১৬. জয়দ্রথ-বধের বৃত্তান্তমুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের নন্দন।জয়দ্রথ বধ কথা অপূর্ব্ব কথন।।অর্দ্ধগত নিশা নিদ্রাগত বীরগণ।অতি চিন্তান্বিত কৃষ্ণ অর্জ্জুন কারণ।।অর্জ্জুনে কহেন কৃষ্ণ কমললোচন।না বুঝিয়া প্রতিজ্ঞা করিলা ক্রোধমন।।জয়দ্রথ হেতু সবে করি প্রাণপণ।করিবে দারুণ যুদ্ধ না যায় খণ্ডন।।জয়দ্রথ বীরে তবে মারিবা কেমনে।এই যে ভাবনা মম হয় অনুক্ষণে।।অর্জ্জুন বলেন কৃষ্ণ কর অবগতি।কারে ভয়, তুমি যার থাকিবে সারথি।।উৎপত্তি প্রলয় যার কটাক্ষেতে হয়।হেন জন সহায়ে তাহার কারে ভয়।।অর্জ্জুন বিনয় শুনি দেব জগন্নাথ।উঠিলেন কৃষ্ণ ধরি অর্জ্জুনের হাত।।কপিধ্বজ রথে দোঁহে করি আরোহণ।সঙ্গোপনে যান যথা হরের ভবন।।পার্ব্বতীর সনে একাসনে ভূতনাথ।দেখি কৃষ্ণার্জ্জুন করিলেন প্রণিপাত।।যোড়হাতে শ্রীনাথ কহেন স্তুতি বাণী।দেবদেব মহাদেব দেব শূলপাণি।।সমুদ্রমথনে ঘোর উঠিল গরল।সে সর্ব্ব সংসার দহে হইয়া অনল।।সৃষ্টিনাশ দেখি দেবগণ স্তুতি করে।সদয় হইয়া দেবদেব দয়া করে।।গণ্ডুষে করিয়া পান রাখিলে জগৎ।ঘুষিতে রহিল যশ জগতে মহৎ।।সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের তুমি আদ্য মূল।নিবেদন করি নাথ হও অনুকূল।।গোবিন্দের স্তুতি শুনি দেব গঙ্গাধর।ঈষৎ হাসিয়া তবে করেন উত্তর।।আমার বিধাতা তুমি বিশ্বের পালক।যে না জানে সেই বলে নন্দের বালক।।ভূভার নাশিতে তুমি অবতার হয়ে।করিছ বিহার কত ধনঞ্জয়ে লয়ে।।যে হয় তোমার আজ্ঞা করিব পালন।করহ বিধান আজ্ঞা দেব নারায়ণ।।গোবিন্দ বলেন, দেব কর অবধান।কৌরব পাণ্ডব যুদ্ধ নহে সমাধান।।অন্যায় সমর করি অভিমন্যু বীরে।বেড়িয়া কৌরবগণ বধে বালকেরে।।প্রতিজ্ঞা করিল পার্থ বিপক্ষ নাশিতে।না পারিলে নিজদেহ ত্যজিবে অগ্নিতে।।এই হেতু নিবেদি যে শুন গঙ্গাধর।জয়দ্রথে জিনি পার্থ জিনিবে সমর।।হর বলিলেন হরি শুন অবধানে।অর্জ্জুন বিজয়ী হবে জিনি শত্রুগণে।।অর্জ্জুনের সহায় হইব আমি রণে।রণে গিয়া নিধন করিব কুরুগণে।।অনন্তর প্রণমিয়া দেবীর চরণ।করেন অর্জ্জুন কৃষ্ণ অনেক স্তবন।।শঙ্করী বলেন শুন কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।মম বরে কর গিয়া সব শত্রু ক্ষয়।।পাইয়া হরের বর কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।ধনলাভে দরিদ্র যেমন তুষ্ট হয়।।সেই মত মহানন্দে প্রফুল্ল অন্তরে।প্রণাম করেন দোঁহে শঙ্করী শঙ্করে।।বিদায় হইয়া, গিয়া আপন শিবিরে।করিলে শয়ন সবার অগোচরে।।প্রভাতে উঠিয়া সবে করি স্নানদান।সুসজ্জা হইয়া যুদ্ধে করিল প্রয়াণ।।তবে দ্রোণ মহাবীর সর্ব্বসৈন্য লয়ে।রচিল অদ্ভূত ব্যুহ রণস্থলে গিয়ে।।বার ক্রোশ পর্য্যন্ত রাখিল সেনাগণ।তার মধ্যে জয়দ্রথ রাজা দুর্য্যোধন।।এরূপ করিয়া সবে রহিলেক রণে।বেড়িয়া রহিল সবে সিন্ধুর নন্দনে।।হেথা সর্ব্বসৈন্য লয়ে রাজা যুধিষ্ঠির।গোবিন্দেরে অগ্রে করি হলেন বাহির।।তবে ধনঞ্জয় ডাকিছেন যোদ্ধাগণে।ধৃষ্টদ্যুন্ন সাত্যকীরে আর ভীমসেনে।।যুধিষ্ঠিরে সবা প্রতি করি সমর্পণ।কহেন তোমারা সবে কর গিয়া রণ।।জয়দ্রথ বধ হেতু আমি যাই রণে।যথায় পাইব আজি সিন্ধুর নন্দনে।।ভীম বলে, তুমি যাও জয়দ্রথ যথা।যুধিষ্ঠির হেতু তব নাহি মনোব্যথা।।শুনি কৃষ্ণ বলিলেন শুন ধনঞ্জয়।এতেক প্রতিজ্ঞা তব উচিত না হয়।।যদি জয়দ্রথ আজি নাহি হয় বধ।তবে কি করিবে মোরে কহ তার পথ।।অর্জ্জুন বলেন প্রভু তোমার প্রসাদে।আজি জয়দ্রথেরে মারিব অপ্রমাদে।।বহু সঙ্কটেতে তুমি করিলা তারণ।যত বল বুদ্ধি মম তুমি নারায়ণ।।শুনিয়া কহেন কৃষ্ণ হরিষ অন্তর।বড় বিচক্ষণ তুমি মহাধনুর্দ্ধর।।অচিরে হইবে তব প্রতিজ্ঞা পূরণ।আজি সে হইবে তব প্রতিজ্ঞা পূরণ।।আজি সে হইবে তব শত্রুর নিধন।এত বলি শ্রীকৃষ্ণ ছাড়েন সিংহনাদ।।শুনিয়া কৌরবগণ গণিল প্রমাদ।তবে কৃষ্ণ দারুকেরে কহেন তখন।।মম রথখানি আন করিয়া সাজন।শাঙ্গ ধনুকাদি সব তুলহ রথেতে।।জয়দ্রথ হেতু রণ করিব নিশ্চিতে।।কদাচিত ধনঞ্জয় ন্যূন যদি হয়।একেলা করিব আজি কৌরবের ক্ষয়।।যেইক্ষণে আমার হইবে শঙ্খধ্বনি।শব্দ শুনি রথ লয়ে যাইবে আপনি।।এতেক বলিয়া কৃষ্ণ কমললোচন।বায়ুবেগে চালাইয়া দেন অশ্বগণ।।