যুধিষ্ঠির

যুধিষ্ঠির:পান্ডবের মধ্যে সর্ব জ্যেষ্ঠ। শতপর্বতশৃঙ্গে ধর্মের সাথে মিলনের ফলে কুন্তির গর্ভে তার জন্ম হয়। এ জন্য তিনি ধর্ম, ধর্মরাজ এবং ধর্মপুত্র। হরিণরূপ ধারণ করে কিমিন্দম মুনি মৈথনকালে পান্ডুর বাণে নিহত হলে তার অভিশাপে পান্ডুর মৃত্যু হবে জেনে পান্ডু কুন্তীকে ক্ষেত্রজ সন্তানলাভের চেষ্টা করতে বলেন। কুন্তী দুর্বাসা মুনিকে সেবাযত্ন করে সন্তষ্ট করায় দুর্বাসা মুনি কুন্তীকে যে কোন দেবতাকে আহ্বান করার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। স্বামীর অনুমতি নিয়ে ধর্মকে আহ্বান করলে যুধিষ্ঠিরকে লাভ করেন। তার জন্মকালে এ দৈববাণী হয় যে- তিনি ধার্মিকশ্রেষ্ঠ, নরোত্তম, সত্যবাদী ও পৃথিবীপতি হবেন।

পান্ডুর মৃত্যুর পর কুন্তী ও পঞ্চ পান্ডব হস্তিনাপুরে এসে জ্যেষ্ঠ তাতশ্রী ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রয়ে প্রতিপালিত হন। কৃপাচার্য ও দ্রোণাচার্যের কাছে পান্ডব ও কৌরবরা অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন। যুধিষ্ঠির রথ চালানায় পারদর্শিতা লাভ করেন। ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করেন। কৌরব-জ্যেষ্ঠ দুর্যোধন তাতে অসন্তষ্ট ও ঈর্ষান্বিত হন। তখন থেকেই মূলত: পান্ডবদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়। প্রথম চক্রান্ত হয় জতুগৃহে পান্ডবদের অগ্নিদগ্ধ করে মারার কিন্ত যুধিষ্ঠিরের পরামর্শের জন্য তারা রক্ষা পান। বনবাসকাল শেষ হলে পান্ডবেরা হস্তিনাপুরে ফিরে এলে ধৃতরাষ্ট্র তাদেরকে খান্ডপ্রস্থে বাস করতে বলেন। পান্ডবেরা সেখানে ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণ করে বাস করতে থাকেন। দ্রৌপদীর গর্ভে যুধিষ্ঠিরের প্রতিবিদ্ধ্য নামে এক পুত্র সন্তান হয়। তিনি গোবসনের কন্যা দেবিকাকে স্বয়ংবর সভায় লাভ করেন। তার গর্ভে বৌধের নামে এক পুত্র সন্তান হয়। তারপর পান্ডবগণ বহুদেশ জয় করে অনেক ধনসম্পদের অধিকারী হন। নারদের পরামর্শে যুধিষ্ঠির রাজসূয়যজ্ঞ করার প্রস্তুতি নেন। যুধিষ্ঠিরের সম্মতিক্রমে অন্যান্য পান্ডবরা অন্যান্য রাজাদের পরাজিত করে বশ্যতা স্বীকার করান। ফলে যুধিষ্ঠির নির্বিঘ্নে মহাধূমধামে রাজসূয়যজ্ঞ করেন। পান্ডবদের ঐশ্বর্য দেখে তিনি ঈর্ষান্বিত হন। আর মাতুল শকুনির দ্যুতক্রীড়ার চক্রান্তে যুধিষ্ঠির জড়িয়ে পড়েন। প্রথানুযায়ী ধুধিষ্ঠির দ্যুতক্রীড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে পারেননি। মূলত: মহাভারতের কাহিনীতে শুকনির আগমন ও ষঢ়যন্ত্র কাহিনী বিন্যাসের গতিধারাকে ব্যহত করে আঁকাবাঁকা পথে চালিত হয়েছে। যুধিষ্ঠির রাজ্য, ভ্রাতাগণ, নিজেকে এমনকি দ্রৌপদীকে পণ করে হারান এবং কৌরবদের দাসত্ব স্বীকার করেন। দ্যুতক্রীড়ায় পরাজিত হয়ে দ্রৌপদী দাস হয়েছেন বলে দু:শাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে উদ্যত হলেও যুধিষ্ঠির ধর্মহানির ভয়ে এ অপমানের কোন প্রতিকার করেননি।

