২৬. দশম দিনের যুদ্ধারম্ভসঞ্জয় বলেন, শুন কৌরব ঈশ্বর।সূর্য্যোদয়-কালে আইল পাণ্ডব সকল।।যখন যে কর্ম্ম হয় জানে ভগবান।শিখণ্ডীরে আনিয়া কহিলা বিদ্যমান।।ভীষ্ম বধ হেতু পূর্ব্বে জনম তোমার।গুপ্তকথা নহে সেই বিদিত সংসার।।আজি রণে কুরুগণে খুঁজিয়া মারিবে।তেকারণে বলি তোমা নির্ভয়ে থাকিবে।।আজি ভীষ্ম মহারনে হইবে নিধন।ধনু ধরি আপনি করিহ কালি রণ।।এত বলি শিখণ্ডীকে রণে পাঠাইয়া।চলিল শ্রীকৃষ্ণ পার্থ সুসজ্জ হইয়া।।নানা বাদ্য বাজয়ে দুন্দুভি শঙ্খধ্বনি।গগন পূরিল শব্দে কাপিঁল মেদিনী।।অর্দ্ধচন্দ্র ব্যূহ ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর কৈল।দক্ষিণ শৃঙ্গেতে ধৃষ্টকেতু নিয়োজিল।।উত্তর শৃঙ্গেতে বিরাট দ্রুপদ রাজন।মহা মহা যোদ্ধাগণ তাহার ভিড়ন।।মধ্যে রহে যুধিষ্ঠির সৈন্যের সহিতে।নকুল সহদেব রহে রাজারে রাখিতে।।শিখণ্ডীকে আগে করি লয়ে যোদ্ধাগণ।ব্যূহ করি রহিলেন করিবারে বাণ।।শিখণ্ডীর দুই পাশে ভীম ধনঞ্জয়।পৃষ্ঠে অভিমন্যু সঙ্গে দ্রৌপদী তনয়।।তার পাশে রহিলা সাত্যকি চেকিতান।তার পাশে ধৃষ্টদ্যুম্ন পাঞ্চাল প্রধান।।তার পাছে ঘটোৎকচ নির্ভয় শরীর।শিখণ্ডীর পাছে রৈলা এই দশ বীর।।ব্যূহ করি সাজিলেক পাণ্ডবের পতি।সৈন্যগণ সিংহনাদে উল্লাসিত মতি।।তবে ত কৌরব যত ভীষ্ম আগে করি।দুর্য্যোধন চলি আইল কুরু-অধিকারী।।দ্রোণাচার্য্য আগু হৈলা দ্রৌণির সংহতি।তার পাছে ভগদত্ত চড়ি মত্ত হাতী।।তার পাছে কৃতবর্ম্মা কৃপ মহাশূর।তার পাছে সুদক্ষিণ কম্বোজ-ঈশ্বর।।জয়সেন জয়দ্রথ সৌবল মহাবল।তার পাছে যত সব নৃপতি সকল।।তার পাছে বৃহদ্বল মহাবলবন্ত।সর্ব্ব শেষে আসে পুনঃ বীর অতিমন্ত।।সৈন্য সমাবেশ করি শান্তনু-নন্দন।পিশাচী রাক্ষসী ব্যূহ করিলা তখন।।অসুর-আকার ব্যূহ অতি ভয়ঙ্কর।এইমত সমরেতে রহিলা সকল।।সাগর সমান সৈন্য সংগ্রামে দুর্জ্জয়।সৈন্যের অগ্রেতে রহে ভীষ্ম মহাশয়।।শিখণ্ডীকে আগে করি যুঝে ধনঞ্জয়।না করে সম্ভ্রম বীর সমরে দুর্জ্জয়।।ভীমসেন মারিল বহুত সৈন্যগণ।বদনে রুধির উঠি ত্যজিল জীবন।।সহদেব নকুল সাত্যকি মহাবীরে।কুরুবল মারিয়া পাঠায় যমঘরে।।পাণ্ডবের প্রতাপ সহিবে কোন জনা।চতুর্দ্দিকে ধায় সৈন্য নাহি মানে মানা।।সৈন্য ভঙ্গ দেখি ভীষ্ম সমরে প্রখর।ক্রোধে হাতে করি তবে নিল ধনুঃশর।।জ্বলন্ত অনলে যেন দিল ঘৃতধার।পাণ্ডবের ধায় ভীষ্ম সমরে দুর্ব্বার।।চেকিতান পাঞ্চালাদি যত বীরচয়।একে একে হানে ভীষ্ম সমরে দুর্জ্জয়।।ভীষ্ম যে হানিছে বাণ হৈয়া কোপবন্ত।যত অস্ত্র মারে বীর নাহি দিগঅন্ত।।একে একে বিন্ধিল পাঞ্চাল পঞ্চজন।হ্স্তী অশ্ব রথ ধ্বজ কে করে গণন।।অশ্বপৃষ্ঠ হৈতে পড়ে আশোয়ারগণ।গজ হৈতে মাহুত পড়িল ততক্ষণ।।বজ্র হস্তে ইন্দ্র যেন অসুর সংহারে ।সর্ব্বসৈন্য ক্ষয় কৈল ভীষ্ম ধনুর্দ্ধরে।।যেমত ইন্দ্রের ধনু শোভয়ে আকাশ।