মহাভারত:সভাপর্ব-০৪৬-০৫০

৪৬. দুর্য্যোধনের ঊরুভঙ্গে ভীমের প্রতিজ্ঞা
বৃকোদর বীর সবে নিঃশব্দ হইল।
কৃষ্ণা প্রতি কর্ণবীর কহিতে লাগিল।।
তিন জন ধনের উপর প্রভু নহে।
সেবক রমণী শিষ্য, শাস্ত্রে হেন কহে।।
দাস হৈল যুধিষ্ঠির, তুই ভার্য্যা তার।
দাস-ভার্য্যা দাসী হয়, বিদিত সংসার।।
দাসী হৈলি, দাসী-কর্ম্ম কর যথোচিত।
প্রবেশহ ধৃতরাষ্ট্র-গৃহেতে ত্বরিত।।
তোর প্রভু হৈল ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রগণ।
তোর অধিকারী নহে পাণ্ডুর নন্দন।।
যারে তোর ইচ্ছা হয়, ভজহ তাহারে।
পাণ্ডবেরা আর তোরা নিবারিতে নারে।।
বৃকোদর শুনিল কর্ণের কটুত্তর।
নিশ্বাস ছাড়িয়া যে কচালে করে কর।।
ক্রোধে দুই চক্ষু যেন রক্ত কুমুদিনী।
কর্ণ পানে চাহি যেন গর্জ্জে কাদম্বিনী।।
আরে মূঢ়! যে উত্তর করিলি মুখেতে।
ইহার উচিত ফল আছে মোর হাতে।।
ধর্ম্ম পাশে বদ্ধ এই ধর্ম্ম-অধিকারী।
সে কারণে তোরে কিছু বলিবারে নারি।।
যুধিষ্ঠির প্রতি বলে কৌরব-প্রধান।
তুমি কেন নাহি কহ ইহার বিধান।।
চারি ভাই তব বাক্যে সদা অবস্থিত।
আপনি বলহ, কৃষ্ণা জিত কি অজিত।।
যুধিষ্ঠির অধোমুখে শুনি সে বচন।
নয়নে বসন দিয়া ঢাকেন বদন।।
যুধিষ্ঠিরে অধোমুখ দেখি দুর্য্যোধন।
কর্ণভিতে চাহে বড় প্রফুল্ল বদন।।
ভীম ভীতে আড় আঁখি চাহে কৃষ্ণা পানে।
আপনার ঊরু হৈতে তুলিল বসনে।।
গজ-শুণ্ড-সদৃশ উলট রম্ভাতরু।
সকল লক্ষণ-যুত বজ্রবৎ ঊরু।।
মদগর্ব্বে দুর্য্যোধন কৃষ্ণারে দেখায়।
দেখি বৃকোদর বীর ক্রোধে কম্পকায়।।
ভীম বলে, যত আছ শুন সভাজনে।
এই কুরু দুষ্টকর্ম্ম দেখিলা নয়নে।।
যেই ঊরু দেখাইল সভার ভিতর।
ভারত-কুলের পশু নির্লজ্জ পামর।।
বজ্রসম নিদারুণ করি গদাঘাত।
রণমধ্যে ঊরু ভাঙ্গি করিব নিপাত।।
করিলাম এ প্রতিজ্ঞা, না করিব যবে।
পিতৃ পিতামহ গতি নাহি পান তবে।।
ভীমের প্রতিজ্ঞা শুনি কম্পিত আকার।
সভাতে বিদুর তবে কহে আরবার।।
আমি দেখি কুরুকুল রক্ষা নাহি আর।
ভীম-ক্রোধ-সিন্ধু হৈতে নাহিক নিস্তার।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে, সদা শুনে পুণ্যবান।।
৪৭. ধৃতরাষ্ট্র নিকটে দ্রৌপদীর বরলাভ
কান্দে যাজ্ঞসেনী, তিতিল অবনী,
নয়নের নীর-ধারে।
চতুর্দ্দিকে যত, কৌরব উন্মত্ত,
নানা উপহাস করে।।
এহেন সময়, অন্ধের আলয়,
নানা অমঙ্গল দেখি।
মহাঘোর ধ্বনি, বায়স শকুনি,
ডাকয়ে পেচক পাখী।।
গৃহে অগ্নি হয়, শুনি শিবাচয়,
একত্র করিয়া ডাকে।
ভাঙ্গে রথধ্বজ, পড়ি মরে গজ,
হাহাকার রব লোকে।।
অকস্মাৎ ঘর, দহে বৈশ্বানর,
নগর পূরিল ধূমে।
