৩১. কর্ণের নিকট হইতে ছলেইন্দ্রের কবচ গ্রহণ বৃত্তান্তমুনি বলে শুন পরীক্ষিতের নন্দন।হেনমতে ঘটোৎকচ হইল নিধন।।পুত্রহত দেখি ভীম করয়ে রোদন।হাতে গদা করি ধায় মহারুষ্ট মন।।সৃষ্টি নাশ হেতু যেন দীপ্তিমান চণ্ড।সেইমত করে বীর সৈন্য লণ্ড ভণ্ড।।শত শত হস্তী পড়ে গদার প্রহারে।নিমিষেকে পদাতিক দিল যমঘরে।।ভীমকে দেখিয়া কাল শমন সমান।ভয়েতে পলায় সবে লইয়া পরাণ।।সমস্ত রজনী যুদ্ধ করি সৈন্যগণ।গদাঘাতে খণ্ড খণ্ড হৈল সর্ব্বজন।।ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অবসন্ন কলেবর।রথীগণ সেনাগণ নিদ্রায় কাতর।।দুর্য্যোধন ভয়ে কেহ না পারে যাইতে।হাতে অস্ত্র করি রথী পড়ি যায় রথে।।এতেক দেখিয়া তবে বীর ধনঞ্জয়।সৈন্যের দুর্গতি দেখি তাপিত হৃদয়।।ডাকিয়া বলেন পার্থ শুনহ বচন।আজিকার মত যুদ্ধ কর নিবারণ।।ক্ষুধায় তৃষ্ণায় সবে হইল পীড়িত।এত শুনি সর্ব্বজন হৈল আনন্দিত।।ধন্য ধন্য বলি পার্থে বলেন বচন।মহাধর্ম্মশীল তুমি ইন্দ্রের নন্দন।।দয়াশীল ধর্ম্মশীল তুমি মহাশয়।অচিরে হইবে পার্থ তোমার বিজয়।।এত বলি আনন্দিত হৈল সেনাগণ।নিদ্রাযুক্ত হয়ে সবে পড়ে সেইক্ষণ।।রণস্থলে পড়িলেন হইয়া কাতর।রথিগণ পড়ে গেল রথের উপর।।গজেতে মাহুত পড়ে অশ্বে আসোয়ার।ভূমিতলে পড়ে সৈন্য শবের আকার।।রাজগণ পথে পড়ে মৃতপ্রায় হৈয়া।রতন মুকুট সব পড়িল খসিয়া।।কন্দর্প সমান রূপ কোমল শরীর।রূপবন্ত বলবন্ত সবে মহাবীর।।বিনা খাট পালঙ্ক সুনিন্দ্রা নাহি হয়।রাজচক্রবর্ত্তী সবে রাজার তনয়।।সুবর্ণ প্রদীপ জ্বলে রত্নগৃহ মাঝে।কুসুম শয্যায় নিদ্রা যায় মহারাজে।।মনোহর নারীগণ করয়ে সেবন।এমন করিলে নিদ্রা যায় কদাচন।।হেন সব রাজপুত্র নবীন যৌবন।রণস্থলে নিদ্রা যায় হয়ে অচেন।।সৈন্যের শোণিত সব হইল কর্দ্দম।হেনমতে রণস্থল দেখি হয় ভ্রম।।শিবাগণ চতুর্দ্দিকে বিপরীত ডাকে।প্রেত ভূত পিশাচ আইল ঝাঁকে ঝাঁকে।।দুর্গন্ধ কারণে লোক পথ নাহি চলে।দেবগণ ভয় করে সেই রণস্থলে।।নিদ্রা যায় রাজগণ হয়ে অচেতন।শবের উপরে সবে করিল শয়ন।।এতেক দেখিয়া পার্থ কুন্তীর নন্দন।দুর্য্যোধন নিন্দা করি বলিছে বচন।।ধিক্ ধিক্ দুর্য্যোধন তোমার জীবনে।এতেক দুর্গতি দুষ্ট কৈল জ্ঞাতিগণে।।এতেক বলিয়া তবে ইন্দ্রের নন্দন।শিবিরেতে চলিলেন লয়ে নারায়ণ।।ঘটোৎকচ শোকে কান্দে বীর বৃকোদর।বিলাপ করেন পার্থ অতি দুঃখকর।।অভিমন্যু শোকে মম বিকল শরীর।মহাশোক দিয়া গেল ঘটোৎকচ বীর।।বলেন কৃষ্ণেরে চাহি বীর ধনঞ্জয়।কি করিব আজ্ঞা কর যদুবীর।।এমত শুনিয়া কহিছেন ভগবান।বড় কর্ম্ম কৈল তবে ভীমের সন্তান।।তাহার কারণে মৃত্যু নহিল তোমার।শুনহ কহি যে তার পূর্ব্ব সমাচার।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন শুন অর্জ্জুন বৃত্তান্ত।তোমার লাগিয়া সেই আসে শচীকান্ত।।অক্ষয় কবচ ধরে কর্ণ মহাবীর।শ্রবণে কুণ্ডল যুগ্ম সমান মিহির।।কর্ণের সমান দাতা নাহি ত্রিভুবনে।যে যাহা মাগয়ে তাহা দেয় সেইক্ষণে।।তব হিত হেতু আসে সহস্রলোচন।উত্তরিল ইন্দ্র যথা রবির নন্দন।।দ্বিজরূপে যান ইন্দ্র কর্ণের নিকটে।দ্বিজ দেখি কর্ণ প্রণমিল করপুটে।।প্রণাম করিয়া কহে রবির তনয়।কোন্ দেশে ঘরতব কহ মহাশয়।।কিসের কারণে হেথা গমন তোমার।বিবরিয়া কহ মোরে সব সমাচার।।আশীর্ব্বাদ করি কহে সহস্রলোচন।এক দান দেহ মোরে সূর্য্যের নন্দন।।এত শুনি কর্ণ বলে কহ দ্বিজবর।কোন্ দ্রব্যে অভিলাষ মাগহ সত্বর।।ইন্দ্র বলে সত্য আগে কর অনুর্দ্ধর।তবে সে মাগিব আমি তোমার গোচর।।এতেক শুনিয়া কর্ণ ভাবে মনে মন।নাহি জানি দ্বিজরূপে আসে কোন্জন।।যে হোক সে হোক মম সত্য অঙ্গীকার।যেই যাহা মাগে দিব প্রতিজ্ঞা আমার।।এত চিন্তি কহে কর্ণ শুন দ্বিজবর।দিব ত সর্ব্বথা আমি কহিনু সত্বর।।জানহ আমার এই সত্য অঙ্গীকার।যদি প্রাণ চাহ দিব না করি বিচার।।এত শুনি কহিলেন কর্ণের গোচর।কবচ কুণ্ডল দান করহ সত্বর।।বিস্মিত হইয়া কর্ণ ভাবে মনে মন।হেনকালে সূর্য্যবাক্য হইল স্মরণ।।যোড়হাতে কর্ণ বলে করি নিবেদন।জানিনু আপনি তুমি সহস্রলোচন।।অর্জ্জুনের হেতু তুমি আসিয়াছ হেথা।কুণ্ডল কবচ দিব কত বড় কথা।।প্রাণ যদি চাহ তবু না করিব আন।এত বলি কর্ণবীর করিল প্রণাম।।পুনরপি কর্ণ বলে শুন মহাশয়।অর্জ্জুনের হেতু তুমি কেন কর ভয়।।অর্জ্জুনের সখা কৃষ্ণ কমললোচন।