ধৃষ্টদ্যুম্ন


ধৃষ্টদ্যুম্ন পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের পুত্র। দ্রোণের কাছে অপমান ও নিগৃহীত হওয়ার পর তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দ্রুপদরাজ সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতেন কিভাবে দ্রোণাচার্যকে হত্যা করা যায়। রাজা হয়ে আহারে রুচি নেই, ঘুমে শান্তি নেই। শুধু একচিন্তা দ্রোণচার্যকে হত্যা করতে হবে। রাজা প্রায়শই গঙ্গার তীরে ভ্রমণ করতেন। একদিন ভ্রমণ করতে করতে সেখানে উপযাজ নামক এক ব্রাহ্মণের সন্ধান পান, যিনি বেদজ্ঞ। দ্রুপদরাজ তাকে যথাযথভাবে সম্মানপূর্বক বলেন,“হে ব্রাহ্মণ! ভরদ্বাজ তনয় দ্রোণ নামে খ্যাত, মহারধি ধনুর্ধর, পরশুরাম সম পরাক্রম। দ্রোণের বিনাশের জন্য আপনি যদি দৈবকার্যানুষ্ঠান করে কোন পুত্র উৎপাদন করতে পারেন তবে আমি আপনাকে দশ কোটি গো-দান করব বা আপনি যা পেতে ইচ্ছা করেন তাই আপনাকে দিব।” মহর্ষি ব্রাহ্মণ দ্রুপদরাজের বাক্য শ্রবণ করে বলেলেন,“মনুষ্য বধ ব্রাহ্মণের কার্য নয়, আমি আপনার কার্য স্বীকার করতে পারলাম না।” তখন দ্রুপদরাজ আরও বেশী করে ব্রাহ্মণের সেবাযত্ন ও স্তুতি করতে লাগলেন। ব্রাহ্মণ খুশি হয়ে বললেন,“আমার এক সহোদর নাম যাজ। পরম তপস্বী। বেদজ্ঞ। অরণ্যবাসী। তার সান্নিধ্যে গিয়ে আপনার প্রার্থনা বলুন। তিনি নিশ্চয় আপনার দু:খ দূর করতে পারবে।” দ্রুপদরাজ যথেষ্ট চিন্তাযুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণের উপদেশানুসারে যাজের নিলয়ে আগমন করলেন। ব্রাহ্মণকে দ্রুপদরাজ সবিস্তারে সবকিছূ বললেন। যাজ তার কার্য স্বীকার করল।রাজা ও রাণি উভয়েই ব্রত পালন করলেন। ব্রাহ্মণ যজ্ঞ আরম্ভ করল।  যজ্ঞে আহুতি প্রদান করামাত্রই সহসা হুতাশন মধ্যে হতে দেবকুমার তুল্য সুকুমার এক কুমার উত্থিত হতে লাগল। প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার মত তার বর্ণ উজ্জ্বল, সুন্দর কিরীট দ্বারা তার মস্তক অলংকৃত, ধনুর্বান, বর্ম ও খড়গ তার শরীর আবৃত। বালকটি অতি প্রকান্ড ও দ্যুয়সম্ভূত বলে তার নাম রাখলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। এ হলো ধৃষ্টদ্যূম্নর জন্মকাহিনী।  তারপর এক অপরূপা নারীও যজ্ঞবেদী হতে উত্থিত হলো। শ্যামবর্ণ, পদ্মপলাশের ন্যায় সুশোভন, কেশজাল নীল ও আকুঞ্চিত, ভ্রুদ্বয় সুচারু, তাঁর নীলোৎপলতুল্য সৌরভ একক্রোশ হতে ও অনুভূত হয়। এর নাম রাখলেন কৃষ্ণা। তাই ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর কোন বাল্যকাল নেই। 

পান্ডব ও কৌরবদের সাথে ধৃষ্টদ্যূম্নও দোণাচার্যের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন। দ্রোণাচার্য যদিও জানতেন যে ধৃষ্টদ্যূম্ন তার শত্রু দ্রপদরাজের ছেলে তবুও তিনি পুত্রতুল্যভাবে তাকে অস্ত্র শিক্ষা প্রদান করেন। পান্ডবদের সপ্ত সেনাপতির মধ্যে ধৃষ্টদ্যূম্ন ছিলেন অন্যতম। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠীর আদেশে তিনি “কৌঞ্চারুণ” নাম ব্যুহ রচনা করেছিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন যুদ্ধবিদ্যায় ও ব্যুহ রচনায় অভিজ্ঞ ছিলেন।      

ধর্মক্ষেত্র অর্থাৎ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে দ্বিতীয় দিবসের যুদ্ধ। গুরু-শিষ্যের যুদ্ধ। গুরু দ্রোণাচার্য শিষ্য ধৃষ্টদ্যূম্নর সারথির উপর ও অশ্বের উপর বিভিন্ন ধরনের শর ও ভল্ল প্রয়োগ করতে লাগলেন। ধৃষ্টদ্যূম্নও দ্রোণাচার্যের উপর “নবতি’ বাণ নিক্ষেপ করলেন। তারপর ক্রোধপরায়ণ ধৃষ্টদ্যূম্নকে সংহার করার জন্য অশনির ন্যায়, দ্বিতীয় যমদন্ডের ন্যায় এক বাণ নিক্ষেপ করলে মহাবীর ধৃষ্টদ্যূম্নর ভিতর এক অদ্ভূদ পৌরুষদীপ্ত প্রকাশিত হলো। তিনি পর্বতের মত অবিচল থেকে অবস্থানপূর্বক দ্রোণাচার্যের সে ভয়ংকর বাণ মাঝপথে ধ্বংস করে ভরদ্বাজের উপর শর বৃষ্টি করতে লাগলেন। পাঞ্চাল ও পান্ডব সৈন্যগণ ধৃষ্টদ্যূম্ন’র এমন যুদ্ধ কৌশল দেখে আনন্দধ্বণি দিতে লাগল। ধৃষ্টদ্যূম্ন স্বর্ণ ও বৈদূর্য খচিত মাহবেগশালিনী শক্তি প্রয়োগ করেন,তারপর বাণ বৃষ্টি করতে থাকেন, দ্রোণাচার্য সবই ব্যর্থ করেন। এতে ধৃষ্টদ্যূম্ন ক্রুদ্ধ হয়ে গদা নিক্ষেপ করেন, তাও নিবারণ করেন। স্বর্ণপুঙ্খ সুশাণিত ভল্লসকল ধৃষ্টদ্যূম্ন উপর প্রয়োগ করলে তার বর্ম ভেদ করে তাকে রক্তাক্ত করে। শরাসন গ্রহনপূর্বক পাঁচ বাণ দ্বারা দ্রোণকে আহত করলে তিনিও রক্তাক্ত হন। মেঘ যেমন পর্বতের উপর বারিবর্ষণ করে তেমনি মহাবীর দ্রোণাচার্য ক্রোধান্বিত হয়ে ধৃষ্টদ্যূম্ন’র শরাসন ছেদনপূর্বক তার সারথি ও অশ্বকে সংহার করলে তিনি ছিন্নধন্বা(ভাঙ্গা ধনুক), বিরথ, হতাশ ও সারথিহীন হয়ে পড়লেন। তারপরও ধৃষ্টদ্যূম্ন তার তেজস্বীকতায় শতচন্দ্র সংযুক্ত সুবিশাল চর্ম ও দিব্য খড়গ ধারণ করে দ্রোণের দিকে ধাবিত হলেন। ঐ সময় দ্রোণাচার্য  অস্ত্র প্রয়োগে অভিষজ্ঞতা, ধৈর্য ও অসীম সাহসিকতার সহিত ধৃষ্টদ্যূম্নর বাণ নিবারণ করে তার উপর বাণবৃষ্টি করতে লাগলেন। কিন্তু অসীম সাহসী, মহাবীর ধৃষ্টদ্যূম্ন গুরু দ্রোণাচার্যের সম্খুখে টিকতে পারলেন না। কেবল চর্ম দ্বারা বাণ নিবারণ করতে লাগলেন। তখন ভীমসেন সহসা তথায় উপস্থিত হয়ে দ্রুত দ্রুপদতনয়কে অন্য রথে স্থানান্তর করেন। আর দ্রোণ তখন ধৃষ্টদ্যূম্নকে ত্যাগ করে বিরাট ও দ্রুপদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত হন। 

চতুর্থ দিবসে ধৃষ্টদ্যূম্ন ও মগধরাজ শৈল্যের মধ্যে মুহুর্তমাত্র যুদ্ধ হইলেও তা ছিল খুবই ভয়ংকর। উভয়ের মধ্যেই বাণ, শর ও ভল্ল নিক্ষেপ চালনা করা হচ্ছিল। তবে এ যুদ্ধে মগধরাজ শৈল্যের শরে ধৃষ্টদ্যূম্ন সামান্য আহত হন। 

ষষ্ঠ দিবসের যুদ্ধ। ধৃষ্টদ্যূম্ন ভীমসেনের রথি বিশোকের কাছ থেকে জানতে পারেন যে ভীমসেন কৌরবগণের মহাব্যূহ ভেদ করে সেখানে প্রবেশ করেছেন। তখন ভীমের সুরক্ষার জন্য ধৃষ্টদ্যূম্ন উদ্বিগ্ন ছিলেন কারণ ভীম তার সখা, আত্মীয় ও ভক্ত। তাই তিনি সেখানে গমন করেন। ভীম সেখানে কৌরব সেনাদের সংহার করতে আরম্ভ করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে অস্ত্রবিদ্যায় সুনিপুন কৌরব বীরগণ ভীমসেনকে পরিবেষ্ঠিত করে তার উপর শর নিক্ষেপ আরম্ভ করলে সত্ত্বর ধৃষ্টদ্যূম্ন সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে আহত ভীসসেনকে নি:শল্য করে নিজের রথে উঠালেন। সহসা তথায় দুর্যোধন উপস্থিত হয়ে কৌরবগণকে নির্দেশ দেন ধৃষ্টদ্যূম্নকে বধ করার জন্য। নির্দেশি হয়ে কৌরবগণ ধৃষ্টদ্যূম্ন’র উপর বৃষ্টির মত শর নিক্ষেপ করতে লাগল। চিত্রযোধী মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন শরের আঘাতে আহত হয়েও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে তেজস্বী পুরুষের মত তাদের উপর সম্মোহন বাণ প্রয়োগ করেন। বাণের প্রভাবে কৌরবগণ হতবুদ্ধি ও বিমোহিত হয়ে  সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। ধার্ত্তারাষ্ট্রগণ ধৃষ্টদ্যুম্ন’র সম্মোহনাস্ত্রের প্রভাবে সংজ্ঞাহীন হয়েছেন জেনে দ্রোণাচার্য অতিদ্রুত সেখানে গমন করে দেখতে পান ধৃষ্টদ্যুম্ন ও ভীমসেন যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করছেন এবং কৌরবগণ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন। তখন দ্রোণাচার্য ”প্রজ্ঞাস্ত্র” প্রয়োগ করে দ্রুপদতনয় নিক্ষেপিত “সম্মোহনাস্ত্র” বিনষ্ট করেন এবং কৌরবগণ সংজ্ঞালাভ করে পুনরায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের নির্দেশে কৈকেয়-সমুদয়, দ্রৌপদীতনয়গণ ও মহাবীর ধৃষ্টকেতু অভিমন্যুকে সম্মুখে রেখে সূচিমুখ ব্যুহ নির্মাণ করে কৌরবদের রথ ভেদ করতে লাগলেন। ঠিক এ সময় পাঞ্চালতনয় দ্রোনাচার্যকে আগমন করতে কৌরবসেনা সংহার রেখে ভীমসেনকে কৈকেয়রাজের রথে তুলে দিয়ে তিনি ক্রুদ্ধচিত্তে দ্রোণাভিমুখে গমন করেন। দ্রোণ ধাবিত ধৃষ্টদ্যুম্ন’র শরাসন ছেদন করে তার প্রতি শত শত শর নিক্ষেপ করতে থাকেন। মহাবলশালী ধৃষ্টদ্যুম্নও দ্রোণাচার্যের উপর ”সুবর্ণপুঙ্খ শিলাশিত সপ্ততি সায়কে” প্রয়োগ করে তাকে বিদ্ধ করেন। কিন্তু মাহবীর দ্রোণাচার্য পুনরায় দ্রুপদতনয়ের শরাসন ছেদ করে শর নিক্ষেপে তার চারি অশ্ব ও নিশিত ভল্ল দ্বারা তার সারথিকে বধ করেন। তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন অশ্ববিহীন রথ হতে নেমে অভিমন্যুর রথে আরোহণ করেন। পান্ডবগণ দ্রোণের শরাঘাতে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে। দ্রোণের অমিততেজ দেখে ধার্ত্তারাষ্টগণ দিক বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। কৌরবসেনাগণ দ্রোণাচার্যের যুদ্ধের তেজ দেখ ধন্য ধন্য করতে লাগল।     

সপ্তম দিবসের যুদ্ধ। মহাপরাক্রাশালী ধৃষ্টদ্যুম্ন মহারাজ দুর্যোধনকে শর নিক্ষেপে মহাচ্ছন্ন করলে তিনি ধৃষ্টদ্যুম্নকে ”নবতি” শরে বিদ্ধ করলেন। কিন্তু দ্রুপদতনয় রোষপরবশ হয়ে দুর্যোধনের শরাসন ছেদন ও চার অশ্ব নিহত করে শানিত সাত শরে তাকে বিদ্ধ করলেন। তখন দুর্যোধন রথ হতে নেমে খড়গ হস্তে ধৃষ্টদ্যুম্ন’র দিকে ধাবিত হলে মাতুল শকুনী তাকে কৌশলে রথে উঠালেন। মহাবীর, মহাপরাক্রশালী, ধৃষ্টদ্যুম্ন’র নিকট দুর্যোধন পরাজিত হলেন। 


পঞ্চদশ দিবসের যুদ্ধ। দ্রোণাচার্যের শরের আঘাতে পান্ডবসেনা অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। ভয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। অবস্থা এমন আর কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলে পান্ডবের পরাজয় নিশ্চিত হবে। দ্রোণাচার্য যুদ্ধক্ষেত্রে ত্রাসের সৃষ্টি করলেন। পান্ডবপক্ষীয় বীরগণ ত্রাহি ত্রাহি করতে লাগলেন। দ্রোণাচার্যের শরের আঘাতে ভীম মুর্ছিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করল। বৃষ্টির মত বাণ ছুড়তে লাগলেন দ্রোণ। শত শত সৈন্য মুর্হুতে ভূমিতে পতিত হলো যেন কদলী পড়ে ভূতলে। তখন অর্জুন অগ্নিশর্মা হয়ে দ্রোণাচার্যের উপর লাখ লাখ দিব্য অস্ত্রের বাণবৃষ্টি করতে লাগলেন যেন সৃষ্টি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হলো। অর্জুনের দিব্যঅস্ত্র প্রতিরোধ করে দ্রোণাচার্য অর্জুনকে হতাশ করে সেনা বিনাশে মনোনিবেশ করলেন। হতাশ যুধিষ্ঠির, হতাশ ধনঞ্জয়, চিন্তিত কৃষ্ণ। ঠিক তখন কৃষ্ণ দ্রোণাচার্যকে লক্ষ্য করে বললেন,“শোন দ্রোণ! অশ্বত্থামা তোমার পুত্র ভীমের গদার আঘাতে নিধন হয়েছে।” শ্রবণ করা মাত্রই দ্রোণাচার্যের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তবে ব্যাসদেব যে বলেছিল.“এ পুত্র চিরজীবী। সুমেরু ভেঙ্গে পড়তে পারে, চন্দ্র-সূর্য স্থানচূত্য হতে পারে কিন্তু মুনি বাক্য তো মিথ্যা হতে পারে না। নারায়ণ, আপনি এ কি অসম্ভব কথা বললেন। হৃদয়ে আমার বিস্ময় জন্মেছে। ব্যাস যে বলেছিল চারযুগে অমর সে। তবে এমন কথা কেন হরি আপনি বলছেন।” আমার কথা মিথ্যা নয়, অশ্বত্থামা রণভূমিতে পতিত হয়েছে।” তখন দ্রোণ বলেলেন,“ যদি ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এসে বলে তবে আমি বিশ্বাস করব।” ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৃষ্ণের পরামর্শে তিনি বললেন,“ অশ্বত্থামা হত তবে এ নামে একটি গজ:” গজ কথাটি লঘু স্বরে উচ্চারিত করেন যুধিষ্ঠির। পুত্র শোকে দ্রোণাচার্য আকুল হয়ে ক্রন্দন করতে করতে প্রায় অচেতন হলেন। ঠিক তখনই অর্জুন দ্রোণকে লক্ষ্য করে বাণ নিক্ষেপ করলেন। দ্রোণের কন্ঠতলে ধনু বিদ্ধ হল। ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে রথের উপর পড়ে যান। ধৃষ্টদ্যুম্ন নিরস্ত্র দ্রোণাচার্যকে হত্যার জন্য ধাবিত হন। ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের রথের উপর উঠে খড়গের দ্বারা গুরুদেব দ্রোণাচার্যের কেশ ধরে শিরোচ্ছেদ করলেন। কৃপাচার্যের কাছ থেকে পিতাশ্রী দ্রোণচার্যের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণ করা মাত্রই অশ্বত্থামার সারা শরীর প্রকম্পিত হতে লাগল। তার দু নয়ন অশ্রুপূর্ণ হলো। তিনি ধৃষ্টদ্যুম্নসহ পান্ডবদের হত্যা করার কঠিন শপথ নিলেন। গুরু দ্রোণকে যেভাবে ধৃষ্টদ্যুম্ন হত্যা করেছে তা নিয়ে সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্নকে তীব্র ভাষায় ভৎসনা করলে ধৃষ্টদ্যুম্ন সাত্যকি বধ করার জন্য অগ্রসর হন। সাত্যকিও গদা নিয়ে ধৃষ্টদ্যূম্নর দিকে ধাবিত হলে কৃষ্ণ, ভীম ও যুধিষ্ঠীর অনেক চেষ্টা করে উভয়কে শান্ত করেন।  
পান্ডব শিবিরের দ্বারদেশে কৃপাচার্য ও কৃতবর্মাকে প্রহরা রেখে অশ্বত্থামা শিবিরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। যুদ্ধশেষে পান্ডবপক্ষীয়গণ অচেতন অবস্থায় নিদ্রাতে আচ্ছন্ন। নিদ্রাচ্ছন্ন ধৃষ্টদ্যুম্নকে পদাঘাতে জাগরিত  করে তার কেশরাশি ধরে ভূমিতে ফেলে অশ্বত্থামা তার বুকে ও গলায় পা দিয়ে চাপতে আরম্ভ করলেন। তখন ধৃষ্টদ্যূম্ন অস্পষ্ট স্বরে অশ্বত্থামাকে বললেন,”আচার্যপুত্র! আপনি আমাকে অস্ত্রাঘাতে বধ করুন, তাহলে আমি পূণ্যলোকে যেতে পারব।” অশ্বত্থামা বললেন,”তুমি গুরু হত্যাকারী, তোমাকে আমি অস্ত্রঘাতে বধ করব না। এ বলে অশ্বত্থামা মর্মস্থানে গোড়ালির চাপ দিয়ে ধৃষ্টদ্যূম্নকে হত্যা করেন। সূত্র : মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরানিক গ্রন্থ।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

সনাতন ধর্মে কি পশুবলী’র বিধান আছে?

মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র