বহে তপ্ত বাত, সঘনে নির্ঘাত,
প্রলয় যেনহ ভূমে।।
বিহনে বারিদ, বরিষে শোণিত,
সদা ক্ষিতি কম্পমান।
দেউল প্রাচীর, যতেক মন্দির,
ভাঙ্গি পড়ে স্থানে স্থান।।
দেখি বিপরীত, চিত্ত উচাটিত,
ধর্ম্মভীত বৃদ্ধজন।
ভীষ্ম দ্রোণ ক্ষত্তা, সুবল দুহিতা,
অন্ধে কৈল নিবেদন।।
শুন কুরুরায়, অন্তকাল প্রায়,
নিকট হইল দেখি।
অতি অকুশল, অলক্ষ্মী কেবল,
তোমার গৃহেতে দেখি।।
তোমার নন্দন, দুষ্ট আচরণ,
দুর্য্যোধন বহু কৈল।
দ্রুপদ-দুহিতা, সতী পতিব্রতা,
সভামাঝে আনাইল।।
যতেক করিল, দ্রৌপদী সহিল,
সবাকার উপরোধ।
শীঘ্র কর রায়, ইহার উপায়,
যাবত না হয় ক্রোধ।।
শুনি অন্ধ বীর, হইল অস্থির,
আনাইল যাজ্ঞসেনী।
মধুর সম্ভাষে, বহু প্রীতি ভাষে,
কহে অন্ধ নৃপমণি।।
বধূগণ-মধ্যে, তোমা গণি আদ্যে,
শ্রেষ্ঠা সুশীলা সুব্রতা।
তোমার চরিত্র, পরম পবিত্র,
ত্রিজগতে হৈল খ্যাতা।।
দেখ বধূ মোকে, কর্ম্মের বিপাকে,
দুষ্ট পুত্রগণ পাইল।
লোকে অপকীর্ত্তি, জগতে দুর্ব্বৃত্তি,
সব পুত্র হৈতে হৈল।।
দিল বহু দুঃখ, দেখি মম মুখ,
ক্ষমহ দ্রুপদ-সুতা।
তুমি না ক্ষমিলে, আমি দুঃখ পেলে,
পশ্চাতে পাইবে ব্যথা।।
দূর কর রোষ, হইয়া সন্তোষ,
মাগ বর মম স্থান।
মাগ মাগ বর, ক্ষম কটূত্তর,
হৈয়ে প্রসন্ন-বদন।।
শুনিয়া সুন্দরী, করযোড় করি,
বর মাগিল তখন।
পাণ্ডবের পতি, ধর্ম্ম-নরপতি,
দাসত্ব কর মোচন।।
ধর্ম্ম মহারাজ, খণ্ডে যেন লাজ,
দাস বলি ক্ষিতি-তলে।
আমার নন্দনে, যেন শিশুগণে,
দাসসুত নাহি বলে।।
তথাস্তু বলিয়া, সানন্দ হইয়া,
পুনঃ বলে মাগ বর।
নহে এক বর, তব যোগ্যতর,
তুমি মাগ অন্য বর।।
দ্রৌপদী বলিল, কৃপা যদি হৈল,
মাগি যে তোমার পায়।
সশস্ত্র-বাহন, আর চারি জন,
মুক্ত করহ সবায়।।
দিনু এই বর, মাগহ অপর,
যেই লয় মনে তব।
তুমি কুলাশ্রয়, মম ভাগ্যোদয়,
যে বর মাগিবে দিব।।
মাগহ তৃতীয়, যেই তব প্রিয়,
দিতে না করিব আন।
করি কৃতাঞ্জলি, বলেন পাঞ্চালী,
কর রাজা অবধান।।
দুই বর পাই, আর নাহি চাই,
লোভ না জন্মাও মোরে।
জ্ঞানী-জন-স্থান, শুনেছি বিধান,
তাহা করি যে তোমারে।।
বৈশ্য মাগিবেক, সবে বর এক,
ক্ষত্র লৈবে দুই বর।
দ্বিজের কুমার, লবে শতবার,
শাস্ত্রে কহে মুনিবর।।
যেই মম কাজ, দিলা মহারাজ,
আর কি লইব বর।
শুনি অন্ধরাজ, পেয়ে বড় লাজ,
প্রশংসিল বহুতর।।
করি যোড়পাণি, বলে যাজ্ঞসেনী,
শুন আমার বচন।
মুক্ত হই তবে, পুণ্য থাকে যবে,
পুনঃ অর্জ্জিবেক ধন।।
দ্রৌপদী-বচন, শুনিয়া রাজন,
প্রশংসি প্রমাণ কৈল।
পাণ্ডুর নন্দন, দাসত্ব মোচন,
শুনি সবে তুষ্ট হৈল।।
ভারত-কবিতা, মহাপুণ্য কথা,