তেন মত ভীষ্ম ধনু করয়ে প্রকাশ।।নিবারিতে না পারি পাণ্ডব ধনুর্দ্ধর।বিষণ্ন বদন হৈল পঞ্চ সহোদর।।নমুচি দানব যেন ইন্দ্রের সংহতি।সেইমত ভীষ্ম কৈল সংগ্রামে দুর্গতি।।এইরূপে দুই দলে হৈল মহারণ।দেবাসুর যুদ্ধ যেন ঘোর দরশন।।দশম-দিবস যুদ্ধে ভীষ্ম মহাবল।বাণে বিন্ধি পাণ্ডুসেনা করিল বিকল।।কালান্তক যম যেন সংগ্রাম ভিতর।শিখণ্ডী যে ভীষ্মকে মারিল পঞ্চশর।।হাসিয়া বলেন ভীষ্ম শিখণ্ডীকে দেখি।যদি মৃত্যু হয়তবে তোমাকে উপেক্ষি।।শিখণ্ডিনী তোকে ত বিধাতা সিরজিল।দৈবের বিপাকে তোরে পাণ্ডবে বরিল।।শরীর কাটিয়া যদি পাড়হ ভূতলে।অস্ত্র না মারিব আমি তোমার শরীরে।।ক্রুদ্ধ হৈয়া শিখণ্ডী ভীষ্মেরে বলে দাপে।নিরস্ত্র হইল ক্ষত্র তোমার প্রতাপে।।পূর্ব্বে পরশুরামের সনে কৈলে রণ।দেবের প্রতাপ তব শুনিনু বচন।।তোমার প্রতাপ সব জগতে বিদিত।তেকারণে তোমা সহ যুঝিব নিশ্চিত।।পাণ্ডব সাহায্য হেতু আমি করি রণ।সংগ্রামেতে জিনিব দেখুক সর্ব্বজন।।আজি সত্য করিয়াছি শুন মহাবল।মোর অস্ত্রে আজি তবে হৈবে অমঙ্গল।।বাক্য-যুদ্ধ ছাড়িয়া মারিল পঞ্চ বাণ।ভীষ্মবীর নাহি হানে করি নারীজ্ঞান।।শিখণ্ডীকে বলে তবে পার্থ ধনুর্দ্ধার।কাল হেন জানি ভীষ্মে মারহ সত্বর।।তব পাছে থাকি আমি এড়িব যে বাণ।ভীষ্মেরে জানাহ তুমি করিয়া সন্ধান।।এই জানি ভীষ্মে হান শীঘ্র মার শর।না মরিয়া ভীষ্মে আজি না যাইব ঘর।।রণে ভীষ্মে না মারিয়া যদি যাই ঘর।তোমা আমা দেখি লোক হাসিবে বিস্তর।।কুরুযোদ্ধা যতেক সকলে ডরে তোরে।নিরাতঙ্কে মার ভীষ্মে ভয় নাহি তারে।।কৃষ্ণসঙ্গে আমি তোমা রাখিব সংগ্রামে।কি করিতে পারে দ্রোণ অশ্বত্থামা সনে।।শল্য ভূরিশ্রবা আর কৌরবের পতি।চিত্রসেন বিকর্ণ সৌবল মহামতি।।বিন্ধ্য অনুবিন্ধ্য সুদক্ষিণ ভগদত্ত।অলম্বুষ মগধ বাহ্লীক সোমদত্ত।।আর যত মহামতি ত্রিগর্ত্ত নৃপতি।কি করিতে পারে তোমা কাহার শকতি।।সমুদ্রে পড়য়ে যেন সমুদ্রের জল।একেশ্বর নিবারিব কুরু-মহাবল।।ভীষ্ম তোকে অস্ত্র না মারিবে কদাচিত।এতেক জানিয়া যত্নে হানহ ত্বরিত।।পৌরুষ করিয়া আজি মার গঙ্গাসুত।দুই দলে দেখুক আজি বিক্রম অদ্ভুত।।এত বলি ধনঞ্জয় করে শরবৃষ্টি।চারিদিক অন্ধকার মজাইতে সৃষ্টি।।হইল তুমুল যুদ্ধ মহাকোলাহল।অর্জ্জুনের বিক্রম না সহে কুরুদল।।সিংহ যেন অরণ্যে খেদায় মৃগগণ।ভঙ্গ দিল কুরুগণ পরিহরি রণ।।সৈন্যভঙ্গ দেখি দুর্য্যোধন পায় দুখ।বিষণ্ণ বদরে গেলা ভীষ্মের সম্মুখ।।অর্জ্জুনের শরজালে ভাঙ্গে মোর সৈন্য।নির্বাত কালেতে যেন দহয়ে অরণ্য।।গজেন্দ্র মারিতে যেন ধায় মৃগরাজ।কুরুসেনা খেদাইল পাণ্ডব সমাজ।।লণ্ডভণ্ড কৈল মোর যত সেনাগণ।কার শক্তি সহিবেক অর্জ্জুনের রণ।।তোমা ছাড়া গতি নাহি আমার সেনার।তুমি না রাখিলে গতি না দেখি যে আর।।এতেক কহিল যদি রাজা দুর্য্যোধন।মুহূর্ত্তেক রহি বলে শান্তনু নন্দন।।