইতে সবে নিরানন্দ মন।।
বিবিধ পর্ব্বত আর বহু নদ নদী।
স্থাবর জঙ্গম আদি কে করে অবধি।।
বিবিধ বনের শোভা দেখিয়া কৌতুকে।
স্বচ্ছন্দ গমনে সবে যান মনঃসুখে।।
তারপর তাহার দ্বিতীয় দিনান্তরে।
নিকটে আইল সবে কাম্য সরোবরে।।
দেবের দুর্ল্লভ সেই তীর্থ মনোরম।
জলে জলজন্তু, নানাজতি বিহঙ্গম।।
প্রফুল্ল কমলে ভৃঙ্গ পিয়ে মকরন্দ।
কুসুম-উদ্যান তটে দেখিতে আনন্দ।।
বসিল বৃক্ষের তলে দেখি মনোরমে।
বিশ্রাম করিল সবে পথি পরিশ্রমে।।
জল স্থল দেখি আর রম্য কাম্যবন।
প্রশংসা করেন নানামতে সর্ব্বজন।।
শ্রীকৃষ্ণ কহেন, ইথে সবে কর স্নান।
পৃথিবীতে তীর্থ নাহি ইহার সমান।।
এ তীর্থ স্পর্শনে নাহি যম অধিকার।
তর্পণ করিলে পিতৃমাতৃ-কুলোদ্ধার।।
এতেক কহেন যদি দেবকীনন্দন।
আনন্দ বিধানে স্নান করে সর্ব্ব জন।।
হেনমতে পঞ্চ ভাই পরম কৌতুকে।
তিন রাত্রি বঞ্চি তথা রহিলেন সুখে।।
পরদিন প্রাতঃকালে উঠে সর্ব্বজনে।
হেনকালে যাজ্ঞসেনী ভাবে মনে মনে।।
এ তিন ভুবনে আমি সতী পতিব্রতা।
স্বামীর সহিত বনে দুঃখেতে দুঃখিতা।।
পুনঃ পুনঃ ধন্যবাদ দেয় মুনিগণ।
নিশ্চয় জানিনু মম সফল জীবন।।
অখিল ভুবনপতি এত বশ যার।
ইহা হৈতে কিবা আছে গৌরবের আর।।
এইমত অহঙ্কার করে যাজ্ঞসেনী।
জানিলেন অন্তর্য্যামী দেব চক্রপাণি।।
গর্ব্ব চূর্ণ করিবারে চিন্তে নারায়ণ।
দেখিলেন হেনকালে এক তপোবন।।
নানা বৃক্ষে নানা ফল ধরে বিধিমতে।
কৌতুকে দেখেন সবে চাহি দুই ভিতে।।
পাসরিল পথশ্রম মহা আনন্দিত।
কত দূরে তপোবনে হন উপনীত।।
স্বর্গের সমান সেই স্থান মনোহর।
দেখি হৃষ্টমতি ধর্ম্ম পঞ্চ সহোদর।।
দৈবে পথশ্রমে হৈল অবশ শরীর।
শ্রান্তিযুক্ত সেই স্থানে বসে যুধিষ্ঠির।।
স্থান দান আরম্ভিল কোন কোন জন।
আলস্য ত্যজিতে কেহ করিল শয়ন।।
পূজা হেতু কেহ বা পুষ্পচয়ন করে।
কেহ বা ফল মূল আনে ক্ষুধার তরে।।
মনের আনন্দে সবে বসি রহে তথা।
দৈবের সংযোগ শুন অপূর্ব্বা বারতা।।
মহাভারতের কথা অমৃতসমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।
১১৫. অকালে আম্রের বিবরণ
ও দ্রৌপদীর দর্পচূর্ণ
অসময়ে আম্র এক তরুডালে দেখি।
অর্জ্জুনে কহিলা কৃষ্ণা পরম কৌতুকী।।
আশ্চর্য্য দেখহ দেব, এ বড় বিস্ময়।
এই শুনি ধনঞ্জয় যুড়ি দিব্য শর।।
দিলেন পাড়িয়া আম্র কৃষ্ণার গোচর।
আম্র হাতে করি কৃষ্ণা আনন্দিত মন।
হেনকালে আসিলেন দেবকীনন্দন।।
দ্রৌপদীর অহঙ্কার চূর্ণ করিবারে।
কহিলেন বনমালী দুঃখিত অন্তরে।।
কি কর্ম্ম করিলে পার্থ, কভু ভাল নয়।
দুরন্ত অনর্থ আজি ঘটিল নিশ্চয়।।
