সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-৪

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-৪
পক্ষান্তরে
মনু বলেছেন-
যোহহিংসকানি ভূতানি হিনস্ত্যাত্মসুখেচ্ছয়া।
স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব ন ক্কচিত সুখমেধতে।। (মনু ৫।৪৫)

সংরক্ষণার্থং জন্তুনাং রাত্রাবহনি বা সদা।
শরীরস্যাত্যয়ে চৈব সমীক্ষ্য বসুধাঞ্চরেৎ।। (মনু ৬।৬৮।
অর্থঃ স্বীয় শরীরে কষ্ট হলেও পিপীলিকাদি ক্ষুদ্র কীটের পাছে প্রাণ বিনাশ হয়, এই ভয়ে দিবা ও রাত্রিতে পথ নিরীক্ষণ করে যাতায়াত করবে।

নিরীহ পশু হত্যা করলে জীবিত বা মৃত্যের পর পরিনতির কথা বলছেন। এমন কি একটি ক্ষুদ্র পিপীলিকাও হত্যা না করার জন্যে মনু মানুষকে সাবধান করছেন। আবার দেখা যাচ্ছে ৫।৩৯ নং শ্লোকে বলছেন যজ্ঞের জন্যই তো পশুর সৃষ্টি, যজ্ঞে পশু বধ অবধ। এখানে শাস্ত্রের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। দূর্গাপূজায় পশু বলির বিধি কোন্ কোন্ শাস্ত্রে আছে, কিন্ত পশু বলি না দেয়ার বিধানও অনেক শাস্ত্রে আছে।
ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে আছে-
জীবহত্যাবিহীনা বা বরা পূজা চ বৈষ্ণবী।
বৈষ্ণবা যান্তি গোলোকং বৈষ্ণবীবরদানতঃ।।
মাহেশ্বরী রাজসী চ বলিদানসমন্বিতা।
শাক্তাদয়ো রাজসাশ্চ কৈলাসং যান্তি তে তরা।। (প্রকৃতি ৬৪ অধ্যায়)
অর্থঃ জীব হত্যাবিহীন যে পূজা সে পূজাই শ্রেষ্ঠ, এ পূজার ফলে বৈষ্ণবেরা গোলোকে গমন করে থাকেন। বলিদানযুক্ত যে পূজা তা রাজসী, তার ফলে শাক্তগণ কৈলাসধামে গমন করেন।

বিবেচ্য বিষয় এই যে, গোলক বৃন্দাবন ধাম শ্রেষ্ঠ না কৈলাসধাম শ্রেষ্ঠ। নির্ণয় করার দায়িত্ব ভক্তবৃন্দের উপর ন্যস্ত করলাম।
আসুন পদ্মপুরাণে-
শুভে চৈবাশ্বিনে মাসি মহামায়ঞ্চ পূজয়েৎ।।
সৌবর্ণীং রাজতীং বাপি বিষ্ণুরূপাং বলিং বিনা।
হিংসাদ্বেষৌ ন কর্তব্যৌ ধর্মত্মা বিষ্ণুপূজকঃ।।
অর্থঃ শুভ আশ্বিন মাসে সুবর্ণময়ী বা রজতময়ী বিষ্ণুস্বরূপা দেবী মহামায়াকে বলিদান ব্যতীত পূজা করবে; ঐ সময়ে ধর্মত্মা বিষ্ণু পূজকের দ্বেষ হিংসা পরিত্যাগ করা কর্তব্য।

এখানেও বলিদান ব্যতীত সাত্ত্বিকভাবে পূজা করার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যপুরাণে তিন ধরণের পূজার কথা উল্লেখ আছে- নিরামিষ উপকরণে পূজা, সামিষ উপকরণে পূজা এবং সুরামাংসাদি উপহারে পূজা। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক কর্মের ফল বিষয়ে শ্রীমদ্ভগবগীতায় বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
তারমধ্যে একটি শ্লোক-
সত্ত্বাৎ সঞ্জায়তে জ্ঞানঃ রজসো লোভ এব চ।
প্রমাদমোহৌ তমসো ভবতোহজ্ঞানমেবচ।। ১৪।১৭
অর্থঃ সত্ত্ব হতে জ্ঞান, রজ হতে লোভ ও তম হতে প্রমাদ, মোহ ও অজ্ঞান সমুত্থিত হয়ে থাকে।

ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে আছে-
সাত্ত্বিকী বৈষ্ণবানাঞ্চ শাক্তাদীনাঞ্চ রাজসী। অর্থাৎ বৈষ্ণবদের সাত্ত্বিকী পূজাই করতে হয় আর শাক্তদের রাজসী পূজা করতে হয়। শ্রাদ্ধ-বিবেক-টীকায় বৃহন্মনুবচন বলে উদ্ধৃত আছে-
হিংসাচৈব ন কর্তব্যা বৈধহিংসা তু রাজসী।
ব্রাহ্মণৈঃ সা ন কর্তব্যা যতন্তে সাত্ত্বিকা মতাঃ।।
অর্থঃ রাজসী পূজায় যে বলিদানের ব্যবস্থা আছে, সে হিংসা বৈধহিংসা বলে পরিচিত; কিন্তু সে হিংসাও উচিৎ নয়; ব্রাহ্মণের তো তা একেবারেই কর্তব্য নয়, যেহেতু ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিতে হলে সাত্ত্বিক মতাবলম্বী হওয়া চাইই।

এ তিনটির মধ্যে কোনটি পদ্বতিটি শ্রেষ্ঠ? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে নির্ণয় করুন।
(চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র