তাহারে মারিবে হেন আছে কোনজন।।আমারে মারিবে পার্থ না যায় খণ্ডন।কুরুক্ষেত্রে যখন হইবে মহারণ।।এত বলি কর্ণ বীর হাতে খড়গ লৈয়া।অঙ্গ কাটিয়া কবচ দিল সে খুলিয়া।।কর্ণের সাহস দেখি দেব পুরন্দর।তুষ্ট হয়ে বলিলেন মাগি লহ বর।।কর্ণ বলে বর যদি দিবে মেঘবান।একঘাতী অস্ত্র দেব মোরে কর দান।।কর্ণেরে একাঘ্নী অস্ত্র দিয়া পুরন্দর।কবচ কুণ্ডল লয়ে গেল নিজ ঘর।।বজ্র সম বাণ সেই নহে নিবারণ।যাহারে প্রহারে তার অবশ্য মরণ।।তোমারে মারিতে কর্ণ রাখিল যতনে।বহুদিন গুপ্ত রাখে কেহ নাহি জানে।।ঘটোৎকচ হস্তে দেখি সকল সংহার।অতএব কর্ণ তারে করিল প্রহার।।ঘটোৎকচ হেতু মৃত্যু নহিল তোমার।নিশ্চয় জানহ এই কুন্তীর কুমার।।অতএব শোক না করিহ ধনঞ্জয়।আপনার বীর্য্য জানি শত্রু কর ক্ষয়।।কৃষ্ণের বচনে সবে হরষিত মন।শিবিরেতে গিয়া সবে করিল শয়ন।।মহাভারতের কথা অপূর্ব্ব কাহিনী।সংসার সাগর ঘোর তরিতে তরণী।।অবহেলে যেই জন শুনে মন দিয়া।অন্তকালে স্বর্গে যায় চতুর্ভুজ হৈয়া।।কাশীরাম দাস প্রণামে সাধুজনে।দৃঢ় করি ভজ ভাই গোবিন্দ চরণে।।৩২. ধ্রুপদ রাজার মৃত্যুমুনি বলে, অনন্তর শুনহ রাজন।প্রভাতে আইল সবে হয়ে একমন।।সংসপ্তকে চলি যান কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।দুই সৈন্যে কোলাহল হইল প্রলয়।।মহাকোপে যোদ্ধাগণ করয়ে সমর।বাণ বৃষ্টি করে যেন বর্ষে জলধর।।ভীম দুর্য্যোধনে যুদ্ধ হয় ঘোরতর।সাত্যকি সহিত কর্ণ করয়ে সমর।।দ্রোণের সহিত যুঝে পাঞ্চাল-নন্দন।বিরাট সহিত সোমদত্ত করে রণ।।সহদেব শকুনি করয়ে ঘোর রণ।নকুলের সহ যুদ্ধ করে দুঃশাসন।।ভগদত্ত সহ যুঝে পাঞ্চাল রাজন।যুধিষ্ঠির সহ মদ্রপতি করে রণ।।শিখণ্ডী সহিত যুঝে দ্রোণের নন্দন।সমানে সমানে হয় ঘোর মহারণ।।প্রলয়কালেতে যেন মেঘের গর্জ্জন।সেই মত যোদ্ধাগণ করয়ে তর্জ্জন।।কৃপাচার্য্য সহ জরাসন্ধের তনয়।কৃতবর্ম্মা চেকিতানে মহাযুদ্ধ হয়।।কাশীরাজ সহ যুঝে সুমন্ত নৃপতি।শতানীক করে যুদ্ধ পৌরব সংহতি।।হেনমতে যুদ্ধ করে সব যোদ্ধাগণ।মহাকোপে করে সবে অস্ত্র বরিষণ।।ভীম সনে গদা যুদ্ধ করে দুর্য্যোধন।অদ্ভূত দেখিয়া সবে চমকিত মন।।মহাবলবান দোঁহে করয়ে সমর।তালবৃক্ষ সম গদা অতি ভয়ঙ্কর।।ভীমের সদৃম দুর্য্যোধন নহে বাণে।গদাযুদ্ধে দুর্য্যোধন সমান দুজনে।।দোঁহে দোঁহাকারে গদা করয়ে প্রহার।গদার প্রহার শুনি লাগে চমাৎকার।।চারিভিতে ফিরে দোঁহে করিয়া মণ্ডলী।ঘন হুহুঙ্কার ছাড়ে, দোঁহে মহাবলী।।তবে ক্রোধে বৃকোদর পবন-কোঙর।গদা প্রহারিল দুর্য্যোধনের উপর।।গদাঘাতে দুর্য্যোধন হৈল কম্পমান।মর্ম্মে ব্যথা পেয়ে বীর হইল অজ্ঞান।।পুনশ্চ চেতন পায় রাজা দুর্য্যোধন।ভীমের উপরে গদা করিল ক্ষেপণ।।মহাবলী বৃকোদর পবন-নন্দন।লাফ দিয়া গদা বীর করিল হেলন।।পুনঃ দুর্য্যোধন রাজা গদা লয়ে হাতে।দোহাতিয়া বাড়ি মারে ভীমের মাথাতে।।গদার প্রহারে ভীম হইল জর্জ্জর।দেখি দুর্য্যোধন বীর হরিষ অন্তর।।ক্রোধে বৃকোদর বীর অনল-সমান।দুর্য্যোধনে মারে গদা বজ্র-অধিষ্ঠান।।গদাঘাতে দুর্য্যোধন হইয়া কাতর।বেগে পলাইয়া গেল সৈন্যের ভিতর।।দুর্য্যোধনে ভঙ্গ দেখি যত যোদ্ধাগণ।ভীমের উপরে করে বাণ বরিষণ।।তবে ক্রোধে বৃকোদর পবন-নন্দন।গদাহাতে করি বীর করে মহারণ।।শত শত হস্তী মারে, অশ্ব লক্ষ লক্ষ।দেখি যত যোদ্ধাগণ মানিল অশক্য।।সাত্যকি সহিত কর্ণ করে মহারণ।দোঁহাকারে দোঁহে বিন্ধে অতি বিচক্ষণ।।প্রাণপণে কর্ণ বীর এড়ে নানা বাণ।কাটি পাড়ে সাত্যকি সে করি খান খান।।বাণ ব্যর্থ দেখি তবে রবির নন্দন।সন্ধান পূরিয়া এড়ে ননা অস্ত্রগণ।।এড়িল বিংশতি বাণ কর্ণ মহাবীর।বাণাঘাতে সত্যক-পুত্র হৈল অস্থির।।পুনশ্চ সাত্যকি বীর হৈল সচেতন।কর্ণের উপওরে করে বাণ বরিষণ।।সন্ধান পূরিয়া এড়ে তীক্ষ্ণ দশ বাণ।সাত্যকির অঙ্গে ফুটে বজ্রের সমান।।অঙ্গেতে ফুটিয়া বাণ কহিছে রুধির।অজ্ঞান হইয়া পড়ে রথে মহাবীর।।অচেতন দেখি রথ ফিরায় সারথি।সাত্যকি লইয়া পলাইল শীঘ্রগতি।।ধৃষ্টদ্যুম্ন সহ দ্রোণ করয়ে সমর।বিস্ময় মানিয়া চাহে যতেক অমর।।বাণবৃষ্টি করে দোঁহে, নাহি লেখাজোখা।প্রাণপণে যুদ্ধ করে নাহিক উপেক্ষা।।মহাকোপে দ্রোণ ভরদ্বাজের নন্দন।গগন ছাইয়া করে বাণ বরিষণ।।শত শত বাণ এড়ে পূরিয়া সন্ধান।ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর তাহা করে খান খান।।