তোমার কি দোষ দিব, বিধির সংযোগ।
পূর্ব্বকৃত কর্ম্মবশে হৈল এই ভোগ।।
হেন বুদ্ধি হয় যার, তার কাল পূর্ণ।
পণ্ডিত জনের হয় ভ্রমে মতিচ্ছন্ন।।
নিশ্চয় মজিলে, হেন লয় মম মনে।
নহিলে কুবুদ্ধি কেন তোমা হেন জনে।।
শুনিয়া কৃষ্ণের কথা রাজা যুধিষ্ঠির।
ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞাসেন, কহ যদুবীর।।
যাহাতে পাইল ভয় তোমা হেন জন।
সামান্য বিষয় ইহা নহে কদাচন।।
অনর্থের হেতু এই অকালের ফল।
কাহার আশ্রম দেব এই বনস্থল।।
কোন্ মহাজন সেই, কত বল ধরে।
কিমতে রহিব এই বনের ভিতরে।।
কিমতে পাইব রক্ষা কর পরিত্রাণ।
অব্যর্থ তোমার বাক্য বজ্রের সমান।।
শ্রীকৃষ্ণ কহেন, মুনি নামে সন্দীপন।
তাঁহার আশ্রম এই শুনহ রাজন।।
যাঁর নামে সুরাসুর হয় কম্পমান।
অলঙ্ঘ্য যাঁহার বাক্য বজ্রের সমান।।
ত্রিভুবনে আছে যত সাধ্য সিদ্ধ ঋষি।
সন্দীপন তুল্য কেহ নাহিক তপস্বী।।
বহুকাল নিবসতি করে এই বন।
কদাচিৎ কোন স্থানে না যান কখন।।
তপস্যা করিতে যান প্রত্যূষ সময়।
সমস্ত দিবস সেই অনশনে রয়।।
আশ্চর্য্য দেখহ তার তপস্যার বলে।
প্রতিদিন এক আম্র এই বৃক্ষে ফলে।।
সমস্ত দিবস গেলে সন্ধ্যাকালে পাকে।
আশ্রমে আসিয়া মুনি পরম কৌতুকে।।
বৃক্ষ হৈতে আশ্র পাড়ি করেন ভক্ষণ।
এইমতে বহুকাল আছে সন্দীপন।।
হেন আশ্র দৌপদীকে পাড়ি দিল পার্থ।
দোঁহার কর্ম্মের দোষে হইল অনর্থ।।
তপস্যা করিয়া মুনি আশ্রমেতে আসি।
আম্র না পাইয়া করিবেক ভস্মরাশি।।
চিন্তিয়া না দেখি কিছু ইহার উপায়।
কি কর্ম্ম করিলে পার্থ কৃষ্ণার কথায়।।
শুনিয়া কৃষ্ণের মুখে রাজা যুধিষ্ঠির।
বিপদ্ জানিয়া বড় হলেন অস্থির।।
করাযোড়ে কহিলেন গোবিন্দের আগে।
পাণ্ডবের ভালমন্দ তোমারে যে লাগে।।
পাণ্ডবেরে রক্ষা করে, নাহি হেন জন।
গুপ্ত কথা নহে এই দেবকীনন্দন।।
রাখিবে রাখহ, নহে যাহা লয় মনে।
তোমার আশ্রিত জনে মারে কোন্ জনে।।
তোমা হৈতে যেই কর্ম্ম না হবে শমতা।
অন্যজন সে কর্ম্মেতে চিন্তা করে বৃথা।।
তোমার আশ্রিত মোরা ভাই পঞ্চ জন।
কিমতে পাইব রক্ষা, কহ নারায়ণ।।
শুনিয়া ধর্ম্মের কথা কহেন শ্রীপতি।
বৃক্ষেতে ফলিয়া আম্র আছিল যেমতি।।
সেই মত বৃক্ষে যদি লাগে পুনর্ব্বার।
তবে সে হইবে রাজা সবার নিস্তার।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন, এ তিন ভুবন।
ত্রিবিধ সমস্ত লোকে পালে যেই জন।।
উৎপত্তি প্রলয় হয় যাঁহার আজ্ঞায়।
ডালে আম্র লাগাইতে তাঁর কোন্ দায়।।
গোবিন্দ বলেন, এক আছে প্রতিকার।
বৃক্ষডালে আম্র লাগে, সবার নিস্তার।।
