মহাভারত:সভাপর্ব-০৫১--৫৬

৫১. পুনর্ব্বার দ্যূতক্রীড়া ও যুধিষ্ঠিরের পরাজয়
গান্ধারী কহিছে, রাজা কর অবধান।
শিশুর বচনে কেন হও হতজ্ঞান।।
যখন জন্মিল এই দুষ্ট দুর্য্যোধন।
বিপরীত শব্দেতে কম্পিত সর্ব্বজন।।
বিদুর কহিল, এরে করহ সংহার।
ইহা মারি রাখ রাজ বংশ আপনার।।
পাপিষ্ঠের স্নেহে না শুনিলা ক্ষত্তাবাণী।
সেই কাল উপস্থিত হৈল নৃপমণি।।
সর্ব্বনাশ হেতু রাজা উদ্ভব ইহার।
পুত্ররূপে আছে সব করিতে সংহার।।
ইহার বচন না শুনিহ কদাচন।
নিবৃত্ত হইল অগ্নি, না জ্বাল এখন।।
বৃদ্ধ হৈয়ে তুমি কেন হও অন্য মতি।
আপনি জানহ তুমি দুষ্টের প্রকৃতি।।
এখন ত্যজহ কুলাঙ্গার-দুর্য্যোধন।
ইহা ত্যজি নিজ বংশ রাখহ রাজন।।
মম বাক্য নাহি শুনি পুত্র-বশ হবে।
আপনি আপন বংশ সকল মজাবে।।
ধনে বংশে বৃদ্ধি হইয়াছ হে রাজন্।
সর্ব্বনাশ কর প্রভু কিসের কারণ।।
সম্প্রতি সুখের হেতু কর হেন কাজ।
পশ্চাতে কি হৈবে, নাহি ভাব মহারাজ।।
অধর্ম্মে অর্জ্জিত লক্ষ্মী সমূলেতে যায়।
মহা দুঃখ পায় দুষ্টের আশ্রয়।।
চরণে ধরিয়া প্রভু কহি যে তোমারে।
পুনঃ আজ্ঞা না হয় আনিতে পাণ্ডবেরে।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, শুন সুবল-নন্দিনী।
আমার বুঝাহ কিবা, সব আমি জানি।।
কুরু-অন্তকাল জানি হইল নিশ্চয়।
আমার শক্তিতে দ্যূত নিবৃত্ত না হয়।।
যে হউক সে হউক পাছে, দৈবের লিখন।
আসিয়া খেলুক পুনঃ পাণ্ডুর নন্দন।।
শুনিয়া স্বামীর এত নিষ্ঠুর বচন।
গৃহে গেল গান্ধারী যে মলিন-বদন।।
আজ্ঞা পেয়ে প্রতিকামী গেল ততক্ষণে।
পথেতে ভেটিল পঞ্চ পাণ্ডুর নন্দনে।।
যুধিষ্ঠিরে প্রতিকামী কহে যোড়হাতে।
জ্যেষ্ঠতাত আজ্ঞা তব বাহুড়ি যাইতে।।
পুনঃ পাশা খেলাইতে বলে কুরুবীর।
শুনিয়া বিস্মিত হইলেন যুধিষ্ঠির।।
ধর্ম্ম বলে, দৈববশ শুন ভ্রাতৃগণ।
মম শক্তি নাহি লঙ্ঘি অন্ধের বচন।।
বিশেষে আমার ধর্ম্ম জান ভ্রাতৃগণ।
আহ্বানিলে দ্যূতে যুদ্ধে না ফিরি কখন।।
চল সর্ব্ব-ভ্রাতৃগণ, যাইব নিশ্চয়।
বংশ-ক্ষয়-কাল বিধি করিল নির্ণয়।।
এত বলি ভ্রাতৃগণে লইয়া সংহতি।
পুনঃ আসি সভাস্থলে বসে নরপতি।।
শকুনি বলিল, শুন ধর্ম্মের নন্দন।
অন্ধরাজ আজ্ঞা করে, খেল করি পণ।।
যে হারিবে দ্বাদশ বৎসর বনে যাবে।
অজ্ঞাত বৎসর এক গুপ্তবেশে রবে।।
অজ্ঞাত-বৎসর-মধ্যে ব্যক্ত যদি হয়।
পুনরপি বনবাস অজ্ঞাত উভয়।।
ত্রয়োদশ বৎসর হইবে যদি পাব।
পুনরপি লইবেক রাজ্য যে যাহার।।
এই ত নিয়ম করি দ্যূত আরম্ভিল।
যতেক সুহৃদগণ বারণ করিল।।
যুধিষ্ঠির বলেন, বারণ কি কারণ।
সম্মত না হৈবে কেন আমা হেন জন।।
একে ত আহ্বান, আর গুরুর আদেশ।
ধার্ম্মিক না ছাড়ে ধর্ম্ম যদি পায় ক্লেশ।।