বাণ ব্যর্থ দেখি বীর কুপিত হইল।ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া সন্ধান পূরিল।।দশ গোটা বাণ গুরু রোষে প্রহারিল।কবচ ভেদিয়া তার অঙ্গে প্রবেশিল।।বাণাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল কম্পমান।খসিয়া পড়িল হাত হৈতে ধনুর্ব্বাণ।।অচেতন হয়ে বীর রথেতে পড়িল।দেখি কুরু-যোদ্ধাগণ সানন্দ হইল।।পুনরপি ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল সচেতন।ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া করে মহারণ।।সন্ধান পূরিয়া ধৃষ্টদ্যুম্ন অস্ত্র এড়ে।খণ্ড খণ্ড করি দ্রোণ বাণে কাটি পাড়ে।।বাণ ব্যর্থ করি দ্রোণ পূরিল সন্ধান।পুনরপি প্রহারিল তীক্ষ্ণ পঞ্চ বাণ।।নিবারিতে না পারিল পাঞ্চাল-নন্দন।বাণাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল অচেতন।।রথেতে পড়িল বীর নাহিক সম্বিত।রথ লয়ে সারথি হইল একত্রিত।।ধৃষ্টদ্যুম্ন পলাইল দেখি দ্রোণ বীর।বাণবৃষ্টি করে বীর নির্ভয় শরীর।।শকুনি সহিত যুঝে সহদেব বীর।কন্দর্প সমান রূপ, কোমল শরীর।।শকুনি যতেক এড়ে তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।নিবারয়ে সহদেব মাদ্রীর নন্দন।।তবে কোপে সহদেব পূরিল সন্ধান।শকুনির ধনু কাটি কৈল খান খান।।আর ধনু ধরি বীর গান্ধার-নন্দন।সন্ধান পূরিয়া বিন্ধে তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।।পুনরপি সহদেব পূরিয়া সন্ধান।শকুনিরে প্রহারিল পঞ্চদশ বাণ।।দুই বাণে ধ্বজ কাটি কৈল খণ্ড খণ্ড।আর দুই বাণে কাটে সারথির মুণ্ড।।চারি বাণে চারি অশ্বে করিলেক ক্ষয়।সপ্তবাণে বিন্ধিলেক শকুনি-হৃদয়।।অচেতন হয়ে পড়ে গান্ধার-নন্দন।দেখিয়া ধাইল তবে সব যোদ্ধাগণ।।শকুনি অপর রথে করি আরোহণ।পলাইয়া গেল শীঘ্র লইয়া জীবন।।নকুলেতে দুঃশাসনে হয় মহারণ।কোপে দোঁহে করে নানা অস্ত্র বরিষণ।।সন্ধান পূরিয়া বীর মদ্রসুতা-সুত।দুঃশাসন অঙ্গে বাণ মারিল বহুত।।কবচ ভেদিয়া অঙ্গে করিল প্রবেশ।শোণিত পড়য়ে অঙ্গে, প্রাণমাত্র শেষ।।অজ্ঞান হইল বীর রথের উপর।খসিয়া পড়িল হাত হৈতে ধনুঃশর।।তবে কতক্ষণে বীর পাইল চেতন।ধনু ধরি দুঃশাসন এড়ে অস্ত্রগণ।।দুইজনে বাণ এড়ে দোঁহে ধনুর্দ্ধর।দোঁহাকার বাণে দোঁহে হইল জর্জ্জর।।নকুল এড়িল তবে কোপে দুই বাণ।রথধ্বজ কাটি তার কৈল খান খান।।আর দুই বাণ বীর এড়ে আচম্বিতে।সারথর মাথা কাটি পাড়িল ভূমিতে।।সারথি পড়িল, রথ হইল অচল।দেখি দুঃশাসন ভয়ে হইল বিকল।।রথ ছাড়ি দুঃশাসন বেগে পলাইল।দেখি যত যোদ্ধাগণ হাসিতে লাগিল।।ভগদত্ত সহ যুঝে পাঞ্চাল-ঈশ্বর।বাণবৃষ্টি করে দোঁহে দোঁহার উপর।।পর্ব্বত আকার হস্তী করি আরোহণ।দ্রুপদ সহিত যুঝে নরক-নন্দন।।প্রাণপণে দিব্য অস্ত্র এড়িল দ্রুপদ।কাটি পাড়ে ভগদত্ত যেন তৃণবৎ।।বাণ ব্যর্থ দেখি তবে পাঞ্চাল-ঈশ্বর।ভগদত্তে প্রহারিল তীক্ষ্ণ পঞ্চ শর।।কবচ ভেদিয়া বাণ অঙ্গে প্রবেশিল।ভগদত্ত-অঙ্গ হৈতে শোণিত বহিল।।স্থির হয়ে ভগদত্ত পূরিল সন্ধান।দ্রুপদের ধনুকাটি কৈল খান খান।।শীঘ্রগতি ভগদত্ত এড়ে অস্ত্রগণ।সারথি তুরঙ্গ কাটি পাড়ে ততক্ষণ।।অর্দ্ধচন্দ্র বাণ ত্বরা ভগদত্ত এড়ে।দুইখান করি কাটে পাঞ্চাল-ঈশ্বরে।।দ্রুপদ পড়িল দেখি রাজা যুধিষ্ঠির।মহাশোকে হইলেন নিতান্ত অস্থির।।হাহাকার শব্দ করে যত সেনাগণ।পিতৃশোকে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল অচেতন।।আনন্দিত কুরুসৈন্য ছাড়ে সিংহনাদ।পাণ্ডবের দলে বড় হইলে বিষাদ।।শিখণ্ডী সহিত যুঝে অশ্বত্থামা বীর।বাপের সদৃশ শিক্ষা সুন্দর শরীর।।শিখণ্ডী এড়য়ে বাণ পূরিয়া সন্ধান।বাণে কাটি অশ্বত্থামা করে খান খান।।বাণ ব্যর্থ দেখি বীর কুপিত অন্তর।পঞ্চ বাণ এড়ে অশ্বত্থামার উপর।।বক্ষঃস্থলে প্রহারিল তীক্ষ দশ বাণ।রথে পড়ে অশ্বত্থামা হইয়া অজ্ঞান।।উত্তরের সহ যুঝে কর্ণের সন্ধান।।তবে কোপে বৃষকেতু কর্ণের নন্দন।দুইজনে এড়ে বাণ পূরিয়া সন্ধান।।তবে কোপে বৃষকেতু কর্ণের নন্দন।চারি বাণে চারি অশ্ব কাটে ততক্ষণ।।দুই বাণে সারথিরে করিলেক ক্ষয়।দেখিয়া উত্তরে কোপ হৈল অতিশয়।।অসি চর্ম্ম ধরি বীর ধাইল সত্বর।ক্রোধে বাণ এড়ে বৃষকেতু ধনুর্দ্ধর।।দুই বাণে অসিচর্ম্ম খণ্ড খণ্ড কৈল।অর্দ্ধচন্দ্র বাণে তার মস্তক কাটিল।।