করিলে করিতে পার, নহে বড় কাজ।
কপট ত্যজিয়া যদি কহ ধর্ম্মরাজ।।
যুধিষ্ঠির বলে, কৃষ্ণ যে আজ্ঞা তোমার।
মম সাধ্য হয় যদি, কর প্রতিকার।।
প্রতিকারে মৃত্যু ইচ্ছা করে কোন জনে।
আজ্ঞা কর পালিব তা করি প্রাণপণে।।
গোবিন্দ বলেন, রাজা নহে বড় কাজ।
সবার নিস্তার হয়, শুন মহারাজ।।
দ্রুপদনন্দিনী আর তোমা পঞ্চ জন।
কোন কথা অনুক্ষণ জাগে কার মনে।।
সবার মনের কথা কহ মম আগে।
কপট ত্যজিয়া কহ, তবে আম্র লাগে।।
এইমত সর্ব্বজনে করে অঙ্গীকার।
প্রথমে কহেন কথা ধর্ম্মের কুমার।।
শুন চিন্তামণি চিন্তা করি অনুক্ষণ।
পূর্ব্বমত বিভবাদি হইলে নারায়ণ।।
ব্রাহ্মণ ভোজন যজ্ঞ করি অহর্নিশি।
ইহা বিনা অন্য আমি নহি অভিলাষী।।
অনুক্ষণ মম মনে এই মনোরথ।
শুনিয়া অকাল আম্র উঠে কত পথ।।
আশ্চর্য্য দেখিয়া সবে হরিষ অন্তর।
কহিতে লাগিল তদন্তরে বৃকোদর।।
ভীম বলে, কৃষ্ণচন্দ্র শুন মম বাণী।
এই চিন্তা করি আমি দিবস রজনী।।
গদাঘাতে শত ভাই কৌরব সংহারি।
দুষ্ট দুঃশাসন-বুক নখ দিয়া চিরি।।
উদর পূরিব আমি তাহার শোণিতে।
কৃষ্ণার কুন্তল বান্ধি দিব এই হাতে।।
মহামদে মত্ত হয়ে দুষ্টবুদ্ধি কুরু।
বস্ত্র তুলি দ্রৌপদীরে দেখাইল ঊরু।।
ভাঙ্গিয়া পাড়িব রণমধ্যে গদা মারি।
এই চিত্তে করি আমি দিবস শর্ব্বরী।।
এতেক কহিল যদি ভীম মহামতি।
কত দূরে আম্র তবে উঠে ঊর্দ্ধগতি।।
অর্জ্জুন কহেন, এই জাগে মম মনে।
অরণ্যে যখন আসি ভাই পঞ্চ জনে।।
দুই হাতে চতুর্দ্দিকে ফেলাইনু ধূলা।
তাদৃশ অস্ত্রেতে কাটি দুষ্ট ক্ষত্রগুলা।।
দিব্যবাণে কর্ণবীরে করিব নিধন।
ভীমসেন মারিবেক ভাই শত জন।।
এ সব ভাবিয়া করি কালের হরণ।
আমার মনের কথা মুন নারায়ণ।।
তবে আম্র কতদূরে উঠে ঊর্দ্ধপথে।
নকুল কহিল তবে কৃষ্ণের সাক্ষাতে।।
শুন কৃষ্ণ যেই কথা মনে চিন্তা করি।
দেশে গিয়া রাজা হৈলে ধর্ম্ম-অধিকারী।।
পূর্ব্বমত রব আমি হয়ে যুবরাজ।
ধর্ম্মরাজে ভেটাইব নৃপতি সমাজ।।
বিচারিয়া বলিব দেশের ভাল মন্দ।
তবে আম্র কতদূরে উঠিল স্বচ্ছন্দ।।
সহদেব বলে, অনুক্ষণ ভাবি সনে।
রাজ্যে গিয়া যুধিষ্ঠির বসিলে আসনে।।
করিব রাজার আগে চামর ব্যজন।
লইব সবার তত্ত্ব, যত পুরজন।।
নিযুক্ত রহিব নিত্য ব্রাহ্মণ-ভোজনে।
সব দুঃখ পাসরিব জননী পালনে।।
মনের মানস কহিলাম অকপটে।
এতেক কহিতে আম্র কত দূর উঠে।।
অতঃপর ধীরে ধীরে বলে যাজ্ঞসেনী।
ইহা চিন্তা করি আমি দিবস রজনী।।
আমারে দিয়াছে দুঃখ দুষ্টগণ যত।
ভীমার্জ্জুন হাতে হবে সর্ব্ব জন হত।।
তা সবার নারীগণ কান্দিবেক দুঃখে।
দেখি পরিহাস করি মনের কৌতুকে।।