স্থির হও দুর্য্যোধন না হও বিমন।জয় পরাজয় জান দৈব-নিবন্ধন।।পূর্ব্বেতে প্রতিজ্ঞা কৈনু তোমার অগ্রেতে।দশ সহস্র রথী আমি মারিব যুদ্ধেতে।।দশ সহস্র রথী যদি না মারি পরাণে।রথ হতে নিবর্ত্তন নহি কদাচনে।।পাণ্ডবের সেনা মারি করিব যে ক্ষয়।নতুবা আমারে মারি লভুক বিজয়।।এক কর্ম্ম পণে নিবর্ত্তিনু দশ দিন।আমার প্রতিজ্ঞা কভু নহিবেক ভিন।।এত বলি ভীষ্ম বীর হাতে নিল শর।নিরন্তর শরজালে ছাইল অম্বর।।পাণ্ডবের সৈন্য সব ভেদিলেক শরে।যুগান্তের কালে যন সংসার সংহারে।।সর্ব্বসৈন্য সংহারিল ভীষ্ম ধনুর্দ্ধর।লক্ষ লক্ষ বাণ মারে পান্ডব উপর।।এক লক্ষে বিন্ধিল পাঞ্চাল মহাবীর।দশ সহস্র অশ্বের কাটিলেক শির।।জ্বলন্ত অনলে যেন দহিল শরীর।দেখিয়া ক্রোধিত হৈল ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর।।ধৃষ্টদ্যুম্ন ডাক দিয়া বলিল সত্বরে।ভয় না করিহ কেহ মারহ ভীষ্মেরে।।এই যে অর্জ্জুন দেখ ভীষ্মকে মারিতে।চলিছে করিয়া ক্রোধ শিখণ্ডী সহিতে।।ধৃষ্টদ্যুম্ন বাক্য শুনি ফিরে সেনাগণ।পথ আগুলিয়া যুদ্ধ করে দুঃশাসন।।দুঃশাসন অর্জ্জুনেরে হানে তিন বাণ।নয় বাণে বাসুদেবে হানিল তখন।।কৃষ্ণেরে মারিয়া পার্থে মারিবারে চায়।শতেক নারাচ পার্থ এড়িলেক তায়।।কবচ ভেদিয়া বাণ উঠয়ে গগন।রথে পড়ে দুঃশাসন হৈয়া অচেতন।।সংজ্ঞা পেয়ে ধনু ধরি মারে পঞ্চবাণ।অর্জ্জুন-ললাটে গিয়া ভেদিল তখন।।পঞ্চশির সর্প যেন অতি শোভা করে।অশোক কিংশুক যেন শোভে বৃক্ষোপর।।অর্জ্জুন করিয়া ক্রোধ হানে দুঃশাসন।শরে হানি কৈল যেন অরুণ-বরণ।।লইয়া শাণিত বাণ এড় দুঃশাসন।অর্জ্জুন কাটিল তাহে তিল পরিমাণ।।পুনঃ পার্থ দুঃশাসনে হানিল অপার।পার্থে বিংশ বাণ হানে কৌরব-কুমার।।ভঙ্গ দিল দুঃশাসন সমর এড়িয়া।ভীষ্মেরে নিকটে গিয়া রহে স্থির হৈয়া।।মজিয়া থাকয়ে কেহ অগাধ সলিলে।নিস্তার পায় ত সেই স্রোতে নিলে কূলে।।ভীষ্মের নিকটে তেন পাইল নিস্তার।শ্রমশান্তি করি পুনঃ আইল যুঝিবার।।বৃত্র-বাসবেতে যেন পূর্ব্বে কৈলরণ।পরস্পর হানা-হানি হৈল দুইজন।।তবে পার্থ দিব্য অস্ত্র এড়িল সন্ধিয়া।দুঃশাসন কাটিলেক অর্দ্ধচন্দ্র দিয়া।।রণমধ্যে যুঝেন অর্জ্জুন দুঃশাসনে।সিংহ যেন মৃগেরে খেদায় মহারণে।।অর্জ্জুনের সম্মুখে পলায় দুঃশাসন।রণ এড়ি পুনঃ গেলা ভীষ্মের সদন।।অলম্বুষ সাত্যকিতে হৈল মহারণ।হাসিয়া রাক্ষসে বলে লইব জীবন।।অলম্বুষ সাত্যকি হানিল নব শরে।মূর্চ্ছিত হইয়া পড়ে রথের উপরে।।ক্ষণেকে চেতন পেয়ে উঠয়ে রাক্ষস।সাত্যকিরে হানে বাণ করিয়া সাহস।।ভগদত্ত ক্রোধ করি আইর তখন।সাত্যকি উপরেকরে বাণ করিষণ।।সাত্যকির ধনু কাটে ভগদত্ত বীর।তবে আর ধনু লৈলা সাত্যকি সুধীর।।ক্রোধ করি ভগদত্তে হানে চোখ শর।অগ্নি হেন বাণে বিন্ধে তার কলেবর।।দেখি রাজা ভগদত্ত সক্রোধ অন্তরে।শেলপাটে এড়িলেক সাত্যকি উপরে।।