প্রচার হৈল সংসারে।
কাশীদাস কয়, নাহিক সংশয়,
শ্রবণে বিপদ্ তরে।।
৪৮. কর্ণবাক্যে ভীমের ক্রোধ
দাস্যে মুক্ত হইলেন পঞ্চ সহোদর।
হাসি কর্ণবীর বলে সভার ভিতর।।
নাহি দেখি, নাহি শুনি লোকের বদনে।
স্ত্রী হইতে স্বামী মুক্ত হয়েছে কখনে।।
ভার্য্যা হৈতে যেই তরে পুরুষ হইয়া।
লোকে বলে তাহারে কাপুরুষ বলিয়া।।
মহা-সিন্ধু-মধ্যেতে তরণী ডুবেছিল।
এ মহাবিপদ হৈতে কৃষ্ণা উদ্ধারিল।।
ভীম বলে, শাস্ত্র জ্ঞাত নহিস দুর্ম্মতি।
শুন কহি যাহা কহিলেন প্রজাপতি।।
সংসারের মধ্যে ভার্য্যা শ্রেষ্ঠ সখা গণি।
সর্ব্বসুখে হীন নর বিহীন রমণী।।
বিবাহ-মাত্রেতে লোক গৃহস্থ বলায়।
নানা ধর্ম্ম উপার্জ্জয়ে ভার্য্যার সহায়।।
দান যজ্ঞ ব্রত করে সহায় যাহার।
পুত্র জন্মাইয়া করে বংশের উদ্ধার।।
পতিত কুপিত হয় কর্ম্ম-অনুসারে।
জ্ঞাতিগণ ছাড়ে, ভার্য্যা ছাড়িবারে নারে।।
ইহকালে ভার্য্যা হৈতে বঞ্চে বহু সুখে।
মরণে সহায় হৈয়ে তারে পরলোকে।।
পরলোকে তারে ভার্য্যা, কহে হেন নীত।
এ লোকে তারিতে কেন নহে সমুচিত।।
ওরে মূঢ় সূতপুত্র! তুই হীন জন।
তেঁই হীনের অন্নদান কৈলি গ্রহণ।।
তোমা বিনা নির্লজ্জ কে আছয়ে সংসারে।
কপটে জিনিয়া হীন বলিবারে পারে।।
দৈবে এই কথা তোরে কহিতে যুয়ায়।
ভার্য্যার ঈদৃশ যাহা কহিলি সভায়।।
সংসারে নাহিক হীন আমার সমান।
তোরে না মারিয়া এতক্ষণ ধরি প্রাণ।।
শুনিয়া বলেন পার্থ বিনয় বচন।
হীন বস বাক্যব্যয়ে নাহি প্রয়োজন।।
হীনের বচন কভু শুনি না শুনিবে।
হীন-জন-বচনেতে উত্তর না দিবে।।
হীন জন সূত-পুত্র এই দুরাচার।
ইহা সহ সমদ্বন্দ্ব না শোভে তোমার।।
ভীম বলে, ধনঞ্জয় আছয়ে কি লোকে।
পুত্রবতী ভার্য্যার এ দশা চক্ষে দেখে।।
ঈদৃশ বচন যদি কহে হীন জন।
দেহ ভূজভার তবে বহে অকারণ।।
ধর্ম্মে যদি মুক্ত হইলেন ধর্ম্মরাজ।
শত্রুগণ সংহারিতে কেন করি ব্যাজ।।
আজি সব শত্রুগণে করিব সংহার।
একত্রে আছয়ে যত শত্রু যে আমার।।
যে কিছু করিল, চক্ষে দেখিলা সে সব।
ইহা হৈতে আর কি আছয়ে পরাভব।।
বাক্-চাতুরীতে ভাই নাহি প্রয়োজন।
উঠ ভাই, সব শত্রু করিব নিধন।।
পৃথিবীর ভার আজি করিব নির্ম্মূল।
নিপাত করিব আজি কৌরবের কুল।।
কহিতে কহিতে ক্রোধে কম্পে ভীম-অঙ্গ।
জ্বলন্ত অনল যেন নয়ন-তরঙ্গ।।
নয়ন-তরঙ্গ হৈতে অগ্নি বাহিরায়।
ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি যুগান্তের যম প্রায়।।
ভীমের আজ্ঞাতে উঠিলেন তিনজন।
ধনঞ্জয় আর দুই মাদ্রীর নন্দন।।
সম্মুখে দেখিল ভীম লোহার মুদগর।
তুলিয়া লইতে যায় বীর বৃকোদর।।
বুঝিয়া বিষম দ্বন্দ্ব ধর্ম্মের নন্দন।