তারপর ধৃতরাষ্ট্র পান্ডবদের রাজ্য ফিরিয়ে দিয়ে দ্রৌপদীকে মুক্তি দেন। কিন্ত্র দুর্যোধন এতে আরও হিংসা পরায়ণ হয়ে উঠেন এবং ধৃতরাষ্ট্রকে পান্ডবদের বিষয়ে উত্তেজিত করে তোলেন। আসন্ন যুদ্ধ নিবারনের জন্য দ্বিতীয় বার দ্যুতক্রীড়ার আয়োজন করা হয়। ক্ষত্রিয় হিসেবে পান্ডবরা আবারও তা গ্রহণ করেন। এবার শকুনি চক্রান্তে পান্ডরা পরাজিত হন ফলে বার বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাত বাস। দ্রৌপদীর কটূক্তি ও ভীমের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার পরামর্শ দেয়া সত্ত্বেও যুধিষ্ঠির অবিচলিত চিত্তে প্রতিজ্ঞা পালন করেন। দুর্যোধন সপরিবারে দ্বৈতবনস্থিত সরোবরে যেখানে পান্ডবরা বাস করছে তা স্বচক্ষে দেখার জন্য সেখানে যান। কিন্তু গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনের সাথে তার যুদ্ধ হয়। দুযোর্ধন তার হাতে কৌরব পত্নীসহ বন্ধী হয়। তখন পরাজিত সৈন্যগণ পান্ডবদের শরণাগত হয়। তখন যুধিষ্ঠির দুর্যোধন ও তাদের পত্নীদের ‍উদ্ধারের জন্য পান্ডবাদির নির্দেশ দেন। এখানে যুধিষ্ঠিরের সহমর্মিতার পরিচয় পাওয়া যায়। কাম্যক বনে বাস করার সময় পান্ডবাদির অনুপস্থিতে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে হরণ করলে পান্ডবাদি তাকে পশ্চাদ্ধাবন করে বন্ধী ও নিগৃহীত করে। কিন্তু ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির জয়দ্রথকে ক্ষমা করে মুক্তি দেন। এটি হচেছ যুধিষ্ঠিরের মহত্ব। একদিন ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে পরীক্ষা করার জন্য হরিণরূপ ধারণ করে ব্রহ্মণের অরণি-মন্থ হরণ করেন। অরণি-মন্থ ফিরে পাবার আশায় ব্রাহ্মণ পান্ডবদের শরনাগত হয়। হরিণ অদৃশ্য হলে পঞ্চভ্রাতা হরিণের সন্ধান করতে করতে ক্লান্ত হন। দীর্ঘ যাত্রায় তারা তৃষ্ণার্ত হলে নকুল তাদের জন্য সরোবরে জল আনতে গেলে অন্তরীক্ষ হতে ধর্ম জলপান করার পূর্বে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জল পান করতে বললে নকুল তা আমলে না নিয়ে জল পান করতে ভূপতিত হন। তার বিলম্ব দেখে সহদেব, ভীম ও অর্জুন সেখানে যান তারও ধর্মের কথা অগ্রাহ্য করলে তার ভূপতিত হন। তখন যুধিষ্ঠির নিজে সেখানে উপস্থিত হলে ধর্ম বকরূপে যুধিষ্ঠিরকে জল গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। তখন যুধিষ্ঠির তার পরিচয় জানতে চাইলে ধর্ম যক্ষরূপ ধারণ করে বলেন, তার নিষেধ অমান্য করায় তার চার ভ্রাতার এ দশা হয়েছে। তারপর যুধিষ্ঠির যক্ষের সব কথার উত্তর দিয়ে দেন। যক্ষ যে কোন এক ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা দিতে রাজী হন। তখন যুধিষ্ঠির নকুলের জীবন ভিক্ষা চান। তার কারণ জানতে চাইলে যুধিষ্ঠির বলেন, কুন্তী ও মাদ্রী দুজনই তার নিকট সমতুল্য। তখন যক্ষরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরের উদার চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে বর প্রার্থনা করার জন্য বলেন। তিনি বলে ব্রাহ্মণের যেন অগ্নিহোত্র যেন লুপ্ত না হয়। তখন অরণি-মন্থ প্রত্যার্পণ করে অন্য বর প্রার্থনা করার জন্য বললে, যুধিষ্ঠির বলেন, অজ্ঞাতবাস কালে কেহ যেন তাদেরকে চিনতে নারে। ধর্ম ‘তথাস্তু’ বলে বিদায় নিলেন এবং বিরাট রাজার রাজ্যে বাস করার জন্য উপদেশ দেন। বিরাট রাজের সভায় কীচক দ্রৌপদীকে পদাঘাত করলে যুধিষ্ঠির ভীমকে ইশরায় নিরব থাকার পরামর্শ দেন। কারণ তাতে তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে।

অজ্ঞাতবাস শেষ হলে পান্ডবরা তাদে হৃতরাজ্য দাবী করলে দুর্যোধন বলেন, অজ্ঞাতবাসকাল পূর্ণ হবার পূর্বেই তাদের পরিচয় প্রকাশ পাওয়ায় রাজ্য ফিরিয়ে দিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। যুদ্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করলে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরের নিকট সঞ্জয়কে দূত হিসেবে প্রেরণ করে যুদ্ধ নিবারণ করার জন্য বললে ‍যুধিষ্ঠির প্রাপ্য রাজ্য ফিরে না দেয়া হয় তবে পঞ্চভ্রাতাকে কুশস্থল, বৃকস্থল, মাকন্দ, বারণাবত ও আর একটি গ্রাম অর্থাৎ পঞ্চগ্রাম দান করলেই তার যুদ্ধ থেকে ‍নিবৃত্ত হবে। যুধিষ্ঠির যুদ্ধ নিবারণের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে হস্তিনাপুর প্রেরণ করেন। দুর্যোধন বিনাযুদ্ধে সূচ্যগ্র ভূমিও দিতে অসম্মত হন। ফলে যুদ্ধ অনিবার্য রূপলাভ করে। যুদ্ধের পূর্বে যুধিষ্ঠির রথ হতে নেমে পিতামহ ভীষ্ম, গুরুদেব দ্রোণাচার্য, শল্য তাদের প্রণাম ও আর্শিবাদ ভিক্ষা করেন। ইহা যুধিষ্ঠিরের শিষ্টাচার।

যুধিষ্ঠিরের নির্দেশে অভিমন্যূ  চক্রব্যুহ ভেদ করে নিহত হন। দোণচার্যকে যুদ্ধে নিহত করতে না পারায় যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ ও ভীমের প্ররোচনায় “অশ্বত্থামা হত: ইতি গজ:” এ কথা বলায় দ্রোণাচার্য অস্ত্র সংবরণ করেন। দ্রোণাচার্য ‍যুধিষ্ঠিরের নিকট পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ শুনে অস্ত্র সংবরণ করলে ধৃষ্টদ্যুম্ন তার শিরচ্ছেদ করেন। এখানে যুধিষ্ঠির ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করেন। সপ্তদশ দিনের যুদ্ধে যুধিষ্ঠির ও কর্ণের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে যুধিষ্ঠির পরাজিত হয়ে শিবিরে পালায়ন করেন। তখন অর্জুন যুধিষ্ঠিরের সন্ধানে এখানে এসে কর্ণকে যুদ্ধে পরাজিত করতে না পারায় অর্জুনকে যুধিষ্ঠির তীব্র ভাষায় তিরষ্কার করেন। এতে অর্জুন ক্রুদ্ধ হয়ে যুধিষ্ঠিরকে হত্যা করতে উদ্যত হন। শ্রীকৃষ্ণের হস্তক্ষেপে তা দূরীভুত হয়। অষ্টাদশ দিনের যুদ্ধে যুধিষ্ঠির শল্যকে নিহত করেন। মূলত: যুদ্ধে এটি যুধিষ্ঠিরের সাফল্য। দ্বৈপায়ন হ্রদে আত্মগোপনকারী দুর্যোধনকে তীক্ষ্ম বাক্যে উত্তেজিত করে ‍যুদ্ধে প্রবৃত্ত করান। কুন্তী কর্ণের মুখাগ্নি করার জন্য যুধিষ্ঠিরকে নির্দেশ দিলে শোকার্ত যুধিষ্ঠির অভিশাপ দেন যে, স্ত্রীজাতি কোন কিছুই গোপন করতে পারবে না। ‍যুদ্ধের পর বন্ধুবান্ধন, আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতীনাশ দেখে রাজ্যাভিষিক্ত না হয়ে রাজ্য ত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শ্রীকৃষ্ণ, ব্যাস বহু অনুনয়নের পর তাকে রাজী করান। রাজ্যলাভের পর যুধিষ্ঠির শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মের কাছে থেকে ধর্মনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, রাজ্য পরিচালনার অনেক বিষয়ে উপদেশ লাভ করেন। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী যাতে কষ্ট না পান সেদিকে তিনি সর্তক ছিলেন। তাদের সাধ্যমত সেবাযত্ন করতেন।

যদুবংশ ধ্বংশের সংবাদ শোনার পর যুধষ্ঠির অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিতকে রাজ্যাভিষিক্ত করেন এবং ধৃতরাষ্ট্র পুত্র যুযুৎসুর উপর রাজ্য পালণের ভার অর্পণ করে চারি ভ্রাতা ও দ্রৌপদী মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা করেন। এ সময়ে একটি কুকুর তাদের সাথী হয়। পথিমথ্যে ক্রমে ক্রমে চার ভ্রাতা পতিত হন। দ্রৌপদীও পতিত হন। ভীমের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির প্রত্যেকে পতনের কারণ বর্ণনা করেন। তারপর যুধিষ্ঠির সশরীরে স্বর্গদ্বারে উপস্থিত হলে ইন্দ্র তাকে কুকুর পরিত্যাগ করে স্বর্গে প্রবেশ করতে বললেন। এ ভক্ত কুকুরতে তিনি পরিত্যাগ করে স্বর্গে যেতে রাজী নন। কুকুরকে ত্যাগ করলে তার প্রতি নির্দয় ব্যবহার করা হবে। ক্রোধবশ নামক দেবতারা তার যজ্ঞাদির ফল বিনষ্ট করেন। যুধিষ্ঠির আবার বলেন, ভক্ত কুকুরকে ত্যাগ করলে ব্রহ্মহত্যার তুল্য তার পাপ হবে। ভীত, আর্ত, অসহায় ও দুর্বল ভক্তকে রক্ষা করা তার ব্রত। তখন কুকুররূপী ধর্ম নিজমূর্তি প্রকাশ করে যুধিষ্ঠিরকে আর্শীবাদ করে বললেন, স্বর্গে তোমার সমান কেহ নেই। কারণ ভক্ত কুকুরের জন্য তুমি স্বর্গ ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলে। তারপর ইন্দ্র ও মরুদগণ যুধিষ্ঠিরকে স্বর্গে নিয়ে যান। যুধিষ্ঠির স্বর্গে গিয়ে তাদের ভ্রাতাদের দেখতে চান। তখন তাকে নরকে নেয়া হয়। সেখানে ভাতাদের দেখে তিনি স্বর্গে যেত অস্বীকার করেন। পরে ইন্দ্র বলেন, যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্যকে অশ্বত্থামার মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে প্রতারিত করেছিলেন বলে কৌশলক্রমে তাকে নরক দর্শন করতে হয়েছে। তারা কেহ নরকবাসের উপযুক্ত নন। ধর্ম তাকে বলেন, যুধিষ্ঠির তৃতীয় বারের মত পরীক্ষাতেও উর্ত্তীণ হয়েছে। তখন যুধিষ্ঠির ভ্রাতাসহ স্বর্গে গমন করেন।