শেল লৈল ভগদত্ত যমদণ্ড সম।সাত্যকি মারিতে এড়ে করিয়া বিক্রম।।সাত্যকি কাটিয়া শেল করে দুইখান।ভূমিতে পড়িল শেল উল্কার সমান।।তবে আজ্ঞা কৈল ভাতৃগণে দুর্য্যোধন।সব যোদ্ধা লৈয়া কর ভীষ্মের রক্ষণ।।রাজার বচন শুনি চলে রথিগণ।অভিমন্যু সাত্যকি সনে পথে দরশন।।কাম্বোজ সহিত যুদ্ধ অভিমন্যু করে।ষাটি বাণ হানিলেক সুভদ্রা-কুমারে।।সহদেব সহিত নকুল যুধিষ্ঠির।ভীষ্মকে মারিতে যায় নির্ভয় শরীর।।তবে কুরুবল সব আইল সত্বর।একে এক নিবারয়ে পাণ্ডবের শর।।ধৃষ্টদ্যুম্নে নিবারিল কৃতবর্ম্মা বীর।সোমদত্ত মারি ভীমে করিল অস্থির।।নকুলে নিবারে সে বিকর্ণ মহাবীর।সহদেবে নিবারে কৃপ নির্ভয় শরীর।।ঘটোৎকচে নিবারে সকল মহাবল।পরস্পর দুই দলে এড়ে দিব্য শর।।ক্রোধে ভূরিশ্রবা অস্ত্র এড়য়ে নির্ভয়।সেই বাণে হানিলেক ভীমের হৃদয়।।ভীমসেন হানিলেক সোমদ্ত্ত-সুত।সূর্য্যের সমান বাণ দেখিতে অদ্ভুত।।চিত্রসেন চেকিতান যুঝে পরস্পর।প্রাণপণে চেকিতান করিল সমর।।দুই বীরে যুদ্ধ হৈল দেখে সর্ব্বজনে।কেহ কারে নিবারিতে না পারিল রণে।।বিমুখ কৌরবসৈন্য কৈল ধনঞ্জয়।পাণ্ডবের সেনা মারি ভীষ্ম কৈল ক্ষয়।।মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।কাশীরামদাস কহে শুনে পুণ্যবাণ।।২৭. দ্রোণাচার্য্য-অশ্বত্থামা সংবাদমুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের কুমার।দশম দিবসে হৈল ভীষ্মের সংহার।।আপনার পরাক্রম সর্ব্ব ভীর করে।কারো শক্তি নাহি দেখি রাখে ভীষ্মবীরে।।তবে দ্রোণ মহাবীর হাতে শরাসন।সৈন্য পর্য্যটন করি বুলে বিচক্ষণ।।অশ্বত্থামা পুত্রকে বলয়ে মহামতি।বুঝিতে না পারি আজি সমরের রীতি।।অর্জ্জুন প্রতিজ্ঞা কৈল ভীষ্মে মারিবারে।সেই দিন হৈল আজি ধ্বজে কাক পড়ে।।অমঙ্গল যত দেখি শুন কহি তোরে।তূণ হৈতে বাণ খসি ভূমিতলে পড়ে।।পক্ষীসব কলরব শ্রবণেতে শুনি।রথের উপরে পড়ে গৃধিনী শকুনি।।যুদ্ধকালে হাত হৈতে খসি পড়ে শর।প্রভাহীন গগনেতে দেব দিবাকর।।দুর্য্যোধন বাহিনীতে গৃধ্র কাক উড়ে।দিবসে শৃগাল সব ঊর্দ্ধরব করে।।গগনমণ্ডল হৈতে উল্কা পড়ে খসি।গগনে কবন্ধ নাচে সূর্য্যকে পরশি।।সঘনে পৃথিবী কাঁপে শবদ বিস্তর।শোণিত বরিষে মেঘে অতি ভয়ঙ্কর।।পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজে গাণ্ডীবের ধ্বনি।ঘোর গরজন হৈল যেন কাদম্বিনী।।এড়িয়া সকল যোদ্ধা সংগ্রামে দুর্ব্বার।ধনঞ্জয় বীর আইসে ভীষ্মে মারিবার।।যুদ্ধে ইচ্ছা নাহি হয় লোমাঞ্চিত কায়।অর্জ্জুনের সমাগম গোবিন্দ সহায়।।দুরাচার শিখণ্ডীরে আগে রথে করি।আইসে ফাল্গুনী বীর বিক্রমে কেশরী।।দুর্জ্জয় অর্জ্জুন বীর বলে বলবন্ত।মহাযোদ্ধা পার্থ বিক্রমের নাহি অন্ত।।মহাঅন্ত্র জানে বীর দেবের দুর্জ্জয়।ভীষ্মকে মারিতে আজি আইসে ধনঞ্জয়।।স্বগণ সম্মুখ করি কর গিয়া রণ।ঘুষিবে তোমার যশ এ তিন ভুবন।।পুত্রের জীবন পিতা বাঞ্ছে সর্ব্বক্ষণ।তথাপি তোমারে বলি করিবারে রণ।।তিনলোকে পার্থ সম নাহি ধনুর্দ্ধর।নিশ্চয় মারিবে ভীষ্মে করিয়া সমর।।সৈন্য সব খেদাইয়া আইসে মহাবল।হাহাকার শব্দ করে কৌরব সকল।।যুধিষ্ঠির রাজা আসে লইয়া সৈন্যগণ।তাহার সহিত গিয়া আমি করি রণ।।অভিমন্যু সহিত সাত্যকি মহাধীর।মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন বৃকোদর বীর।।সহদেব নকুল সমরে মহাধীর।ভীষ্মকে মারিতে আইসে নির্ভয় শরীর।।এই দেখ শ্যামবর্ণ যেন শালগাছ।পাণ্ডবের সৈন্য সব সমরের মাঝ।।অস্ত্র লৈয়া যুঝে যেন দ্বিতীয় অর্জ্জুন।ইন্দ্রের সমান সব সংগ্রামে নিপুণ।।শিখণ্ডীকে আগু করি যুঝেন ফাল্গুনী।অশ্বত্থামা বীর গেল যুঝিতে তখনি।।মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে হয় দিব্যজ্ঞান।।২৮. কুরু-পাণ্ডুবীরগণের পরস্পর যুদ্ধধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসিল সঞ্জয়ের স্থানে।ভীষ্ম সঙ্গে যুদ্ধ করে পাণ্ডবের গণে।।মোর যোদ্ধাগণে কেবা মারয়ে পাণ্ডব।সৃঞ্জয় পাঞ্চাল কিবা করিল কৌরব।।সঞ্জয় বলেন, রাজা কৌরব পাণ্ডব।বিস্তারিয়া কহি যত বুঝে বীর সব।।ভীষ্মেরে প্রতিজ্ঞা যেই সেই করে রণ।দশ সহস্র রথী নিত্য করেন নিধন।।অর্জ্জুনে সংগ্রামে চলে পাঞ্চালের সাথে।অযুতে অযুতে সৈন্য মারে সব্যহাতে।।ধৃষ্টকেতু সনে রণ কৌরব সহিত।দুর্য্যোধন সনে রণ সুভদ্রার সুত।।দ্বাদশ বাণেতে রাজা অভিমন্যু হানে।ক্রোধ করি শেল এড়ে সুভদ্রা নন্দনে।।ক্ষুরবাণে দুর্য্যোধন কাটিল ত্বরিত।অভিমন্যু নব বাণে করিল পীড়িত।।পুনঃ বাণে হানিলেক রাজার হৃদয়।ক্ষণেক অস্থির হয়ে রথোপরি রয়।।রাজাকে স্থগিত দেখি কোশলের পতি।অষ্টাদশ বাণে হানে অভিমন্যু রথী।।মদ্ররাজা সনে রণ ধর্ম্মের নন্দন।মাতুল-ভাগিনা যুদ্ধ হইল তখন।।পদাতি পদাতি যুদ্ধ করে মহারণ।এত মতে ঘোর যুদ্ধ হইল তখন।।অশ্বে অশ্ব মারিল হস্তীতে মারে হস্তী।উন্মত্তের প্রায় রথ বিপরীত গতি।।পরস্পর করে রণ অতি ভয়ঙ্কর।অর্জ্জুন কৌরবে ক্ষয় করিল সমর।।তবে শল্য কৃপ আর বিকর্ণ দুঃশাসন।অর্জ্জুনে আগুলে আসি যুদ্ধে ততক্ষণ।।দুঃশাসনে হানিলেক পার্থ ধনুর্দ্ধর।শরীর ভেদিয়া বাণ ধায় রসাতল।।পরে তার সারথিরে কাটিল অর্জ্জুন।চারি অশ্ব কাটি তার কাটে ধনুর্গুণ।।কৃপ শল্য বিকর্ণ হানিল তিন জনে।বিরথ করিল তিনে পাণ্ডুর নন্দনে।।পরাজয় পেয়ে তারা ভঙ্গ দিল রণে।তাহা দেখি ভীষ্ম বাণ যোড়ে শরাসনে।।অগ্নিতে পোড়য়ে যেন শুষ্ক বন পেয়ে।সেই মত পড়ে সৈন্য ভীষ্ম-বাণ খেয়ে।।চেদি পাঞ্চাল কাশী বিরাট রাজার।যমপুরে নিল সৈন্য পরম যুঝার।।অক্ষয় ভীষ্মের অস্ত্র বিন্ধিছে শরীরে।ভীষ্মের সম্মুখে কেহ দাণ্ডাইতে নারে।।জমদগ্নিসুত রাম-শিক্ষিত যে বাণ।পাণ্ডু-সৈন্য নাশ করে পূরিয়া সন্ধান।।বিরাটের সহোদর শতানীক পড়ে।