পূর্ব্বমত নিত্য করি যজ্ঞ মহোৎসব।
পালন করিব সুখে যতেক বান্ধব।।
এতেক কহিলা যদি কৃষ্ণা গুণবতী।
পুনর্ব্বার আম্রের হইল অধোগতি।।
মহাভীত হয়ে তবে কহে যুধিষ্ঠির ।
কি হেতু পড়িল আম্র, কহ যদুবীর।।
গোবিন্দ বলেন, রাজা কি কহিব কথা।
সকল করিল নষ্ট দ্রুপদদুহিতা।।
কহিল সকল যত কপট বচন।
সে কারণ পড়ে আম্র ধর্ম্মের নন্দন।।
ব্যগ্র হয়ে পঞ্চ ভাই কহে করপুটে।
উপায় করহ কৃষ্ণ, যাহে আম্র উঠে।।
গোবিন্দ কহেন, কৃষ্ণা কহ সত্য কথা।
নিশ্চয় বৃক্ষেতে আম্র লাগিবে সর্ব্বথা।।
কহিল কৃষ্ণার প্রতি ধর্ম্ম-নরপতি।
কি কারণে সৃষ্টি নষ্ট কর গুণবতী।।
কপট ত্যজিয়া কহ গোবিন্দের আগে।
সবার জীবন রয়, গাছে আম্র লাগে।।
এতেক কহিল যদি ধর্ম্মের তনয়।
কিছু না কহিয়া দেবী মৌনভাবে রয়।।
দেখিয়া কুপিল তবে পার্থ ধনুর্দ্ধর।
দ্রৌপদীরে মারিবারে যুড়ে দিব্য শর।।
অর্জ্জুন কহেন, শীঘ্র কহ সত্য কথা।
কাটিব নচেৎ তীক্ষ্ণ শরে তোর কাথা।।
এতেক কহিল যদি পার্থ মহামতি।
লজ্জা ত্যজি কহে তবে কৃষ্ণা গুণবতী।।
দ্রৌপদী কহিল, দেব কি কহিব আর।
কায়মনোবাক্যে তুমি জান সবাকার।।
যজ্ঞকালে কর্ণ বীর আসিল যখন।
তারে দেখি মনে মনে চিন্তিনু তখন।।
এই জন হৈত যদি কুন্তীর নন্দন।
ইহার সহিত পতি হৈত ছয় জন।।
এখন হইল সেই কথা মম মনে।
এতেক কহিতে আম্র উঠে সেইক্ষণে।।
বৃক্ষেতে লাগিল যেন ছিল পূর্ব্বমত।
আশ্চর্য্য মানিয়া সবে হৈল আনন্দিত।।
নিস্তার পাইয়া মৌনে রন যুধিষ্ঠির।
গর্জ্জিয়া উঠিয়া কহে বৃকোদর বীর।।
এই কি তোমার রীতি কৃষ্ণা দুষ্টমতি।
এক পতি সেবা করে সতী কুলবতী।।
বিশেষে তোমার এই পতি পঞ্চ জন।
তথাপি বাঞ্ছহ মনে সূতের নন্দন।।
ইহাতে কহাস লোকে পতিব্রতা সতী।
প্রকাশ করিলি তোর কুৎসিত প্রবৃত্তি।।
সভামধ্যে বলে সবে পরম পবিত্র।
এত দিনে ব্যক্ত হৈল নারীর চরিত্র।।
অবিশ্বাসী সর্ব্বনাশী তুই দুষ্টমতি।
কি জন্য হইল তোর এম কুরীতি।।
যদ্যপি শত্রুর প্রতি আছে তোর মন।
বিশ্বাস করিবে তোরে আর কোন্ জন।।
এত বলি মহাক্রোধ গদা লয়ে ভীম।
দ্রৌপদী মারিতে যায় বিক্রমে অসীম।।
ঈষৎ হাসিয়া তবে দেব জগন্নাথ।
শীঘ্রগতি ভীমের ধরেন দুই হাত।।
সহাস্যে শ্রীমুকে তবে কহে ভীমসেনে।
দ্রৌপদীরে নিন্দা তুমি কর অকারণে।।
কদাচিৎ দ্রৌপদীর দুষ্ট নহে মন।
কহিব তোমারে আমি ইহার কারণ।।
সকল বৃত্তান্ত জানি সবাকার আমি।
অকারণে দ্রৌপদীর দুষ্ট নহে মন।
কহিব তোমারে আমি ইহার কারণ।।
সকল বৃত্তান্ত জানি সবাকার আমি।
অকারণে দ্রৌপদীরে নিন্দ ভীম তুমি।।
নারী মধ্যে এমত নাহিক কোন জন।