ব্যূহমুখে দ্রোণাচার্য্য আছেন আপনে।তাহার পশ্চাতে যত কুরুসেনাগণে।।হেনকালে দ্রোণাচার্য্য ব্যূহের দ্বারেতে।আগুলিল পার্থে আসি ধনুঃশর হাতে।।দ্রোণে দেখি ধনঞ্জয় করি নমস্কার।করযোড়ে কহিছেন কুন্তীর কুমার।।কি হেতু যুদ্ধের সজ্জা দেখি মহাশয়।অশ্বথমাধিক আমি তোমার তনয়।।জয়দ্রথ বধ হেতু প্রতিজ্ঞা আমার।তোমারে জানাই তাই কারণ তাহার।।দ্রোণ কহে এই কথা না হয় উচিত।কুরুসৈন্যগণ দেখ আমার রক্ষিত।।আমার অগ্রেতে তারে করিবে ঘাতন।কেমনে দেখিব আমি শুনহ অর্জ্জুন।।এতেক শুনিয়া কৃষ্ণ কহেন পার্থেরে।উপরোধ কেন তুমি করহ দ্রোণেরে।।সপ্তরথী বেড়ি মারে এক ছাওয়ালে।অতি শিশু অভিমন্যু রণে মারে ছলে।।কোন উপরোধ গুরু করিল তোমারে।তুমি কেন উপরোধ করহ উহারে।।সন্ধান পূরিয়া মার দিব্য অস্ত্রগণ।যেইমতে দ্রোণাচার্য্য হয় অচেতন।।এতেক শুনিয়া পার্থ অতি ক্রুদ্ধমন।দ্রোণে চাহি লাগিলেন বলিতে তখন।।তবে আর বিলম্বে নাহিক প্রয়োজন।শীঘ্র কর উপায় রাখিতে কুরুগণ।।আজি যুদ্ধে কৌরবেরে করিব সংহার।দেখিব কেমনে রাখ করিয়া প্রকার।।এতেক শুনিয়া গুরু অতি ক্রূদ্ধমন।করিল অর্জ্জুনোপরি বাণ বরিষণ।।দশ বাণ এড়ে বীর পূরিয়া সন্ধান।বাণ ব্যর্থ দেখি দ্রোণ ক্রোধে কম্পবান।।গগন ছাইয়া বীর বরিষয়ে বাণ।শীঘ্রহস্তে ধনঞ্জয় পূরিয়া সন্ধান।।কাটিয়া পাড়েন যত আচার্য্যের বাণ।ক্রোধে দ্রোণ করিলেন বরিষণ বাণ।।তবে কৃষ্ণ কহিলেন ধনঞ্জয় প্রতি।আমি যাহা কহি তাহা কর অবগতি।।জয়দ্রথ বধ হেতু আছে বড় ভার।দ্রোণ সহ যুদ্ধ কর না বুঝি বিচার।।এত শুনি ধনঞ্জয় কহেন কৃষ্ণেরে।কিমতে যাইব, দ্রোণ পথ রুদ্ধ করে।।কৃষ্ণ বলিলেন শুন আমার বচন।দ্রোণের দক্ষিণ দিকে আছে সেনাগণ।।সেই সেনাগণ বাণে কাটি পাড় তুমি।সেইখান দিয়া রথ চালাইব আমি।।এত শুনি ধনঞ্জয় পূরেন সন্ধান।নিমিষে করেন বহু সৈন্য খান খান।।তবে শ্রীকৃষ্ণের রথ বেগেতে চলিল।দ্রোণেরে পশ্চাৎ করি সৈন্যে প্রবেশিল।।দ্রোণ বলে ধনঞ্জয় এ কোন বিচার।পলাইয়া যাও তুমি অগ্রেতে আমার।।অর্জ্জুন বলেন, গুরু করি নমস্কার।তোমারে জিনিবে হেন শক্তি আছে কার।।জয়দ্রথ বধ হেতু যাইব এখন।তোমার চরণে করি এই নিবেদন।।এত শুনি দ্রোণাচার্য্য হাসিতে লাগিল।এক ভিতে রথ রাখি পথ ছাড়ি দিল।।তবে ধনঞ্জয় বীর অতিশয় ক্রোধে।যারে পায় তারে মারে নাহি উপরোধে।।আকর্ণ পূরিয়া বীর বরিষয়ে বাণ।রথ অশ্ব পদাতিক করে খান খান।।পলায় সকল সৈন্য রণে নাহি রয়।মহাক্রোধে আগু হৈল দ্রোণের তনয়।।ধনঞ্জয় অশ্বথামা দোঁহে মহারণ।বিস্ময় মানিয়া চাহে যত সেনাগণ।।মহাবীর অশ্বথামা দ্রোণের নন্দন।অর্জ্জুন উপরে করে বাণ বরিষণ।।তবে ক্রোধে মহাবীর ইন্দ্রের নন্দন।কাটিলেন দ্রৌণীর হাতের শরাসন।।আর ধনু লয়ে বীর দ্রোণের তনয়।বাণ বৃষ্টি করে অতি নির্ভয় হৃদয়।।তবে ধনঞ্জয় বীর অগ্নি হেন জ্বলে।সারথির মাথা কাটি ফেলিল ভূতলে।।এড়েন যুগল অস্ত্র ইন্দ্রের নন্দন।বাণাঘাতে অশ্বথামা হৈল অচেতন।।সেইক্ষণে সারথী আইল এক আর।অচেতন রথে বীর দ্রোণের কুমার।।কতক্ষণে অশ্বথামা পাইল চেতন।ধনু ধরি পুনরপি করে মহারণ।।মহাপরাক্রম দোঁহে সমান সোসর।হইল তুমুল যুদ্ধ নাহি অবসর।।তবে ধনঞ্জয় ক্রোধে হইল অস্থির।সন্ধান পূরিয়া বিন্ধে দ্রৌণীর শরীর।।কবচ কাটিয়া বাণ অঙ্গে প্রবেশিল।অচেতন হয়ে বীর রথেতে পড়িল।।রথেতে পড়িল বীর হয়ে অচেতন।হাহাকার করি ধায় যত যোদ্ধাগণ।।হেনকালে অগ্রে হৈল মিহির নন্দন।ধনুক ধরিয়া আসে করিবারে রণ।।অর্জ্জুন করিয়া বলে অর্জ্জুনেরে আঁটি।লেগেছে তোমারে মৃত্যু তেঁই ছটফটি।।দ্রোণ সেনাপতি বলে মম বধ্য নহে।সে কারণে ভালে ভালে দিন কত রহে।।নিশ্চয় আমার হস্তে তোমার মরণ।কহিলাম সত্য এই বিধির ঘটন।।অর্জ্জুন বলেন হাসি, হতজ্ঞান তুমি।পশুজ্ঞান করিয়া বধিব তোমা আমি।।কুপিয়া বলিছে কর্ণ বুঝিব এখন।কেমনে সারিয়া আজি যাহ মোর রণ।।এত বলি সূর্য্যসুত সর্পবাণ এড়ে।সহস্র সহস্র নাগ পার্থে গিয়া বেড়ে।।এড়েন গরুড় বাণ ইন্দ্রের নন্দন।ধরিয়া সকল সর্প করিল ভক্ষণ।।সর্পেরে গিলিয়া কর্ণে গিলিবারে আসে।অগ্নিবাণ কর্ণ তবে এড়িল তরাসে।।অগ্নিতে পক্ষীর পাখা পুড়িল সকল।হইল প্রলয় অগ্নি সেই রণস্থল।।