ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় যদুবংশ ধ্বংস

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামসহ বন্ধুগণ মিলে দুষ্ট শক্তিকে নাশ করে পৃথিবীর ভার হরণ করেছিলেন (যেমন- পূতনা, বকাসুর, অঘাসুর, তৃণাবর্ত ও কংসকে বধ করেছিলেন)। পরে শ্রীকৃষ্ণ চিন্তা করলেন ভূভার হরণ হয়েছে কিন্ত বস্তুত তা সম্পূর্ণরূপে হয়নি। তার নিজ যদুবংশ বিদ্যমান আছে। তারা পৃথিবীতে ধনসম্পপ ও ঐশ্বর্যশালী বলে গর্বিত হবে। ফলে তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়েছে। এ বংশের দ্বারা পৃথিবীর মঙ্গল হবে না। মনুষ্যগণ নিগৃহীত হবে। তাই তিনি নিজের বংশের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে বিনাশ সাধন করার উপায় অবলম্বন করলেন যেমন বৃক্ষে বৃক্ষে ঘর্ষণে আগুন উপৎপন্ন হয়ে উভয়ই ধবংসপ্রাপ্ত হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে এ পৃথিবীতে আর্বিভূত হয়ে জগতের মঙ্গলের জন্য সকল আচরণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি দেখলেন পৃথিবীর ভারস্বরূপ তার বংশই অবিশিষ্ট আছে তখন তিনি নিজ বংশ বিনাশ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। বিশ্বামিত্র, অসিত, কণ্ব, দুর্বাসা, ভৃগু, অঙ্গিরা, কশ্যপ, বামদেব, অত্রি, বশিষ্ঠ ও নারদ ঋষিগণ দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ যদুরাজ গৃহে বাসকালীন পূণ্যপ্রাপক, অতি সুখাত্মক এবং উহা কীর্তনকারী জগতের কলিমলনাশক কর্ম সকল সম্পন্ন করিয়ে বিদায় দিলেন।
এদিকে পথিমধ্যে ক্রীড়ারত উচ্ছৃশঙ্খল যাদবগণ মুনিগণকে চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলেন। তারা কৌতুহলচ্ছলে জাম্ববতীনন্দন শাম্বকে স্ত্রী সাজিয়ে (গর্ভবর্তীর আকার দিয়ে) বললেন, ! হে বিপ্রগণ! আপনারা ত্রিকালযজ্ঞ। আপনারা সবই জানেন। লজ্জাবতী এ রমণী জানতে চাচ্ছেন তিনি কি পুত্র বা কন্য সন্তাব প্রসব করবেন? মুনিগণ তাদের ছলনা অবগত হয়ে ক্রুদ্ধান্বিত হলেন এবং বললেন, হে মন্দবুদ্ধি বালকগণ! তিনি তোমারদের কুলনাশক এক মুষল প্রসব করবেন।” তখন কুমারগণ তার উদরের বস্ত্র উন্মোচন করে দেখলেন লৌহময় এক মুষল দেখতে পেলেন। কুমারগণ কৃতকর্মের জন্য ভীত সন্ত্রস্ত হলেন। তারপর সে মুষল নিয়ে গৃহে প্রবেশ করলেন। পরদিন উদ্বিগ্নচিত্তে কুমারগণ মুষল নিয়ে রাজসভায় গমন করলেন এবং যাদবগণের সম্মুখে রাজা উগ্রসেনের কাছে যা ঘটেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন। পরে দ্বারকাবাসী প্রজাগণ অলঙ্ঘিত বিপ্রশাপ শ্রবণ করে এবং মুষল দর্শন করে হতবাক হয়েছিলেন। তখন যদুরাজ উগ্রসেন সে মুষল চূর্ণ করিয়ে অবশিষ্ট লৌহখন্ড সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। সে লৌহখন্ড সমুদ্রের এক মৎস্য ভক্ষণ করল। জেলেরা সে সমুদ্রে মৎস্য জাল ফেলে অন্যান্য মৎস্যের সাথে এ মৎস্যটিও ধরা পড়ল। জেলেরা জরা নামে এক ব্যাধের কাছে তা বিক্রয় করল। জরা সে মৎস্যের উদর হতে প্রাপ্ত সে লৌহখন্ড দিয়ে বাণ তৈরি করল। মুষল চূর্ণ সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে আঘাতে তীর সংলগ্ন ভূমিতে জমা হয়ে এরকা নাম তৃণ বৃক্ষ উৎপন্ন হলো। কালরূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্বেই সবকিছু অবগত হয়েছিলেন। তিনি এ ব্রহ্মশাপ নিবারণে অবশ্যই সক্ষম ছিলেন। কিন্তু তিনি ব্রহ্মশাপ নিবারণে কোন প্রতিকার না করে তার নিজ যদুবংশ ধ্বংস করার ইচ্ছা পোষণ করলেন।
Previous
Next Post »

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র