তবে যে কহিল কৃষ্ণা ত্রাসের কারণ।।
ইহার কারণ আছে, অতি গুপ্তকথা।
এখন উচিত নহে, কহিব সর্ব্বথা।।
দেশে গিয়া নরপতি বসিলে আসনে।
বলিব বিশেষ করি তবে পঞ্চজনে।।
কৃষ্ণার সমান সতী পতিব্রতা নারী।
ক্ষিতিমধ্যে নাহি কেহ, কহিবারে পারি।।
শুনিয়া কৃষ্ণের মুখে এতেক উত্তর।
নিবৃত্ত হইয়া বসে বীর বৃকোদর।।
আশ্চর্য্য মানিল যুধিষ্ঠির নৃপমণি।
লজ্জায় মলিন মুখে রহে যাজ্ঞসেনী।।
অপুর্ব্ব কৃষ্ণের মায়া কে বুঝিতে পারে।
কেবল কৃষ্ণার গর্ব্ব চূর্ণ করিবারে।।
করিলেন এত ছদ্ম মিথ্যা প্রবঞ্চনা।
কৌতুকেতে স্নান দান করে সর্ব্ব জনা।।
আহার করিল ফলমূল কুতূহলে।
পঞ্চ ভাই কৃষ্ণেরে কহিল হেনকালে।।
অতঃপর জগন্নাথ কর অবধান।
এ স্থান হইতে করি আমরা প্রস্থান।।
শ্রীকৃষ্ণ কহেন, আসিয়াছ মুনি স্থানে।
বিনা সম্ভাষিয়া তাঁরে যাইব কেমনে।।
অন্য কেহ নহে রাজা তুমি উপস্থিত।
আসিয়া আশ্রমে মুনি হবেন দুঃখিত।।
বলিবেন যুধিষ্ঠির আশ্রমেতে আসি।
অবজ্ঞা করিয়া গেল মোরে না সম্ভাষি।।
সে হেতু দিনেক থাকা হেথা যুক্তি হয়।
এ যুক্তি সবার মনে লয় কি না লয়।।
ধর্ম্ম বলিলেন, দেব যে আজ্ঞা তোমার।
ভুবন ভিতরে লঙ্ঘে হেন শক্তি কার।।
এত বলি মনঃসুখে রহে সর্ব্বজন।
হেথা মুনি জানিলেন কৃষ্ণ আগমন।।
নিজের প্রশংসা করে নিজে বহুতর।
ধন্য আমি, সুপবিত্র হৈল কলেবর।।
তপস্যা করিয়া যাঁর দৃষ্টি অভিলাষী।
অযত্নে তাঁহার দেখা পাই ঘরে বসি।।
এত বলি মনঃসুখে তুলি ফলমুল।
হরিষ অন্তরে চলে হইয়া ব্যাকুল।।
আশ্রমে আসিয়া মুনি হৈল উপনীত।
মধ্যাহ্ন সময়ে যেন আদিত্য উদিত।।
পূরাইতে জনার্দ্দন ভক্ত মনোরথ।
আসিলেন অগ্রসরি কতদূর পথ।।
সেইমত সর্ব্বজন আসিল সংহতি।
মুনিবরে প্রণমিল সবে হৃষ্টমতি।।
শ্রীকৃষ্ণে দেখিয়া কহে মুনি সন্দীপন।
অনন্ত তোমার মায়া জানে কোন জন।।
তুমি ব্রহ্মা, তুমি শিব, তুমি নারায়ণ।
কি শক্তি আমার প্রভু করিতে স্তবন।।
বহুমত স্তব করি মুনি সন্দীপন।
আশ্রমে আসিয়া দিল বসিতে আসন।।
তদ্রুপ আসন দেন আর সর্ব্বজনে।
রহিলেন সবর্বজন আনন্দিত মনে।।
অতিথি বিধানে কৈল সবাকার পূজা।
পরম আনন্দমতি যুধিষ্ঠির রাজা।।
নানা কথা কৌতুকেতে রহে মনোরথে।
রজনী বঞ্চিয়া সবে উঠিল প্রভাতে।।
পঞ্চ ভাই প্রণমিল তপোধন-বরে।
বিদায় হইয়া যান হরিষ-অন্তরে।।
কহিলেন কৃষ্ণ তবে মুনি সন্দীপনে।
সম্ভাষ করিল পাণ্ডপুত্র পঞ্চ জনে।।
তথা হৈতে পূর্ব্বভিতে করেন গমন।
দুই দিকে দেখে কত রমণীর বন।।
ভারত-পঙ্কজ-রবি মহামুনি ব্যাস।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র