এড়েন বরুণ বাণ ইন্দ্রের নন্দন।জলেতে নিবৃত্ত হৈল যত হুতাশন।।হইল প্রলয় নীর সেই রণস্থলে।হয় হস্তী পদাতিক ভাসি যায় জলে।।শোষক নামেতে বাণ কর্ণ এড়ে রোষে।শুষিল সকল নীর চক্ষুর নিমিষে।।কর্ণ ধনঞ্জয় যুদ্ধ নাহি পাঠান্তর।বিস্ময় মানিয়া চাহে যতেক অমর।।তবে পার্থ মহাবীর পূরিয়া সন্ধান।একেবারে মারিলেন দশ গোটা বাণ।।কবচ কাটিয়া বাণ অঙ্গে প্রবেশিল।মূর্চ্ছিত দেখিয়া রথ ফিরায় সারথি।।রণে ভঙ্গ দিয়া গেল কর্ণ যোদ্ধাপতি।তবে ধনঞ্জয় বীর মহাক্রোধ মনে।।লক্ষ লক্ষ যোদ্ধাগণে বিনাশিল রণে।হেনমতে ছয় ক্রোশ পথ চলি গেলা।।গগনমণ্ডলে হৈল দ্বিপ্রহর বেলা।হেনকালে কৃষ্ণ কন শুন ধনঞ্জয়।।শ্রমযুক্ত হইল রথের চারি হয়।শরে বিদ্ধ হইয়াছে চলিতে না পারে।।কিমতে যাইব তবে সংগ্রাম ভিতরে।দিবা হৈল বহু, তৃণ জল নাহি পায়।।হের দেখ ঘন ঘন মম মুখ চায়।সংগ্রাম করহ যদি নামি ভূমিতল।।তবে আমি খাওয়াই অশ্বে তৃণ জল।এত শুনি কৃষ্ণেরে কহেন গুড়াকেশ।।কেন অসম্ভব কথা কহ হৃষীকেশ।সংগ্রামের স্থল ইথে না হয় সংশয়।।তৃণশূন্য এই স্থল ধূলা উড়ে যায়।গোবিন্দ বলেন ক্ষণ রহ হেথা তুমি।।যেথা পাই আনি জল খাইয়াব আমি।অর্জ্জুন বলেন বড় হইল বিস্ময়।।যে কহিলা নারায়ণ শুনি হয় ভয়।ছল করি ছাড়িয়া যাইতে চাহ হরি।।সিন্ধু মাঝে ডুবাইয়া আমারে সংহারি।বুঝিলাম অপরাধ হইয়াছে পায়।।তুমি যদি ছাড় তবে নাহিক উপায়।তুমি বল, তুমি বুদ্ধি, পাণ্ডবের প্রাণ।।যার অনুগ্রহে সঙ্কটেতে পাই ত্রাণ।অনুক্ষণ হৃদয়ে উদয় তাহেদেখি।।হেন অনাথের নাথ মোরে কর দুঃখী।আমার প্রতিজ্ঞা যত সে হইল মিছা।।তবে আর এ ছার জীবনে কিবা ইচ্ছা।কেমনে সমর সিন্ধু তরিবারে পারি।তরণী ফেলিয়া হরি চলিলে কাণ্ডারী।।কমল-নয়ন কৃষ্ণ কহেন হাসিয়া।করহ আক্ষেপ সখা কিসের লাগিয়া।।পঞ্চভাই তোমরা পাণ্ডব যাজ্ঞসেনী।রাখিয়াছ ভক্তিতে আমাকে সদা কিনি।।পলাইতে পারি কি যে পলাইতে চাই।হৃদয় নিগড়ে বন্দী এড়াইতে নাই।।কে জানে কহি যে সত্য তোমা ছয় জনে।নাহি পারি এক দণ্ড পাসরিতে মনে।।ভূমিতলে নামি যদি করহ সংগ্রাম।তবেত অশ্বেরে আমি করাই বিশ্রাম।।এত শুনি ধনঞ্জয় নামিয়া ভূমিতে।সংগ্রাম করেন বীর ধনুঃশর হাতে।।তবে কৃষ্ণ রথ হৈতে ভূমিতলে উলি।ক্রমে ক্রমে যুচাইল যত কড়িয়ালি।।তৃষিত হইল অশ্ব ক্ষত গাত্র বাণে।জানি নারায়ণ তবে বলেন অর্জ্জুনে।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন পার্থ দেখ অশ্বগণে।তৃষ্ণার কারণ চাহে মম মুখ পানে।।বিনা জলপানে অশ্ব না পারে চলিতে।তাহার বিধান আমি করি যে ত্বরিতে।।তবেত করহ যুদ্ধ কুরুসৈন্য সনে।হউক ক্ষণেক যুদ্ধ মল্ল মল্লগণে।।এতেক কহিয়া কৃষ্ণ কমললোচন।এক সরোবর কৈল অপূর্ব্ব রচন।।নানা জাতি পক্ষীগণ ক্রীড়া করে তাহে।নানা পুষ্প ফুটে তার গন্ধে মন মোহে।।হংসগণ ক্রীড়া করে হংসীর সহিত।সারস সারসী ক্রীড়া করে আনন্দিত।।পদ্মের সৌরভে গন্ধ চতুর্দ্দিকে যায়।লাখে লাখে মত্ত অলি মধুলোভে ধায়।।অমৃত সমান হৈল সরোবর নীর।অশ্ব লয়ে তাহাতে নামেন যদুবীর।।জলেতে ধোয়ান কৃষ্ণ অশ্বের শোণিত।অদ্ভূত দেখিয়া সবে হইল বিস্মিত।।অর্জ্জুনেরে ভূমে দেখি যত যোদ্ধাগণ।সন্ধান পূরিয়া করে অস্ত্র বরিষণ।।দেখিয়া অর্জ্জুন তবে পূরেন সন্ধান।আকর্ণ পূরিয়া বিন্ধিলেন দিব্য বাণ।।শূণ্যেতে দোঁহার বাণ একত্র হইল।গ্রহের সদৃশ হয়ে শূন্যেতে রহিল।।আনন্দে গোবিন্দ তবে লয়ে অশ্বগণে।জলপান করালেন হরিষত মনে।।জলপানে অশ্বগণ হৈল বলবান।পূর্ব্বের সদৃশ হৈল করি জলপান।।তবে কৃষ্ণ অশ্বগণে লইয়া সংহতি।রথেতে উঠেন গিয়া অতি শীঘ্রগতি।।অশ্বগণে রথে যুড়ি বলেন অর্জ্জুনে।বলবান হৈল অশ্ব দেখ জলপানে।।অতঃপর রথে আসি চড় মহামতি।রথ চালাইয়া আমি দিব শীঘ্রগতি।।এত শুনি ধনঞ্জয় ধনুঃশর হাতে।এক লাফ দিয়া বীর চড়িলেন রথে।।কৃতাঞ্জলি অর্জ্জুন কহেন সবিনয়।এক নিবেদন করি শুন মহাশয়।।তোমার চরিত্র আমি বুঝিতে না পারি।আপন বৃত্তান্ত মোরে কহ কৃপা করি।।নিরবধি অপরাধ করি তব স্থান।চিনিতে না পারি আমি বড়ই অজ্ঞান।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন পার্থ না কর বিস্ময়।মম পরিচয় তোমা দিব ধনঞ্জয়।।এত বলি দেন কৃষ্ণ চালাইয়া হয়।