দেখিয়া বিরাট তবে পুত্রের নিধন।হাহাকার করি রাজা করয়ে ক্রন্দন।।কৃপাচার্য্য সহ যুঝে সহদেব রাজা।জরাসন্ধ-পুত্র সেই বলে মহাতেজা।।অনুপম যুদ্ধ করে সংগ্রাম ভিতর।ধন্য ধন্য করি সবে বাখানে বিস্তর।।মহাকোপে কৃপাচার্য্য যত বাণ এড়ে।তত অস্ত্র সহদেব বাণে কাটি পাড়ে।।বাণ ব্যর্থ করি বীর পূরিল সন্ধান।কৃপাচার্য্য হৃদয়ে মারেন পঞ্চ বাণ।।কবচ ভেদিয়া অঙ্গ করিল ছেদন।শোণিত পড়য়ে ধারে, হরিল চেতন।।মূর্চ্ছিত হইয়া রথে পড়ে বীরবর।সারথি পলায় রথ লয়ে শীঘ্রতর।।কৃপাচার্য্য ভঙ্গ দেখি রবির নন্দন।সহদেব সহ তবে করে মহারণ।।কৃতবর্ম্মা চেকিতানে মহাযুদ্ধ করে।বাণবৃষ্টি কনে দোঁহে দোঁহার উপরে।।দুই জনে বাণ এড়ে যত শিক্ষা জানে।দুই জনে বিন্ধে দোঁহে চোখ চোখ বাণে।।তবে কৃতবর্ম্মা বীর পূরিয়া সন্ধান।রথধ্বজ কাটি তার করে খান খান।।দুই বাণে ধনু কাটি পাড়ে সেইক্ষণ।চারি বাণে চারি অশ্ব করিল ছেদন।।দুই বাণ কৃতবর্ম্মা এড়ে আচম্বিতে।চেকিতান-মাথা কাটি পাড়িল ভূমিতে।।চেকিতান পড়ে দেখি পাণ্ডু-সৈন্যে ভয়।দেখিয়া ধর্ম্মের পুত্র ব্যথিত হৃদয়।।কাশীরাজ সহ যুঝে যুযুৎসু ভূপতি।বাণবৃষ্টি করে দোঁহে যতেক শকতি।।যুযুৎসু নৃপতি এড়ে চোখ চোখ বাণ।কাশীরাজ ধনু কাটি কৈল খান খান।।আর ধনু লয়ে কাশীরাজ এড়ে বাণ।সেই ধনু যুযুৎসু করিল খান খান।।তবে কোপে কাশীরাজ কম্পমান হয়ে।রথ এড়ি ধায় বীর হাতে খড়্গ লয়ে।।খড়্গের প্রহারে মারিলেক চারি হয়।সারথির মাথা কাটি দিল যমালয়।।এক লাফে রথে চড়ে কাশীর ঈশ্বর।এক চোটে যুযুৎযুরে দিল যমঘর।।যুযুৎসুরে মারি তবে কাশীরাজ গেল।দেখিয়া পাণ্ডব-দল সশঙ্ক হইল।।দেখি রাজা যুধিষ্ঠির শোকাকুল মন।রথে চড়ি চলিলেন করিবারে রণ।।হেনকালে রথে চড়ি আসে শল্যরাজা।সম্মুখ হইল দোঁহে বলে মহাতেজা।।কোপে রাজা যুধিষ্ঠির পূরিয়া সন্ধান।দুই বাণে কাটিলেন তার ধনুখান।।আর ধনু লয়ে শল্য গুণ দিয়া টানে।যুধিষ্ঠির তাহা কাটিলেন সেইক্ষণে।।পুনঃ পুনঃ শল্যরাজা যত ধনু লয়।খণ্ড খণ্ড করি কাটে ধর্ম্মের তনয়।।দেখিয়া হইল শল্য কোপাবিষ্ট মন।হাতে গদা লয়ে তবে ধায় সেইক্ষণ।।ত্রস্ত হয়ে যুধিষ্ঠির যুড়ি অস্ত্রগণ।কবচ কাটিয়া অঙ্গে করেন ঘাতন।।বাণাঘাতে শল্যরাজা ব্যথিত অন্তর।দোহাতিয়া গদা মারে রথের উপর।।গদার প্রহারে রথ গেল চূর্ণ হয়ে।ভূমিতে পড়েন যুধিষ্ঠির লাফ দিয়ে।।ভয়ে পলাইয়া যান পাণ্ডবের নাথ।প্রাণপণে যান রাজা, না চান পশ্চাৎ।।দেখি শল্যরাজা তবে কহিল হাসিয়ে।ওহে মহারাজ কেন যেতেছ পলায়ে।।স্থির হয়ে যুদ্ধ আসি কর মহাশয়।ক্ষত্র হয়ে কেন কর মরণের ভয়।।এতেক বলিয়া শল্য গেল নিজ রথে।গদা এড়ি পুনরপি ধনু নিল হাতে।।তবে শতানিক সহ পৌরব রাজন।করয়ে অতুল যুদ্ধ বাণ বরিষণ।।দোঁহাকারে দোঁহে তবে অস্ত্র প্রহারিল।বাণবৃষ্টি করি দোঁহে সূর্য্য আচ্ছাদিল।।তবে শতানীক বীর এড়ি দিব্য বাণ।পৌরবের ধনু কাটি কৈল খান খান।।চারি বাণে চারি অশ্ব কাটিল তাহার।দুই বাণে সারথিরে করিল সংহার।।দেখিয়া পৌরব বড় হইল ফাঁফর।রথ এড়ি পলাইল হইয়া কাতর।।তবে বৃকোদর বীর গদা লয়ে কারে।মহাকোপে প্রবেশিল সৈন্যের ভিতর।।পদ্মবন ভাঙ্গে যেন মত্ত যূথপতি।সেইমত সৈন্য মারে পবন-সন্ততি।।শত শত রথ ভাঙ্গে গদার প্রহারে।লক্ষ লক্ষ সৈন্য বীর নিমিষে সংহারে।।দেখি ভগদত্ত বীর কুপিত অন্তরে।হাতী চালাইয়া দিল ভীমের উপরে।।বাণবৃষ্টি করে যেন মেঘে ফেলে জল।মহাকোপে ধায় তবে ভীম মহাবল।।গদা ফিরাইয়া যায় যমের সমান।দেখি ভগদত্ত বীর এড়ে দিব্য বাণ।।দশ বাণে গদা কাটি কৈল খান খান।ক্রোধে ধায় বৃকোদর অনল-সমান।।যোজনেক পদ হস্তী মহাভয়ঙ্কর।ঈষা সম দন্তগুলা দেখি লাগে ডর।।ভীমেরে ধরিতে যায় শুভু প্রসারিয়া।বেগে যায় হস্তীগোটা তর্জ্জন করিয়া।।তবে কোপে বৃকোদর ধরে দুই পায়।অচল সমান করি স্থাবরের প্রায়।।মহাকোপে ধরি টানে বীর বৃকোদর।তুলিতে নারিল হস্তী যেন গিরিবর।।মহাকোপে হস্তী যদি টানে বৃকোদরে।তুলিতে নারিল হস্তী যেন গিরিবর।।মহাকোপে হস্তী যদি টানে বৃকোদরে।অঙ্গুলি পর্য্যন্ত তার নাড়িতে না পারে।।এড়িলে এড়ান নাহি, তুলি দেয় পদ।বিপাকে ঠেকিয়া ভীম হৈল বুঝি বধ।।সঙ্কটে পড়িয়া ভীম না পায় এড়ান।হারিয়া গজের ঠাঁই মৃতের সমান।।ভীমের সঙ্কট দেখি ধর্ম্মের নন্দন।হাহাকার করি ধায় সহ যোদ্ধাগণ।।