দুই হস্ত তুলি ভীমে করেন বারণ।।
যুধিষ্ঠির-আজ্ঞা ভীম লঙ্ঘিতে না পারে।
ক্রোধ নিবারিল তবে চারি সহোদরে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশী কহে, শুনিলে জন্ময়ে দিব্যজ্ঞান।।
৪৯. পাণ্ডবগণের ইন্দ্রপ্রস্থে প্রত্যাগমন
তবে ধর্ম্ম-নরপতি জ্যেষ্ঠতাত-আগে।
সবিনয়ে মিষ্টভাষে কহে করযুগে।।
আজ্ঞা কর তাত, কিবা করি মোরা সব।
তোমার শাসনে সদা বঞ্চয়ে পাণ্ডব।।
শুনিয়া কৌরব-পতি অন্তরে লজ্জিত।
শান্ত কৈল যুধিষ্ঠিরে কহি বহু প্রীত।।
সাধুজন-শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম্মজ্ঞ পণ্ডিত।
তোমারে বুঝাব কিবা, জান সর্ব্ব নীত।।
সাধুজন-কর্ম্ম, কভু দ্বন্দ্বে না প্রবেশে।
নিজ-গুণ নাহি ধরে, পর-গুণ ঘোষে।।
গুণাগুণ কহে যেই, সে হয় মধ্যম।
সদা আত্মগুণ কহে, সেই সে অধম।।
বংশের তিলক তুমি কুরুকুল-নাথ।
দুর্য্যোধন যত দোষ, ক্ষমা কর তাত।।
আমা আর গান্ধারীর দেখিয়া বদন।
সব ক্ষম, যত দুঃখ দিল দুষ্টগণ।।
কুরুকুল-শ্রেষ্ঠ তুমি, পরম ভাজন।
বালকের যত দোষ কর সম্বষণ।।
যে দ্যূত করিল পূর্ব্বে কেহ নাহি করে।
পুত্র-বলাবল মিত্রামিত্র বুঝিবারে।।
ভাল মতে তোমারে জানিনু এত দিনে।
কি ভার কৌরবকূলে তোমার পালনে।।
ভীমার্জ্জুন-রক্ষা আর ক্ষত্তার মন্ত্রণা।
দ্রৌপদী সতীর গুণ না হয় বর্ণনা।।
আমার ভারত বংশ করিল উজ্জ্বল।
যার কীর্ত্তি ঘুষিবেক ত্রৈলোক্য-মণ্ডল।।
যাহ তাত নিজ রাজ্য, কর অধিকার।
পালহ আপন দেশ প্রজা পরিবার।।
এত বলি পঞ্চ জনে করিল মেলানি।
প্রণমিয়া গেলেন সহিত যাজ্ঞসেনী।।
সভাপর্ব্ব সুধা-রস ব্যাস-বিরচিত।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে, পরলোকে হিত।।
৫০. যুধিষ্ঠিরাদির মুক্তি হেতু দুর্য্যোধনের বিষাদ
শুনি জন্মেজয় জিজ্ঞাসেন মুনিবরে।
কহ শুনি, কি প্রসঙ্গে হৈল তদন্তরে।।
কেন বনে চলিলেন পিতামহগণ।
শুনিবারে ইচ্ছা বড়, কহ তপোধন।।
মুনি বলে, পঞ্চ ভাই ইন্দ্রপ্রস্থে গেলে।
করযোড়ে দুঃশাসন দুর্য্যোধনে বলে।।
যতেক করিলা সব বৃদ্ধ বিনাশিল।
যে সব জিনিলা, তারে পুনঃ তাহা দিল।।
দুর্য্যোধন দুঃশাসন রাধেয় শকুনি।
অতি শীঘ্র গেল যথা অন্ধ নৃপমণি।।
দুর্য্যোধন বলে, তাত অনর্থ করিলা।
বন্দী করি কষ্টে সিংহ তাহা ছাড়ি দিলা।।
বৃহস্পতি ইন্দ্রকে যে কহিলেন নীত।
তোমা কি কহিব তাহা, তোমার বিদিত।।
যে মতে পারিবে, শত্রু করিবে নিধন।
বুদ্ধে যুদ্ধে শত্রুকে না ক্ষমি কদাচন।।
পাণ্ডব হইতে জিনিলাম যত ধন।
বাহুড়িয়া দেহ তারে কিসের কারণ।।
সেই ধনে বশ করিব রাজারে।
রাজা সখা হইলে মারিব পাণ্ডবেরে।।
স্নেহ করি পুনঃ সব দিলা তুমি তারে।
তথাপি কি পাণ্ডুপুত্র ক্ষমিবে আমারে।।
ক্রোধে সর্পবৎ হয় পাণ্ডু-পুত্রগণ।
যত করিলাম, না ক্ষমিবে কদাচন।।
সকল ক্ষমিবে তাত তোমার পীরিতে।
দ্রৌপদীর কষ্ট না ক্ষমিবে কদাচিতে।।
সৈন্য সাজাবারে তারা গেল নিজ দেশ।
যুদ্ধ হেতু আসিবেক করি সমাবেশ।।
সশস্ত্র থাকিলে রথে পাণ্ডু-পুত্রগণ।
জিনিতে না হৈবে শক্ত এ তিন-ভবন।।
আর শুন তাত যবে মুক্ত হৈয়ে যায়।
মুহুর্মুহুঃ পার্থবীর গাণ্ডীব দেখায়।।
দক্ষিণ বামেতে দুই তূণ ঘন দেখে।
সঘনে নিশ্বাস ছাড়ে হস্ত দিয়া নাকে।।
সিংহ সম গর্জ্জনেতে যায় বৃকোদর।
ঘন গদা লোফয়ে, কচালে করে কর।।
স্নেহেতে ভুলিয়া তাত করিলা কি কাজ।
মোর ক্লেশ-হেতু স্বয়ং হৈলা মহারাজ।।
শুনিয়া অস্থির-চিত্ত হৈল কুরুরায়।
অন্ধ বলে, কি হইবে কি করি উপায়।।
দুর্য্যোধন বলে, তাত আছয়ে উপায়।
পুনঃ পাশা প্রবর্ত্তিত করহ নির্ণয়।।
যে হারিবে, দ্বাদশ বৎসর যাবে বন।
বৎসরেক অজ্ঞাত রহিবে এই পণ।।
অজ্ঞাত-বাসেতে কভু যদি জ্ঞাত হয়।
পুনরপি বনবাস অজ্ঞাত নিশ্চয়।।
এয়োদশ বৎসর পাণ্ডব গেলে বন।
পৃথিবীর যত রাজা করিব আপন।।
অজ্ঞাত হইতে যদি হইবেক পার।
হীনবল হৈবে, তবে করিব সংহার।।
ইহা বিনা উপায় নাহিক মহাশয়।
আজ্ঞা কর আনিবারে পাণ্ডব-তনয়।।
শুনি অন্ধ আজ্ঞা দিল প্রতিকামী প্রতি।
যাহ শ্রীঘ্র, ফিরি আন ধর্ম্ম-নরপতি।।
পথে কিম্বা ইন্দ্রপ্রস্থে যথায় ভেটিবে।
মম আজ্ঞা বলি পুনঃ আনহ পাণ্ডবে।।
ইহা শুনি আইল যতেক মন্ত্রিগণ।
বিদুর বিকর্ণ শুনি আইল তখন।।
গান্ধারী শুনিয়া তথা আইলা শীঘ্রগতি।
সবিনয়ে বলে সতী, অন্ধরাজ প্রতি।।
শুনি রাজা পূনর্ব্বার পাণ্ডবে ডাকিলে।
বৃদ্ধকালে কি বুদ্ধি তোমারে দৈব দিলে।।
সাক্ষাতে দেখিলে যত পাণ্ডব-দুর্গতি।
পুনঃ পাশা খেলা হেতু দিলে অনুমতি।।
দ্রৌপদীর প্রতি এত করে অত্যাচার।
ক্ষমা করে দুষ্টে সতী, না করে সংহার।।
নাহি বুঝ দুষ্ট দুর্য্যোধনের প্রকৃতি।
ইহার কথায় রাজা হৈলে ছন্নমতি।।
এত শুনি ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ সোমদত্ত।
বাহ্লীক বিদুর মন্ত্রী বিকর্ণাদি যত।।
একে একে পুনঃ পুনঃ সবাই কহিল।
পুত্রবশ হৈয়ে রাজা শুনি না শুনিল।।
কারো বাক্য না শুনিল কুরু-অধিকারী।
কহিতে লাগিল তবে গান্ধারী সুন্দরী।।
উপস্থিত হয় যবে অন্তিম সময়।
ঔষধ না খায় রোগী কাশীদাস কয়।।
সময় হইলে মন্দ দুষ্টবুদ্ধি জন।
কাশী কহে, হিত বাক্য না করে শ্রবণ।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র