ধনু ধরি করেন সমর ধনঞ্জয়।।দ্রোণপর্ব্ব সুধারস জয়দ্রথ বধে।কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।১৭. সাত্যকির যুদ্ধে ও ভূরিশ্রবাকর্ত্তৃক সাত্যকির পরাজয়মুনি বলে শুন শুন রাজা জন্মেজয়।করেন দারুণ যুদ্ধ বীর ধনঞ্জয়।।হেথায় ধর্ম্মের পুত্র না দেখি অর্জ্জুনে।কৃষ্ণেরে না দেখি দুঃখ ভাবিলেন মনে।।বহুদূর গেল, রথধ্বজ নাহি দেখি।চিন্তাকুল হয়ে রাজা ডাকেন সাত্যকি।।ডাক শুনি সাত্যকি আসিল সেইক্ষণ।সাত্যকিরে বলিলেন ধর্ম্মের নন্দন।।একেশ্বর গেল পার্থ কৌরব ভিতর।না জানি কিরূপ তথা করয়ে সমর।।রথধ্বজ নাহি দেখি কিসের কারণ।এ সকল ভাবি মোর স্থির নহে মন।।শীঘ্রগতি রথে চড়ি করহ গমন।ডাকিলাম তোমারে যে, এই সে কারণ।।সাত্যকি বলিল, রাজা করি নিবেদন।তোমার রক্ষার্থে আমি নিযুক্ত এখন।।তোমারে ছাড়িয়া আমি যাইব কিমতে।এই নিবেদন মম তোমার অগ্রেতে।।শুনি যুধিষ্ঠির বলিলেন আরবার।মম লাগি চিন্তা কিছু নাহিক তোমার।।অর্জ্জুনের তত্ত্ব জানি আইস সত্বর।তবে সে সুস্থির হবে আমার অন্তর।।এত শুনি সাত্যকি কহিল ভীমসেনে।সাবধান হয়ে তুমি থাকিবে আপনে।।অর্জ্জুনের তত্ত্ব নিতে কহেন রাজন।অতএব তথা আমি করিব গমন।।যুধিষ্ঠিরে তব স্থানে করি সমর্পণ।রাজার নিকটে রহ যত যোদ্ধাগণ।।সাবধান হয়ে তুমি থাকিবে হেথাই।পুনরপি আসি যেন যুধিষ্ঠিরে পাই।।ভীম বলে, তুমি যাহ অর্জ্জুনের তথা।যুধিষ্ঠির হেতু তব নাহি কোন ব্যথা।।সহদেব নকুলাদি যত যোদ্ধাগণে।রাজারে রাখিবে সবে অতি সাবধানে।।সাত্যকি তোমার মত নাহি কোন জন।কি দিয়া শুধিব ঋণ তোমার এখন।।ইহা শুনি সাত্যকি উঠিল রথোপরে।একা রথে যায় বীর নির্ভয় অন্তরে।।নিমেষেতে প্রবেশিল ব্যূহের ভিতর।অর্জ্জুনের শিষ্য বীর মহাধনুর্দ্ধর।।সাত্যকিরে দেখি যত কৌরবের গণ।ঝটিতি আসিল সবে করিবারে রণ।।নানা অস্ত্রে রথিগণ ছাইল গগন।আষাঢ় শ্রাবণে যেন মেঘ বরিষণ।।পরিঘ মুষল শেল শূল জাঠা জাঠি।ভূষণ্ডী পরশু নানা অস্ত্র কোটি কোটি।।দেখিয়া সাত্যকি বীর সন্ধান পূরিল।সবাকার অস্ত্র কাটি নিরস্ত্র করিল।।তবে ক্রোধে দুঃশাসন পূরিল সন্ধান।আকর্ণ পূরিয়া এড়ে দশগোটা বাণ।।সাত্যকি কাটিল সেই বাণ সেইক্ষণ।মহাধনুর্দ্ধর বীর সত্যক নন্দন।।দশগোটা বাণ তবে পূরিল সন্ধান।দুঃশাসন-ধনু কাটি করে খান খান।।আর ধনু ধরি বীর ধৃতরাষ্ট্র সুত।সাত্যকি উপরে বাণ মারেন অযুত।।কাটিল সকল বাণ সত্যক-তনয়।সন্ধান পূরিয়া বীর করে অস্ত্রময়।।দশ বাণ মারে বীর ধৃতরাষ্ট্র-সুতে।মূর্চ্ছিত হইয়া দুঃশাসন পড়ে রথে।।মূর্চ্ছিত দেখিয়া বীরে সারথি সত্বর।আপনি পলায় রথ লয়ে অতঃপর।।সাত্যকি দেখিল, পলাইল দুঃশাসন।সৈন্যের উপরে করে বাণ বরিষণ।।ধ্বজ ছত্র পতাকায় পৃথিবী ছাইল।সাত্যকির বাণে সব উচ্ছিন্ন হইল।।সাত্যকি মন্থিল কুরুবল একেশ্বর।বিস্ময় মানিয়া চাহে যতেক অমর।।আকাশে অমরবৃন্দ পুষ্পবৃষ্টি করে।ধন্য ধন্য করি তবে বলে সাত্যকিরে।।এতেক দেখিয়া তব সুবল-নন্দন।হাতে ধনু করি আসে করিবারে রণ।।শকুনিরে দেখিয়া সাত্যকি ধনুর্দ্ধর।সন্ধান পূরিয়া মারে চোখ চোখ শর।।এড়িল বিংশতি অস্ত্র শকুনি উপর।বাণে কাটি পাড়ে তাহা সুবল-কোঙর।।বাণ ব্যর্থ দেখি বীর কোপে কাঁপে তনু।পুনরপি বাণ এড়ে টঙ্কারিয়া ধনু।।দশ বাণ এড়ে বীর পূরিয়া সন্ধান।দুই বাণে ধ্বজ কাটি করে খান খান।।চারি বাণে চারি অশ্ব কাটে বীরবর।দুই বাণে সারথিরে দিল যমঘর।।আর দুই বাণে কাটে শকুনির ধনু।দশ বাণ এড়ি বীর বিন্ধিলেক তনু।।শকুনি-সঙ্কট দেখি যত যোদ্ধাগণ।হাহাকার করি তবে ধায় সেইক্ষণ।।দুঃশাসন রথে চড়ি সুবল-নন্দন।রণ এড়ি পলাইয়া করিল গমন।।অবহেলে সাত্যকি করয়ে শরবৃষ্টি।বিপক্ষ জানিল, আজি মজিবেক সৃষ্টি।।সাত্যকির যুদ্ধ দেখি যত সৈন্যগণ।ভয়ে পলাইয়া গেল লইয়া জীবন।।সাত্যকির সারথি সে অতি বিচক্ষণ।চালাইয়া দিল রথ পবন-গমন।।পঞ্চ ক্রোশ মহাবীর গেল মুহূর্ত্তেকে।অর্জ্জুনের রথধ্বজ তথা হতে দেখে।।রথধ্বজ দেখি বীর আনন্দিত মন।সৈন্যের উপরে করে বাণ বরিষণ।।সাত্যকিরে দেখি কৃষ্ণ বলেন অর্জ্জুনে।আসিল সাত্যকি বীর অই দেখ রণে।।সাত্যকি দেখিয়া তবে বীর ধনঞ্জয়।তার যুদ্ধ দেখি হন সানন্দ হৃদয়।।সাত্যকিরে দেখি ভূরিশ্রবা নরপতি।