তবে কতক্ষণে বৃকোদর মহাবলে।মুষ্টির প্রহার কৈল করি কুম্ভস্থলে।।দারুণ প্রহারে করি বিকল অন্তর।পলাইয়া গেল ছাড়ি বীর বৃকোদর।।তবে বৃকোদর বীর চড়ি নিজ রথে।করয়ে দারুণ যুদ্ধ ধনু লয়ে হাতে।।অতিক্রোধে ভগদত্ত করয়ে সংগ্রাম।লিখনে না যায় তার যুদ্ধ অনুপাম।।লক্ষ লক্ষ সেনা মারে চক্ষের নিমিষে।ভগদত্ত-যুদ্ধ দেখি দুর্য্যোধন হাসে।।পাণ্ডবের সেনাগণ হইল অস্থির।দেখি মহাভয় পান রাজা যুধিষ্ঠির।।৩৩. বৈষ্ণবাস্ত্রের উপাখ্যান ও ভগদত্ত বধঅর্জ্জুন বলেন, কৃষ্ণ কর অবধান।হের দেখ ভগদত্ত অনল সমান।।সৈন্যগণ ক্ষয় মম করিল বিস্তর।অতএব রথ তুমি চালাও সত্বর।।আজি আমি রণে তারে করিব নিধন।নিশ্চয় প্রতিজ্ঞা মম শুন নারায়ণ।।এত শুনি শ্রীগোবিন্দ হয়ে আনন্দিত।ভগদত্ত বধে রথ চালান ত্বরিত।।বায়ুবেগে চলে রথ পবন সমান।ভগদত্ত সম্মূখে আইল সেইক্ষণ।।অর্জ্জুনে দেখিয়া ধায় ভগদত্তবীর।বাণবৃষ্টি করে যেন মেঘে ফেলে নীর।।তর্জ্জন করিয়া বলে অর্জ্জুনের প্রতি।আজি যুদ্ধ কর পার্থ আমার সংহতি।।অবশ্য করিব আজি তোমাকে সংহার।নিতান্ত প্রতিজ্ঞা এই জানিবে আমার।।এত শুনি কোপবন্ত পার্থ ধনুর্দ্ধর।ডাকিয়া বলেন গর্ব্ব ত্যজহ বর্ব্বর।।কোন কর্ম্ম করি তোর এত অহঙ্কার।আমার অগ্রেতে হেন প্রতিজ্ঞা তোমার।।এইক্ষণে সাক্ষাতে দেখিবে যোদ্ধাগণ।অবশ্য পাঠাব তোরে যমের সদন।।অর্জ্জুনের কটুবাক্য শুনি ভগদত্ত।মহাকোপে চালাইয়া দিল গজমত্ত।।বায়ুবেগে হস্তী পড়ে রথের উপর।দেখিয়া চিন্তিত হইলেন দামোদর।।তথা হৈতে রথ রাখিলেন একভিত।রাজা যুধিষ্ঠির হইলেন আনন্দিত।।পুনরপি দুইজনে হইল সমর।তীক্ষ্ম অস্ত্র এড়ে দোঁহে দোঁহার উপর।।কোপে ভগদত্ত বীর পূরিল সন্ধান।অর্জ্জুনের প্রহারিল চোখ চোখ বাণ।।তবে ধনঞ্জয় বীর পূরিয়া সন্ধান।ভগদত্ত বাণ করিলেন খান খান।।কাটেন সকল অস্ত্র পার্থ কুতূহলে।নারাচ মারিল বীর করি কুম্ভস্থলে।।দারুণ প্রহারে করী বিকল হইল।বজ্রাঘাতে যেন গিরিশৃঙ্গ বিদারিল।।হস্তী যদি পড়িল দেখিল ভগদত্ত।হেনকালে সারথি যোগায় এক রথ।।ষাটি ষাটি হস্তী সেই রথখান বহে।বিস্ময় মানিয়া সর্ব্ব যোদ্ধাগণ চাহে।।হেন রথে ভগদত্ত চড়ি সেইক্ষণ।অতি কোপে করিলেন বাণ বরিষণ।।যত বাণ এড়ে বীর পূরিয়া সন্ধান।নিমিষে করেন পার্থ তাহা খান খান।।বাণ ব্যর্থ দেখি তবে ভগদত্ত বীর।অর্জ্জুন উপরে মারে চৌষট্টি তোমর।।অন্ধকার করি পড়ে অর্জ্জুন উপর।নিবারিতে না পারেন পার্থ ধনুর্দ্ধর।।বাণাঘাতে হইলেন অর্জ্জুন অস্থির।ধরতর স্রোতে বহে অঙ্গের রুধির।।অচেতন হইলেন রথের উপর।ক্রোধ করি তখন কহিল দামোদর।।কি হেতু অশক্ত তোমা দেখি আজি রণে।অন্য মন কর তুমি কিসের কারণে।।প্রতিজ্ঞা করিলে ভগদত্ত মারিবারে।তবে কেন অচেতন হৈলা একেবারে।।তগদত্তে ক্ষয় কর এড়ি দিব্য বাণ।আকর্ণ পূরিয়া তুমি করহ সন্ধান।।আশা পেয়ে হাসে দেখ দুষ্ট দুর্য্যোধন।দেখ কুরুকুল সব প্রফুল্ল বদন।।কৃষ্ণের বচনে পার্থ লজ্জিত হইয়া।দিব্য অস্ত্র যুড়িলেন ধনু টঙ্কারিয়া।।গগন ছাইয়া বান এড়েন তখন।মুষল ধারাতে যেন বর্ষে নবঘন।।অস্ত্র বিনা সৈন্যমধ্যে নাহি দেখি আর।দিবসে হইল যেন ঘোর অন্ধকার।।শীঘ্রগতি ভগদত্ত পূরিয়া সন্ধান।নিমিষেকে নিবারিল অর্জ্জুনের বাণ।।তবে কোপে ভগদত্ত কহে অর্জ্জুনেরে।এই অস্ত্রে ধনঞ্জয় বিনাশিব তোরে।।দেখিব কেমনে অস্ত্র কর নিবারণ।এত বলি ভগদত্ত করয়ে তর্জ্জন।।বৈষ্ণব নামেতে বাণ বসাইল চাপে।অস্ত্র দেখি দেবগণ ইন্দ্র আদি কাঁপে।।সন্ধান পূরিয়া বীর এড়িলেক বাণ।চলিল বৈষ্ণব অস্ত্র অনল সমান।।দেখিয়া বৈষ্ণব বাণ দেব নারায়ণ।চিন্তান্বিত হইলেন অর্জ্জুন কারণ।।অর্জ্জুনের পশ্চাৎ করি দেব নারায়ণ।বুক পাতি আপনি দিলেন সেইক্ষণ।।কৃষ্ণের শরীরে আসি লিপ্ত হৈল বাণ।দেখি যত যোদ্ধাগণ হৈল কম্পমান।।এতেক দেখিয়া পার্থ লজ্জিত বদন।কৃতাঞ্জলি করিয়া করেন নিবেদন।।অর্জ্জুন বলেন দেব কর অবধান।কি কারণে হৃদয়ে ধরিলা তুমি বাণ।।কোন্ কাজে ন্যূন তুমি দেখিলা কখন।এবে অস্ত্র ধর তুমি কিসের কারণ।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন সখে কহিলা প্রমাণ।তোমা হৈতে নিবারণ নহে এই বাণ।।বৈষ্ণব অস্ত্রের তুমি না জান মহিমা।মহাতেজোময় অস্ত্র নাহি তার সীমা।।অর্জ্জুন বলেন কৃষ্ণ কহিবা আমারে।হেনমতে অস্ত্র কেবা দিলেক উহারে।।