এত বলি যুধিষ্ঠির দ্যূত আরম্ভিল।
দৈবের নির্ব্বন্ধ দেখ, শকুনি জিতিল।।
আসন্ন বিপদকালে বুদ্ধি সুনির্ম্মল।
কাশী কহে, হয়ে পড়ে বিষম সকল।।
হারিলেন ধর্ম্মপুত্র কপট পাশায়।
সভাপর্ব্ব সুধারস কাশীদাস গায়।।
৫২. কৌরব-বধে পাণ্ডবের প্রতিজ্ঞা
বিলম্ব না করিলেন ধর্ম্ম-নরপতি।
ততক্ষণে করিলেন অরণ্যেতে গতি।।
বসন ভূষণ আদি সকল ত্যজিয়া।
মুনিবেশ ধরিলেন বাকল পরিয়া।।
হেনকালে দুঃশাসন উপহাসচ্ছলে।
সভামধ্যে দ্রুপদ-কন্যার প্রতি বলে।।
মূর্খ রাজা যজ্ঞসেন কি কর্ম্ম করিল।
দ্রৌপদী এমন কন্যা ক্লীবে সমর্পিল।।
শুন ওহে যাজ্ঞসেনি! মোর বাক্য ধর।
কোথা দুঃখ পাবে গিয়া কানন-ভিতর।।
এই কুরু-জন মধ্যে যারে মন লয়।
তাহারে ভজিয়া সুখে থাকহ আলয়।।
এইরূপে পুনঃ পুনঃ বলিল অপার।
গর্জ্জিয়া নেউটি কহে পবন-কুমার।।
রে দুষ্ট! নিকট মৃত্যু জানিলি আপন।
সেই হেতু বলিস এ হেন কুবচন।।
এ সব বচন আমি করাব স্মরণ।
রণমধ্যে আমি তোরে পাইব যখন।।
নখেতে শরীর তোর করিব বিদার।
নির্ম্মূল করিব সখা যতেক তোমার।।
শত সহোদর সহ লোটাইব ক্ষিতি।
ইহা না করিলে যেন না পাই সদগতি।।
এতেক কহিয়া তবে যায় বৃকোদর।
সিংহাসন হইতে উঠিল কুরুবর।।
যেইরূপে চলি যায় পবন-নন্দন।
সেইরূপে হাসি চলে দুষ্ট দুর্য্যোধন।।
নেউটিয়া বৃকোদর পাছু পানে চায়।
উপহাস জানিয়া ক্রোধেতে কম্পে কায়।।
রে দুষ্ট! উচিত ফল পাইবি ইহার।
সে কালে এ সব কথা স্মরাব তোমার।।
পদ দিয়া এইরূপে তোমার মস্তকে।
চলিয়া যাবার কালে স্মরাব তোমাকে।।
তোরে সংহারিব তোর যত বন্ধু সখা।
শত ভাই তোমার মারিব আমি একা।।
কর্ণের মারিবে পার্থ, গর্ব্ব কর যার।
সহদেব শকুনিরে করিবে সংহার।।
এত বলি বৃকোদর নিঃশব্দেতে রয়।
সভামধ্যে ডাকিয়া বলেন ধনঞ্জয়।।
যতেক প্রতিজ্ঞা কর সব অকারণ।
ত্রয়োদশ বৎসরান্তে যদি নহে রণ।।
এয়োদশ বৎসরান্তে যদি পাই রণ।
তবে ত তোমার আজ্ঞা করিব পালন।।
কর্ণেরে মারিব যেন পতঙ্গের মত।
তোর যত সহায় সকলে হৈবে হত।।
হিমাদ্রি টলিবে, সূর্য্য ত্যজিবে কিরণ।
তথাপি প্রতিজ্ঞা মম না হবে লঙ্ঘন।।
শুন সব রাজগণ, আছ সভাস্থলে।
আজি হৈতে ত্রয়োদশ বৎসরান্ত-কালে।।
কৌতুক দেখিবা সবে যুদ্ধ হয় যদি।
কৌরবের শোণিতে পূরাব নদ-নদী।।
কদাচিত দিব্যজ্ঞান জন্মে দুর্য্যোধনে।
বিনত হইয়া পড়ে ধর্ম্মের চরণে।।
তবে ত প্রতিজ্ঞা যত সকলি বিফল।
আনন্দে বঞ্চিবে তবে কৌরব সকল।।
তবে সহদেব কহে চাহিয়া শকুনি।
রে দুষ্ট গান্ধার-পুত্র শুন এক বাণী।।
কপটেতে পাশা তুই করিলি রচন।
পাশা নহে, প্রহারিলি তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।।
মম তীক্ষ্ম-অস্ত্রাঘাত যুদ্ধেতে দেখিবে।