রথে চড়ি ধনু ধরি আসিল ঝটিতি।।সাত্যকিরে দেখি বলে সোমদত্ত-সুত।আমি আসিলাম তোর হয়ে যমদূত।।বহুদিনে পাইলাম তোর দরশন।অবশ্য পাঠাব তোরে যমের সদন।।এত বড় গর্ব্ব তোর হইল এখন।একা রথে আসিয়াছ করিবারে রণ।।শুনিয়া সাত্যকি তবে করিল উত্তর।কি কারণে এত গর্ব্ব করিস্ ববর্বর।।মরণ নিকট প্রায়, বুঝিনু লক্ষণে।এমন বচন তোর তাহার কারণে।।অবশ্য তোমারে আমি করিব সংহার।এক বাণে দেখাইব যমের দুয়ার।।এতেক শুনিয়া ভূরিশ্রবা নরপতি।সন্ধান পূরিয়া বাণ এড়ে শীঘ্রগতি।।মহাক্রোধে ভূরিশ্রবা এড়ে দশ বাণ।বাণে কাটি সাত্যকি করিল খান খান।।হেনমতে বাণবৃষ্টি করিল বিস্তর।দোঁহাকার বাণে দোঁহে হইল জর্জ্জর।।ভূরিশ্রবা সাত্যকিতে হৈল ঘোর রণ।বিস্ময় মানিয়া চাহে যত যোদ্ধাগণ।।তবে ভূরিশ্রবা সাত্যকির প্রতি বলে।এস তুমি আমি যুদ্ধ করি ভূমিতলে।।এত বলি ভূরিশ্রবা অসি চর্ম্ম লয়ে।রথ হৈতে ভূমে পড়ে এক লাফ দিয়ে।।হেরিয়া সাত্যকি তবে ত্যাজে ধনুঃশর।অসি চর্ম্ম লয়ে বীর নামিল সত্বর।।মণ্ডলী করিয়া দোঁহে ফিরে চারিভিতে।সাত্যকির চর্ম্ম বীর কাটে আচম্বিতে।।শুধু খড়্গ লয়ে বীর করয়ে সংগ্রাম।ন্যায় যুদ্ধ করে বীর অতি অনুপাম।।সাত্যকি হইল তবে ক্রোধে কম্পমান।ভূরিশ্রবা-চর্ম্ম কাটি করে খান খান।।খড়্গহস্তে দুই বীর করয়ে সমর।খড়্গের প্রহার দোঁহে হইল জর্জ্জর।।জড়াজড়ি করি দোঁহে পড়ে ভূমিতলে।সাত্যকিরে ধরে ভূরিশ্রবা মহাবলে।।বুকের উপরে উঠে ধরিয়া চিকুরে।দেখিয়া সাত্যকি বীর বায়ুবেগে ঘুরে।।হাতে খড়্গ করি তবে সোমদত্ত-সুত।সাত্যকিরে কাটিবারে হইল উদ্যত।।কুমারের চাক যেন ঘুরয়ে সাত্যকি।অদ্ভুত ঘটনা সবে দেখে দূরে থাকি।।এতেক দেখিয়া তবে কৃষ্ণ মহাশয়।ডাকিয়া বলেন, হেন ওহে ধনঞ্জয়।।ভূরিশ্রবা ধরিয়াছে সাত্যকির চুলে।সাত্যকি ঘুরিছে মহাবেগে ভূমিতলে।।কৃষ্ণবাক্যে ধনঞ্জয় হইলেন ব্যস্ত।বাণে কাটি পাড়িলেন ভূরিশ্রবা-হস্ত।।ইহা শুনি রাজা জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল।কহ মুনি কিবা হেতু এমত হইল।।অশ্বত্থামা আদি করি যত যোদ্ধাগণ।একাকী সাত্যকি বীর জিনে সর্ব্বজনে।।সাত্যকিরে ভূরিশ্রবা করে পরাজয়।আশ্চর্য্য শুনিয়া মম হইল বিস্ময়।।দ্রোণপর্ব্বে সুধারস জয়দ্রথ-বধে।কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।১৮. ভূরিশ্রবা কর্ত্তৃক সাত্যকিরপরাজয়ের কারণ বর্ণনমুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের তনয়।সাত্যকির কৈল কিবা হেতু পরাজয়।।একদিন বাসুদেব পিতৃশ্রাদ্ধ কালে।নিমন্ত্রণ করি যত কুটুম্ব আনিলে।।সোমদ্ত্ত বাহলীক যে পাঞ্চাল রাজন।শাল্ব শিশুপাল এল পেয়ে নিমন্ত্রণ।।আইল অনেক রাজা না হয় বাখান।সবাকারে বাসুদেব করে অভ্যুথান।।বিচিত্র আসনে বসাইল সর্ব্বজন।তার মধ্যে সোমদত্ত করিল গমন।।সভার মধ্যেতে যদি সোমদত্ত গেল।সোমদত্ত দেখি শিনি ক্রোধেতে জ্বলিল।।বাসুদেব খুড়া শিনি ক্রোধেতে জ্বলিল।সোমদত্তে দেখি শিনি পাইলেক তাপ।।ডাকিয়া বলিল শিনি শুন সোমদত্ত।সভামধ্যে বৈস তুমি এ কোন্ মহত্ত্ব।।আমা সবা না মানিস্ কোন্ অহঙ্কারে।পৃথিবীর মধ্যে কেবা না জানে তোমারে।।মর্য্যাদা থাকিতে শীঘ্র যাও পলাইয়া।আপন সদৃশ যোগ্যস্থানে বৈস গিয়া।।এত শুনি সোমদত্ত ক্রোধেতে জ্বলিল।অগ্নির উপরে যেন ঘৃত ঢালি দিল।।সোমদত্ত বলে শিনি না করিস্ গর্ব্ব।তোমার মহত্ত্ব যাহা আমি জানি সর্ব্ব।।এতেক উত্তর মোরে করিস্ বর্ব্বর।কোন অর্থে ন্যূন আমি পৃথিবী ভিতর।।তোমা হৈতে ন্যূন কেবা আছয়ে ররণী।মম অগোচর নহে সব আমি জানি।।এতেক শুনিয়া শিনি মহাকোপ মন।ক্রোধে ডাক দিয়া বলে শুন সর্ব্বজন।।এত অহঙ্কার তোর ওরে কুলাঙ্গার।পরে নিন্দ, ছিন্দ্র নাহি দেখ আপনার।।ইহার উচিত ফল দিব আমি তোরে।এত বলি মহাক্রোধে উঠিল সত্বরে।।শিনি দেখি সোমদ্ত্ত উঠি সেইক্ষণ।হুড়াহুড়ি মহাযুদ্ধ করে দুই জন।।তবে শিনি মহাক্রোধে ধরে তার চুলে।দেখিয়া হইল হাস্য যত সভাস্থলে।।তবে শিনি মহাক্রোধে ধরে তার চুলে।দেখিয়া হইল হাস্য যত সভাস্থলে।।কেশে ধরি চড় মারে বজ্রের সমান।এক চড়ে দন্তগুলা করে খান খান।।তবে সবে উঠি দোঁহে বারণ করিল।অভিমানে সোমদত্ত দেশে নাহি গেল।।