নিবারণ নহে অস্ত্র কিসের কারণ।ইহার বৃত্তান্ত মোরে কহ নারায়ণ।।শ্রীকৃষ্ণ বলেন, পার্থ কহি তব স্থান।চারি মূর্ত্তি মম তুমি জানহ প্রমাণ।।এক মূর্ত্তি তপস্যা করেন অনুক্ষণ।আর মূর্ত্তি ত্রিভুবন করয়ে পালন।।আর মূর্ত্তি ধরি সৃষ্টি করি যে সৃজন।অন্তরূপে এক মূর্ত্তি সংসার কারণ।।নরক পাইল অস্ত্র আমার সদনে।তাহা হতে পায় পৃথ্বী, সে দিল নন্দনে।।পৃথিবীর পুত্র ভগদত্ত মহারাজা।অস্ত্রে শস্ত্রে বিচক্ষণ বলে মহাতেজা।।এই অস্ত্র প্রতাপে জিনিল ভূমণ্ডল।ভগদত্ত সহ সখ্য কৈল আখণ্ডল।।কদাচিৎ ব্যর্থ যদি যম চক্র হয়।অব্যর্থ বৈষ্ণব বাণ কভু ব্যর্থ নয়।।এতেক শুনিয়া পার্থ লর্জ্জিত অন্তর।পুনরপি পার্থকে কহিল গদাধর।।এড়িল বৈষ্ণব অস্ত্র ভগদত্ত বীর।এইকালে ঝটিতি কাটহ তার শির।।তব ভাগ্যে রাজা বাণ করিল ক্ষেপণ।বিনা ক্লেশে বধ তারে করহ এখন।।আছিল বাণের তেজে বিষ্ণুর সমান।সমরে হইত, কার শক্তি আগুয়ান।।এবে কিন্তু চিন্তা নাহি কর ধনঞ্জয়।এক্ষণে হইবে জয় জানিহ নিশ্চয়।।এত শুনি ধনঞ্জয় হরষিত মন।সন্ধান পূরিয়া এড়িলেন অস্ত্রগণ।।কোপে ধনঞ্জয় বীর এড়ি পঞ্চবাণ।ভগদত্ত ধনুক করেন খান খান।।আর ধনু ধরি ভগদত্ত করে রণ।সেই ধনু ধনঞ্জয় কাটেন তখন।।পুনঃ পুনঃ ভগদত্ত যত ধনু লয়।ক্রমে সব কাটিলেন বীর ধনঞ্জয়।।কোপে ভগদত্ত বীর শক্তি নিল হাতে।ফেলিয়া মারিল শক্তি অর্জ্জুনের মাথে।।ধনু টঙ্কারিয়া পার্থ মারিলেন বাণ।কাটিলেন তার শক্তি হেন শক্তিমান।।অর্দ্ধচন্দ্র এড়ি বীর পূরিয়া সন্ধান।ভগদত্তে মারিলেন কুলিশ সমান।।দুইখান হয়ে পড়ে রথের উপর।এক ঘায় ভগদত্ত গেল যমঘর।।রণেতে পড়িল ভগদত্ত মহাবীর।দেখি দুর্য্যোধন রাজা হইল অস্থির।।ভগদত্ত রথ লয়ে সারথি সত্বর।ভ্রমণ করিয়া বুলে সংগ্রাম ভিতর।।শত শত সেনা পড়ে রথের চাপনে।হেন বীর নাহি নিবারয়ে রথখানে।।দেখি কোপে ধায় বীর পবননন্দন।সাবধানে সাপুটিয়া ধরে রথখান।।বায়ুবেগে বৃকোদর ফেলে রথখান।দেখিয়া কৌরব দল হৈল কম্পমান।।দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা ভগদত্ত বধে।কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।৩৪. দ্রোণাচার্য্যের মৃত্যুমুনি বলে মহাশয়, শুন ওহে জন্মেজয়,হেন মতে পড়ে ভগদত্ত।দেখি রাজা দুর্য্যোধন, শোকেতে আকুলম,আরোহণ কৈল গজমত্ত।।অশ্বথামা নামে হস্তী, তার তুল্য অন্য নাহি,এমন উত্তম গজবর।বর্ণে যিনি জলধর, ঈষাদন্ত সম শয্যা,দেখিতে বড়ই ভয়ঙ্কর।।তাহে আরোহণ করি, আসে কুরু অধিকারী,যথা আছে বীর বৃকোদর।হাতে গদা ঘোরতর, দুর্য্যোধন নৃপবর,ভীমসেন করিতে সমর।।দেখি রায় বৃকোদর, হাতে গদা ভয়ঙ্কর,শমন সমান মহাবীর।মহাকোপে অঙ্গ কাঁপে, দশনে অধর চাপে,বজ্র সম কঠিন শরীর।।গদা যেন কাল দণ্ড, সৈন্য করে লণ্ড ভণ্ড,এক ঘায়ে মারে শত শত।হস্তী অশ্ব পড়ে যত, লিখিতে না পারি তক্ত,শত শত চূর্ণ করে রথ।।আনন্দিত বৃকোদর, যুদ্ধ করে ঘোরত,বায়ুবেগে ধায় মহাবীর।কোপে ভয়ঙ্কর তনু, মূর্ত্তি যেন বৃহদান্ত,দেখি আনন্দিত যুধিষ্ঠির।।হেনকালে দুর্য্যোধন, করিবরে আরোহন,গদা লয়ে ধায় মহাবীর।দেখি যত যোদ্ধাগণ, সবে সশঙ্কিত মন,সংগ্রাম হইল ঘোরতর।।তবে কোপে বায়ুসুত, হয়ে যেন যমদূত,গদাতে ভাঙ্গিল তার মুণ্ড।বজ্রাঘাতে যেন গিরি, সেইমত পড়ে কবে,মস্তক হইল খণ্ড খণ্ড।।ভয়েতে কম্পিত মন, একলাফে দুর্য্যোধন,হস্তী এড়ি পড়িল ধরণী।গদা লয়ে দুই করে, প্রহারিল বৃকোদরে,বজ্রাঘাত যেন শব্দ শুনি।।গদাঘাতে বৃকোদর, ক্রোধে কম্পে থর থর,ধরিলেন গদা দৃঢ়মুষ্টি।ভানুবর্ণ জিনি মূর্ত্তি, যুগান্তরে সমবর্ত্তী,সংহার করিতে যেন সৃষ্টি।।অতি কোপে বৃকোদর, মারে গদা খরতর,দুর্য্যোধন রাজার উপর।গদাঘাতে দুর্য্যোধন, অঙ্গ কাঁপে ঘনে ঘন,পলাইল ত্যজিয়া সমর।।দুর্য্যোধন ভঙ্গ দেখি, ভীমসেন হয়ে সুখী,সংহারিল বহু সৈন্যগণ।সৈন্য কেহ নহে স্থির, দেখি কাঁপে দ্রোণবীর,দ্রুতগতি এলেন তখন।।আকর্ণ পূরিয়া দ্রোণ, এড়ি যত অস্ত্রগণ,বিন্ধিলেন ভীমের হৃদয়।মূর্চ্ছিত হইল বীর, অঙ্গে বহিছে রুধির,পলাইল পবন তনয়।।পলাইল ভীমসেন, দেখি আনন্দিত দ্রোণ,বাণবৃষ্টি করে মহাবীর।শত শত সৈন্য পড়ে, কদলী যেমন ঝড়ে,যোদ্ধাগণ হইল অস্থির।।তবে কোপে ধনঞ্জয়, দেখি সৈন্য অপচয়,দ্রুত আসে দ্রোণের সম্মূখে।