মহাভারত:আদিপর্ব ১১৭-১২১

১১৭. অর্জ্জুনের দ্বারাবতী গমন ও অর্জ্জুনকে দেখিয়া সুভদ্রার মোহপ্রাপ্তি
গোকর্ণাদি তীর্থে স্নান করি ক্রমে ক্রমে।
প্রভাস-তীর্থেতে যান পৃথিবী পশ্চিমে।।
প্রভাসে আগত পার্থ কুন্তীর কুমার।
দ্বারকায় গোবিন্দ শুনিয়া সমাচার।।
অতিশীঘ্র করিলেন তথায় গমন।
প্রভাসে অর্জ্জুন সহ হইল মিলন।।
আলিঙ্গন করিয়া উভয়ে পরস্পর।
উভয়ের হইল উত্তর প্রত্যুত্তর।।
অর্জ্জুনে লইয়া পরে দেবকী-নন্দন।
রৈবতক নামে গিরি করিল গমন।।
গোবিন্দের আজ্ঞায় তথায় যদুগণ।
রৈবতক-পর্ব্বেতে পূর্ব্বে করেছে গমন।।
অতিশয় মনোহর গিরিবর যত।
নানা ধাতু বিরাজিত, মণি মরকত।।
নানা জাতি বৃক্ষ সর্ব্বফলফুলে শোভে।
নানা জাতি পুষ্প সব আমোদে সৌরভে।।
নানা জাতি পশু খেলে, নানা পক্ষিগণ।
গিরি দেখি সুখী যদুকুল সর্ব্বজন।।
কৃষ্ণের বচনেতে দ্বারকাবাসী সব।
রৈবতক-পর্ব্বতেতে কৈল মহোৎসব।।
বাল বৃদ্ধ যুবা আর নর নারীগণ।
নানা বাদ্য নৃত্যগীত করে অনুক্ষণ।।
নানা নত্নে মণ্ডিত যতেক তরুগণ।
শ্বেত পীত রক্ত নীল বিবিধ বসন।।
শ্বেত কৃষ্ণ চামর রাখিল প্রতি ডালে।
প্রবাল মুকুতা ঝারা বান্ধি ইন্দ্রজালে।।
উগ্রসেন বসুদেব অক্রুর উদ্ধব।
জয়সেন কামদেব সকল বান্ধব।।
বলভদ্র চারুদেষ্ণ সাত্যকি সারণ।
গদ উপগদ যে দারুক প্রদ্যুমন।।
ঝিল্লি উপঝিল্লি যত সপ্তবংশ নারী।
উদ্যান ভ্রমিতে সবে চলে আগুসারি।।
দৈবকী রোহিণী আর ভদ্রা শচী রতি।
ভীষ্মক-নন্দিনী সত্যভাতা জাম্ববতী।।
নগ্নজিতা কালিন্দী লক্ষ্মণা রত্নভূষা।
ভদ্রমিত্রা মিত্রবৃন্দা বাণপুত্রী ঊষা।।
চন্দ্রাবতী ভদ্রাবতী প্রভৃতি কামিনী।
ইত্যাদি কৃষ্ণের ষোল সহস্র রমনী।।
রৈবতক পর্ব্বতে যে করেন বিহার।
হেনকালে উপনীত ইন্দ্রের কুমার।।
অর্জ্জুন আইল বলি শুনি এই কথা।
আগুসারি আনিবারে সবে গেল তথা।।
কৃষ্ণ ধনঞ্জয় আরোহেন এক রথে।
দোঁহে এক মূর্ত্তি, কেহ না পারে চিনিতে।।
দোঁহে ঘন নীলবর্ণ অরুণ অধর।
কিরীট কুণ্ডল হার শোভে পীতাম্বর।।
কেহ বলে কৃষ্ণে পার্থ, পার্থে বলে হরি।
দোঁহামূর্ত্তি দেখিয়া বিস্মিত নরনারী।।
তবে ধনঞ্জয় বীর রথ হৈতে উলি।
লইলেন শ্রীবসুদেবের পদধূলি।।
আলিঙ্গন শিরে চুম্ব বসুদেব দিয়া।
যতেক বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসেন বিস্তারিয়া।।
অর্জ্জুন বলিল সব নিজ বিবরণ।
নারদ-নিয়ম হেতু ভ্রমি তীর্থগণ।।
বসুদেব বলেন, থাকহ এ আলয়।
দ্বাদশ যত দিনে পূর্ণ হয়।।
উগ্রসেন বলভদ্র সত্যক সাত্যকী।
একে একে সম্ভাষেন পরম কৌতুকী।।
লইয়া চলিল সবে রৈবতক গিরি।
সম্ভাষিতে আইল যতেক যদুনারী।।
অর্ঘ্য দিয়া কল্যাণ করেন সর্ব্বজন।
পরম আনন্দ সবে শুভ জিজ্ঞাসেন।।
মাতুলানীগণে পার্থ প্রণাম করিয়া।
যথাযোগ্য সম্ভাষ করেন নম্র হৈয়া।।
হেনকালে সুভদ্রা যে বসুদেব-সুতা।
নবীবে যুবতী সর্ব্বরূপা-গুণযুতা।।
বিচিত্র কবরীভার সুচাঁচর চুলে।
মেঘেতে বিদ্যুৎ যেন কুরুবল ফুলে।।
তার গন্ধে মকরন্দ ত্যজি অলিকুলে।
চতুর্দ্দিকে ঝঙ্কারিয়া অনুক্ষণ বুলে।।
দুই গণ্ড কুণ্ডল মণ্ডিত শ্রুতিমূলে।
চন্দ্রজ্যোতি গজমতি শোভে নাসাহুলে।।
বদন নিন্দিত চান্দ, নাসা তিলফুলে।
কটাক্ষ চাহনিতে মুনির মন ভুলে।।
কুচযুগ সম পূগ ঢাকিয়া দুকূল।
মধ্যদেশ মৃগ-ঈশ নহে সমতুল।।
জঘন সর ঘন নর্ত্তক অতুলে।
হেরি মুগ্ধ হয় কাম চরণ অঙ্গুলে।।
নিতম্ব কুঞ্জরকুম্ভ জিনিয়া বিপুল।
জাতী যূথী হার পরে মালতী বকুল।।
তারে দেখি পার্থ জিজ্ঞাসেন গোবিন্দেরে।
কেবা এ সুন্দরী সখা সবাকার পরে।।
অবিবাহিতা কন্যা যে লয় মোর মনে।
শুনিয়া বলিল তবে শ্রীমধুসূদনে।।
বসুদেব-সুতা হয় আমার ভগিনী।
সারণের সহোদরা সুভদ্রা নামিনী।।
বিবাহ না হয়, নাহি মিলে যোগ্য বর।
শুনিয়া লজ্জিত অতি পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
অর্জ্জুনেরে হেরি ভদ্রা বিমোহিত হৈলা।
চলিতে না চলে পদ, ভূমেতে বসিলা।।
সত্যভামা বলেন, না আস ভদ্রা কেনে।
সবে বলে একক বসিলা কি কারণে।।
সুভদ্রা বলিল, দেবী ধরি মোরে লহ।
কণ্টক ফুটিল পায় বাহির করহ।।
শুনি সত্যভামা ধরি তুলিলেন হাতে।
নাহিক কণ্টকাঘাত দেখেন পদেতে।।
সত্যভামা বলেন, কি হেতু ভাঁড়াইলা।
নাহিক কণ্টকাঘাত, কেন ব পড়িলা।।
নিভৃতে সুভদ্রা কহে, কি কহিব সখি।
যে কণ্টক ফুটিল কোথায় পাবে দেখি।।
অর্জ্জুনের মোহন চাহনী তীক্ষ্ণশর।
আজি অঙ্গ আমার করিল জর জর।।
দেখ মোর অঙ্গ-তাপ ঘন কম্পমান।
ছটফট করে তনু, বাহিরায় প্রাণ।।
ছাড় সত্যভামা, আমি না পারি যাইতে।
এত বলি অর্জ্জুনেরে লাগিল দেখিতে।।
সত্যভামা বলে, ভদ্রা খাইলি দেখিতে।।
সত্যভামা বলে, ভদ্রা খাইলি কি লাজ।
রাখিলি কলঙ্ক নিষ্কলঙ্ক কুল-মাঝ।।
পিতা বসুদেব, ভাই রাম নারায়ণ।
তিনলোক মধ্যে যাঁরে পূজে সর্ব্বজন।।
ইহা সবাকার লজ্জা করিতে চাহিস্।
দেখিয়া পুরুষে প্রাণ ধরিতে নারিস্।।
অন্য কি অনূঢ়া কন্যা নাহি রাজকুলে।
পরপুরুষ দেখিয়া কাহার মন ভুলে।।
তোমা হৈতে নির্লজ্জ না হয় অন্যজনে।
ধৈর্য্য ধর, চল ঘরে, পাছে কেহ শুনে।।
সত্যভামা সখীর নিষ্ঠুর বাক্য শুনি।
সকরুণে কহে ভদ্রা, চক্ষে বহে পানি।।
ধিক্ ধিক্ ব্যর্থ জন্ম নারীর ভূতলে।
পর-বশে দহে তনু বিরহ অনলে।।
সত্যভামা বলে, কি নিন্দিস্ কামিনী।
নারীরূপে দেখ ক্ষিতি সংসারধারিণী।।
নারী হৈতে হৈল পূর্ব্বে সৃষ্টির সৃজন।
শক্তিরূপে রক্ষা করে সবার জীবন।।
নারী নাম প্রথমেতে মঙ্গল কারণ।
লক্ষ্মী আগে বলয়ে, পশ্চাতে নারায়ণ।।
শঙ্কর ছাড়িয়া আগে ভবানীর নাম।
রাম সীতা নাহি বলে, বলে সীতা-রাম।।
গৃহিণী থাকিলে লোকে বলে তারে গৃহী।
সংসারে দেখহ নারী বিনা কেহ নাহি।।
স্ত্রী হইতে হয় ভদ্রা সবার উৎপত্তি।
স্ত্রী বিনা করিতে বংশ কাহার শকতি।।
সুভদ্রা বলেন, সত্য কহিলা সকল।
কিন্তু সে পুরুষ বিনা জীবন বিফল।।
সত্যভামা বলেন, না হও উতরোল।
বিয়া দিব স্থির হও শুন মম রোল।।
উত্তম বংশজ, হৈবে বলিষ্ঠি পণ্ডিত।
পরম সুন্দর হৈবে তব মনোনীত।।
ভদ্রা কহে, যত কহ নাহি করি জ্ঞান।
এখনি ত্যজিব প্রাণ তোমা বিদ্যমান।।
কৌরব-বংশীয় যে পাণ্ডব বলবান।
বিনা ধনঞ্জয় আমি নাহি দেখি আন।।
আজি যদি ধনঞ্জয়ে আমারে না দিবে।
নিশ্চয় আমার বধ তোমারে লাগিবে।।
সত্যভামা বলে, দেবী, চল এইক্ষণ।
রজনীতে পার্থ সহ করাব মিলন।।
সত্যভামা-মুখে শুনি বচন সরস।
চলিল সুভদ্রা চিত্তে হইয়া হরষ।।
১১৮. সুভদ্রা ও অর্জ্জুনের বিবাহ হেতু সত্যভামার দূতীয়ালীতি
তবে নিশাকালে সত্রাজিতের নন্দিনী।
একান্তে কহেন কান্তে ভদ্রার কাহিনী।।
তোমার ভগিনী ভদ্রা ত্যজিবেক প্রাণ।
তার হেতু আপনি করহ অবধান।।
যতক্ষণ দেখিয়াচে পার্থের বদন।
তিল এক নাহি ছাড়ে আমার সদন।।
বলে মোরে অর্জ্জুনেরে দেহ পতি করি।
নহে নারী-বধ দিব তোমার উপরি।।
গোবিন্দ বলেন, আমি ভাবিতেছি মনে।
আসিয়াছে অর্জ্জুন এখানে বহুদিনে।।
কোন্ ধনে সন্তোষ করিব অর্জ্জুনেরে।
ভাল হৈল, সুভদ্রারে দান দিব তারে।।
করাইব বিবাহ দোঁহার যে প্রকার।
আজি নিশা তুমি বোধ করাহ ভদ্রার।।
সত্যভামা বলে, নহে বিলম্বের কথা।
আজি নিশা পার্থ বিনা মরিবে সর্ব্বথা।।
গোবিন্দ বলেন, যে আমার সাধ্য নয়।
কর গিয়া যেমনে সঙ্কট নাহি হয়।।
সত্যভামা বুঝি তবে কৃষ্ণের সম্মতি।
লৈয়া যান সুভদ্রায় যথা পার্থ রথী।।
দুয়ার করিয়া বন্ধ কনক-কপাটে।
শুইয়া আছেন পার্থ রত্নময় খাটে।।
অর্জ্জুন অর্জ্জুন বলি ডাকিলা শ্রীমতী।
কে তুমি বলিয়া জিজ্ঞাসেন মহামতি।।
সত্যভামা বলিলেন সত্রাজিত-সুতা।
ঘুচাও কপাট, কিছু আছে গুপ্তকথা।।
অর্জ্জুন বলেন, হৈল অর্দ্ধেক রজনী।
এক রাত্রে আইলেন কি হেতু আপনি।।
যদি কার্য্যে ছিল তব, পাঠাইলে দূতে।
আজ্ঞামাত্র তথায় যাইতাম অগ্রেতে।।
ইহা না করিয়া তুমি আইলা আপনি।
যে আজ্ঞা করিবা, কাল করিব তখনি।।
সত্যভামা বলেন, যে দূত-কর্ম্ম নয়।
সে কারণে আইলাম তোমার আলয়।।
তোমার কষ্টের কথা শুনিয়া শ্রবণে।
না হইল নিদ্রা মম, মহাতাপ মনে।।
এক ভার্য্যা প্ঞ্চ ভাই কি সুখে নিবস।
যেই হেতু দ্বাদশ বৎসর বনবাস।।
সেই হেতু আইলাম হৃদয়ে বিচারি।
আমি দিব পরমা সুন্দরী এক নারী।।
অর্জ্জুন বলেন, এত স্নেহ কর মোরে।
পালিব সকল আজ্ঞা গোবিন্দ-গোচরে।।
সত্যভামা বলিলেন, বিলম্বে কি কাজ।
গান্ধর্ব্ব-বিবাহ কর রজনীর মাঝ।।
পার্থ বলিলেন, কহ অদ্ভুত এ কথা।
কেবা সে সুন্দরী হয় কাহার দুহিতা।।
না জানিয়া না শুনিয়া তদন্ত তাহার।
বিবাহ করিতে বল কেমন বিচার।।
সত্যভামা বলিলেন, খুলুন্ দুয়ার।
আনিয়াছি কন্যা, দেখ চক্ষে আপনার।।
যদুকুলে জন্ম কন্যা প্রথম যৌবনী।
বিদ্যুৎবরণী রূপে ত্রৈলোক্যমোহিনী।।
অর্জ্জুন বলেন, একি আমার শকতি।
বলভদ্র জনার্দ্দন যদুকুল-পতি।।
তাঁদের অজ্ঞাতে আমি লইব যাদবী।
লজ্জা দিতে মোরে চাহ কিগো মহাদেবী।।
দেবী বলিলেন, ইহা বলিব কেমনে।
মন বান্ধিয়াছে কৃষ্ণা ঔষধের গুণে।।
পাঞ্চালের কন্যা জানে মহৌষধি-গাছ।
এক তিল পঞ্চ স্বামী নাহি ছাড়ে পাছ।।
যে লোভে নারদ-বাক্য করিলা হেলন।
দ্বাদশ বৎসর ভ্রমিতেছ বনে বন।।
ইহাতে তোমার লজ্জা কিছু নাহি ভয়।
কি মতে করিবা বিভা দ্রৌপদীর ভয়।।
পার্থ বলিলেন, দেবী না নিন্দ দ্রৌপদী।
ত্রিজগৎ-জনে খ্যাত তব মহৌষধি।।
ষোলশত-সহস্র যে অষ্ট পাটরাণী।
সবা হৈতে কোন্ গুণে তুমি সোহাগিনী।।
অপুত্রা কি রূপহীনা হীনকুল-জাত।
রুক্মিণী প্রভৃতি কন্যা পাটরাণী সাত।।
ঔষধের গুণে হরি তোমারে ডরান।
তোমার সাক্ষাতে চক্ষে অন্যে নাহি চান।।
দিব্যরত্ন বসন ভূষণ অলঙ্কার।
যেখানে যা পান কৃষ্ণ, সকলি তোমার।।
অন্য জনে দিলে তুমি পরাণ না ধর।
কহ মহাদেবী ইহা কোন্ গুণে কর।।
রুক্মিণীরে দেন কৃষ্ণ এক পারিজাত।
তাহাতে করিলে যাহা, জগতে বিখ্যাত।।
জন্মেজয় জিজ্ঞাসেন, মুনির সদনে।
কহ শুনি পারিজাত হরণ কেমনে।।
কি হেতু হইল দ্বন্দ্ব রুক্মিণী সহিত।
শুনিবারে ইচ্ছা হয় ইহার চরিত।।
মহাভারতের কথা অমৃতের ধার।
কাশী কহে, ইহা বিনা সুখ নাহি আর।।
১১৯. পারিজাত-হরণ বৃত্তান্ত
মুনি কহে, শুন কুরুবংশ-চূড়ামণি।
পারিজাত-হরণের অপূর্ব্ব কাহিনী।।
এককালে নারায়ণ বিহার কারণ।
করিলেন রৈবতক-পর্ব্বতে গমন।।
হেনকালে নারদ তথায় উপনীত।
বাজায়ে সুনাদ বীণা কৃষ্ণ-গুণ গীত।।
পারিজাত পুষ্প ছিল বীণায় বন্ধন।
গোবিন্দের হস্তেতে দিলেন তপোধন।।
পরম সুন্দর পুষ্প দেবের দুর্লভ।
যোজন পর্য্যন্ত যায় যাহার সৌরভ।।
দেখি আনন্দিত চিত্ত হৈয়া হৃষীকেশ।
পুষ্প দিয়া রুক্মিণীরে করেন সুবেশ।।
একে ত রুক্মিনী দেবী ত্রৈলোক্য-মোহিনী।
পারিজাত-সুবেশে শোভিল সবা জিনি।।
নারদ ক্ষণেক করি কথোপকথন।
বিদায় লইয়া চলিলেন তপোধন।।
কলহে সানন্দ বড় ব্রহ্মার নন্দন।
মুনি পথে যাইতে চিন্তেন মনে মন।।
সত্যভামা আগে কহি পারিজাত-কথা।
শুনিয়া কি বলে দেখি সত্রাজিত-সুতা।।
এত চিন্তি গিয়া মুনি দ্বারকা নগর।
সত্যভামা-গৃহে উপনীত ত্বরাপর।।
মুনি দেখি সত্যভামা করিলা বন্দন।
পাদ্য অর্ঘ্য অর্পিলেন বসিতে আসন।।
কোথায় আছিলা বলি জিজ্ঞাসেন সতী।
কহেন করুণ-বাক্য মুনি মহামতি।।
আজি গিয়াছিলাম যে ইন্দ্রের নগর।
পুষ্প দিয়া আমারে পূজিল পুরন্দর।।
নরের অদৃষ্টপূর্ব্ব দেবের দুর্ল্লভ।
দিল ইন্দ্র মোরে বহু করিয়া গৌরব।।
পুষ্প লভি হৈল মনে চিন্তার উদয়।
বিনা ইন্দ্র উপেন্দ্র অন্যের যোগ্য নয়।।
সে কারণে পুষ্প আনি দিলাম কৃষ্ণেরে।
পুষ্প দেখি শ্রীগোবিন্দ সানন্দ অন্তরে।।
সেইক্ষণে রুক্মিণীরে আনি জগন্নাথ।
স্বহস্তে ভূষণ করিলেন পারিজাত।।
সে পুষ্পে ভূষিবা মাত্রে ভীষ্মক দুহিতা।
রূপে ত্রৈলোক্যের নারী করিলা বিজিতা।।
সবা হৈতে প্রেয়সী তোমারে আমি জানি।
এবে জানিলাম কৃষ্ণ প্রেয়সী রুক্মিণী।।
মুনির এতেক বাক্য শুনিয়া সুন্দরী।
চিত্রের পুত্তলি প্রায় রহে মান করি।।
ছিঁড়িয়া ফেলিলা কন্ঠে ছিল যেই হার।
ঘুচাইয়া ফেলেন অঙ্গের অলঙ্কার।।
ছিঁড়িল পুষ্পের মাল্য, খসিল কুন্তল।
হাহাকার করিয়া পড়েন ভূমিতল।।
সতীর দেখিয়া কষ্ট মনে মনে হাসি।
রৈবতক-পর্ব্বতেতে বেগি যান ঋষি।।
রুক্মিণীর গৃহে কৃষ্ণ করেন ভোজন।
হেনকালে উপনীত তথা তপোধন।।
গোবিন্দ কহেন মুনি, কহ সমাচার।
পুনঃ হেথা কি হেতু আগমন তোমার।।
মুনি বলে, অবধান শ্রীমধুসূধন।
দ্বারকা নগরে গিয়াছিলাম এখন।।
সত্যভামা জিজ্ঞাসিল তোমার বারতা।
প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে হৈল পারিজাত-কথা।।
এমত হইবে বলি জানিব কেমনে।
রুক্মিণীরে দিলা পুষ্প শুনিয়া শ্রবণে।।
সেইক্ষণে মূর্চ্ছাপন্ন পড়িল ধরণী।
হাহাকার করিয়া কান্দয়ে উচ্চধ্বনি।।
ছিঁড়িয়া ফেলিল যত বসন ভূষণ।
কপালে প্রহার হস্ত করে ঘনে ঘন।।
সব সখীগণ মিলি করয়ে প্রবোধ।
না শুনিয়ে কিছুই, দ্বিগুণ করে ক্রোধ।।
প্রাণ যাক্ প্রাণ যাক্, এই মাত্র ডাকে।
দেখিয়া এলাম শীঘ্র কহিতে তোমাকে।।
শুনিয়া গোবিন্দ চিত্তে হইল বিস্ময়।
কি করিব, কি হইবে চিন্তেন হৃদয়।।
পারিজাত পুষ্প হেতু অনর্থ ভাবিয়া।
রুক্মিণীরে শ্রীকৃষ্ণ কহেন প্রবোধিয়া।।
কি করিব বৈদর্ভি আপনি কর ক্ষমা।
যেমন চরিত্র, তুমি জান সত্যভামা।।
ক্রোধেতে আপন প্রাণ ছাড়িবারে পারে।
তোমার প্রসাদ হৈল দেহ পুষ্প তারে।।
শুনিয়া রুক্মিণী হইলেন বড় দুঃখী।
গোবিন্দেরে কহেন হইয়া অধোমুখী।।
দিয়া পুষ্পরাজ পুনঃ লইবা মুরারি।
সহজে দুর্ভাগা আমি কি করিতে পারি।।
মোরে পুষ্পা দিলা বলি পুড়িছে অন্তরে।
মরুক পুড়িয়া, কেন পুষ্প দিব তারে।।
রুক্মিণীর বাক্য শুনি চিন্তেন শ্রীহরি।
নারদেরে জিজ্ঞাসেন, বৃত্তান্ত বিবরি।।
কোথায় পাইলা পুষ্প, কহ মুনিবর।
নারদ কহেন আছে স্বর্গে তরুবর।।
ইন্দ্রের রক্ষকগণ করয়ে রক্ষণ।
তাহাতে নন্দন-বন করয়ে শোভন।।
মাগিয়া পাঠাও পুষ্প সহস্র-লোচনে।
তব নাম শুনিলে দিবেন সেইক্ষণে।।
গোবিন্দ বলেন, মুনি যাহ তুমি তথা।
মোর নাম লৈয়া ইন্দ্রে কহ এই কথা।।
ক্ষীরোদ মথনে পুষ্প হয়েছে উৎপত্তি।
একা তুমি ভোগ কর কেন শচীপতি।।
দেহ পারিজাত যে আমার ভাগ আছে।
না দিলে সহজে পুষ্প, দুঃখ পাবে পাছে।।
প্রথমেতে সম্প্রীতে মাগিহ তপোধন।
না দিলে এ সব পিছে কহিবা তখন।।
এত বলি কৃষ্ণ করি নারদে প্রেরণ।
দ্বারাবতী যান সত্যভামার কারণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
কাশীদাস কহে, সাধু পিয়ে কর্ণ ভরি।।
১২০. সত্যভামার মানভঞ্জন
পড়ি আছে সত্যভামা ভূমির উপর।
মুক্ত কেশী, গড়াগড়ি ধূলায় ধূসর।।
বসন-ভূষণ ভিজে নয়নের জলে।
শশিকলা যেমন পতিতা ভূমিতলে।।
চতুর্দ্দিকে ব্যজন করিয়া সখীগণ।
সুগন্ধি সলিল সিঞ্চে, চাপয়ে চরণ।।
সঘনে নিশ্বাস বহে হস্ত দিয়া নাকে।
দেখিয়া কৃষ্ণের অশ্রু নয়নে না থাকে।।
আপনি ব্যজনী লৈয়া সখী-হস্ত হৈতে।
মন্দ মন্দ বায়ু কৃষ্ণ লাগিয়া করিতে।।
গোবিন্দের আগমনে উজ্জুল হৈল ধাম
ষড়ঋতু লৈয়া যেন উপনীত কাম।।
আমোদিত হৈল গৃহ অঙ্গের সৌরভে।
সহস্র সহস্র অলি ধায় ভোঁ ভোঁ রবে।।
অচেতন ছিল সখী পাইল চেতন।
সৌরভে জানিল গৃহে কৃষ্ণ-আগমন।।
উচ্চৈঃস্বরে কান্দে, ক্রোধে চক্ষু নাহি মেলে।
ক্ষণেক থাকিয়া সব সখীগণে বলে।।
কে দহে আমার অঙ্গ হুতাশন-প্রায়।
রুক্মিণীর পতি কিবা আইল হেথায়।।
এত বলি শিরে মারে কঙ্কণের ঘাত।
দুই হস্তে হস্ত ধরিলেন জগন্নাথ।।
কেন হেন বল, রুক্মিণীর পতি বলি।
সত্যভামা-প্রাণ আমি, চাহ চক্ষু মেলি।।
আমার কি অপরাধ না পাই ভাবিয়া।
কি হেতু এতেক কষ্ট দাও প্রাণপ্রিয়া।।
এত বলি কৃষ্ণ বসাইলেন ধরিয়া।
মুখ মুছাইলেন আপন বস্ত্র দিয়া।।
গোবিন্দের এতেক বিনয় বাক্য শুনি।
কান্দিতে কান্দিতে কহে আধ আধ বাণী।।
মুখেতে তোমার সুধা, হৃদয়ে নিষ্ঠুর।
এবে জানিলাম তুমি কত বড় ক্রূর।।
পারিজাত পুষ্পরাজ অতুল সুবাস।
রুক্মিণীরে দিলা মোরে করিয়া নিরাশ।।
কার শক্তি সহিবে এতেক অপমান।
এক্ষণে ত্যজিব প্রাণ তোমা বিদ্যমান।।
গোবিন্দ কহেন, প্রিয়ে ত্যজহ বিলাপ।
কোন্ দ্রব্য পারিজাত, চিন্ত এত তাপ।।
এক পুষ্প হেতু তব ক্রোধ হইয়াছে।
তোমারে আনিয়া দিব পুষ্প সহ গাছে।।
শুনি সত্যভামা দেবী উল্লাসিত মন।
হাসিয়া কহেন কৃষ্ণ মেলিয়া নয়ন।।
আসনে বাসাইলেন উঠি যদুনাথে।
চরণ প্রক্ষালিলেন সুগন্ধি জলেতে।।
ভোজন করান কৃষ্ণে পরম-হরিষে।
তাম্বূল যোগান দেবী বসি বামপাশে।।
রত্নময় পালঙ্কেতে করিয়া শয়ন।
আনন্দে রজনী বঞ্চিলেন দুইজন।।
প্রভাতে উঠিয়া কৃষ্ণ কৈলা স্নানদান।
হেনকালে উপনীত মুনি ঢেঁকিযান।।
কলহ-বিদ্যায় বিজ্ঞ দ্বন্দ্বপ্রিয় ঋষি।
কহেন কৃষ্ণের আগে গদগদ ভাষি।।
কি আর কহিব কথা, কহিবারে লাজ।
যতেক কহিল মোরে শুন দেবরাজ।।
শুন শুন দেবগণ কথন অদ্ভুত।
নারদ আইল হৈয়ে গোপালের দূত।।
দেবের দুর্ল্লভ পারিজাত পুষ্পরাজ।
মানুষের হেতু মাগে মুখে নাহি লাজ।।
এত অহঙ্কার কেন গোপালের হৈল।
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত বুঝি সব পাসরিল।।
কংস-ভয়ে নন্দগৃহে ছিল লুকাইয়া।
গোধন রাখিত নিত্য গোপান্ন খাইয়া।।
একদিন চুরি করি খেয়েছিল ননী।
হাতে ধরি বান্ধিলেক নন্দের ঘরণী।।
বৃষ অঘ সর্প বক করিল সংহার।
সেই হেতু দেখি তার এত অহঙ্কার।।
জরাসন্ধ ভয়ে স্থল নাহিক সংসারে।
লুকাইয়া রহে গিয়া সমুদ্র-ভিতরে।।
হেনজনে পারিজাত পুষ্পে হৈল সাধ।
নাহি দিলে, বলিয়াছে করিবে প্রমাদ।।
হেন কটূত্তর কি আমার প্রাণে সহে।
কি করিব দূত আর অন্যজন নহে।।
যাহ যাহ নারদ, না থাক মম কাছে।
কহ গিয়া, করুক সে যত শক্তি আছে।।
নারদের মুখে শুনি এতেক বচন।
ক্রোধেতে ঘূর্ণিত হৈল যুগল-লোচন।।
গোবিন্দ বলেন, ইন্দ্র হইয়াছে মত্ত।
আপনি করিল লঘু আপন মহত্ত।।
আজি চূর্ণ করিব তাহার অহঙ্কার।
চলহ, সাক্ষাতে তুমি দেখ আপনার।।
সে সকল কথন হইল পাসরণ।
গোকুলেতে ইন্দ্রে দূর করিনু যখন।।
সাত দিন কৈল যত ছিল পরাক্রম।
নহিলেক গোপকুঁলে পূজা লৈতে ক্ষম।।
অহঙ্কার তার উচ্চে সুরপুরে স্থিতি।
অহঙ্কার তার আমি রহি নীচে ক্ষিতি।।
আর অহঙ্কার, চড়ে ঐরাবতোপরে।
আর অহঙ্কার, বজ্র-অস্ত্র ধরে করে।।
আর অহঙ্কার, তার সহস্র-লোচনে।
মত্ততা করিব দূর ধূলির অঞ্জনে।।
সুরপুর হৈতে পাড়িব ভূমিতলে।
প্রহারে ভাঙ্গিব গজরাজ-কুম্ভস্থলে।।
অব্যর্থ মুনির অস্থি, বজ্র অস্ত্র রাজ।
ব্যর্থ করি হাসাইব দেবের সমাজ।।
ভাঙ্গি বন সমূলে আনিব পারিজাত।
দেখি রক্ষা কেমনে করিবে শচীনাথ।।
এত বলি গোবিন্দ স্মরেন খগেশ্বর।
অগ্রে দাঁরাইল খগরাজ যোড়করে।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যাব ইন্দ্রের নগরে।
আনিব হেথায় পারিজাত তরুবরে।।
গরুড় বলিল, প্রভু তুমি যাও কেনে।
আজ্ঞা দিলে আমি যাই ইন্দ্রের ভুবনে।।
নন্দন-বনের সহ পুষ্প পারিজাত।
এইক্ষণে হেথা আনি দিব জগন্নাথ।।
গোবিন্দ বলেন, নহে অশক্য তোমাত।
কিন্তু আমি তারে লঘু করিব সাক্ষাতে।।
এত বলি গোবিন্দ নিলেন প্রহরণ।
কৌমোদকী গদা, খড়্গ চক্র সুদর্শন।।
ধরিয়া শারঙ্গ ধনু চড়াইয়া গুণ।
অর্পিলেন গরুড়ে অক্ষয় যার তূণ।।
বেশ ভূষা করিলেন কিরীট কুণ্ডল।
মেঘেতে শোভিল যেন মিহির-মণ্ডল।।
কণ্ঠেতে ভূষণ গজ-মুকুতার হার।
ঝিকিমিকি করে যেন বিদ্যুৎ-আকার।।
বক্ষঃস্থলে রত্নরাজ শোভিল কৌস্তুভ।
দেখিয়া মূর্চ্ছিত হয় কোটি মনোভব।।
অঙ্গদ বলয় আর কেয়র ভূষণ।
আঁটিয়া পরেন পীতবরণ বসন।।
সর্ব্বাঙ্গে লেপন কৈল চন্দন কস্তুরী।
কাঁকালেতে বন্ধন করেন খড়্গ ছুরি।।
হইলেন গরুড়ে আরূঢ় জগন্নাথ।
সত্যভামা বলেন যাইব আমি সাথ।।
দেখিব ইন্দ্রের পুরী, কেমন ইন্দ্রাণী।
কিরূপে তোমার সহ যুজে বজ্রপাণি।।
শুনি হরি তাঁরে বসাইলেন যে বামে।
তবে ডাকি আনিল সাত্যকি আর কামে।।
দোঁহারে বলেন কৃষ্ণ, চল মোর সঙ্গে।
ইন্দ্র সহ সমর দেখহ আজি রঙ্গে।।
কৃষ্ণাজ্ঞা পাইয়া খগে করি আরোহণ।
চলিলেন সমর দেখিতে চারি জন।।
হেনকালে বলভদ্র প্রভৃতি যাদব।
বলিল তোমার সহ যাব মোরা সব।।
গোবিন্দ বলেন থাক দ্বারকা-রক্ষণে।
শূন্য জানি আজি কি করিবে দুষ্টগণে।।
এত বলি প্রবোধিয়া সবারে রাখিলা।
চলহ বলিয়া আজ্ঞা গরুড়েরে দিলা।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।
১২১. শ্রীকৃষ্ণের সুরলোকে গমন
নারদ বলিলা, তবে শুন নারায়ণ।
অদিতি কহিলা যত কুণ্ডল কারণ।।
নরক আনিল বলে অদিতি-কুণ্ডল।
লুটিয়া অমরাবতী অমরী সকল।।
পৃথিবীর পুত্র হয় নরক দুর্ম্মতি।
তারে না মারিলে নহে স্বর্গের বসতি।।
শুনিয়া গোবিন্দ তথা করিল গমন।
নরকেরে মারিয়া পাইল কন্যাগণ।।
ষোড়শ-সহস্র কন্যা দেবের কুমারী।
এককালে বিবাহ করিলেন মুরারি।।
অদিতির কুণ্ডল দিলেন অদিতিরে।
তথা হৈতে চলিলেন অমর-নগরে।।
নন্দন-কানন মধ্যে হৈয়া উপনীত।
দেখেন কুসুম-রাজ গন্ধে আমোদিত।।
সাত্যকিরে বলেন, আনহ তরুবর।
শুনিয়া সাত্যকি তথা গেলেন সত্বর।।
বৃক্ষের রক্ষণেতে আছিল বহু রক্ষ।
হাতে অস্ত্র লইয়া ধাইল লক্ষ লক্ষ।।
সাত্যকি বলিল, প্রাণ যদি সবে চাহ।
না করহ দ্বন্দ্ব, ইহা ইন্দ্রেরে জানাহ।।
ধাইয়া ইন্দ্রের ঠাঁই সবে গিয়া কহে।
চল শীঘ্র দেবরাজ, বিলম্ব না সহে।।
গরুড়-আরূঢ় যে মনুষ্য চারিজন।
ভাঙ্গিয়া লইয়া পুষ্প পারিজাত-বন।।
শুনিয়া ইন্দ্রের চিত্তে হইল স্মরণ।
পারিজাত লইতে আইল নারায়ণ।।
ক্রোধে থরথর কলেবর, কাঁপে শক্র।
সহস্র লোচন-ফিরে যেন কালচক্র।।
নানা অস্ত্র লইয়া সমরে কৈল সাজ।
হাতে বজ্র লইয়া চড়িল গজরাজ।।
শচী বলে, যাব আমি সংহতি তোমার।
কিরূপ হইবে যুদ্ধ দেখিব দোঁহার।।
শুনি ইন্দ্র বসাইল বামে আপনার।
শচী, জয়দেব সখা আর জয়ন্তকুমার।।
হেনমতে আরোহণ কৈল চারিজন।
চালাইয়া দিল গজ যথা নারায়ণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
কাশীদাস কহে, শুনি তরি ভববারি।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র