সভামধ্যে সোমদ্ত্ত পেয়ে অপমান।তপস্যা করিতে বনে করিল প্রয়াণ।।দ্বাদশ বৎসর তপ করে অনাহারে।একচিত্তে সোমদত্ত সেবিল শঙ্করে।।তপস্যাতে বশ হইলেন মহেশ্বর।বৃষেতে চাপিয়া আসি বনের ভিতর।।তর বলিলেন বর মাগহ রাজন।এত বলি তাহারে ডাকেন পঞ্চানন।।ধ্যান ভাঙ্গি সোমদত্ত দেখিলেক হর।বিভূতিভূষণ জটাধারী গঙ্গাধর।।আনন্দিত সোমদত্ত দেখিয়া শঙ্করে।বিবিধ প্রকারে রাজা বহু স্তুতি করে।।সোমদত্ত বলে হদি হৈলে কৃপাবান।এক নিবেদন আমি করি তব স্থান।।সভামধ্যে শিনি মোরে অমান্য করিল।যতেক নৃপতিগণ বসিয়া দেখিল।।অগ্নিবৎ অঙ্গ দহে সেই অপমানে।এই নিবেদন আমি করি তব স্থানে।।যদি মোরে বর দিবে দেব পশুপতি।মহাধনুর্দ্ধর মম হউক সন্ততি।।তার পুত্রে মম পুত্র জিনিবে সমরে।রাজগণ মধ্যে যেন অপমান করে।।ইহা বিনা আর বর নাহি চাহি আমি।এই বর মহাপ্রভু আজ্ঞা কর তুমি।।শঙ্কর বলেন বর দিলাম তোমার।তব পুত্র জিনিবেক শিনির কুমারে।।প্রাণে মারিবারে তারে নহিবে শকতি।এত বল কৈলাসে গেলেন পশুপতি।।শিবস্থানে হেন বর পেয়ে নৃপবর।আনন্দিত হয়ে গেল আপনার ঘর।।ভূরিশ্রবা সাত্যকিরে জিনে শিববরে।তার উপাখ্যান এই জানাই তোমারে।।দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা অমৃত সমান।কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।১৯. ভূরিশ্রবা বধমুনি বলে আশ্চর্য্য শুনহ জন্মেজয়।শিব বরে সাত্যকি পাইল পরাজয়।।ভূরিশ্রবা হস্ত যদি কাটেন অর্জ্জুন।ভূমেতে পড়িয়া হইলেক অচেতন।।পুনরপি বসিয়া উঠিল রণস্থলে।নিন্দা করি ভূরিশ্রবা অর্জ্জুনেরে বলে।।ধিক্ ধনঞ্জয় তোর থাকুক্ বীরত্ব।অন্যায় করিয়া মম কাট তুমি হস্ত।।সাত্যকি সহিত রণ আছিল আমার।কাটিলে আমার হস্ত তুমি কুলাঙ্গার।।সম্মূখ সংগ্রামে পড়ি স্বর্গে যাই আমি।এই পাপে ধনঞ্জয় হবে অধোগামী।।এতেক শুনিয়া পার্থ হইল লজ্জিত।শ্রীকৃষ্ণ বলেন তুমি কেন হও ভীত।।কৃষ্ণ ডাকি বলিলেন ভূরিশ্রবা প্রতি।একা অভিমন্যুরে বেড়িল সপ্তরথী।।কোন ন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যুরে মারিলা।এবে বুঝি সে সকল কথা পাসরিলা।।মৃত্যুকালে ধর্ম্মবুদ্ধি হইল তোমার।অর্জ্জুনের নিন্দা কর তুমি কুলাঙ্গার।।কটুবাক্য শুনি ভূরিশ্রবা নরপতি।নিন্দা করি কহিতে লাগিল কৃষ্ণ প্রতি।।ভূরিশ্রবা বলে কৃষ্ণ কহিলা প্রমাণ।তোমা হৈতে এত সব হৈল অপমান।।কি কারণে নিন্দা আমি করি অর্জ্জুনেরে।তোমা সম দুষ্ট নাহি পৃথিবী ভিতরে।।তোমার কুবুদ্ধে হৈল সকল সংহার।নির্লজ্জ তোমারে আমি কি বলিব আর।।এত বলি ভূরিশ্রবা হইল বিমন।কি কর্ম্ম করিনু আমি নিন্দি নারায়ণ।।আপনার কর্ম্মভোগ করি যে আপনে।তবে কেন বড় হয়ে নিন্দি নারায়ণে।।অন্তকালে যে জন স্মরয়ে নারায়ণ।চতুর্ভূজরূপে যায় বৈকুণ্ঠ ভুবন।।এতেক বলিয়া ভূরিশ্রবা নরপতি।বিধিমতে গোবিন্দেরে করিলেন স্তুতি।।ডাকিয়া বলিল কৃষ্ণ তোমারে নিন্দিয়া।কি গতি আমার হবে না পাই ভাবিয়া।।অধম দেখিয়া মোরে হও কৃপাবান।নরক হইতে মোরে কর পরিত্রাণ।।তোমা বিনা গতি মম নাহি নারায়ণ।কায়মনোবাক্যে আমি নিলাম শরণ।।সর্ব্বকাল তোমা বিনা নাহি জানি আমি।মৃত্যুকালে তোমা নিন্দি হই অধোগামী।।আপনার গুণে কর আমারে উদ্ধার।নরক হইতে ত্রাণ করহ আমার।।এত বলি ভূরিশ্রবা মৌনেতে রহিল।হৃদয় পঙ্কজে পদ ভাবিতে লাগিল।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন তুমি ত্যজ দুঃখমন।স্বচ্ছন্দে চলিয়া যাহ বৈকুণ্ঠ ভুবন।।সিদ্ধ ঋষি যোগী সেই স্থান নাহি পায়।তথাকারে যাহ তুমি আমার আজ্ঞায়।।বৈকুণ্ঠেতে আগে তুমি করহ গমন।তথা গিয়া তোমা সঙ্গে করিব মিলন।।ভূরিশ্রবা শ্রীকৃষ্ণেতে এই কথা হয়।কৃষ্ণধ্যান করি ভূরিশ্রবা মৌনে রয়।।হেনকালে সাত্যকি উঠিয়া ভূমি হৈতে।খড়গ লয়ে যায় ভূরিশ্রবারে কাটিতে।।হাতে চুল জড়াইয়া খড়গ লয়ে করে।খণ্ড খণ্ড করি বীর কাটিল তাহারে।।এতেক দেখিয়া কৌরবের সেনাগণ।সাত্যকি উপরে করে বাণ বরিষণ।।এক লাফে সাত্যকি উঠিল গিয়া রথে।ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া অস্ত্র নিল হাতে।।নিমিষেকে মারে লক্ষ লক্ষ সেনাগণ।বাণবৃষ্টি করে বীর মহাকোপ মন।।দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা জয়দ্রথ বধে।কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।২০. ভীমের সহিত যুদ্ধে দুর্য্যোধনেরদশ ভ্রাতার মৃত্যুমুনি বলে, শুন রাজা অপূর্ব্ব কথন।হেনমতে শিনি-পৌত্র করে মহারণ।।হেথা রাজা যুধিষ্ঠির সচিন্তিত মন।অনুক্ষণ করিছেন পার্থের চিন্তন।।তৃতীয় প্রহর বেলা হৈল আসি প্রায়।নাহি জানি পার্থ করে কেমন উপায়।।প্রতিজ্ঞা করিল বীর বড়ই দুষ্কর।জয়দ্রথে না মারিয়া না আসিবে ঘর।।সাত্যকিরে পাঠাইনু উদ্দেশ কারণ।নাহি জানি কোথা গেল সত্যক-নন্দন।।তত্ত্ব জানিবারে তবে পাঠাই সাত্যকি।প্রহর পর্য্যন্ত হৈল, তারে নাহি দেখি।।এই সব ভাবি মম মন নহে স্থির।এত বলি বৃকোদরে ডাকে যুধিষ্ঠির।।যুধিষ্ঠির আজ্ঞা শুনি বীর বৃকোদর।রণ ত্যজি সেইক্ষণে আসিল সত্বর।।রাজার অগ্রেতে রহে করি যোড়কর।ভীমে দেখি কহিলেন ধর্ম্ম-নৃপবর।।অর্জ্জুনের তত্ত্ব ভাই নাহি পাওয়া গেল।সাত্যকিরে পাঠাইনু, সেই নাহি এল।।একা বিপক্ষের মাঝে গেল পার্থবীর।তারে না দেখিয়া মম বিকল শরীর।।এ হেতু তোমারে ডাকি ভাই বৃকোদর।অর্জ্জুনের তত্ত্ব জানি আইস সত্বর।।ভীম বলে, মহারাজ করি নিবেদন।অর্জ্জুনের হেতু কেন করহ চিন্তন।।ত্রিদশ-ঈশ্বর কৃষ্ণ যাহার সারথি।তার জন্য চিন্তা কেন কর নরপতি।।আপনি আসিয়া ব্রহ্মা যদি করে রণ।তথাপি অর্জ্জুনে নাহি জিনে কদাচন।।যুধিষ্ঠির বলে, ভাই কহিলে প্রমাণ।জানি শুনি তবু স্থির নহে মম প্রাণ।।পুনরপি কহে ভীম রাজারে চাহিয়া।কিমতে যাইব আমি তোমারে ছাড়িয়া।।অনুক্ষণ দ্রোণ আসে তোমারে ধরিতে।আমি গেলে কে যুঝিবে তাঁহার সহিতে।।রাজা কহিলেন, চিন্তা নাহিক তোমার।তুমি আন গিয়া অর্জ্জুনের সমাচার।।এত শুনি ধৃষ্টদ্যুম্নে ডাকি বৃকোদর।প্রত্যক্ষে কহিল যত রাজার উত্তর।।অর্জ্জুনের তত্ত্বে আমি যাইব ত্বরিত।রাজারে রাখিবে সবে করি সাবহিত।।ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে, চিন্তা নাহিক তোমার।রাজারে রাখিতে ভার রহিল আমার।।দ্রোণপুত্র আসুক, আপনি দ্রোণ আসে।এক বাণে পাঠাইব যমের আবাসে।।এত শুনি ভীম হৈল হরিষ অন্তর।বিশোকে বলিল রথ সাজাহ সত্বর।।বিশোক সারথি সেই অতি বিচক্ষণ।রথের উপরে তোলে নানা প্রহরণ।।শত শত ধনু তোলে গদা বহুতর।শেল শূল কোটি কোটি ভূষণ্ডী তোমর।।শ্রীহরি স্মরিয়া বীর চড়ে গিয়া রথে।দুর্জ্জয় ধনুক তুলিয়া লইল হাতে।।ধনুকে টঙ্কার দিয়া ছাড়ে হুহুঙ্কার।পর্ব্বত পড়য়ে শব্দে হইয়া বিদার।।প্রমত্ত কেশরী সম রণমত্ত বীর।সংগ্রামে কাহার শক্তি আগে হয় স্থির।।সারথি সমীর জিনি চালাইল হয়।উত্তরিল ব্যূহমধ্যে পবন-তনয়।।বাণ হানে ক্ষিপ্রহস্তে, রিপু করে নাশ।বিপক্ষ পড়য়ে লক্ষ গণিয়া হুতাশ।।সিংহে দেখি শিবা যেন হৈল সৈন্যগণ।ভয়েতে আকুল মন, কম্পে ঘনে ঘন।।কেহ বলে, কার মুখ চাহি আসে ভীমা।মৃত্যুপতি-মূর্ত্তি হয়েআসে কালনিমা।।পলাইলে বধে প্রাণে গোড়াইয়া পাছে।নির্দ্দয় নিষ্ঠুর হেন কে কোথায় আছে।।দন্তে কূটা করি যেবা মাগে পরিহার।সকল এড়িয়া করে তাহারে সংহার।।পলাইলে কি হইবে, না বাঁচিব তায়।প্রাণপণে কর যুদ্ধ নিজ ভরসায়।।মরিব ভীমের হাতে, নাহিক এড়ান।যা থাকে কর্ম্মের ফল, কে করিবে আন।।চিন্তিয়া সাহসে ভর করি সেনাগণ।চতুর্দ্দিকে বেড়ি অস্ত্র করে বরিষণ।।সিংহের সম্মুখে কিবা শিবার গণনা।হুহুঙ্কার ছাড়ে ভীম, পড়ে ঝন্ঝনা।।লক্ষ লক্ষ বিপক্ষ নাশয়ে বাণাঘাতে।বড় বড় হস্তী পাড়ে প্রহারি গদাতে।।একেরে মারিতে আর পড়ে মূর্চ্ছা হয়ে।পলাইলে প্রাণ তার আগে বধে গিয়া।।পড়িল ভীমের রণে রথ অশ্ব হাতী।ধ্বজ ছত্র পতাকায় ঢাকে বসুমতী।।ভীমের সমর দেখি দ্রোণবীর রোষে।দ্বার আগুলিয়া বীর কহে ক্রোধাবেশে।।মোরে না জিনিয়া ভীম যাইবে কেমেন।এত বলি বাণ যোড়ে ধনুকরে গুণে।।গর্জ্জিয়া কহিল ভীম যেন মেঘধ্বনি।অপরাধ হয় পাছে, এই ভয় মানি।।উপরোধ রক্ষা কর, দেহ পথ ছাড়ি।নহে চূর্ণ করি দিব মারি গদাবাড়ি।।শুনিয়া হইল গুরু ক্রোধে হুতাশন।ভীমের উপরে করে বাণ বরিষণ।।বৃষ্টির পশলা যেন বরিষার কালে।ঢাকিল ভীমের রথ-পথ শরজালে।।দারুণ কুপিল ভীম যেন কালসাপ।রথ হৈতে ভূমে পড়ে দিয়া এক লাফ।।সাপটিয়া আচার্য্যের রথখান ধরে।টান দিয়া ফেলে রথ যোজন অন্তরে।।