ক্রোধে করে বাণবৃষ্টি, যেন সংহারিতে সৃষ্টি,দিব্য অস্ত্র ফেলে লাখে লাখে।।অর্জ্জুনের দশ বাণ, দ্রোণচার্য্য বলবান,মরিলেক সমর ভিতরে।দেখাইয়া দ্রোণের বাণ, পার্থবীর হতজ্ঞান,পড়িলেক রথের উপরে।।অর্জ্জুনে বিমুখ করি, দ্রোণাচার্য্য গেল ফিরি,সেনাগণে করিতে বিনাশ।দারুণ দ্রোণের বাণ, স্থির নহে কোন জন,যুধিষ্ঠির গণেন হুতাশ।।যেই বীর রণবেশে, দ্রোণের সম্মূখে আসে,তারে দ্রাণ করয়ে সংহার।যেন যুগান্তের যম, দেখি দ্রোণ নিরুপম,পাণ্ডবের নাহিক নিস্তার।।দেখি কৃষ্ণ সেনা নাশ, কহেন মধুর ভাষ,শুন দ্রোণ আমার বচন।অশ্বথামা পুত্র তব, আজি হয়ে পরাভব,ভীম হস্তে হইল নিধন।।শুনি দ্রোণাচার্য্য বীর, হইলেন যে অস্থির,মনেতে হইল বড় ত্রাস।অশ্বথামা জন্ম যবে, শূণ্যবাণী হৈল তবে,চিরজীবী কহিলেন ব্যাস।।সুমেরু ভাঙ্গিয়া পড়ে, চন্দ্রসূর্য্য স্থান ছাড়ে,তবু মিথ্যা নাহি কহেমুনি।অসম্ভব কথা হেন, কহিলেন নারায়ণ,এ কথা বিস্ময় বড় মানি।।এত ভাবি কহে দ্রোণ, শুন প্রভু নারায়ণ,তব মায়া বুঝিতে না পারি।পূর্ব্বে ব্যাস দিল বর, চারিযুগে সে অমর,এবে কেন হেন কহ হরি।।পুনঃ কন দামোদর, বিনাশিল বৃকোদর,হয় নয় বুঝ ভীমস্থানে।মিথ্যা নাহি কহি আমি, নিশ্চয়জানিহ তুমি.অশ্বথামা পড়িয়াছে রণে।।এত শুনি দ্রোণাচার্য্য, পুত্রশোকে হীনধৈর্য্য,পুনরপি কহিল তখন।তবে আমি সত্য মানি, যদি কহে নৃপমণি,যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের নন্দন।।তবে প্রভু নারায়ণ, কলিলেন সেইক্ষণ,যুধিষ্ঠিরে ডাকি নিজ পাশ।অশ্বথামা হত বাণী, দ্রোণে কহ নৃপমণি,দ্রোণ যেন জানে সত্যভাষ।।শুনিয়া কৃষ্ণের বাণী, কহিলেন পাণ্ডব মণি,কিরূপে কহিব মিথ্যাবাণী।আমাতে বিশ্বাস করি, দ্রোণ জিজ্ঞাসিবে হরি,মম বাক্য সত্য হেন জানি।।কেমনে কহিব মিথ্যা, যুক্তি নহে এই কথা,যদি মম হয় সর্ব্বনাশ।বিশ্বাসঘাতিতা করি, কিমতে কহিব হরি,মহাপাপ নাশিলে বিশ্বাস।।পুনরপি নারায়ণ, করিছেন বিজ্ঞাপন,প্রকার করিয়া কহ দ্রোণে।অশ্বথামা হতবাণী, আমি তাহা সত্য জানি,ইতি গজ পড়িয়াছে রণে।।পুনঃ কন যুধিষ্ঠির, শুন শুন যদুবীর,তথাপিও অধর্ম্ম বিস্তর।মিথ্যা যদি কহি আমি, হইব নরকগামী,উদ্ধারের বলহ উত্তর।।এত শুনি বৃকোদর, ক্রোধে কম্পে কলেবর,কহিতে লাগিল সেইক্ষণ।হইয়া পাণ্ডব স্বামী, সকল নাশিলে তুমি,তব সত্য না জানি কেমন।।অধর্ম্ম করিলে যদি, হয় লোক অধোগতি,কি করিল রাজা দুর্য্যোধন।অভিমন্যু গেল রণে, বেড়ি সপ্ত যোদ্ধাগণে,একা শিশু করিল নিধন।।সত্যবাদী সদা ধর্ম্ম, তুমি কি করিলা কর্ম্ম,নাশিলা সকল রাজ্যধন।আমার বচন শুনি, কহ তুমি নৃপমণি,এই কথা স্বরূপ বচন।।মোরে যদি পুছে দ্রোণ, কহি আমি পুনঃ পুনঃ,কহি পুনঃ এক শত বার।ইহা বলি বৃকোদর, কহিলেন দৃঢ়তর,অশ্বথামা হত সারোদ্ধার।।শুন দ্রোণ কহি সার, সমরেতে আজিকার,মম হস্তে অশ্বথামা হত।জানাই স্বরূপ আমি, নিশ্চয় জানহ তুমি,এই কথা নহে অন্য মত।।এত শুনি কহে দ্রোণ, প্রত্যয় না হয় মন,তোমার বচনে বৃকোদর।হত যদি মম সুত, কহে ধর্ম্ম সুচরিত,নিজমুখে ধর্ম্ম নৃপবর।।শুনিয়া ত নারায়ণ, কুপিত হইল মন,কহিলেন রাজা যুধিষ্ঠিরে।কহ তুমি নৃপমণি, এই কথা সত্যবাণী,তবে যদি বধিবে দ্রোণেরে।।তাহা শুনি ধর্ম্মসুত, হইয়া বিষাদযুত,কহিলেন দ্রোণের গোচর।অশ্বথামা হৈল নাশ, ইতি গজ সত্যভাষ,জানহ স্বরূপ ও উত্তর।পুনরপি কহে দ্রোণ, সত্য কহ হে রাজন,অশ্বথামা হইল বিনাশ।কহেন ধর্ম্মের সুত, অশ্বথামা হৈল হত,ইতি গজ সত্য এই ভাষ।।দ্রোণ পুছে যতবার, কহিছেন ততবার,যুধিষ্ঠির সে মত উত্তর।লঘুস্বরে নৃপমণি, কহে ইতি গজবাণী,পুনঃ পুনঃ দ্রোণের গোচর।।যুধিষ্ঠির মুখে শুনি, সত্য হেন দ্রোণ জানি,পুত্রশোকে হইল আকুল।ধনু ধরি বামকরে, কান্দে দ্রোণ উচ্চৈঃস্বরে,লোহে ভিজে অঙ্গের দুকূল।।পুত্রের শোকেতে দ্রোণ, হইলেন অচেতন,চেতন হারান দ্বিজবর।কণ্ঠতলে ধনু রাখি, কান্দে দ্রোণ হয়ে দুঃখীঅশ্রু পড়ে গুণের উপর।।হেনকালে রমাপতি, বলিলেন পার্থ প্রতি,দেখ দেখ বীর ধনঞ্জয়।কালসর্পদংশে দ্রোণে, ঝাটকাটি পাড় বাণে,এইকালে কুন্তীর তনয়।।তবে পার্থ বীরবর, অস্ত্র মারি দৃঢ়তর,সর্প বলি কাটে ধনুগুণ।কণ্ঠতলে বিন্ধি ধনু, অস্থির হইল তনু,রথেতে পড়িয়া গেল দ্রোণ।হেনকালে ধৃষ্টদ্যুন্ন, রথে পড়ে দেখি দ্রোণ,খড়গ লয়ে ধাইল সত্বর।