সহস্র রাজার মাথা বাণে কাটি পাড়ে।।ধৃষ্টদ্যুম্ন সহিত আইল ভীমসেন।নকুল সহদেব আর কেকয় পঞ্চজন।।চেকিতান সাত্যকি আর সুভদ্রা নন্দন।ধৃষ্টকেতু দ্রুপদ আইল কাল হেন।।দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র ঘটোৎকচ সনে।উত্তমৌজা কুন্তীভোজ আইল আপনে।।বিরাট প্রভৃতি আইলা যত পাণ্ডুগণ।একে একে হানি ভীষ্ম করে নিবারণ।।ভয়ার্ত্ত কাতর হৈর ছিল যত জন।অর্জ্জুনে সম্বোধি বলে দেবকী নন্দন।।এই দেখ ভীষ্ম হানে মহারথিগণ।তোমা বিনে তার অস্ত্র সহে কোন্ জন।।শুনিয়া কৃষ্ণের বাণী অর্জ্জুন তখন।ভীষ্মের উপরে করে বাণ বরিষণ।।রথ ধ্বজ অশ্ব যূথ আবরিল শরে।শরে শর পার্থ বীর নিবারণ করে।।দুর্য্যোধন নরপতি লয়ে রাজগণ।পাণ্ডব সহিত যুদ্ধ করে অনুক্ষণ।।শিখণ্ডীকে আগে করি পাণ্ডব নিকর।বেড়িয়া হানয়ে শর ভীষ্মের উপর।।শতঘ্নী পরশু আর মুষল মুদগর।শেল শূল জাঠা জাঠি ভূষণ্ডী তোমর।।ভীষ্মপর্ব্বে দশর অধ্যায় সমাপন।ব্যাস-বিরচিত তাহা কাশীরাম গান।।২৯. ভীষ্মের মৃত্যুইচ্ছাসঞ্জয় বলেন, শুন কৌরব-ঈশ্বর।মহাযুদ্ধ করিলেন ভীষ্ম ধনুর্দ্ধর।।ভীমসেন সাত্যকি দ্রুপদ ধনঞ্জয়।মৎস্যরাজ ধৃষ্টতেকু সমরে দুর্জ্জয়।।এই ছয় বীরে তবে মর্ম্মে হানে বাণ।দশ দশ বাণে হানে পূরিয়া সন্ধান।।শীঘ্রহস্ত ভীষ্ম বীর বাণ-বৃষ্টি করে।শরে শর নিবারয়ে সেই ছয় বীরে।।পুনঃ লয় ক্ষুরবাণ যতেক আছিল।শিখণ্ডী হানিল বাণ তাহা না জানিল।।ক্রোধ করি ধনঞ্জয় হাতে নিল চাপ।ভীষ্মের কাটিল ধনু অতুল প্রতাপ।।ভীষ্ম-ধনু কাটা গেল দেখি সর্ব্বজন।অর্জ্জুন সহিত গেল করিবারে রণ।।দ্রোণ ভূরিশ্রবা আর রাজা সোমদ্ত্ত।জয়দ্রথ বীর কৃতবর্ম্মা ভগদত্ত।।অর্জ্জুনে বেড়িল সবে এই ছয় বীরে।প্রলয় কালেতে যেন সমুদ্র উথলে।।অর্জ্জুনে বেড়িয়া সব কুরু সৈন্যবল।দিব্য দিব্য অস্ত্র এড়ে কৌরব সকল।।দেখিয়া পাণ্ডব-যোদ্ধা কৌরবের গণ।ভীমসেন সাত্যকি আইল ততক্ষণ।।ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রুপদ বিরাট নৃপবর।অভিমন্যু ঘটোৎকচ আইল সত্বর।।ক্রোধ হৈল সপ্তবীর অগ্নির সমান।ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হৈল কি দিব তুলন।।পূর্ব্বে যেন রণে হৈল দেবতা দানবে।সেই মত রণ হৈল কৌরব-পাণ্ডবে।।ধনু হাতে যুঝে বীর গঙ্গার তনয়।সেই ধনু বাণেতে কাটিল ধনঞ্জয়।।আর ধনু হাতে নিল ভীষ্ম মহাবীর।গুণ দিতে কাটি পাড়ে হাতে নহে স্থির।।এই মত ভীষ্ম ধনু পুনঃ যায় কাট।যমের দুয়ারে যেন লাগিল কপাট।।মহাক্রোধ হয়ে বীর শক্তি নিল হাতে।পর্ব্বত বিদার শক্তি মারে পার্থ মাথে।।অর্জ্জুন দেখিল শক্তি বজ্রের সমান।পঞ্চবাণ হানিয়া করিল খান খান।।খণ্ড খণ্ড হয়ে শক্তি ভূমেতে পড়িল।মেঘবৃন্দ মধ্যে যেন বিজুরী খেলিল।।কাটা গেল শক্তি দেখি ভীষ্ম কৈল কোপ।মনে মনে ভাবি বীর করে অভিরোষে।।পঞ্চ ভাই মারিবারে পারি একেশ্বর।