সবান্ধবে মম হাতে সংহার হইবে।।
ভীমের আদেশ মম, নহিবে লঙঘন।
অবশ আমার হাতে তোমার নিধন।।
সহসা নকুল উঠি বলে সভাস্থলে।
এবে মন দিয়া শুন নৃপতি সকলে।।
ধর্ম্মপুত্র-আজ্ঞা আর কৃষ্ণার সম্মতি।
নিঃশেষ করিব কুরু-সৈন্য-সেনাপতি।।
এত বলি চলিলেন পাণ্ডু পুত্রগণ।
ধৃতরাষ্ট্র-স্থানে যান বিদায় কারণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
শুনিলে নিষ্পাপ হয়, জন্মে দিব্যজ্ঞান।।
৫৩. পাণ্ডবদিগের বনবাস গমনোদযোগ
বিনয় করিয়া কহিছেন ধর্ম্মরায়।
ধৃতরাষ্ট্র আদি যত ছিলেন সভায়।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য্য বিদুর সঞ্জয়।
সোমদত্ত ভূরিশ্রবা পৃষত-তনয়।।
একে একে সবারে বলেন ধর্ম্মরায়।
আজ্ঞা কর, বনে যাই, মাগি যে বিদায়।।
লজ্জায় মলিন সবে, মাথা না তুলিল।
মনে মনে সর্ব্বজন কল্যাণ করিল।।
বিদুর কহেন তবে সজল-নয়ন।
খণ্ডাইতে কেবা পারে দৈব-নির্ব্বন্ধন।।
কিছুদিন কষ্ট ভোগ করহ কাননে।
কুন্তীকে রাখিয়া যাও আমার ভবনে।।
একে বৃদ্ধা আর তাহে রাজার কুমারী।
যোগ্য নহে কুন্তী এবে হৈবে বনচারী।।
ধর্ম্ম-বলিলেন, তুমি জনক-সমান।
তব আজ্ঞা কুরুকুলে কে করিবে আন।।
বিশেষে পাণ্ডব-গুরু, জানে সর্ব্বজন।
মম শক্তি নাই, তাহা করিব হেলন।।
থাকুক জননী তাত তোমার আলয়।
আর কি করিব, আজ্ঞা কর মহাশয়।।
বিদুর বলেন, তুমি সর্ব্ব-ধর্ম্ম-জ্ঞাতা।
অধর্ম্মে হইল জিত, না পাইও ব্যথা।।
আমি কি করিব তাত তোমার গোচর।
তুলনা নাহিক দিতে পঞ্চ সহোদর।।
পরম সঙ্কটে যেন ধর্ম্মচ্যুত নহে।
এই উপদেশ মম যেন মনে রহে।।
কুশলে আসিও সত্য করিয়া পালন।
পুনঃ তোমা দেখি যেন জুড়ায় নয়ন।।
এত বলি বিদুর হইল শোকাকুল।
বনে যেতে পঞ্চ ভাই হলেন আকুল।।
জটা-বল্ক পঞ্চ ভাই করেন ভূষণ।
তবে ত দ্রৌপদী দেবী দেখি স্বামিগণ।।
ত্যজিলা ভূষণ বস্ত্র পিন্ধন সকল।
লম্বিত কোমল কেশ পিন্ধন বাকল।।
রাজ্য ত্যজি অরণ্যেতে যান ধর্ম্মরায়।
শুনি হস্তিনার লোকে স্ত্রী-পুরুষে ধায়।।
পাণ্ডবের বেশ দেখি কান্দে সর্ব্বজন।
বাল বৃদ্ধ যুবা কান্দে, যত নারীগণ।।
ভূমে গড়াগড়ি দিয়া কান্দে দ্বিজগণ।
আমা সবাকারে কেবা করিবে পালন।।
নগর পূরিল যে রোদন-কোলাহলে।
হস্তিনা কর্দ্দম হৈল নয়নের জলে।।
পঞ্চ পুত্র বনে যায়, বধূ গুণবতী।
বার্ত্তা শুনি কুন্তী দেবী আসে শীঘ্রগতি।।
দূর হৈতে দেখি কুন্তী তনয় সকলে।
মূর্চ্ছিত হইয়া দেবী পড়িল ভূতলে।।
মুকুলিত কেশভার, গলিত বসন।
শিরে করাঘাত করি করেন রোদন।।
বধূর দেখিয়া বেশ হইল বাতুলী।
দাণ্ডাইয়া চাহে যেন চিত্রের পুত্তলী।।
ক্ষণেক রহিয়া কহে গদগদ ভাষে।
সভাপর্ব্ব সুধারস গায় কাশীদাসে।।
৫৪. দ্রৌপদীর বেশ দেখিয়া কুন্তীর বিলাপ
মনে হয় দুখ, পূর্ণচন্দ্র মুখ,
কি হেতু মলিন দেখি।
অম্লান অম্বর, দিল যে কিন্নর,
বাকল তাহা উপেক্ষি।।
মাণিক মঞ্জরী, হার শতেশ্বরী,
তোমার হৃদয়ে সাজে।
ছিল অনুরাগ, তাহা কৈলে ত্যাগ,
দিল যে রাক্ষসরাজে।।
যুগল কঙ্কণ, অমূল্য রতন,
করেতে সাজিতেছিল।
কাড়ি নিল কেবা, নাহি দেখি শোভা,
যক্ষপতি যাহা দিল।।
অতুল অঙ্গুরী, দিলা যে শ্রীহরি,
অনেক যতন করি।
তেঁই নাহি সাজে, দিলা কেন দ্বিজে,
কি বলিবে মধুহারী।।
মঞ্জরী সুন্দর, দিলা যাহা কর,
উত্তর কুরুর পতি।
তেঁই নাহি শুনি, সে ললিত ধ্বনি,
কি করিলা গুণবতী।।
যাক্ পাছে সর্ব্ব, কোন্ ছার দ্রব্য,
তোমার আপদ লৈয়া।
বিরস বদন, সজল নয়ন,
দেখিয়া বিদরে হিয়া।।
হরে মোর ক্ষুধা, তোমার সে সুধা,
বচনে কেবল মধু।
তুলি অধোমুখ, খণ্ড মোর দুঃখ,
কহ শুনি প্রাণবধূ।।
হেন লয় চিতে, স্বামিগণ প্রীতে,
কৈলা বধূ হেন বেশ।
দুঃশাসন দোষে, কৌরব বিনাশে,
মুক্ত কৈলা প্রায় কেশ।।
ধন্য তব ক্ষমা, ক্ষিতি নহে সমা,
দগ্ধ না করিলা ক্রোধে।
ধর্ম্ম সেবী সব, সকলি সম্ভব,
তেঁই কৈলা উপরোধে।।
না করহ মান, না ভাবহ আন,
ধাতা নারে খণ্ডিবারে।
পাল সত্য ধর্ম্ম, কর সাধুকর্ম্ম,
ধর্ম্ম রাখে ধার্ম্মিকেরে।।
তুমি সত্য জিতা, সতী পতিব্রতা,
আমি কি করাব শিক্ষা।
সহ স্বামিগণ, যাইতেছে বন,
আমি মাগি এক ভিক্ষা।।
কনিষ্ঠ নন্দন, আমার জীবন,
তুমি জান ভালমতে।
সহজে বালক, বনে মহাদুঃখ,
সদা দেখিবা স্নেহেতে।।
সুকুমার দেহ, প্রাণাধিক স্নেহ,
আপনি করিবা তুমি।
কুন্তী ইহা বলি, যেমন বাতুলী,
মূর্চ্ছিতা পড়িলা ভূমি।।
বিচিত্র স্ঙ্গীত, শ্রবণে অমৃত,
পাণ্ডবের বনবাস।
কাশীদাস কহে, পূর্ব্বপাপ দহে,
পুরাণে কহিল ব্যাস।।
৫৫. যুধিষ্ঠিরাদির বন গমন ও ধৃতরাষ্ট্রের প্রশ্ন
শাশুড়ীর দুঃখ দেখি দ্রৌপদী কাতর।
সচেতন করি কহে, যুড়ি দুই কর।।
উঠ উঠ মহাদেবি, না বাড়াও শোক।
কর্ম্ম করি, শোচনা না করে জ্ঞানী লোক।।
আজ্ঞা কর, বনে যাব সহ স্বামিগণ।
যে আজ্ঞা করিবে তুমি, করিব পালন।।
এত বলি স্বামী সহ চলে বনবাস।
তপ্ত অশ্রুজল বহে, মুক্ত কেশপাশ।।
পাছু গোড়াইয়া যায় ভোজের নন্দিনী।
পুত্রগণ দেখি দেবী বুকে হানে পাণি।।
হেঁটমুখে দাণ্ডাইল পঞ্চ সহোদর।
চতুর্দ্দিকে হাসে যত কৌরব বর্ব্বর।।
রোদন করয়ে যত সুহৃদ সুজন।
পঞ্চ ভাই বিবর্জ্জিত বস্ত্র-আভরণ।।
দেখিয়া পড়িল শোকসাগর অগাধে।
অশ্রুজলে ভাসে মাতা কহে গদগদে।।
নিষ্পাপ নির্দ্দোষ সদাচার যে উদার।
তার হেন দেখি বিধি! এ কোন্ বিচার।।
ইহা সবাকার কিছু না দেখি অধর্ম্ম।
হেন বুঝি এই পাপ মম গর্ভে জন্ম।।
অভাগিনী পাপী আমি আজন্ম দুঃখিনী।
মম দোষে এত দুঃখ, মনে অনুমানি।।
