সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-৭

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-৭
পদ্মপুরাণের কয়েকটি শ্লোক ( পাদ্মোত্তর খন্ডে ১০৪।১০৫ অধ্যায়) উদ্ধৃতি করছি। এ শ্লোক কয়টিতে যারা পশু বলি দেন তাদের বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে-
জীবনুকম্পাং বিজ্ঞাতুং ততো দুর্গাং সদাশিবঃ।
পপ্রচ্ছ পরম প্রীত্যা গূঢ়মেতদ্বচো মুদা।।
সর্বে বিষ্ণুময়া জীবাস্ত্বদ্ভক্তাশ্চ কথং শিবে।
শ্রুতং ময়া তবোদ্দেশে কুর্য্যুঃ কামনয়া বধং।।
মহান্ সন্দেহ ইতি মে ব্রুহি ভদ্রে সুনিশ্চিতং।।
শঙ্করী তদ্বচঃ শ্রুত্বা শিব ব্রক্ত্র বিনির্গতং।
ভীতাত্যন্তং হি ব্রহ্মর্ষে প্রত্যুবাচ সদাশিবং।।
শ্রীপার্বত্যুবাচ
যে মমার্চ্চনমিত্যুক্তা প্রাণিহিংসন-তৎপরাঃ
তৎপূজনং মমামেধ্যং যদ্দোষাৎতদধোগতিঃ।।
মদর্থে শিব কুর্বন্তি তামসা জীবঘাতনং ।
আকল্পকোটি নিরয়ে তেষাং বাসো ন সংশয়ঃ।।
মম নায়াথবা যজ্ঞে পশুহত্যাং করোতি যঃ।
ক্বাপি তন্নিষ্কৃতির্নাস্তি কুম্ভীপাকমবাপ্নুয়াৎ।।
দৈবে পৈত্রে তথাত্মার্থে যঃ কুর্য্যাৎ প্রাণিহিংসনং।
অর্থঃ জীবে প্রতি অনুকম্পা কি জানার নিমিত্ত সদাশিব পরম আনন্দ সহকারে দুর্গাদেবীকে এ গূঢ় প্রীতি বাক্য জিজ্ঞাসা করলেন। শিবে সকল জীবই বিষ্ণুময় এবং তোমার ভক্ত; তথাচ মানবেরা কামনা করে তোমার উদ্দেশ্যে জীবহত্যা করে শুনেছি- এ কিরূপ? ভদ্রে, এ বিষয়ে আমার বিশেষ সন্দেহ জন্মেছে, প্রকৃত তত্ত্ব বল। হে ব্রহ্মর্ষে! শিবমুখ বিনিঃসৃত এ বচন শুনে শঙ্করী অতিশয় কাতর ভাবে সদাশিবকে প্রত্যুত্তর করলেন। আমার অর্চনা- এরূপ বলে অনেক মানব প্রাণি হিংসা করে থাকে, সে পূজা আমার অভিরুচি নয়, তা অপবিত্র, তাতে দোষ ঘটে এবং তার জন্য তাদের অধোগতি হয়ে থাকে। হে মঙ্গলময়! যে সকল মানব তমবশে আমার উদ্দেশ্যে জীবঘাত করে থাকে, তারা আকল্প কোটি নরকে বাস করে, তদ্বিষয়ে সংশয় নেই। আমার নাম লয়ে অথবা যজ্ঞে যে ব্যক্তি পশু হত্যা করে, কিছুতেই তার নিষ্কৃতি নেই, কুম্ভীপাক নরকই সে লাভ করে থাকে।

যজ্ঞে বধ ও অবধ বিষয়ে একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী শাস্ত্র হতে চয়ণ করা যেতে পারে। মহারাজা হরিশ্চন্দ্র বরুণদেবের কাছে প্রতিশ্রুতবদ্ধ থাকায় নরমেধ যজ্ঞের আয়োজনকরছেন। যজ্ঞে তৎ পুত্রের স্থলে ব্রাহ্মণ-বটু শুনঃশেপকে বলিরূপে যুপাকাষ্টে আবদ্ধ করা হয়েছে। শুনঃশেপের ভয়ার্ত কাতর ক্রন্দনে ঘাতকের প্রাণেও দয়ার উদ্রেক হলে সরে দাড়াল। যজ্ঞস্থলে করুণ আর্তনাদের সুর সৃষ্টি হলো। তখন কৌশিক নন্দন বিশ্বামিত্র মুনি রাজাকে বললেন,“ রাজন! আপনি নিশ্চয় জানবেন, দয়া সম পূণ্য ও হিংসা সম পাপ আর নেই। যারা কাম্যবস্তু উপভোগ নিতান্ত অনুরাগী, তাদের ধর্ম বিষয়ে প্রবত্তি উৎপাদনার্থেই হিংসা ধর্মশাস্ত্রে উল্লিখি হয়েছে; ......বস্তুত: মহারাজ, আত্মশুভাভিলাষী ব্যক্তির আত্মদেহরাক্ষার্থ পরদেহে ছেদন করা সর্বপ্রকারেই কদাচ কর্তব্য নয়। সর্বভূতে দয়া ও যে কোন বস্তু লাভেই সন্তোষ এবং সমুদয় ইন্দ্রিয়বেগ শান্তি দ্বারাই জগদীশ্বর অচিরকাল মধ্যেই মন্তুষ্ট হয়ে থাকেন। হে নৃপবর! সকল প্রাণিরই যখন জীবন ধারণ সর্বদা প্রিয়, তখন সকল প্রাণিকেই আপনার ন্যায় বিবেচনা করা সকলেরই একান্ত কর্তব্য...........বৈর ব্যতীত যে যাকে নিজসুখ কামনায় হত্যা করে, নিশ্চয় সেই হত ব্যক্তি পুনরায় জন্ম গ্রহণ করে জন্মান্তরেও সেই ঘাতককে সেরূপে হত্যা করে থাকে জানিবেন।” ..........রাজাকে ধমকের সুরে বিশ্বামিত্র বললেন,“আপনি আর্য হয়ে অনার্যের ন্যায় আচরণ করতে কি জন্যে ইচ্ছা করছেন? (দেবী ভাগবত ৭ স্কন্দ ১৬ অধ্যায়)রাজার যজ্ঞ কার্যে বাধা গ্রস্থ হলো। শেষ পর্যন্ত বলির নর শুনঃশেপ মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ পেল। এখানে কি প্রমাণিত হলো? পাঠক নির্ধারণ করুন।
(চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র