যদি রক্ষা না করে আপনি দামোদর।।মারিতে না পারি রণে অবধ্য যে জন।রথেতে শিখণ্ডী আর আপনি নারায়ণ।।মরণের কাল এই হইল এখন।পাণ্ডবের পরাক্রম বাড়ে দিন দিন।।ভীষ্মবীর হেনমতে চিন্তে মনে মন।আকাশেতে সপ্তবসু জানিল তখন।।হেনকালে বায়ু বহে গন্ধে মনোহর।গগনেতে বাজে বাদ্য শুনিতে সুস্বর।।ঋষিগণে বসুগণে বলয়ে তখন।উত্তম চিন্তিলা ভীষ্ম ত্যজ তুমি রণ।।দেবতার প্রিয়কর্ম্ম স্মরি পূর্ব্বকথা।যুদ্ধ নিবারিয়া আইস সঙ্গে থাকি হেথা।।এ সব বৃত্তান্ত আর কেহ না জানিল।শান্তনু তনয় তাহা সকলি শুনিল।।দৈববাণী শুনি ভীষ্ম ক্রোধ সম্বরিল।ভীষ্ম মহাবীর তবে যুদ্ধ মন দিল।।অর্জ্জুন উপরে ভীষ্ম শরবৃষ্টি করে।অর্জ্জুন হানয়ে তবে ভীষ্ম কলেবরে।।ধনু ধরি যুঝে বীর সংগ্রামে নিপুণ।পঞ্চ বাণে সেই ধনু কাটিল অর্জ্জুন।।যেই ধনু হাতে লয় ভীষ্ম মহামতি।সেই ধনু অর্জ্জুন কাটয়ে শীঘ্রগতি।।বাছিয়া বাছিয়া বীর করয়ে সন্ধান।ভীষ্মের উপরে হানে লক্ষ লক্ষ বাণ।।তবে ভীষ্ম বলিলেন শুন দুঃশাসন।অর্জ্জুনের বাণ পড়ে যেন কাল যম।।তাহার অগ্রেতে হবে আছে কোন জন।অর্জ্জুনেরে জিনিতে না পারে দেবগণ।।আমাকে বিন্ধিল দেখ চোখ চোখ শরে।নিরন্তর শরজালে বিন্ধে কলেবরে।।এতেক বলিয়া ভীষ্ম বরিষয়ে শর।বরিষার কালে যেন বর্ষে জলধর।।ক্রোধ করি ভীষ্ম পুনঃ শক্তি নিল হাতে।বাহুবলে হানে ভীষ্ম অর্জ্জুনের মাথে।।তিন বাণে অর্জ্জুন করিল তিন খান।কুরুগণ সকলে দেখিল বিদ্যমান।।খড়্গ চর্ম্ম হাতে নিল ভীষ্ম মহাবল।খণ্ড খণ্ড কৈল তবে পার্থ ধনুর্দ্ধর।।নানা অস্ত্র বরিষয়ে ভীষ্মের উপরে।বরিষার কালে যেন বর্ষে জলধরে।।দুই বীরে মহাযুদ্ধ বাজিল তুমুল।দশম দিবসের যুদ্ধ দিতে নারে তুল।।কাশীরাম দাস কহে ভারত আখ্যান।দশম অধ্যায় এই হৈল সমাধান।।৩০. ভীষ্মের পতনসঞ্জয় বলেন, শুন অন্ধ নরবর।ভীষ্ম পার্থ দুইজনে করেন সমর।।শেষ রণ জানি ভীষ্ম যুঝে প্রাণপণ।পাশাক্রীড়া কাল স্মরি পার্থ করে রণ।।দুই দলে মিশামিশি যুদ্ধ পরস্পরে।লাখে লাখে বীর পড়ে সমর ভিতরে।।যোদ্ধা দশ সহস্র মারিল ভীষ্ম বীর।দিনের প্রতিজ্ঞা রাখে নির্ভয় শরীর।।অর্জ্জুনের প্রতি হরি বলেন বচন।শিখণ্ডীকে আগে রাখি মার অস্ত্রগণ।।অর্জ্জুন বলেন, শুন দেবকী-তনয়।এমত কপট যুদ্ধ উচিত না হয়।।শ্রীহরি বলেন, পার্থ শুনহ উত্তর।ভীষ্মে মারি পরাজয় কর কুরুবর।।এত বলি শিখণ্ডীকে রথে বসাইল।দেখিয়া ত ভীষ্মবীর অস্ত্র ত্যাগ কৈল।।অস্ত্র ত্যাগ করি ভীষ্ম হেঁটমুণ্ড হয়ে।কহিতে লাগিল বীর কৃষ্ণেরে চাহিয়ে।।ওহে প্রভু নারায়ণ যাদব-ঈশ্বর।আমারে মারিবে করি কপট সমর।।এতেক বলিয়া বীর নানা স্তুতি করে।পুলকে বলিয়া নাম বলে উচ্চৈঃস্বরে।।তবে ত শিখণ্ডী ক্রোধে নিল ধনুর্ব্বাণ।ভীষ্মের উপরে মারে পূরিয়া সন্ধান।।শত শত বাণ মারে বাছিয়া বাছিয়া।অর্জ্জুন শিখান তারে বহু বুঝাইয়া।।