তেজে বীর্য্যে বুদ্ধে ধর্ম্মে কেহ নহে ন্যূন।
ত্রিজগৎ-বিখ্যাত যে মম পুত্রগণ।।
হীন বীর্য্যবন্ত বৈরী বেড়ি চারিপাশে।
রাজ্য ধন লইয়া পাঠায় বনবাসে।।
পূর্ব্বে যদি জানিতাম এ সব বারতা।
শতশৃঙ্গ হইতে কি আসিতাম হেথা।।
বড় ভাগ্যবান পাণ্ডু স্বর্গবাসে গেল।
পুত্রদেব এত দুঃখ চক্ষে না দেখিল।।
সঙ্গে গেল ভাগ্যবতী মদ্রের নন্দিনী।
আমি না গেলাম সঙ্গে অধম পাপিনী।।
তাহার সদৃশ তপ আমি না করিনু।
পাপ হেতু কষ্ট আমি ভুঞ্জিতে রহিনু।।
লোভেতে রহিনু পুত্রগণেরে পালিতে।
তেঁই হৈল পুত্রগণের এ দুঃখ দেখিতে।।
হে পুত্র! আমারে ছাড়ি না যাহ কাননে।
কৃষ্ণা তুমি আমা ছাড়ি বঞ্চিবা কেমনে।।
বিধি মোরে বান্ধিলা এ দুঃখের নিগড়ে।
সেই হেতু পাপ আয়ু আমারে না ছাড়ে।।
হায় পাণ্ডু মহারাজ ছাড়িলা আমারে।
অনাথ করিয়া সাধু-সুপুত্রগণেরে।।
ওরে পুত্র সহদেব ফিরে চাহ মোরে।
কেমনে আমার মায়া ছাড়িলা অন্তরে।।
তিলেক না বাঁচি তোমা না দেখি নয়নে।
কেমনে রহিবে প্রাণ তোমার বিহনে।।
ভাই সব যদি সত্য না পারে ছাড়িতে।
সবে যাক্ তুমি রহ আমার সহিতে।।
হেনমতে কুন্তীদেবী করেন রোদন।
প্রবোধিয়া প্রণমিয়া যায় পঞ্চ জন।।
প্রবোধ না মানে কুন্তী, যায় দৌড়াইয়া।
বিদুর কহেন তাঁরে বহু বুঝাইয়া।।
ধরিয়া লইয়া গেল আপনার ঘরে।
কুন্তী সহ কান্দে যত নারী অন্তঃপুরে।।
নগরের লোক যত করয়ে ক্রন্দন।
ঘরে ঘরে কান্দে যত কুলবধূগণ।।
বাল বৃদ্ধ যুবা কান্দে, শিশুগণ পিছু।
ক্রন্দনের শব্দ বিনা নাহি শুনি কিছু।।
নগরেতে মহাশব্দ, ক্রন্দনের রোল।
প্রলয়কালেতে যেন সাগর কল্লোল।।
শুনিয়া হইল ব্যগ্র অন্ধ নৃপমণি।
শীঘ্রগতি বিদুরের ডাকাইল আনি।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, শুন মন্ত্রী-চূড়ামণি।
নগরেতে মহাশব্দ, ক্রন্দনের ধ্বনি।।
হেন বুঝি কান্দে সবে পাণ্ডব কারণ।
কহ শুনি, কিরূপেতে যায় তারা বন।।
ক্ষত্তা বলে, যুধিষ্ঠির যায় হেঁটমুখে।
সবিষাদ চিত্তেতে বসনে মুখ ঢাকে।।
দুই বাহু বিস্তারিয়া যায় বৃকোদর।
অর্জ্জুনের অশ্রুজল বহে নিরন্তর।।
নকুল যাইছে ছাই সর্ব্বাঙ্গ মাখিয়া।
সহদেব যায় মুখে কর আচ্ছাদিয়া।।
দ্রুপদ-নন্দিনী যায় সবার পশ্চাতে।
আলুলিত কেশভার কান্দিতে কান্দিতে।।
ধৌম্য পুরোহিত সঙ্গে করে বেদধ্বনি।
বিষাদিত চিত্ত অতি কুশমুষ্টি পাণি।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, কহ ইহার কারণ।
এরূপে পাণ্ডব কেন যাইতেছে বন।।
বিদুর বলেন, রাজা কহি, দেহ মন।
কপটে সর্ব্বস্ব নিল তব পুত্রগণ।।
পাণ্ডব প্রধান তবু না হয় ক্রোধিত।
যুধিষ্ঠির তব পুত্রগণে সদা প্রীত।।
কদাচিৎ ভস্ম যদি হয় নেত্রানলে।
তেঁই কৈল হেঁটমুখ ঢাকিয়া অঞ্চলে।।
ভীম বলে, মম সম নাহিক বলিষ্ঠ।
সংসারেতে যত বীর সকলের শ্রেষ্ঠ।।
ইহার উচিত শাস্তি করিব আসিয়া।
এত বলি যায় বীর ভুজ প্রসারিয়া।।
অর্জ্জুনের অশ্রুজল বহে অনিবার।
সেই মত বরষিবে অস্ত্র তীক্ষ্মধার।।
প্রত্যক্ষ ভবিষ্য ভূত সহদেব জানে।
বংশ-নাশ জানি হস্ত দিয়াছে বদনে।।
এই মত ভস্ম আমি করিব বৈরীরে।
সে হেতু নকুল ভস্ম মাখিল শরীরে।।
যাজ্ঞসেনী দেবী যায় করিয়া রোদন।
এই মত কান্দিবেক শত্রু-নারীগণ।।
কুশ হস্তে লয়ে যায় ধৌম্য তপোধন।
সঙ্কল্প করিল কুরু-শ্রাদ্ধের কারণ।।
নগরের লোক সব করিছে রোদন।
আমা সবাকার প্রভু প্রভু যাইতেছে বন।।
সঘনে কম্পিত ভূমি, দেখ নৃপমণি।
বিনা মেঘে গগনে শুনি যে ঘোর ধ্বনি।।
সহসা হলেন ক্রুদ্ধ দেব পুরন্দর।
ঘন মেঘে লুকাইল দেব দিবাকার।।
দৃষ্টি নাহিক চলে গভীর অন্ধকার।
উল্কাপাত বজ্রাঘাত শুনি নিরন্তর।।
অকস্মাৎ ভাঙ্গি পড়ে দেউল প্রাচীর।
ক্ষণে ক্ষণে রাজা কম্পি উঠয়ে শরীর।।
এই সব চিহ্ন রাজা কৌরব বিনাশে।
কেবল হইল রাজা তব কর্ম্মদোষে।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাশী কহে, শুনিলে তরয়ে ভব বারি।।
৫৬. কুরু-সভায় নারদ মুনির আগমন
হেনকালে উপনীত ব্রহ্মার তনয়।
সভামধ্যে কহেন নারদ মহাশয়।।
আজি হৈতে চতুর্দ্দশ বৎসর সময়।
শ্রীকৃষ্ণ-সহায়ে করিবেক কুরু-ক্ষয়।।
সবাই মরিবে দুর্য্যোধন-অপরাধে।
নিঃক্ষত্রা হইবে ক্ষিতি ভীমার্জ্জুন-ক্রোধে।।
এত বলি মুনিবর হেন অন্তর্দ্ধান।
শুনি কর্ণ দুর্য্যোধন হৈল কম্পমান।।
নারদের কথা শুনি হইল অস্থির।
অকূল সমুদ্রে যেন ডুবিল শরীর।।
উপায় না দেখি ইথে, কি হইতে গতি।
বিচারি শরণ নিল দ্রোণ মহামতি।।
পাণ্ডবের ভয়ে প্রভু কম্পয়ে শরীর।
আপনি অভয় দিলে হয় মন স্থির।।
দ্রোণ বলে, পাণ্ডুপুত্র অবধ্য আমার।
দেব হৈতে জাত পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।।
পাণ্ডব দেবতা, আমি হই যে ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণের পূজ্য দেব জানে সর্ব্বজন।।
তথাপি করিব আমি যতেক পারিব।
তোমা সবাকারে আমি ত্যাগ না করিব।।
দুর্জ্জয় পাণ্ডব সব যাইতেছে বন।
চতুর্দ্দশ বৎসরে করিবে আগমন।।
ক্রোধে আসিবেন তাঁরা সবার উপর।
নিশ্চয় দেখি যে ঘোর হইবে সমর।।
শরণ পালন হেতু তোমা সবাকার।
নিশ্চয় কহি যে ভদ্র নাহিক আমার।।
যতেক করিলে সর্ব্ব আমার কারণ।
নিকট হইল দেখি আমার মরণ।।
রাজযজ্ঞে ধৃষ্টদ্যুন্ন হয়েছে উৎপত্তি।
আমার মরণ হেতু, বিখ্যাত সে ক্ষিতি।।
সেই দিন হৈতে ভয় হয়েছে আমায়।
দ্বন্দ্ব হৈলে পাণ্ডবের হইবে মরণ।
বুঝি যাহে শ্রেয়ঃ হয় তাহে দেহ মন।।
যজ্ঞ দান ব্রত সব করহ ত্বরিত।
ধর্ম্ম বিনা সখা নাহি পরকাল-হিত।।
এ সুখ সম্পদ্ যেন তাল-ছায়াবৎ।
ইহা জানি শীঘ্র সবে ধর ধর্ম্মপথ।।
তোমা সবাকার মৃত্যু হৈল সেই কালে।
সভায় যখন কৃষ্ণা ধরিয়া আনিলে।।
পাঞ্চাল-নন্দিনী কৃষ্ণা জন্ম লক্ষ্মী-অংশ।
সদা যাঁরে সখীরূপে রাখে হৃষীকেশ।।
তাঁরে কষ্ট কৃষ্ণ নাহি দিবে কদাচিত।
না ক্ষমিবে পাণ্ডব, দ্রৌপদী প্রবোধিত।।
ত্রয়োদশ বৎসরান্তে রক্ষা নাহি আর।
ভীমার্জ্জুন হাতে হবে সবার সংহার।।
সে কারণে তার সহ কলহ না রুচে।
এখনি করহ প্রীতি, যদি প্রাণ বাঁচে।।
এত শুনি ধৃতরাষ্ট্র বিদুরে কহিল।
মোর মনে নাহি লয় বিপদ ঘুচিল।।
এইক্ষণে শীঘ্রগতি করহ গমন।
ফিরায়ে আনহ শীঘ্র পাণ্ডু-পুত্রগণ।।
যদি তারা সত্যভঙ্গ করিবারে নারে।
ভাল বেশ করি যাক অরণ্য ভিতরে।।
বস্ত্র-আভরণ পরি রথ-আরোহণে।
সংহতি লইয়া যাক্ দাস-দাসীগণে।।
সঞ্জয় এতেক শুনি বলিল তখন।
সর্ব্ব পৃথ্বী পেলে রাজা কি হেতু শোচন।।
ধৃতরাষ্ট বলে, মম চিত্ত না নহে স্থির।
বহুমত করি, ধৈর্য্য না ধরে শরীর।।
সঞ্জয় বলিল, শান্ত এখন নহিবে।
যখন এ সব রাজা নির্ম্মূল হইবে।।
তখন হইবে শান্ত, শুনহ রাজন।
কত মত তোমারে না বুঝানু তখন।।
ভীষ্ম দ্রোণ বিদুরাদি কহিল বিস্তর।
তবু পাশা খেলাইলে অনর্থের ঘর।।
হেন বিপর্য্যর কভু নাহি শুনি কাণে।
কুলবধূ-চুলে ধরি সভামধ্যে আনে।।
তখন কি আপনি সভায় নাহি ছিলে।
আপনার বংশ তুমি আপনি নাশিলে।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, কিছু মম সাধ্য নয়।
দৈবে যাহা করে, তাহা শান্ত কিসে হয়।।
যখন যেমন হয়, বিধি তাহা করে।
কুবুদ্ধি কুপথী কুরি দুঃখ দেয় তারে।।
অধর্ম্ম যে কর্ম্ম, তাহা বুঝে যেন ধর্ম্ম।
অর্থ করি বুঝে নর অনর্থের কর্ম্ম।।
কর্ম্মহীনে কাল যায় বুঝিবারে নারে।
কুবুদ্ধি করিয়া নরে কালবুদ্ধি ধরে।।
সেইমত কুবুদ্ধি আমারে দিল কালে।
আগু পাছু বিচার না করিলাম হেলে।।
অযোনিসম্ভবা জন্ম কমলা-অংশেতে।
তারে হেন অপমান সভার মধ্যেতে।।
সাধুপুত্র পাণ্ডবের দিল বনবাস।
এই চারি দুষ্ট হৈতে হৈল সর্ব্বনাশ।।
অশক্ত না হয় বলে পঞ্চ সহোদর।
মুহূর্ত্তেকে জিনিবারে পারে চরাচর।।
ধর্ম্ম পাশে বন্দী হৈয়া মোরে বড় মানে।
সে কারণে না মারিল এই দুষ্টগণে।।
ভৃত্যরূপে বসি ছিল সভার ভিতর।
এই দুষ্টগণ কত করে কটূত্তর।।
রজঃস্বলা দ্রৌপদী, পিন্ধন একবাসে।
সভামধ্যে আনিলেক ধরি তার কেশে।।
যদি ক্রোধ করি কৃষ্ণা চাহিতে নয়নে।
তখনই হৈত ভস্ম এই দুষ্টগণে।।
সে ক্ষমিল, ক্ষমিবেন নাহি হৃষীকেশ।
নিশ্চয় সঞ্জয় মোর বংশ হৈল শেষ।।
গান্ধারী সহিত মোর পুত্রবধূগণ।
দ্রৌপদীর দুঃখ শুনি করিল ক্রন্দন।।
অগ্নিহোত্র গৃহে ছিল যতেক ব্রাহ্মণ।
কৃষ্ণার ধরিল কেশ করিয়া শ্রবণ।।
ক্রোধ করি লৌহদণ্ড অগ্নিতে ফেলিল।
ধৃতরাষ্ট্র সর্ব্বনাশ হউক বলিল।।
ঘরে ঘরে আচম্বিতে উঠিল আগুনি।
চতুর্দ্দিকে শব্দ কৈল শকুনি গৃধিনী।।
হাহাকার শব্দ কৈল যত বৃদ্ধগণ।
বিদুর কহিল মোরে সব বিবরণ।।
ধিক্ ধিক্ দুর্য্যোধনে, ধিক্ শকুনিরে।
কপট পাশায় দুঃখ দিল পাণ্ডবেরে।।
না সহিবে পাণ্ডব এ সব অপমান।
পাপবুদ্ধে বংশ মোর হৈবে অবসান।।
কৃষ্ণ যার অনুকূল, কিসের আপদ।
ভীমার্জ্জুন মাদ্রীসুত কৈকেয় দ্রুপদ।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সাত্যকি শিখণ্ডী আদি করি।
থাকুক অন্যেয় কার্য্য ইন্দ্র যারে ডরি।।
এ সব সহিত কেবা যুঝিবে সমরে।
কে আছে সহায় মোর, নিবেদিব কারে।।
একা পার্থ স্বয়ন্বরে নৃপগণে জিনে।
একা ভীম হিড়েম্বে বধিল অস্ত্র বিনে।।
একা পার্থ ইন্দ্রে জিনি দহিল খাণ্ডবে।
এ হেন দুর্জ্জয় দুর্ব্বার বীর পাণ্ডবে।।
কেবা আছে বীর যুঝে সম্মুখ সমরে।
কে আছে সহায় মোর নিবারিবে তারে।।
চিত্তেতে বুঝিনু সব নিয়তির লীলা।
কুরুকুল ধ্বংস হেতু এই দ্যূত খেলা।।
অনুক্ষণ অন্ধরাজ ভাবনে অন্তরে।
এ শোক সাগরে দুষ্ট ডুবাইল মোরে।।
দ্রৌপদীরে বর দিয়া করিনু সন্তোষ।
যুধিষ্টিরে প্রবোধিয়া ক্ষমাইনু দোষ।।
পুনরপি পাশা কৈলা আপনার বধে।
বশ নহে, দৈববশ, আনিল বিপদে।।
পাণ্ডবের হস্তে আর নাহিক নিস্তার।
নিজ কর্ম্মদোষে তোরা হইলি সংহার।।
জরাসন্ধ বধ ভীম কৈল অবহেলে।
কুরুবংশ রক্ষ নাই, ভীম ফিরে এলে।।
এইরূপে ধৃতরাষ্ট্র করে মহাশোকে।
সভা ভঙ্গে নিজস্থানে যায় সর্ব্বলোক।।
বনে দিল অন্ধরাজ ন্যায়ান্ধ হইয়া।
অনুতাপ করে শেষে বিহ্বল হইয়া।।
বনবাসে চলিলা দ্রৌপদী পঞ্চ জনা।
কাশী কহে, কুরুকুল নাশের সূচনা।।
শ্রীকৃষ্ণ সহায় যাঁহাদের সর্ব্বক্ষণ।
তাঁহাদের দুঃখ নাহি কোথাও কখন।।
যেখানে থাকুর কৃষ্ণা পঞ্চ সহোদর।
শ্রীকৃষ্ণের দৃষ্টি থাকে তাঁদের উপর।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাহার শকতি তাহা বর্ণিবারে পারি।।
যাহা আছে কাব্য সুধা বিশ্বের মাঝারে।
সকলি আছে মহাভারতের ভাণ্ডারে।।
ইথে যাহা নাই, তাহা নাই এ ভুবনে।
অপূর্ব্ব গাথা এই শাস্ত্রবেদ মন্থনে।।
মহাঋষি মহাযোগে মথি বেদার্ণব।
জগৎ জনের হিত করিতে সম্ভব।।
ব্যাসদেব রচিলেন ভারত চন্দ্রিমা।
ত্রৈলোক্যে নাহিক যার সমান মহিমা।।
সে জন সাত্ত্বিক দান করে বহুশ্রমে।
বেদ বিদ্যা বিতরণ করে পুণ্যক্রমে।।
তাহার অধিক ফল ভারত শ্রবণে।
মহাভারতের তুল্য নাহি ত্রিভুবনে।।
কাশীরাম দাস কহে, শুন সর্ব্বজন।
সভাপর্ব্ব সমাপ্ত, পাণ্ডব গেল বন।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র