বেদ আত্মস্থ করার জন্য ষড় বেদাঙ্গের উৎপত্তি

বেদকে বুঝার জন্যই বেদাঙ্গে উৎপত্তি। ইহা ‘ষড়ঙ্গ’নামে অভিহিত। শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ এই ষড়ঙ্গের মধ্য দিয়েই বেদের নিগূঢ় তত্ত্ব নিষ্কাষিত করে বেদের রস আস্বাদন করতে হয়। এই ষড়ঙ্গ ব্যতীত বেদ পাঠের জন্য আরও কতকগুলি সহায়তাকারী পাঠ্য গ্রন্থ আছে। পদ, ক্রম, জটা, ঘন ইত্যাদি বিষয়ক জ্ঞান এ সকল গ্রন্থ হতে আহরণ করা যায়। জ্ঞান বুদ্ধির তারতম্য অনুসারে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষৎ, দর্শন, পুরাণ, উপপুরাণ এক একটির মধ্য দিয়ে বেদ রূপ অনন্ত রত্নকরের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। যাদের জ্ঞান অল্প তারা তো বেলাভূমেও পৌছিতেই পারেনি, তারা কি করে সে জ্ঞান রত্নকরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার আশা করতে পারে? বেদ অধ্যয়নে সর্বপ্রথম ষড়ঙ্গে অভিজ্ঞ হতে হবে । ষড়ঙ্গের প্রথম অঙ্গই হচ্ছে শিক্ষা। আর শিক্ষার মধ্যে রয়েছে বর্ণ, স্বর, মাত্রা, বল ও সাম এই পঞ্চক। অকারাদি বর্ণের জ্ঞান যদি না থাকে; উদাত্তাদি ত্রিবিধ স্বর যদি অনুধান করা না যায়; হ্রস্ব মাত্রা, দীর্ঘ মাত্রা প্রভৃতির জ্ঞান যদি না থাকে; উচ্চারণ স্থানাদির এবং সাম্য গুণাদির অভ্যাস যদি না থাকে; তবে বৃথাই বেদাধ্যয়ন হবে। অ, আ, ক, খ ইত্যাদি স্বর ও ব্যঞ্জন ভেদে বর্ণ দুই প্রকার। স্বর তিন প্রকার, যথা- উদাত্ত, অনুদাত্ত, স্বরিৎ। উদাত্ত হচ্ছে উচ্চ স্বর আর অনুদাত্ত হচ্ছে নীচু স্বর। স্বরিৎ হচ্ছে উভয় স্বরের মধ্যবর্তী স্বর। বেদমন্ত্র উচ্চারণ করতে গেলে এ ত্রিবিধ স্বরের উপর আবশ্যিকভাবেই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ জ্ঞান না থাকলে স্বর বিকৃতির কারণে হিতে বিপরীত হতে পারে। এ বিষয়ে শাস্ত্রের একটি কাহিনী উদ্ধুতি দেয়া যেতে পারে। বৃত্র ইন্দ্রকে বধ করার জন্য যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। যজ্ঞে আহুতি দেয়ার সময় “ইন্দ্র শক্রর্বর্দ্ধস্ব”এই মন্ত্রকে আদ্যোদাত্ত করলে অর্থ হয় ইন্দ্র রূপ শক্র বিনষ্ট হোক, আর অন্তোদাত্ত করলে অর্থ হয় ইন্দ্রের শক্র বিনষ্ট হোক। যজ্ঞের সময় উচ্চারণের তারতম্যে হওয়ায় বৃত্র নিজেই নিহত হয়েছিল। সুতরাং মন্ত্র উচ্চারণ করার সময় ত্রিবিধ স্বর সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। উচ্চারণের বিভিন্নতা হেতু এমনই বিপর্যয় ঘটে থাকে। এ জন্যেই ঋকসমূহের উচ্চারণের উপযোগী চিহ্ন স্বরলিপিসমূহ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। বর্তমানে স্বর বিজ্ঞানে স-ঋ-গ-ম-প-ধ-নি অর্থাৎ ষড়জ, ঋষভ, গান্ধার, মধ্যম, পঞ্চম, ধৈবত, নিষাদ এই সপ্ত স্বর প্রচলিত। অধূনা প্রচলিত এই সপ্ত স্বর সেই বৈদিক স্বরত্রয় হতেই উদ্ভুত হয়েছে বলে প্রতিপন্ন হয়। উদাত্ত হতে নিষাদ ও গান্ধার, অনুদাত্ত হতে ঋষভ ও ধৈবত, স্বরিৎ হতে ষড়জ, মধ্যম ও পঞ্চম স্বরের উপপত্তি পরিলক্ষিত হয়। উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিৎ এই তিন প্রকার উচ্চারন ভেদ বুঝানোর জন্য বৈদিক গ্রন্থসমূহে অনেক স্থলে শব্দের অন্তর্গত বর্ণের উপরে ও নীচে বিবিধ রেখা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। সংগীতের স্বরলিপিতে যে সকল চিহ্নাদি প্রচলিত আছে, তা ঐ বৈদিক উচ্চারণমূলক রেখা চিহ্নের অনুসৃতি বলেই মনে হয়। নিম্নে উদাহরণ হিসেবে ঋকবেদের আগ্নেয় সূক্তের অন্তর্গত প্রথম ঋকটি রেখা চিহ্নের ব্যবহার দেখানো হলো:

ওঁ অগ্নিমিলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজং।

হোতারং রত্নধাতমং।।১।।

উদ্ধৃত ঋকের যে সকল বর্ণের শীর্ষদেশে যে লম্বালম্বি রেখা অঙ্কিত আছে ইহা দ্বারা সেই সেই বর্ণের উদাত্ত (উচ্চ স্বর)স্বরে উচ্চারণ নির্দেশ করছে। আর যে সকল বর্ণের নীচভাগে যে শায়িত রেখা অঙ্কিত আছে ইহা দ্বারা সেই সেই বর্ণের অনুদাত্ত (নীচু স্বর) স্বরে উচ্চারণ বুঝানো হচ্ছে। আর যে যে বর্ণের নীচে কোনরূপ রেখা অঙ্কিত নেই সেই সেই বর্ণের উচ্চারণ স্বরিৎ(উভয় স্বরের মধ্যবর্তী স্বর) স্বর নির্দেশ করে । এছাড়াও মাত্রাদি বুঝানোর জন্য বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাত্রা ত্রিবিধ, যথা- হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত। যেমন- কি উচ্চারণে হ্রস্ব, কী উচ্চারণে দীর্ঘ ও কি-ই-ই প্লুত ব্যবহৃত হয়। বিরহ গানে প্লুত ব্যবহৃ্ত হয়ে থাকে (চলবে)।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র