শিখণ্ডী এড়য়ে বাণ হইয়া নির্ভয়।সহস্রেক বাণে বিন্ধে ভীষ্মের হৃদয়।।নাহিক সম্ভ্রম তার, না জানে বেদন।মৃগীর প্রহারে যেন মৃগেন্দ্রের মন।।হাসিয়া অর্জ্জুন হাতে লইলেন ধনু।পঞ্চবিংশ বাণে তাঁর বিন্ধিলেন তনু।।শত লক্ষ বাণ মারিলেনে একবারে।ভীষ্মের কবচ ভেদি রক্ত পড়ে ধারে।।অর্জ্জুনের বাণ সব অগ্নিসম ছুটে।ভীষ্মের শরীরে যেন বজ্রসম ফুটে।।গঙ্গার নন্দন বিচারেন মনে মন।এই অস্ত্র শিখণ্ডীর না হয় কখন।।শিখণ্ডী-পশ্চাতে থাকি পার্থ ধনুর্দ্ধর।আমারে মারিছে বীর তীক্ষ্ণ তীক্ষ্ণ শর।।এত চিন্তি হরিপদ হৃদে ধ্যান করি।মুখেতে কহেন উচ্চে শ্যীহরি শ্রীহরি।।বাণাঘাতে দেহ কাঁপে অতি ঘনে ঘন।শিশির কালেতে যেন কাঁপয়ে গো-ধন।।ধনঞ্জয় আপনার অস্ত্র বরিষণে।রোমে রোমে বিন্ধিলেন গঙ্গার নন্দনে।।সর্ব্বাঙ্গ ভেদিল অস্ত্রে, স্থান নাহি আর।সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া পড়ে শোনিতের ধার।।তবে পার্থ দিব্য অস্ত্র নিলেন তখন।পিতামহ-বক্ষঃস্থলে করেন ঘাতন।।কবচ ভেদিয়া বাণ মর্ম্মেতে পশিল।রথ হৈতে ভীষ্ম বীর ভূমিতে পড়িল।।সমরে পড়িল বীর পূর্ব্ব শির হৈয়া।আকাশের চন্দ্র যেন পড়িল খসিয়া।।অল্পমাত্র শেষ কিছু আছে দিবাকর।ভীষ্ম বীর পড়িল অস্থির কুরুবর।।আকাশেতে দেবগণ করে হাহাকার।পাণ্ডবে বেড়িয়া কৈল ভীষ্মেরে সংহার।।সহস্রেক বাণ আছে ভীষ্মের শরীরে।ভূমিতে না পড়ে ভীর রহে শূন্যোপরে।।পূর্ব্বকথা স্মরিয়া হইলা সংজ্ঞাহীন।শয়নেতে স্বপ্ন দেখে অয়ন দক্ষিণ।।দক্ষিণ অয়নে মৃত্যু না হয় উচিত।উত্তর অয়নে চিন্তে যাইব নিশ্চিত।।সেইকালে বৃষ্টি কৈল কাঁপিল মেদিনী।অন্তরীক্ষে দেবগণ বলিলেন বাণী।।গঙ্গার তনয় তুমি সর্ব্বশাস্ত্রে জ্ঞানী।দক্ষিণ অয়নে তুমি কেন ছাড় প্রাণী।।শুনিয়া বলেন ভীষ্ম প্রাণ আছি ধরি।উত্তরায়ণের সূর্য্য অপেক্ষা যে করি।।বুঝিবারে ভীষ্ম-মন গঙ্গা ততক্ষণ।হংসগণ পাঠাইল আপন বাহন।।ভীষ্মের নিকটে বলে প্রদক্ষিণ করি।গঙ্গা পাঠাইল মোরে চল ত্বরা করি।।ভীষ্ম বলে যাব আমি উত্তরায়ণ কালে।শুনি হংস কহে গিয়া গঙ্গার গোচরে।।কৌরব-ঈশ্বর বীর রণেতে পড়িল।পাণ্ডবে কহয়ে মহা মেরু উপাড়িল।।অস্ত্র সম্বরিল সব কুরু পাণ্ডুবল।সবাকার মনে তবে বিপাক পড়িল।।পিতামহ পড়ে রণে শুনি কুরুকুল।মূর্চ্ছিত হইল কেহ কান্দিয়া আকুল।।শীঘ্র গিয়া দুঃশাসন দ্রোণকে কহিল।ভীষ্মের পতনে দ্রোণ বড় দুঃখী হৈল।।কর্ণ দুর্য্যোধন তবে নিঃশ্বাস ছাড়িয়া।বহু বিলাপয়ে সবে শোকাকুলে হৈয়া।।ক্ষত্রিয় জন্মেরি নিন্দা করে জনে জন।ভীষ্মের প্রশংসা করে যত দেবগণ।।ভীষ্মপর্ব্বে দশম দীনে ভীষ্মের পতন।দশম অধ্যায় কথা শুনহ রাজন।।মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।কাশী কহে ভক্তগণ পিয় কর্ণ ভরি।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon