সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-৬

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-৬
তবে-
কল্পনান্তরে পূজিতা সা সুরথেন মহাত্মনা।
রাজ্ঞা মেধস-শিষ্যেন মৃন্ময্যাঞ্চ সরিত্তটে।। ৫৭।৩৫
অর্থঃ মেধস মুনির শিষ্য মহাত্মা সুরথ রাজা নদীতটে সেই দূর্গাদেবীর মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করে বেদোক্ত ষোড়শোপচারে এবং মেষ, মহিষ, গন্ডক, কৃষ্ণসার, ছাগাদি, বিবিধ পশু পক্ষী ও কুষ্মান্ড বলি প্রদানে তাঁর পূজা করেন।

এখানে বলির কথা আছে এবং সাথে সাথে কুষ্মান্ড বলির কথাও আছে। তাহলে পশুর পরিবর্তে আমরা ইচ্ছে করলে কুষ্মান্ড বলি দিতে পারি।
সুরথ রাজার দেবী বোধনের বিষয়ে শ্রী শ্রী চন্ডী কি বলে-
তৌ তস্মিন পুলিনে দেব্যাঃ কৃত্বা মূর্ত্তিং মহীময়ীম্।
অর্হণাঞ্চ ক্রতুস্তস্যাঃ পূষ্পধূপাগ্নিতর্পণৈঃ।।
নিরাহারৌ যতাহারৌ তন্মনস্কৌ সমাহিতৌ।
দদতুস্তৌ বলিঞ্চৈব নিজগাত্রসৃগুক্ষিতম্।। (শ্রী শ্রী চন্ডী ১৩।৫-৭)
অর্থঃ সুরথ রাজা নদীপুলিনে দেবীর মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে দেবীসূক্ত জপ করতঃ পূষ্পধূপাগ্নিতর্পণে ব্রত পালন করে একমনে পূজা করেছিলেন, বলি দিয়েছিলেন নিজগাত্ররুধির। দেবী ভাগবতেও আছে- সুরথ রাজা নিজ গাত্রমাংস নিজগাত্ররুধির বলি দিয়েছিলেন (৬৫ অধ্যায়)।

রাবণ বসন্তকালে দেবীর পূজা করেছিলেন বলে তাকেই বাসন্তী পূজা বলা হয়। আর রামচন্দ্র শরৎকালে পূজা করেছিলেন বলে এ পূজাকে শারদীয়া মহাপূজা বলা হয়। কিন্তু রামায়ণে রামচন্দ্র যে দূর্গাপূজা করেছিলেন তার উল্লেখ নেই, বাল্মীকি রামায়ণে নেই, অধ্যাত্ম রামায়নে নেই, যোগবাশিষ্ট রামায়নে নেই, অদ্ভূৎ রামায়ণেও নেই। পদ্মপুরাণ, অগ্নিপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, ব্রহ্মান্ডপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতিতে কিছু কিছু উল্লেখ আছে। কিন্তু রামচন্দ্র যে দূর্গাপূজা করেছিলেন তার কথা নেই। তবে কিছু কিছু উপ-পুরাণে (কালিকাপুরাণ, নন্দিকেশ্বর পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম্মপুরাণ ইত্যাদি উপ-পুরাণ) রামচন্দ্র কর্তৃক দেবীর অকালে পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু পশু বলির কোন উল্লেখ নেই।

দেবী ভাগবতে কি বলে-
মহর্ষি নারদ রামচন্দ্রকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন “দেবীর প্রীতির জন্য প্রশস্ত ও পবিত্র পশু বলিসমূহ প্রদান পূর্বক জপের দশাংশ হোম করলে আপনি রাবণ বিনাশে সক্ষম হবেন।” ব্রহ্মর্ষি নারদের উপদেশ মতে রামচন্দ্র দেবীর পূজা ও বলিদানাদি করলেন (৩য় স্কন্দ ৩০ অধ্যায়)। কিন্তু আবার এ গ্রন্থেই পাওয়া যায়- ব্যাসদেব রাজা জনমেজয়কে নবরাত্র ব্রত করে নিরামিষ উপকরণে দেবীর পূজার কথা বলেছিলেন এবং সাথে সাথে এ কথাটিও বলেছিলেন “যারা মাংস ভোজন করেন, তাঁরা দেবীর প্রীতার্থে পশুহিংসা করতে পারেন, তন্মধ্যে মহিষ, ছাগ ও বরাহ বলিই প্রশস্ত।”
পাঠক এর দ্বারা কি অর্থ করা যায়, নিজেরা বিবেচনা করুন।

দেবী ভাগবতেই আছে- নৈমিষারণ্যে সূত মুনিকে শৌণক বলছেন“ পুরোডাশ প্রভৃতি উপকরণ দ্বারা আমরা পশু হিংসা বিহীন যজ্ঞ করেছি, এক্ষণে আমাদের অন্য কোন আবশ্যক কর্ম নেই” (১ম স্কন্দ ২য় অধ্যায়)।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য যে, যে সকল ধর্মগ্রন্থে পশু বলি বিধান দেয়া হয়েছে সেগুলি হচ্ছে- কালিকাপুরাণ, দেবীপুরাণ, নন্দিকেশ্বরপুরাণ ইত্যাদি। এ পুরাণগুলি হচ্ছে উপপুরাণ। আর যে সব গ্রন্থে বলি নিষেধ বা বলিতে প্রত্যবায় আছে সেগুলি হচ্ছে - শ্রীমদ্ভাগবত, পদ্মপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ ইত্যাদি। আর এগুলি হচ্ছে মহাপুরাণ। উপপুরাণ ও মহাপুরাণ এর মধ্যে প্রভেদ আছে কি? আর কোন পুরাণকে প্রধান্য দেয়া উচিৎ উপপুরাণ না মহাপুরাণকে। সদয় বিবেচনা করার জন্য পাঠককে অনুরোধ করছি।
(চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র