তাহার চাপনে সৈন্য তল যায় কত।সারথি হইল নাশ, অশ্গণ হত।।ধ্বজ ভাঙ্গে, রথ নেড়ামুড়া হয়ে রয়।লাফ দিয়া পলাইল দ্রোণ মহাশয়।।পশ্চাৎ করিয়া দ্রোণে বীর বৃকোদর।অতিবেগে প্রবেশিল ব্যূহের ভিতর।।গদা হাতে গর্জ্জে বীর, অতি দীর্ঘপদে।প্রকাণ্ড পর্ব্বত তনু মত্ত বীরমদে।।সমরে প্রচণ্ড শূর চুর করে যায়।গদাঘাতে রথ রথী পদাতি লোটায়।।বিশোক চালায় বায়ুবেগে অশ্বগণ।উত্তরিল ব্যূহমধ্যে পবন-নন্দন।।দেখিয়া সৈন্যের ক্ষয় রবির নন্দন।আগুলিল ভীমে আসি অতি ক্রুদ্ধমন।।কর্ণেরে দেখিয়া ভীম মহাক্রুদ্ধ হৈল।ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া নিজ অস্ত্র নিল।।কর্ণ বলে, ভীম আজি দেহ মোরে রণ।অবশ্য পাঠাব তোমা যমের সদন।।এত শুনি বৃকোদর ক্রোধে হুতাশন।কর্ণেরে চাহিয়া বলে করিয়া তর্জ্জন।।কৌরব-কিঙ্কর তোর গৌরব যে জানি।জানিয়া তোমারে পাপী পোষে কালফণী।।কুমন্ত্রণা দিয়া কুরু করিলি বিনাশ।নিকট হইল মৃত্যু, বিফল প্রয়াস।।ওরে মূঢ়মতি এত গর্ব্ব যে তোমার।এমত প্রতিজ্ঞা কর অগ্রেতে আমার।।আজি তোরে বাণে আমি করিব সংহার।কহিনু জানিহ বাক্য স্বরূপ আমার।।এত বলি বৃকোদর এড়ে অস্ত্রগণ।গগন ছাইয়া করে বাণ বরিষণ।।যত বাণ এড়ে ভীম কাটে কর্ণবীর।দেখি বৃকোদর বীর কম্পিত শরীর।।আকর্ণ পূরিয়া বীর মারে দশ বাণ।দুই বাণে চারি অশ্ব কাটিল সত্বর।।চারি বাণে সারথিরে দিল যমঘর।সারথি পড়িল, রথ হৈল অচল।।লাফ দিয়া পলাইল কর্ণ মহাবল।কর্ণ পালাইল দেখি বীর বৃকোদর।মহাক্রোদ বাণ এড়ে সৈন্যের উপর।।পড়িল অনেক সৈন্য পৃথিবী আচ্ছাদি।লক্ষ লক্ষ সেনা পড়ে, রক্তে বহে নদী।।দেখিয়া আকুল বড় রাজা দুর্য্যোধন।সহোদরগণে ডাক দিল সেইক্ষণ।।দশ জন যুঝিবারে হৈল আগুয়ান।অযুতের হস্তী আসে মহাবলবান।।মুষল মুদগর বান্ধা শুণ্ডে সবাকার।ঈষা সম দন্ত হস্তী পর্ব্বত আকার।।হস্তিগণে দেখি ভীম ত্যজে ধনুঃশর।হাতে গদা করিনামে সংগ্রাম ভিতর।।শতমণ লৌহ দিয়া গড়া গদাখান।মহাভয়ঙ্কর দেখি কালের সমান।।হেন গদা লয়ে বীর ধাইল সত্বর।নিমিষেতে মারে দশ-সহস্র কুঞ্জর।।গদার প্রহার যেন বজ্রের সোসর।শত শত একবারে মারে বৃকোদর।।ধৃতরাষ্ট্র পুত্রগণ আসে দশজন।ভীমের উপরে করে অস্ত্র বরিষণ।।লাফ দিয়া লঙ্ঘে ভীম যোজনেক বীট।পলাইতে কুরুর পড়িয়া মরে ঠাট।।তবে ক্রোধে বৃকোদর গদা লয়ে ধায়।রথ অশ্ব সহ বীর চূর্ণ করি যায়।।দশজনে মারে বীর গদার প্রহারে।দেখি দুর্য্যোধন বীর হাহাকার করে।।সঞ্জয় কহেন ধৃতরাষ্ট্রে সমাচার।দশ পুত্র রাজা তব হইল সংহার।।গদার প্রহারে মারে বীর বৃকোদর।অযুতেক হস্তী পড়ে মহাভয়ঙ্কর।।ইহা শুনি ধৃতরাষ্ট্র হৈল অচেতন।বহু বিলাপিয়া অন্ধ করয়ে রোদন।।ক্ষণেক থাকিয়া বলে শুনহ সঞ্জয়।বড়ই দারুণ ভীম নির্দ্দয় হৃদয়।।একবারে দশ পুত্রে করিল সংহার।এতেক বলিয়া অন্ধ করে হাহাকার।।সঞ্জয় বলিল, কেন করহ রোদন।পূর্ব্বে যত কহিলাম, না কৈলে শ্রবণ।।অধর্ম্ম করিলে, নহে ভদ্র আপনার।যতেক করিলে, জান সব সমাচার।।বিদুর প্রভৃতি কত বলিল তোমারে।কারো বাক্য না শুনিলে তুমি অহঙ্কারে।।ধৃতরাষ্ট্র বলে, কহ আমারে সঞ্জয়।কভু না শুনিনু পাণ্ডবের পরাজয়।।যতেক শুনি যে পড়ে মোর সেনাগণ।বিশেষিয়া কহ মোরে ইহার কারণ।।সঞ্জয় বলিল, রাজা শুন সাবধানে।পাণ্ডবের দলে কৃষ্ণ আছেন আপনে।।যথা কৃষ্ণ তথা ধর্ম্ম জানিহ রাজন।যথা ধর্ম্ম তথা জয় বেদের বচন।।পুত্র সম স্নেহ নাহি, দৈব সম বল।বিদ্যা সম বন্ধু নাহি, ব্যাধি সম খল।।সর্ব্বকাল দৈববল আছে ধর্ম্মসুতে।বিরোধ তাহার সঙ্গে আপনা খাইতে।।দূত হয় ত্রিভুবনপতি যার বোলে।বিপদে করেন পার করি নিজ কোলে।।জানিয়া না জানি, যে শুনিয়া না শুনি।ধরিয়া আনিল পাশাকালে যাজ্ঞসেনী।।সভায় তাহার বস্ত্র হরে তব সুত।আপনি তাহার কর্ম্ম শুনিলে অদ্ভুত।।হরিতে বাড়িল বাস, নহে অবসান।অনুকূল হয়ে লজ্জা রাখে ভগবান।।এখন পার্থের কৃষ্ণ হইলা সারথি।তাহারে জিনিবে হেন কাহার শকতি।।ভদ্র নাহি আর তব শুন মহীপাল।নিশ্চয় কুরুর বংশ গ্রাসিবেক কাল।।ধৃতরাষ্ট্র বলে, শুন দৈব বলবান।নিরর্থক পুরুষার্থ, করহ বাখান।।দ্রোণপর্ব্বে পুণ্যকথা জয়দ্রথ-বধে।কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon