মহাভারত:বিরাটপর্ব-০৩১-০৩৫

৩১. অর্জ্জুনের যুদ্ধে আগমন ও গোধন মোচন
হেনকালে উপনীত ইন্দ্রের নন্দন।
গর্জ্জয়ে বানরধ্বজ শ্বেত অশ্বগণ।।
এক ক্রোশ দূরে দৃষ্টি করিয়া তখন।
বৈরাটীর প্রতি পার্থ বলেন বচন।।
চারিভিতে দেখিতেছি বহু রথিগণ।
দুর্য্যোধনে নাহি দেখি কিসের কারণ।।
পশ্চাতে করিব যুদ্ধ, রাজারে খুঁজিব।
অগ্রে চল তোমার গোধন ছাড়াইব।।
বামভিতে লহ রথ, যথা গবীগণ।
শুনি রথ চালাইল বিরাট-নন্দন।।
দূরে থাকি ভীষ্ম কৃপে করেন প্রণতি।
চারি বাণ মারিলেন আচার্য্যের প্রতি।।
দুই শর দিয়া পড়ে গুরু-পদতলে।
দুই অস্ত্র পরশিল দুই কর্ণমূলে।।
দেখিয়া হইল গুরু আনন্দে বিভোর।
বড়ভাগ্যে, দেখিলাম মুখ আজি তোর।।
সারথি কহিল, দেব কর অবধান।
প্রহারী জনেরে কেন এতেক সম্মান।।
হাসিয়া কহেন গুরু, প্রহারী এ নয়।
অশ্বত্থামাধিক মম পুত্র ধনঞ্জয়।।
এই যে যুগল অস্ত্র চরণে পড়িল।
চরণে ধরিয়া মোরে প্রণাম করিল।।
দুই বাণ পরশিল দুই কর্ণে আর।
এক কর্ণে নিবেদিল শুভ সমাচার।।
আর কর্ণে কহিলেক, আসিলাম আমি।
ত্রয়োদশ বৎসর সময় অনুক্রমি।।
যথোচিত ভাগ দিতে কহ দুর্য্যোধনে।
যুদ্ধ নহে ভাল, ভাল চাহ এইক্ষণে।।
ইহার উত্তর আমি করিব বিধান।
এত বলি প্রহারিল দ্রোণ দুই বাণ।।
এক বাণ শিরে চুম্বি ধরণী পড়িল।
আর বাণ কর্ণমূলে প্রত্যুত্তর দিল।।
উত্তর কহিল, কহ পাণ্ডব-মহান।
কে তোমারে প্রহারিল এই দুই বাণ।।
ভাগ্যে কর্ণমূলে বান না কৈল ঘাতন।
মোর চিত্তে মারিলেক বলহীন জন।।
পার্থ বলে, দ্রোণ গুরু জগতে বিদিত।
সদাকাল হন তিনি মোর প্রতি প্রীত।।
শিরেতে চুম্বন করি পড়িল যে বাণ।
বহুদিন সমাগমে করিল কল্যাণ।।
আর বাণ কর্ণমূলে কহে প্রত্যুত্তর।
শঙ্কা নাহি, যত সাধ্য করহ সমর।।
এতেক বলিয়া পার্থ পায় মহাতাপ।
কোথায় আছয়ে দুষ্ট কুরুকুল-পাপ।।
আজি তারে দিব আমি সমুচিত দণ্ড।
কেবল রাখিব প্রাণ করি লণ্ডভণ্ড।।
কাটিয়া মুকুট স্বর্ণছত্র নবদণ্ড।
রথ গজ কাটিয়া করিব খণ্ড খণ্ড।।
আজি যদি দুষ্টাচার পড়ে মম আগে।
মুহূর্ত্তেকে প্রহারিব সিংহ যেন মৃগে।।
এই যে সমূহ সেনা দেখহ উত্তর।
শীঘ্র রথ লহ মোর ইহার ভিতর।।
দুর্য্যোধন লুকাইয়া আছে রথিমাঝ।
সেই সে আমার শত্রু, অন্যে নাহি কাজ।।
অস্ত্র মারি সমাকুল করি সেনাগণ।
তবে ত দুর্য্যোধনের পাব দরশন।।
অহঙ্কারী মানী মূঢ় অতি দুরাচার।
আজি আমি গর্ব্ব চূর্ণ করিব তাহার।।
এতেক বলিয়া বীর তাহে প্রবেশিয়া।
দুর্য্যোধনে নাহি পান অনেক খুঁজিয়া।।
সৈন্য মধ্যে না পাইয়া রাজা দুর্য্যোধনে।
সিংহ যেন দুঃখচিত্ত নিরামিষ বনে।।
উত্তরে বলেন, এই দেখ বামভাগে।
লুকাইয়া কুরুপতি আছে এই দিকে।।
চালাহ সত্বর রথ যথা দুর্য্যোধন।
আজ্ঞামাত্রে চালাইল বিরাটনন্দন।।
সৈন্যের নিকটে পার্থ হন উপনীত।
দ্বিতীয় প্রহরে যেন আদিত্য উদিত।।
মস্তকে কিরীট ইন্দ্রদত্ত, অতি শোভা।
কর্ণেতে কুণ্ডল ইন্দ্রদত্ত, সূর্য্য আভা।।
গাণ্ডীব ধনুক অগ্নিদত্ত, বামহাতে।
অক্ষয় যুগল তূণ শোভে দুই ভিতে।।
শঙ্খ সিংহনাদ করে, কণ্ঠে মণি হার।
কাঁকালে বন্ধন খড়্গ ছুরি তীক্ষ্ণধার।।
রথের নির্ঘোষ গর্জ্জে বীর হনুমান।
আসিয়া ইন্দ্রের পুত্র ইন্দ্রের সমান।।
দুষ্টিমাত্রে সকলেই মূর্চ্ছিত হইল।
আছুক যুদ্ধের কার্য্য, দেখি পলাইল।।
অর্জ্জুনে দেখিয়া কন গঙ্গার তনয়।
ভাগ্যে আজি দেখিলাম বীর ধনঞ্জয়।।
ধর্ম্মযজ্ঞ বান্ধবপ্রিয় বলে মহাবল।
পাশাকাল দুঃখ স্মরি দিতে এল ফল।।
অন্য হেতু নহে এই দুর্য্যোধনে খুঁজে।
সিংহ যেন মৃগ খুঁজি বুলে বনমাঝ।।
আমো হৈতে দূরে যদি পায় দুর্য্যোধন।
তখনি লইয়া যাবে করিয়া বন্ধন।।
এত চিন্তি দুর্য্যোধনে রক্ষার কারণ।
শীঘ্রগতি ধেয়ে আসে যত রথিগণ।।
দুর্য্যোধন বেড়ি সবে রহে চারি পাশে।
দেখিয়া অর্জ্জুন বীর মনে মনে হাসে।।
হাসিয়া বলেন, শুন বিরাট নন্দন।
প্রাণভয়ে লুকাইয়া আছে দুর্য্যোধন।।
চল চল আগে তব গোধন ছাড়াব।
পাছে কুরুকুল-ক্লীবে খুঁজিয়া মারিব।।
রথ চালাইয়া দিল বিরাট নন্দন।
যথায় বেড়িয়া সৈন্য আছয়ে গোধন।।
পার্থ কহে, ক্ষণকাল রাখ হেথা রথ।
সৈন্য ভাঙ্গি গোধনের করি দিই পথ।।
এত বলি পার্থ বীর কৈল শরজাল।
বিচিত্র বরণ অস্ত্র যেন কালব্যাল।।
মুষলের ধারে যেন বর্ষে জলধর।
চক্ষুর নিমিষে আচ্ছাদিল দিনকর।।
নাহি দেখি অষ্ট দিক্ পৃথিবী আকাশ।
শূন্য পথ রুদ্ধ হৈল, না বহে বাতাস।।
মেঘে অন্ধকার যেন অমাবস্যা রাতি।
সারথিরে দেখিতে না পায় রথে রথী।।
অস্ত্র অগ্নি জ্বলে যেন খদ্যোত আকার।
সৈন্যেতে অক্ষত জন না রহিল আর।।
নাহি দেখি কোন দিক্ পলাইতে পথ।
অপ্রমিত কুরুসৈন্য ভয়ে জড়বৎ।।
চমৎকার হয়ে ডাকি বলে সর্ব্বসৈন্য।
ধন্য মহাবীর, তব জননী যে ধন্য।।
এতাদৃশ কর্ম্ম নাহি করে ত্রিভুবনে।
তোমা বিনা এই কর্ম্ম করে কোন্ জনে।।
শুনি তবে পার্থ বীর পূরে দেবদত্ত।
যাহার শ্রবণে হয় রিপু হীন-সত্ত্ব।।
গাণ্ডীবে টঙ্কার দেন আকর্ণ পূরিয়া।
রথের শ্বেতাশ্ব চারি উঠিল গর্জ্জিয়া।।
ধ্বজে হনূমান করে ভয়ঙ্কার নাদ।
চারি শব্দে তিন লোক গণিল প্রমাদ।।
শূণ্যেতে বিমানস্থিত যত জন ছিল।
ঘোর শব্দে সবে মূর্চ্ছা হইয়া পড়িল।।
অজ্ঞান হইয়া পড়ে যত কুরুবল।
সৈন্যেতে বেড়িয়াছিল গোধন সকল।।
মহাশব্দে ধেনুগণ হইয়া অস্থির।
ভাঙ্গি সৈন্যদল বেগে হইল বাহির।।
প্রলয়-সমুদ্র কিসে রাখিবেক কূলে।
বালিবান্ধে কি করিবে নদীস্রোতজলে।।
পুচ্ছ উচ্চ করি ধায় যত গবী সব।
দক্ষিণে বাহির হৈল করি হাম্বারব।।
চরণে শৃঙ্গেতে মর্দ্দি বহু সৈন্যগণ।
বাহির হইল সব মৎস্যের গোধন।।
গোপগণ প্রতি বলিলেন ধনঞ্জয়।
লয়ে যাহ গুরু, পূর্ব্বে আছিল যথায়।।
উত্তরে চাহিয়া তবে বলেন কিরীটী।
গবী মুক্ত করি তব দিলাম বৈরাটী।।
চিত্তে পাছে কর, জিনিলাম সব কুরু।
গৃহে যাব পাইলাম আপনার গরু।।
ভুবন-বিজয়ী এই কৌরবের সেনা।
ইন্দ্র তুল্য পরাক্রম এক এক জনা।।
শরানলে দহিবারে পারে ভূমণ্ডল।
নাহি জিনি গোধন জীয়ন্তে এ সকল।।
দূরেতে আছয়ে, তেঁই অস্ত্র নাহি মারে।
শীঘ্র রহ লহ মম সৈন্যের ভিতরে।।
ইহা শুনি বেগে রথ চালায় উত্তর।
বহু সৈন্য জিনি গেল সৈন্যের ভিতর।।
যথায় নৃপতি কুরুরাজ দুর্য্যোধন।
তথায় লইলা রথ বিরাট নন্দন।।
দেখিয়া ধাইল সর্ব্ব কুরু-সেনাপতি।
নৃপতির রক্ষা হেতু অতি শীঘ্রগতি।।
সহস্রেক শ্রেষ্ঠ রথী যুদ্ধে দিল মন।
ধাইয়া আসিল বেগে সূর্য্যের নন্দন।।