যেন ধায় মৃগপতি, তেন ধায় দ্রুতগতি,উঠে গিয়া রথের উপর।।কাটিল দ্রোণের শির, দেখে যত কুরুবীর,হাহাকার করে সর্ব্বজন।লইয়া দ্রোণের শীর, ধৃষ্টদ্যুন্ন মহাবীর,নিজ রথে আইল তখন।।দ্রোণের নিধন দেখি, দুর্য্যোধন হয়ে দুঃখী,বিলাপ করয়ে বহুতর।হাহাকার শব্দ করি, কান্দে কুরু অধিকারী,পড়িলেন ধরণী উপর।।ব্যাস বিরচিত গাথা, অপূর্ব্ব ভারত কথা,শ্রবণেতে কলুষনাশন।যজ্ঞ ব্রত হোম দান, নহে ইহার সমান,মুক্ত হয় শুনে যেই জন।।গোবিন্দের গুণকর্ম্ম, শ্রবণে বাড়য়ে ধর্ম্ম,ইহা বিনা সুখ নাহি আর।রক্তপদ কোকনদ, ভক্তজন সিদ্ধপদ,অখিলের আপদ সংহার।।নানারূপে অবতরি, দৈত্যগণে ক্ষয় করি,পাতকির পরিত্রাণ হেতু।এ ঘোর সাগরমাঝে, উদ্ধারিতে দেবরাজে,নিজ নামে বান্ধি দিলা সেতু।।অভয় চরণে মম, ভক্তি রহে ত্রিবিক্রম,এই মাত্র করি নিবেদন।সংসারসাগর ঘোরে, উদ্ধার করিবে মোরে,কাশীরাম দাস বিরচন।।৩৫. ধৃষ্টদ্যুম্ন বধে অশ্বথামার প্রতিজ্ঞামুনি বলে, শুন জন্মেজয় নৃপবর।দ্রোণাচার্য্য পড়ি গেল সংগ্রাম ভিতর।।দুর্য্যোধন রাজা কান্দে করি হাহাকার।সৈন্যমধ্যে মহাশব্দ ক্রন্দন অপার।।দুর্য্যোধন কান্দি বলে শুন যোদ্ধাগণ।কোনজন কোনরূপে করিবে তারণ।।এমন গুরুকে শক্র সংহারিল রণে।কে তাড়িবে কে মারিবে পাণ্ডুপুত্রগণে।।পিতামহ বীর ছিল ভুবনে দুর্জ্জয়।তাঁহাকে পাণ্ডবগণ করিল সংশয়।।তাহার বিক্রমে ভৃগুরাম নহে স্থির।হেন পিতামহে মারে ধনঞ্জয় বীর।।অতি শোকাকুল হয়ে কান্দে দুর্য্যোধন।হেনকালে তথা আসে সূর্য্যের নন্দন।।কর্ণে দেখি দুর্য্যোধন বলে অভিমানে।ভীষ্ম দ্রোণ সেনাপতি পড়ি গেল রণে।।এখন কি বল সখে আছে কি উপায়।কর্ণ বলে শুন রাজা বলি হে তোমায়।।বড়ই দুর্ব্বল পুরাতন বৃদ্ধ ছিল।বাণ শিক্ষা ছিল তেঁই সমর করিল।।দোঁহা হেতু শোক না করিহ দুর্য্যোধন।আমিই বান্ধিয়া দিব পাণ্ডবের গণ।।ধর্ম্মকে ধরিয়া দিব সমর ভিতর।রণস্থলে শোক না করিহ নৃপবর।।হেনকালে তথা আইলেন অশ্বথামা।কৃতবর্ম্মা সঙ্গে আর কৃপাচার্য্য মামা।।পিতার বিনাশ শুনি হইল অস্থির।শোকে অচেতন হৈল অশ্বথামা বীর।।ধৃষ্টদ্যুন্ন হস্তে শুনিপিতার নিধন।মহাকাপে কাঁপে বীর দ্রোণের নন্দন।।দুর্য্যোধনে চাহি বলে দ্রোণের তনয়।আমি যাহা কহি তাহা শুন মহাশয়।।বিনা ধৃষ্টদ্যুন্ন বধে ধনু যদি এড়ি।সর্ব্ব ধর্ম্ম নষ্ট হবে নরকেতে পড়ি।।ধৃষ্টদ্যুন্ন না মারিয়া না আসিব ঘর।করিনু প্রতিজ্ঞা আমি সবার গোচর।।গোবধে ব্রাহ্মণ বধে যত পাপ হয়।সেই পাপ মোরে যদি না মারি নিশ্চয়।।এত শুনি আনন্দিত কৌরবকুমার।যুদ্ধ নিবারিয়া গেল স্থানে আপনার।।পাণ্ডবের দলে হৈল আনন্দ অপার।সবে বলে কুরু আজি হইল সংহার।।বাদ্যের নিনাদ হৈল না যায় লিখন।মহানাদে নৃত্য করে নটনটীগণ।।রত্ন সিংহাসনেতে বৈসেন যুধিষ্ঠির।ভ্রাতৃগণ সহিত সানন্দ যত বীর।।বলেন বৈশম্পায়ন জন্মেজয় শুনে।কাশীরাম দাস কহে শুনে সর্ব্বজনে।।৩৬. শ্রীকৃষ্ণের মহিমা বর্ণনগোবিন্দ চরণে মন, নিবেদিয়া অনুক্ষণ,রচিলাম দ্রোণপর্ব্ব পুঁথি।সৃষ্টি কৈল ব্যাস মুনি, অমৃত সমান জানি,শ্রবণে নাশয়ে অধোগতি।।গোবিন্দের লীলারস, যাহাতে সংসার বশ,ত্রিভুবনে এই মাত্র সার।ভজ সাধু অনুক্ষণ, নিবিষ্ট করিয়া মন,নাহি ভয় হয় যমদ্বার।।পূর্ণ হিমকর সম, মুখচন্দ্র নিরূপম,পদ নথ যেন দশ বিধু।রক্তোৎপল জিনি পদ, ভুবনে অতুল্য পদ,প্রেমরসে বৃষ্টি করে মধু।।চতুর্ভূজ পিতাম্বর, বনমালা মনোহর,কৌস্তুভ-শোভিত বক্ষঃদেশ।মুকুট কুণ্ডল শোভা, দীপ্ত দীনকর আভা,বিচিত্র আসন নাগ শেষ।।ক্ষীরোদসাগর জলে, নিদ্রা কৃষ্ণ যান ছলে,নাভিপদ্মে সৃষ্টি করে ধাতা।ত্রিভুবন করি সৃষ্টি, করেন পীযুষ বৃষ্টি,ব্রহ্মরে করিয়া সৃষ্টি কর্ত্তা।।মুখচন্দ্র যাঁর দীপ্ত, ত্রিভুবন হৈল তৃপ্ত,চন্দ্ররূপে ভুবন প্রকাশ।ক্ষিতি যাঁর অন্তরীক্ষে, শূণ্যভরে দুই পক্ষে,নিজ গুণে তমঃ হয় নাশ।।নানারূপ মূর্ত্তি ধরি, বিষ্ণুমায়া সৃষ্টি করি,মোহিত করেন সর্ব্বজন।মায়াতে আচ্ছন্ন হয়, নানারূপ ক্লেশ পায়,যায় লোক যমের সদনে।।গোবিন্দ সেবক যেই, সর্ব্বত্র বিজয়ী সেই,নাহি তার শমনের ভয়।নিজ রথ আরোহণে, পাঠাইয়া ভক্তজনে,লয়ে যান আপন আলয়।।অনুক্ষণ ধ্যান করি, একমনে ভাবি হরি,রচিলেন ভারত আখ্যান।দ্রোণপর্ব্ব সুধারস, শুনিলে কলুষ নাশ,কাশীরাম কৈল সমাপন।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon