শ্রীমদ্ভগবত গীতা অষ্টাদশ অধ্যায়

অষ্টাদশ অধ্যায় - মোক্ষযোগ

| অর্জুন উবাচ |
সন্ন্যাসস্য মহাবাহো তত্ত্বমিচ্ছামি বেদিতুম্ |
ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক্কেশিনিসূদন || ১ ||
অর্থ: অর্জুন বললেন- হে মহাবাহো! হে হৃষীকেশ! হে কেশিনিসূদন! আমি সন্ন্যাস ও ত্যাগের তত্ত্ব পৃথকভাবে জানতে ইচ্ছা করি।
| শ্রীভগবানুবাচ |
কাম্যানাং কর্মণাং ন্যাসং সন্ন্যাসং কবয়ো বিদুঃ |
সর্বকর্মফলত্যাগং প্রাহুস্ত্যাগং বিচক্ষণাঃ || ২ ||
অর্থ: পরমেশ্বর ভগবান বললেন- পন্ডিতগণ কাম্য কর্মসমুহের ত্যাগকে সন্ন্যাস বলে জানেন এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ সমস্ত কর্মফল ত্যাগকে ত্যাগ বলে থাকেন।
ত্যাজং দোষবদিত্যেকে কর্ম প্রাহুর্মনীষিণঃ |
যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজ্যমিতি চাপরে || ৩ ||
অর্থ: এক শ্রেণীর মনীষীগণ বলেন যে, কর্ম দোষযুক্ত, সেই হেতু তা পরিত্যজ্য। অপর এক শ্রেণীর পন্ডিত যজ্ঞ, দান, তপস্যা প্রভৃতি কর্মকে অত্যাজ্য বলে সিদ্ধান্ত করেছেন।
নিশ্চয়ং শৃণু মে তত্র ত্যাগে ভরতসত্তম |
ত্যাগো হি পুরুষব্যাঘ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ || ৪ ||
অর্থ: হে ভরতসত্তম! ত্যাগ সম্বন্ধে আমার নিশ্চয় সিদ্ধান্ত শ্রবণ কর। হে পুরুষব্যাঘ্র! শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার বলে কীর্তিত হয়েছে।
যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজ্যং কার্যমেব তৎ |
যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্ || ৫ ||
অর্থ: যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাজ্য নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য। যজ্ঞ, দান ও তপস্যা মনীষীদের পর্যন্ত পবিত্র করে।
এতান্যপি তু কর্মাণি সঙ্গং ত্যাক্ত্বা ফলানি চ |
কর্তব্যানীতি মে পার্থ নিশ্চিতং মতমুত্তমম্ || ৬ ||
অর্থ: হে পার্থ! এই সমস্ত কর্ম আসক্তি ও ফলের আশা পরিত্যাগ করে কর্তব্যবোধে অনুষ্ঠান করা উচিত। ইহাই আমার নিশ্চিত উত্তম অভিমত।
নিয়তস্য তু সন্ন্যাসঃ কর্মণো নোপপদ্যতে |
মোহাত্তস্য পরিত্যাগস্তামসঃ পরিকীর্তিতঃ || ৭ ||
অর্থ: কিন্তু নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিৎ নয়। মোহবশত তার ত্যাগ হলে, তাকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।
দুঃখমিত্যেব যৎ কর্ম কায়ক্লেশভয়াত্ত্যজেৎ |
স কৃত্বা রাজসং ত্যাগং নৈব ত্যাগফলং লভেত || ৮ ||
অর্থ:যিনি নিত্যকর্মকে দু:খজনক বলে মনে করে দৈহিক ক্লেশের ভয়ে ত্যাগ করেন, তিনি অবশ্যই সেই রাজসিক ত্যাগ করে ত্যাগের ফল লাভ করেন না।
কার্যমিত্যেব যৎ কর্ম নিয়তং ক্রিয়তেহর্জুন |
সঙ্গং ত্যক্ত্বা ফলং চৈব স ত্যাগঃ সাত্ত্বিকো মতঃ || ৯ ||
অর্থ: হে অর্জুন! আসক্তি ও ফল পরিত্যাগ করে কর্তব্যবোধে যে নিত্যকর্মের অনুষ্ঠান করা হয়, আমার মতে সেই ত্যাগ সাত্ত্বিক।
ন দ্বেষ্ট্যকুশলং কর্ম কুশলে নানুষজ্জতে |
ত্যাগী সত্ত্বসমাবিষ্টো মেধাবী ছিন্নসংশয়ঃ || ১০ ||
অর্থ: সত্ত্বগুণে আবিষ্ট, মেধাবী ও সমস্ত সংশয়-ছিন্ন ত্যাগী কর্মের বিদ্বেষ করেন না এবং শুভ কর্মে আসক্ত হন না।
ন হি দেহভৃতা শক্যং ত্যক্তুং কর্মাণ্যশেষতঃ |
যস্তু কর্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে || ১১ ||
অর্থ: অবশ্যই দেহধারী জীবের পক্ষে সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, কিন্তু যিনি সমস্ত কর্মফল পরিত্যাগী, তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী বলে অভিহিত হন।
অনিষ্টমিষ্টং মিশ্রং চ ত্রিবিধং কর্মণঃ ফলম্ |
ভবত্যত্যাগিনাং প্রেত্য ন তু সন্ন্যাসিনাং ক্বচিত || ১২ ||
অর্থ: যাঁরা কর্মফল ত্যাগ করেননি, তাঁদের পরলোকে অনিষ্ট, ইষ্ট ও মিশ্র- এই তিন প্রকার কর্মফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের কখনও ফলভোগ করতে হয় না।
পঞ্চৈতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে |
সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্বকর্মণাম্ || ১৩ ||
অর্থ: হে মহাবাহো! বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে সমস্ত কর্মের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে এই পাঁচটি কারণ নির্দিষ্ট হয়েছে, আমার থেকে তা অবগত হও।
অধিষ্ঠানং তথা কর্তা করণং চ পৃথগ্বিধম্ |
বিবিধাশ্চ পৃথক্ চেষ্টা দৈবং চৈবাত্র পঞ্চমম্ || ১৪ ||
অর্থ: অধিষ্ঠান অর্থাৎ দেহ, কর্তা, নানা প্রকার করণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সমুহ, বিবিধ প্রচেষ্টা ও দৈব অর্থাৎ পরমাত্মা- এই পাঁচটি হচ্ছে কারণ।
শরীরবাঙ্মনোভির্যৎ কর্ম প্রারভতে নরঃ |
ন্যাযং বা বিপরীতং বা পঞ্চৈতে তস্য হেতবঃ || ১৫ ||
অর্থ: শরীর, বাক্য ও মনের দ্বারা মানুষ যে কর্ম আরম্ভ করে, তা ন্যায্যই হোক অথবা অন্যায্যই হোক, এই পাঁচটি তার কারণ।
তত্রৈবং সতি কর্তারমাত্মানং কেবলং তু য: |
পশ্যত্যকৃতবুদ্ধিত্বান্ন স পশ্যতি দুর্মতিঃ || ১৬ ||
অর্থ: অতএব কর্মের পাঁচটি কারণের কথা বিবেচনা না করে যে নিজেকে কর্তা বলে মনে করে, বুদ্ধির অভাববশত সেই দুর্মতি যথাযথভাবে দর্শন করতে পারে না।
যস্য নাহংকৃতো ভাবো বুদ্ধির্যস্য ন লিপ্যতে |
হত্বাপি স ইমাঁল্লোকান্ন হন্তি ন নিবধ্যতে || ১৭ ||
অর্থ: যাঁর অহঙ্কারের ভাব নেই এবং যাঁর বুদ্ধি কর্মফলে লিপ্ত হয় না, তিনি এই সমস্ত প্রাণীকে হত্যা করেও হত্যা করেন না এবং হত্যার কর্মফলে আবদ্ধ হন না।
জ্ঞানং জ্ঞেয়ং পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্মচোদনা |
করণং কর্ম কর্তেতি ত্রিবিধঃ কর্মসংগ্রহঃ || ১৮ ||
অর্থ: জ্ঞান, জ্ঞেয় ও পরিজ্ঞাতা-এই তিনটি কর্মের প্রেরণা; করণ, কর্ম ও কর্তা এই তিনটি কর্মের আশ্রয়।
জ্ঞানং কর্ম চ কর্তা চ ত্রিধৈব গুণভেদতঃ |
প্রোচ্যতে গুণসংখ্যানে যথাবচ্ছৃণু তান্যপি || ১৯ ||
অর্থ:প্রকৃতির তিনটি গুণ অনুসারে জ্ঞান. কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার বলে কথিত হয়েছে। সেই সমস্তও যথাযথ রুপে শ্রবণ কর।
সর্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে |
অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্ || ২০ ||
অর্থ: যে জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, অনেক জীব পরম্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সেই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক বলে জানবে।
পৃথক্ত্বেন তু যজ্জ্ঞানং নানাভাবান্ পৃথগ্বিধান্ |
বেত্তি সর্বেষু ভূতেষু তজ্জ্ঞানং বিদ্ধি রাজসম‌্ || ২১ ||
অর্থ: যে জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আত্মা অবস্থিত বলে পৃথকরুপে দর্শন হয়, সেই জ্ঞানকে রাজসিক বলে জানবে।
যত্তু কৃত্স্নবদেকস্মিন কার্যে সক্তমহৈতুকম্ |
অতত্ত্বার্থবদল্পং চ তত্তামসমুদাহৃতম‌্ || ২২ ||
অর্থ: আর যে জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে, কোন একটি বিশেষ কার্যে পরিপূর্ণের ন্যায় আসক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে কথিত হয়।
নিয়তং সঙ্গরহিতমরাগদ্বেষতঃ কৃতম্ |
অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম যত্তৎসাত্ত্বিকমুচ্যতে || ২৩ ||
অর্থ: ফলের কামনাশূন্য ও আসক্তি রহিত হয়ে রাগ ও দ্বেষ বর্জনপূর্বক যে নিত্যকর্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাকে সাত্ত্বিক কর্ম বলা হয়।
যত্তু কামেপ্সুনা কর্ম সাহংকারেণ বা পুনঃ |
ক্রিয়তে বহুলায়াসং তদ্ রাজসমুদাহৃতম্ || ২৪ ||
অর্থ: কিন্তু ফলের আকাঙ্খাযুক্ত ও অহঙ্কারযুক্ত হয়ে বহু কষ্টসাধ্য করে যে কর্মের অনুষ্ঠান হয়, সেই কর্ম রাজসিক বলে অভিহিত হয়।
অনুবন্ধং ক্ষয়ং হিংসামনপেক্ষ্য চ পৌরুষম্ |
মোহাদারভ্যতে কর্ম যত্তত্তামসমুচ্যতে || ২৫ ||
অর্থ: ভাবী বন্ধন, ধর্ম জ্ঞানাদির ক্ষয়, হিংসা এবং নিজ সামর্থ্যের পরিণতির কথা বিবেচনা না করে মোহবশত যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাকে তামসিক কর্ম বলা হয়।
মুক্তসঙ্গোহনহংবাদী ধৃত্যুৎসাহসমন্বিতঃ |
সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোনির্বিকারঃ কর্তা সাত্ত্বিক উচ্যতে || ২৬ ||
অর্থ: সমস্ত জড় আসক্তি থেকে মুক্ত, আহঙ্কারশূন্য, ধৃতি ও উৎসাহ সমন্বিত এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্বিকার- এরুপ কর্তাকেই সাত্ত্বিক বলা হয়।
রাগী কর্মফলপ্রেপ্সুর্লুব্ধো হিংসাত্মকোহশুচিঃ |
হর্ষশোকান্বিতঃ কর্তা রাজসঃ পরিকীর্তিতঃ || ২৭ ||
অর্থ: কর্মাসক্ত, কর্মফলে আকাঙ্খী, লোভী, হিংসাপ্রিয়, অশুচি, হর্ষ ও শোকযুক্ত যে কর্তা, সে রাজসিক কর্তা বলে কথিত হয়।
অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধঃ শঠো নৈষ্কৃতিকোহলসঃ |
বিষাদী দীর্ঘসূত্রী চ কর্তা তামস উচ্যতে || ২৮ ||
অর্থ: অনুচিত কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত, অনম্র, শঠ, অন্যের অবমাননাকারী, অলস, বিষাদযুক্ত ও দীর্ঘসূত্রী যে কর্তা, তাকে তামসিক কর্তা বলা হয়। বুদ্ধের্ভেদং ধৃতেশ্চৈব গুণতস্ত্রিবিধং শৃণু |
প্রোচ্যমানমশেষেণ পৃথক্ত্বেন ধঞ্জজয় || ২৯ ||
অর্থ: হে ধনঞ্জয়! জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ অনুসারে বুদ্ধির ও ধৃতির যে ত্রিবিধ ভেদ আছে, তা আমি বিস্তারিতভাবে ও পৃথকভাবে বলছি, তুমি শ্রবণ কর।
প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ কার্যাকার্যে ভয়াভয়ে |
বন্ধং মোক্ষং চ যা বেত্তি বুদ্ধিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী || ৩০ ||
অর্থ: হে পার্থ! যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, কার্য ও অকার্য, ভয় ও অভয়, বন্ধন ও মুক্তি- এই সকলের পার্থক্য জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।
যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং চাকার্যমেব চ |
অযথাবৎ প্রজানাতি বুদ্ধিঃ সা পার্থ রাজসী || ৩১ ||
অর্থ: যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম, কার্য ও অকার্য আদির পার্থক্য অসম্যক্ রুপে জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি রাজসিকী।
অধর্মং ধর্মমিতি যা মন্যতে তমসাবৃতা |
সর্বার্থান্ বিপরীতাংশ্চ বুদ্ধিঃ সা পার্থ তামসী || ৩২ ||
অর্থ: হে পার্থ! যে বুদ্ধি অধর্মকে ধর্ম এবং সমস্ত বস্তুকে বিপরীত বলে মনে করে, তমসাবৃত সেই বুদ্ধিই তামসিকী।
ধৃত্যা যয়া ধারয়তে মনঃপ্রাণেন্দ্রিয়ক্রিয়াঃ |
যে যোগেনাব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী || ৩৩ ||
অর্থ: হে পার্থ! যে অব্যভিচারিণী ধৃতি যোগ অভ্যাস দ্বারা মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াসকলকে ধারণ করে, সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।
যয়া তু ধর্মকামার্থান্ ধৃত্যা ধারয়তেহর্জুন |
প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী || ৩৪ ||
অর্থ: হে অর্জুন! হে পার্থ! যে ধৃতি ফলাকাঙ্খার সহিত ধর্ম, অর্থ ও কামকে ধারণ করে, সেই ধৃতি রাজসী।
যয়া স্বপ্নং ভয়ং শোকং বিষাদং মদমেব চ |
ন বিমুঞ্চতি দুর্মেধা ধৃতিঃ সা পার্থ তামসী || ৩৫ ||
অর্থ: হে পার্থ! যে ধৃতি স্বপ্ন, শোক, বিষাদ, মদ আদিকে ত্যাগ করে না, সেই বুদ্ধিহীনা ধৃতিই তামসী।
সুখং ত্বিদানীং ত্রিবিধং শৃণু মে ভরতর্ষভ |
অভ্যাসাদ্ রমতে যত্র দুঃখান্তং চ নিগচ্ছতি || ৩৬ ||
অর্থ: হে ভরতর্ষভ! এখন তুমি আমার কাছে ত্রিবিধ সুখের বিষয় শ্রবণ কর। বদ্ধ জীব পুন: পুন: অভ্যাসের দ্বারা সেই সুখে রমন করে এবং যার দ্বারা সমস্ত দু:খের অন্তলাভ করে থাকে।
যত্তদগ্রে বিষমিব পরিণামেহমৃতোপমম্ |
তত্সুখং সাত্ত্বিকং প্রোক্তমাত্মবুদ্ধিপ্রসাদজম‌্ || ৩৭ ||
অর্থ: যে সুখ প্রথমে বিষের মতো, কিন্তু পরিনামে অমৃততুল্য এবং আত্মনিষ্ঠ বুদ্ধির নির্মলতা থেকে জাত, সেই সুখ সাত্ত্বিক বলে কথিত হয়।
বিষয়েন্দ্রিয়সংযোগাদ্‌যত্তদগ্রেহমৃতোপমম্ |
পরিণামে বিষমিব তত্সুখং রাজসং স্মৃতম‌্ || ৩৮ ||
অর্থ: বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মতো এবং পরিণামে বিষের মতো অনুভূত হয়, সেই সুখকে রাজসিক বলে কথিত হয়।
যদগ্রে চানুবন্ধে চ সুখং মোহনমাত্মনঃ |
নিদ্রালস্যপ্রমাদোত্থং তত্তামসমুদাহৃতম্ || ৩৯ ||
অর্থ: যে সুখ প্রথমে ও শেষে আত্মার মোহজনক এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উৎপন্ন হয়, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।
ন তদস্তি পৃথিব্যাং বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ |
সত্ত্বং প্রকৃতিজৈর্মুক্তং যদেভিঃ স্যাৎ ত্রিভির্গুণৈঃ || ৪০ ||
অর্থ: এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে অথবা স্বর্গে দেবতাদের মধ্যে এমন কোন প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, যে প্রকৃতিজাত এই ত্রিগুণ থেকে মুক্ত।
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ |
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ || ৪১ ||
অর্থ: হে পরন্তপ! স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমুহ বিভক্ত হয়েছে।
শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ |
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্ || ৪২ ||
অর্থ: শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি, সরলতা, জ্ঞান বিজ্ঞান ও আস্তিক্য- এগুলি ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত কর্ম।
শৌর্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ |
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম‌্‌ || ৪৩ ||
অর্থ: শৌর্য, তেজ, ধৃতি, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন, দান ও শাসন ক্ষমতা-এগুলি ক্ষত্রিয়দের স্বভাবজাত কর্ম।
কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্ |
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্ || ৪৪ ||
অর্থ: কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রদের স্বভাবজাত।
স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ |
স্বকর্মনিরতঃ সিদ্ধিং যথা বিন্দতি তচ্ছৃণু || ৪৫ ||
অর্থ: নিজ নিজ কর্মে নিরত মানুষ সিদ্ধি লাভ করে থাকে। স্বীয় কর্মে যুক্ত মানুষ যেভাবে সিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবণ কর।
যতঃ প্রবৃত্তির্ভূতানাং যেন সর্বমিদং ততম্ |
স্বকর্মণা তমভ্যর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ || ৪৬ ||
অর্থ: যাঁর থেকে সমস্ত জীবের পূর্ব বাসনারুপ প্রবৃত্তি হয়, যিনি এই সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত আছেন, তাঁকে মানুষ তার নিজের কর্মের দ্বারা অর্চন করে সিদ্ধি লাভ করে।
শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ |
স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্ || ৪৭ ||
অর্থ:উত্তম রুপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা অসম্যক রুপে অনুষ্ঠিত স্বধর্মই শ্রেয়। মানুষ স্বভাব-বিহিত কর্ম করে কোন পাপ প্রাপ্ত হয় না।
সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ |
সর্বারম্ভা হি দোষেণ ধূমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ || ৪৮ ||
অর্থ: হে কৌন্তেয়! সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও ত্যাগ করা উচিত নয়। যেহেতু অগ্নি যেমন ধূমের দ্বারা আবৃত থাকে, তেমনই সমস্ত কর্মই দোষের দ্বারা আবৃত থাকে।
অসক্তবুদ্ধিঃ সর্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ |
নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধিং পরমাং সন্ন্যাসেনাধিগচ্ছতি || ৪৯ ||
অর্থ: জড় বিষয়ে আসক্তিশূন্য বু্দ্ধি, সংযতচিত্ত ও ভোগস্পৃহাশূন্য ব্যক্তি স্বরুপত কর্ম ত্যাগপূর্বক নৈষ্কর্মরুপ পরম সিদ্ধি লাভ করেন।
সিদ্ধিং প্রাপ্তো যথা ব্রহ্ম তথাপ্নোতি নিবোধ মে |
সমাসেনৈব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা || ৫০ ||
অর্থ: হে কৌন্তেয়! নৈষ্কর্ম সিদ্ধি লাভ করে জীব যেভাবে জ্ঞানের পরা নিষ্ঠারুপ ব্রহ্মকে লাভ করেন, তা আমার কাছে সংক্ষেপে শ্রবণ কর।
বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তো ধৃত্যাত্মানং নিয়ম্য চ |
শব্দাদীন্ বিষয়াংস্ত্যক্ত্বা রাগদ্বেষৌ ব্যুদস্য চ || ৫১ ||
বিবিক্তসেবী লঘ্বাশী যতবাক্কায়মানসঃ |
ধ্যানযোগপরো নিত্যং বৈরাগ্যং সমুপাশ্রিতঃ || ৫২ ||
অহংকারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং পরিগ্রহম্ |
বিমুচ্য নির্মমঃ শান্তো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে || ৫৩ ||
অর্থ: বিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত হয়ে মনকে ধৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করে, শব্দ আদি ইন্দ্রিয় বিষয়সমুহ পরিত্যাগ করে, রাগ ও দ্বেষ বর্জন করে, নির্জন স্থানে বাস করে, অল্প আহার করে, দেহ, মন ও বাক্ সংযত করে, সর্বদা ধ্যানযোগে যুক্ত হয়ে বৈরাগ্য আশ্রয় করে, অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, পরিগ্রহ থেকে সম্পূর্ণরুপে মুক্ত হয়ে, মমত্ব বোধশূন্য শান্ত পুরুষ ব্রহ্ম-অনুভব সমর্থ হন।
ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি |
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্ || ৫৪ ||
অর্থ: ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত প্রসন্নচিত্ত ব্যক্তি কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা আকাঙ্খা করেন না। তিনি সমস্ত প্রাণীর প্রতি সমদর্শী হয়ে আমার পরা ভক্তি লাভ করেন।
ভক্ত্যা মামভিজানাতি যবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ |
ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্ || ৫৫ ||
অর্থ: ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরুপত আমি যে রকম হই, সেরুপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন। এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, তার পরে তিনি আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন।
সর্বকর্মাণ্যপি সদা কুর্বাণো মদ্‌ব্যপাশ্রয়ঃ |
মৎপ্রসাদাদবাপ্নোতি শাশ্বতং পদমব্যয়ম্ || ৫৬ ||
অর্থ: আমার শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা সমস্ত কর্ম করেও আমার প্রসাদে নিত্য অব্যয় ধাম লাভ করেন।
চেতসা সর্বকর্মাণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরঃ |
বুদ্ধিযোগমুপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততং ভব || ৫৭ ||
অর্থ: তুমি বুদ্ধির দ্বারা সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পণ করে, মৎপরায়ণ হয়ে, বু্দ্ধিযোগের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক সর্বদাই মদ্‌গতচিত্ত হও।
মচ্চিত্তঃ সর্বদুর্গাণি মত্প্রসাদাত্তরিষ্যসি |
অথ চেত্ত্বমহঙ্করান্ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি || ৫৮ ||
অর্থ: এভাবেই মদ্‌গতচিত্ত হলে তুমি আমার প্রসাদে সমস্ত প্রতিবন্ধক থেকে উর্ত্তীণ হবে। কিন্তু তুমি যদি অহঙ্কার-বশত আমার কথা না শোন, তা হলে বিনষ্ট হবে।
যদহংকারমাশ্রিত্য ন যোৎস্য ইতি মন্যসে |
মিথ্যৈষ ব্যবসায়স্তে প্রকৃতিস্ত্বাং নিযোক্ষ্যতি || ৫৯ ||
অর্থ: যদি অহঙ্কারকে আশ্রয় করে 'যুদ্ধ করব না' এরুপ মনে কর, তা হলে তোমার সংকল্প মিথ্যাই হবে। কারণ, তোমার প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে।
স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্ধঃ স্বেন কর্মণা |
কর্তুং নেচ্ছসি যন্মোহাৎ করিষ্যস্যবশোহপি তৎ || ৬০ ||
অর্থ: হে কৌন্তেয়! মোহবশত তুমি এখন যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছ না, কিন্তু তোমার নিজের স্বভাবজাত কর্মের দ্বারা বশবর্তী হয়ে অবশভাবে তুমি তা করতে প্রবৃত্ত হবে।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি |
ভ্রাময়ন সর্বভূতানি য়ন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া || ৬১ ||
অর্থ: হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থান করছেন এবং সমস্ত জীবকে দেহরূপ যন্ত্রে আরোহণ করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমণ করান।
তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত |
তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্ || ৬২ ||
অর্থ: হে ভারত! সর্বতোভাবে তাঁর শরণাগত হও। তাঁর প্রসাদে তুমি পরা শান্তি এবং নিত্য ধাম প্রাপ্ত হবে।
ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যাদ্ গুহ্যতরং ময়া |
বিমৃশ্যৈতদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু || ৬৩ ||
অর্থ:এভাবেই আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান বর্ণনা করলাম। তুমি তা সম্পূর্ণরূপে বিচার করে যা ইচ্ছা হয় তাই কর।
সর্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ |
ইষ্টো‌হসি মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যামি তে হিতম্ || ৬৪ ||
অর্থ: তুমি আমার কাছ থেকে সবচেয়ে গোপনীয় পরম ‍উপদেশ শ্রবণ কর। যেহেতু তুমি আমার অতিশয় প্রিয়, সেই হেতু তোমার হিতের জন্যই আমি বলছি।
মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্‌যাজী মাং নমস্কুরু |
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়ো‌হসি মে || ৬৫ ||
অর্থ: তুমি আমাতে চিত্ত অর্পণ কর, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তা হলে তুমি আমাকে অব্যশই প্রাপ্ত হবে। এই জন্য আমি তোমার কাছে সত্যই প্রতিজ্ঞা করছি, যেহেতু তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়।
সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ |
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ || ৬৬ ||
অর্থ:সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।
ইদং তে নাতপস্কায় নাভক্তায় কদাচন |
ন চাশুশ্রূষবে বাচ্য়ং ন চ মাং যোহভ্যসূয়তি || ৬৭ ||
অর্থ:যারা সংযমহীন, অভক্ত, পরিচর্যাহীন এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন, তাদেরকে কখনও এই গোপনীয় জ্ঞান বলা উচিৎ নয়।
য ইদং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেষুভিধাস্যতি |
ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যসংশয়ঃ || ৬৮ ||
অর্থ:যিনি আমার ভক্তের মধ্যে এই গোপনীয় গীতাবাক্য উপদেশ করেন, তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করে নি:সংশয়ে আমার কাছে ফিরে আসবেন।
ন চ তস্মান্মনুষ্যেষু কশ্চিন্মে প্রিয়কৃত্তমঃ |
ভবিতা ন চ মে তস্মাদন্য প্রিয়তরো ভুবি || ৬৯ ||
অর্থ: এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তাঁর থেকে অধিক প্রিয়কারী আমার কেউ নেই এবং তাঁর থেকে অন্য কেউ আমার প্রিয়তর হবে না।
অধ্যেষ্যতে চ য ইমং ধর্ম্যং সংবাদমাবয়োঃ |
জ্ঞানযজ্ঞেন তেনাহমিষ্টঃ স্যামিতি মে মতিঃ || ৭০ ||
অর্থ: আর যিনি আমাদের উভয়ের এই পবিত্র কথোপকথন অধ্যয়ন করবেন, তাঁর সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পূজিত হব। এই আমার অভিমত।
শ্রদ্ধাবাননসূয়শ্চ শৃণুয়াদপি যো নরঃ |
সো‌হপি মুক্তঃ শুভাঁল্লোকান্ প্রাপ্নুয়াৎ পুণ্যকর্মণাম্ || ৭১ ||
অর্থ: শ্রদ্ধাবান ও অসূয়া-রহিত যে মানুষ গীতা শ্রবণ করেন, তিনিও পাপমুক্ত হয়ে পূণ্য কর্মকারীদের শুভ লোকসমূহ লাভ করেন।
কচ্চিদেতৎ শ্রুতং পার্থ ত্বয়ৈকাগ্রেণ চেতসা |
কচ্চিদজ্ঞানসম্মোহঃ প্রনষ্টস্তে ধনঞ্জয় || ৭২ ||
অর্থ: হে পার্থ! হে ধনঞ্জয়! তুমি একাগ্রচিত্তে এই গীতা শ্রবণ করেছ কি? তোমার অজ্ঞান-জনিত মোহ বিদুরিত হয়েছি কি?
|অর্জুন উবাচ |
নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বৎপ্রসাদান্ময়াচ্যুত |
স্থিতো‌হস্মি গতসন্দেহঃ করিষ্যে বচনং তব || ৭৩ ||
অর্থ: অর্জুন বললেন-হে অচ্যুত! তোমার কৃপায় আমার মোহ দূর হয়েছে এবং আমি স্মৃতি লাভ করেছি। আমার সমস্ত সন্দেহ দূর হয়েছে এবং যথাজ্ঞানে অবস্থিত হয়েছি।। এখন আমি তোমার আদেশ পালন করব।
| সঞ্জয় উবাচ |
ইত্যহং বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ |
সংবাদমিমমশ্রৌষমদ্ভুতং রোমহর্ষণম্ || ৭৪ ||
অর্থ: সঞ্জয় বললেন- এভাবেই আমি কৃষ্ণ ও অর্জুন দুই মহাত্মার এই অদ্ভুত রোমঞ্চকর সংবাদ শ্রবণ করেছিলাম।
ব্যাসপ্রসাদাচ্ছ্রুতবানেতদ গুহ্যমহং পরম্ |
যোগং যোগেশ্বরাৎ কৃষ্ণাৎসাক্ষাৎকথয়তঃ স্বয়ম্ || ৭৫ ||
অর্থ: ব্যাসদেবের কৃপায়, আমি এই পরম গোপনীয় যোগ সাক্ষাৎ বর্ণনাকারী স্বয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শ্রবণ করেছি।
রাজন্ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য সংবাদমিমমদ্ভুতম্ |
কেশবার্জুনয়োঃ পুণ্যং হৃষ্যামি চ মুহুর্মুহুঃ || ৭৬ ||
অর্থ: হে রাজন! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই পুণ্যজনক অদ্ভুত সংবাদ স্মরণ করতে করতে আমি বারংবার রোমাঞ্চিত হচ্ছি।
তচ্চ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য রূপমত্যদ্ভুতং হরেঃ |
বিস্ময়ো মে মহান্ রাজন্ হৃষ্যামি চ পুনঃ পুনঃ || ৭৭ ||
অর্থ: হে রাজন! শ্রীকৃষ্ণের সেই অদ্ভুত অদ্ভুত রূপ স্মরণ করতে করতে আমি অতিশয় বিস্ময়াভিভূত হচ্ছি এবং বারংবার হরষিত হচ্ছি।
যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ |
তত্র শ্রীর্বিজয়ো ভূতির্ধ্রুবা নীতির্মতির্মম || ৭৮ ||
অর্থ: যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুর্ধর পার্থ, সেখানেই নিশ্চিতভাবে শ্রী, বিজয়, অসাধারণ শক্তি ও নীতি বর্তমান থাকে। সেটিই আমার অভিমত।
ইতি-“মোক্ষযোগ” নামক শ্রীমদ্ভগবত গীতার প্রথম অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র