কৃপাচার্য

কৃপাচার্য : ঋষি গৌতমের পৌত্র। পিতার নাম শরদ্বান। শরদ্বানের পুত্রের নাম কৃপ ও কন্যার নাম কৃপী। তবে রাজা শান্তুনু এদের প্রতিপালন করেন। কৃপীকে বিবাহ করেন দ্রোণাচার্য। শরদ্বান তপোবলে জানতে পারেন যে তার পুত্র রাজা শান্তুনুর নিকট প্রতিপালিত হচ্ছে। তিনি তথায় এসে তাকে ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন। পরবর্তীতে কৃপ কুরু-পান্ডবদের অস্ত্রশিক্ষা গুরু নিযুক্ত হন এবং কৃপাচার্য নামে খ্যাতি লাভ করেন। অভিমন্যু বধের সপ্তরথির মধ্যে তিনিও একজন।

চতুর্দশ দিবসের যুদ্ধে যখন পান্ডবপক্ষ কৌরবসেনাদের বেষ্ঠন করেছে তখন দুর্যোধন কর্ণকে তাদের রক্ষা করার জন্য বললে কৃপাচার্য কর্ণকে উপহাস করলেন। এতে কর্ণও তাকে অনেক তিরস্কার করে তীব্র বাক্য নিক্ষেপ করেন। পরিশেষে মহামতি কৃপাচার্য বললেন,“আমরা তোমাকে ক্ষমা করলাম কিন্তু অর্জুন তোমার দর্পচূর্ণ করবে।” সপ্তদশ দিনের যুদ্ধে কর্ণ নিহত হওয়ার পর দুর্যোধন“হা কণ হা কর্ণ” বলে বিলাপ করতে লাগলেন। কৌরবদের শোচনীয় অবস্থা দর্শন করে সৎস্বভাব, তেজস্বী কৃপাচার্য দুর্যোধনকে বললেন,“মহারাজ! ক্ষত্রিয়ের পক্ষে যুদ্ধ করাই শ্রেয়ধর্ম, পিতা, ভ্রাতা, মাতুর, পরম আত্মস্বজনদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। যুদ্ধে মৃত্যুই ক্ষত্রিয়ের পরমধর্ম এবং যুদ্ধ থেকে পলায়ন অধর্ম। কিন্তু আমরা ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, জয়দ্রথ, তোমার ভ্রাতা, তোমার পুত্রসহ সকলকেই হারিয়েছি। এখন আমরা কাকে আশ্রয় করব?” পান্ডবদের সহিত তুমি অনাবশ্যক অসদাচরণ করেছ, তার ফল এখন পাচ্ছ। বৎস, অনেক যুদ্ধাদের প্রাণ সংহার হয়েছে এবং তুমিও প্রাণ সংহার আশংকায় আছ। তুমি আত্মরক্ষা কর।” তিনি একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বললেন,“বিপক্ষের চেয়ে ক্ষীণ হলে অথবা তার সমান হলে সন্ধি করবে, বলবান হলে যুদ্ধ করবে। অতএব আমরা এখন হীন। তাই সন্ধি করাই উচিৎ।”

কৃপাচার্য, অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা দূতমুখে দুর্যোধনের ‍উরুভঙ্গের সংবাদ পেয়ে তার সাথে দেখা করতে আসেন। এখানেই অশ্বত্থামা পাঞ্চালদের হত্যা করার শপথ নেন। সাধু স্বভাবের কৃপাচার্য বললেন,“সুহৃদগণ যখন পাপকর্ম করতে নিষেধ করেন তখন ভাগ্যবানই নিবৃত্ত হয়, ভাগ্যহীন হয় না। বৎস, তুমি নিজের কল্যাণের জন্যই নিজেকে সংযত কর, আমার কথা শোন, তা হলে তোমাকে অনুতাপ করতে হবে না। সুপ্ত নিরস্ত্র অশ্বরথহীন লোককে হত্যা করলে কেহ প্রশংসা করে না। পান্ডবরা আজ রাতে মৃতের মত অচেতন হয়ে নিদ্রা যাবে; সে অবকাশে যে কুটিল লোক তাদের বধ করবে সে অগাধ নরকে নিমগ্ন হবে। তুমি অস্ত্রজ্ঞগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে খ্যাত, অত্যল্প পাপকর্মও তুমি করনি; অতএব তুমি কাল প্রভাতে শত্রুগণকে যুদ্ধে জয় কর। শুক্ল বস্তুতে যেমন রক্তবর্ণ, সেইরুপ তোমার পক্ষে গর্হিত কর্ম অসম্ভাবিত মনে করি।”

নিরস্ত্র পান্ডবদের হত্যা করার পক্ষে তিনি ছিলেন না। তার ভিতর কিছু হলেও মানবিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি কৌরবদের মত এত নিষ্ঠুর ছিলেন না। এ জন্যেই পান্ডবরা কৃপাচার্যকে যথেষ্ট সম্মানের সহিত গ্রহণ করেন এবং পরীক্ষিতের শিক্ষক নিযুক্ত করেন।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র