যুধিষ্ঠির অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু, স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন, অসীম ধৈর্যশীল বিশাল পুরুষ ছিলেন। অহিংসা, সত্যবাদিতা, দয়া, ও সত্যরক্ষা তার চরিত্রে প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণা করে তার প্রতি ক্ষমাশীল হওয়া তার অন্যতম একটি গুণ। তার মধ্যে বিষয় বুদ্ধিরও পরিচয় পাওয়া যায়। শল্যকে স্বপক্ষে না পেয়ে তিনি তার কাছে বর প্রার্থনা করেন, শল্য যেন কর্ণের হয়ে কর্ণের বলক্ষয় করেন। ভীষ্ম বধের জন্য তার নিকট প্রার্থনা ও দ্রোনাচার্য বধের জন্য মিথ্যার আশ্রয়ও তিনি নিয়েছিলেন। তিনি ভ্রাতাদের স্নেহ করতেন। তিনি স্নেহশীল ছিলেন। ভ্রাতার তাকে অসীম শ্রদ্ধা করতেন। ভদ্রতা ও শিষ্টাচার তার চরিত্রের ভূষণ ছিল। এমনকি তিনি যুর্যোধনকে সুর্যোধন বলে ডাকতেন। অপকারীর উপকার ও শক্রকে মার্জনা তার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক।

যুধিষ্ঠির অর্জুনের সমকক্ষ নন কিন্তু তিনিই মহাভারতের নায়ক। তাঁকে নির্বোধ বললে অবিচার হবে, কিন্তু দ্যুত প্রিয়তা উদারতা ও ধর্মভীরুতার জন্য সময়ে সময়ে তিনি ক্ষনিকের জন্য হলেও কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে পড়েন। তার ক্রুধ স্বল্প। তাই প্রতিশোধের স্পৃহাও কম। কর্ণপর্বে যুধিষ্ঠির অর্জুনের উপর অগ্নিশর্মা হন। অর্জুনের মত তিনি যুদ্ধে পটু নন। যুদ্ধ কৌশলেও চতুর নন। তাই ভ্রাতারা তাকে সব সময় সামলে রাখেন। মাঝে মাঝে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বও প্রদর্শন করেছেন। কৃষ্ণের প্ররোচনায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুধিষ্ঠিরকে মিথ্যা বলতে হয়েছে। সাধারণ পাপপূণ্যের সূক্ষ্ম বিচার না করে তিনি কোন কর্ম করেন না। এর ফলে তাকে দ্রৌপদী ও ভীমের নিকট হতে ভৎসনা শুনতে হয়েছে। অহংবোধের কারণে নিজেকে পাপী মনে করে মনস্তাপ ভোগ করতে দেখা যায়। যুধিষ্ঠিরের মুখে বৈরাগ্যের কথা শুনতে শুনতে ব্যাসদেবও মাঝে মাঝে তার প্রতি বিরক্ত হয়েছেন। অবস্থাভেদে তিনি বাস্তববাদীও। ছলনার আশ্রয়ে দ্রোণকে হত্যার জন্য অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে তিরস্কার করেছিলেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির তাতে অনুতপ্ত হননি। অত্থথামা যখন নারায়ণাস্ত্রে পান্ডব সৈন্য বিনাশ করছিল তখন অর্জনকে অনেকটা নিশ্চুপ দেখে যুধিষ্ঠির দ্রোণের অন্যায় হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে অর্জুনকে বললেন,“আমাদের সেই পরম সুহৃৎ নিহত হয়েছেন, অতএব আমরাও সবান্ধবে প্রাণত্যগ করব।” ভীম নাভি নিম্নে গদা আঘাত করে দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করার দৃশ্য দেখে বলরাম ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তখন যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,“ধৃতরাষ্ট্রে পুত্রেরা আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে, সেহেতু ভীমের হৃদয়ে অনেক দূ:খ রয়েছে। তাই আমি ভীমের আচরণ আমলে নিলাম না।”
সূত্র : মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরানিক উপাখ্যান

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র