সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-২

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-২
এ উপপুরাণেই আছে-
পক্ষ্যাদিবলিজাতীয়ৈস্তথা নানাবিধৈর্মৃগৈঃ।
পূজয়েচ্চ জগদ্ধাত্রীং মাংশশোণিতকর্দ্দমৈঃ।।৫০।৬০।
অর্থঃ নিখিল জগতে ধাত্রী মহামায়ার নিকট এত পরিমাণে বলিদান করবে, যাতে মাংশ শোণিতের কর্দম হয়। (কালিকা পুরাণ ৬০ অধ্যায়)। এ শ্লোকগুলো পড়লে রক্তের হোলি খেলার মত মনে হয়। মনে হয় যেন সনাতন ধর্মের মানুষ প্রতি বছর হাজার পশু বলি দিয়ে রুধির উৎসব করে। কিন্ত বাস্তব ভিন্ন কথা বলে, দূর্গাপূজায় বলি কচিৎ দেয়া হয় (যারা মানত করে)। মাকে ফুল, বিল্বপত্র দিয়েই আমার তুষ্ট করি।
কালিকা উপপুরাণে আরও আছে-
কুষ্মান্ডমিক্ষুদন্ডঞ্চ মদ্যমাসবমেব চ।
এতে বলিমসাঃ প্রোক্তাস্তৃপ্তৌ ছাগসমাঃ সদা।।২৫।৬৭।
অর্থঃ কুষ্মান্ড ও ইক্ষুদন্ড, মদ্য ও আসব ইহাদেরও বলি এবং কৃষ্ণ ছাগল তুল্য তৃপ্তিকারক।
অতএব ছাগ বলির স্থলে আমরা কুষ্মান্ড বা ইক্ষু বলি দিতে পারি না?

মনু বলেছেন-
যজ্ঞার্থং পশবঃ সৃষ্টাঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা।
যজ্ঞোহস্য ভূত্যৈ সর্বস্য তম্মাদ যজ্ঞে বধোহবধঃ।। (মনু ৫।৩৯)
অর্থঃ যজ্ঞসিদ্ধির জন্য প্রজাপতি স্বয়ংই পশু সমুদয় সৃষ্টি করেছেন। অতএব যজ্ঞে যে পশুবধ, তা বধ নয়, কেন না তাকে বধ করায় পাপ নেই।
মনু এখানে যজ্ঞে পশু বধ হিংসা নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন।

ওষধ্যঃ পশবো বৃক্ষাস্তির্য্যঞ্চ পক্ষিণস্তথা।
যজ্ঞার্থং নিধনং প্রাপ্তাঃ প্রাপ্নুবন্ত্যুচ্ছ্রিতীঃ পুনঃ।। (মনু ৫। ৪০)
অর্থঃ ধান্যযবাদি ওষধি সকল, পশু সকল, বৃক্ষ সকল, তির্য্যক জাতি পক্ষী সকল, যজ্ঞের জন্য নিধন প্রাপ্ত হলে পুনর্বার উচ্চযোনি প্রাপ্ত হয়।
এখানে মনু ঔষধি (যে গাছ একবার ফল দিয়ে মারা যায়) উদ্ভিদকে যজ্ঞের জন্য বলির কথা বলেছেন। আমরা তো ইচ্ছে করলেই পশু বলি ব্যতিত ঐ সকল উদ্ভিদকে যজ্ঞে বলির উপকরণ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারি না?
আবার-
মধুপর্কে চ যজ্ঞে চ পিতৃদৈবতকর্মণি।
অত্রৈব পশবো হিংস্যা নান্যত্র্যেত্যব্রবীন্মনুঃ।।(মনু ৫।৪১।)
এষ্বর্থেষু পশুন্ হিংস্যা বেদতত্ত্বার্থবিদ্দিজঃ।
আত্মানঞ্চ পশুঞ্চৈব গময়ত্যুত্তমাং গতিম্।। (মনু ৫।৪২)

অর্থঃ মধুপর্কাদির জন্য, জ্যোতিষ্টোমাদি যজ্ঞে, পিতৃকার্যে, দৈবকার্যে এ সকল কাজে পশু হনন করবে অন্য কোন কর্মে পশু বিনাশ করবে না। বেদার্থতত্ত্বাজ্ঞ দ্বিজগণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য) মধুপর্কাদি বিধিবিশেষে পশু বিনাশ করে আপনার ও পশুর উভয়েরই সদগতি সম্পাদন করেন।

ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ (প্রকৃতি খন্ড ৬৪) বলির ফল সম্পর্কে বলা হয়েছে-
বলিদানবিধানঞ্চ শ্রুয়তাং মুনিসত্তম।
মায়াতিং মহিষং ছাগং দদ্যান্মেষাদিকং শুভং।।৯১।
সহস্রবর্ষং সুপ্রীতা দূর্গামায়াতি দানতঃ।
মহিষেণ বর্ষশতং দশবর্ষঞ্চ ছাগলাৎ।।৯২।
বর্ষং মেষেণ কুষ্মান্ডৈঃ পক্ষিভির্হরিণৈস্তথা।
দশবর্ষং কৃষ্ণসারৈঃ সহস্রাব্দঞ্চ গন্ডকৈঃ।।৯৩।
কৃত্রিমৈঃ পিষ্টনির্মাণৈঃ ষন্মাসং পশুভিস্তথা।
মাসং সুকাসাদি ফলৈ রক্ষতৈরিতি নারদঃ।।৯৪।

অর্থঃ দূর্গাদেবী নর-বলিতে সহস্র বৎসর প্রীতা হয়ে থাকেন; মহিষে শতবর্ষ, ছাগলে দশবর্ষ, মেষে কুষ্মান্ডে একবর্ষ, পক্ষী বা হরিণে তথৈবচ, কৃষ্ণসারে দশ বৎসর, গন্ডারে সহস্র বৎসর। আর কৃত্রিম পিষ্টক-নির্মিত পশুতে ছয়মাস এবং সুকাসাদি ফলে আতপতন্ডুলে এক মাসবধি তৃপ্তিলাভ করে থাকেন।

দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পশুতে, জীবে ও উদ্ভিদাদির রকমভেদে মা দূর্গা সময়ব্যাপী তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। আবার দেখা যায় ছাগলের জায়গায় ইক্ষু ও কুমড়া বলি দেয়া চলে এবং তা ছাগ তুল্য তৃপ্তিকারক।
(চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র