সহস্রেক রথী লয়ে কুরু-বংশপতি।
দুর্য্যোধন রক্ষা হেতু ভীষ্ম মহামতি।।
এক ভিতে নৃপতির ভাই ঊনশত।
আগুলিল পার্থে আসি সহস্রেক রথ।।
দ্রোণ কৃপ অশ্বত্থামা আদি মহারথী।
এক ভিতে রক্ষা হেতু রহে কুরুপতি।।
ভীষদশন হস্তী পর্ব্বত-আকার।
মুষল মুদগর শুণ্ডে ধরে সবাকার।।
সহস্র সহস্র মত্ত গজ আগে করি।
আপনি রহিল পাছু নানা অস্ত্র ধরি।।
সিংহনাদ শঙ্খনাদ ধনুক টঙ্কার।
চতুর্দ্দিকে প্রপূরিল করি মার মার।।
মহাভারতের কথা পারাবারে তরী।
কাশীরাম দাস রচে কৃষ্ণ-পদে স্মরি।।
৩২. অর্জ্জুন কর্ত্তৃক উত্তরকে
কুরুসৈন্যের পরিচয় প্রদান
উত্তর বলিল, দেব কহিবে আমারে।
কোন্ কোন্ যোদ্ধা এই আসিল সমরে।।
পার্থ কহিলেন, দেখ বিরাট-কুমার।
সুবর্ণের বেদী শোভে রথধ্বজে যাঁর।।
রক্তবর্ণ চারি অশ্ব বহে রথখান।
দ্রোণগুরু কুরুকুলে আচার্য্য প্রধান।।
যম সম শত্রু হৈলে দৃষ্টে করে ভেদ।
অনুপম রণে, এই যেন ধনুর্ব্বেদ।।
নহিলে নহিবে হেন বীর অন্য জনে।
সশস্ত্র থাকিলে জিনি অজেয় ভুবনে।।
ভরদ্বাজ মহামুনি ঘৃতাচী দেখিয়া।
গঙ্গাজলে বীর্য্য তাঁর পড়িল খসিয়া।।
দ্রৌণীমধ্যে সযতনে রাখে তপোধন।
দ্রৌণীতে জন্মিল তেঁই নাম হৈল দ্রোণ।।
পরশুরামের যত দিব্য বিদ্যা ছিল।
অস্ত্র ধনু সহ বিদ্যা ইহারে যে দিল।।
তাঁহার দক্ষিণে দেখ তাঁহার অঙ্গজে।
সিংহের লাঙ্গুল শোভে যাঁর রথধ্বজে।।
কৃপীগর্ভে জন্ম হৈল কৃপের ভাগিনা।
মৃত্যুপতি ভয় করে, অন্য কোন্ জনা।।
কাঞ্চনের দণ্ড ধরে কৃপ মহামতি।
শরদ্বান ঋষিপুত্র গৌতমের নাতি।।
শরবনে ভ্রাতা ভগ্নী দোঁহে জন্মেছিল।
আমার প্রপিতামহ শান্তনু পালিল।।
কৃপ কৃপী নাম দিল শরদ্বান তাত।
আমার বংশেতে গুরু আচার্য্য বিখ্যাত।।
ওই যে দেখহ উচ্চতর রথধ্বজ।
বিচিত্র কলসধ্বজ শোভে রত্নগজ।।
সেই রথে বৈকর্ত্তন কর্ণ যার নাম।
সুরাসুরে জানে যার বল অনুপাম।।
জামদগ্ন্য রামের এ শিষ্য প্রিয়তর।
আমার সহিত সদা বাঞ্ছয়ে সমর।।
করিব মানস তার আজি আমি পূর্ণ।
মম সহ যুদ্ধে আজি গর্ব্ব হবে চূর্ণ।।
চতুর্দ্দিকে সুবেষ্টিত শ্বেতচ্ছত্রগণ।
ওই দেখ মহামনী রাজা দুর্য্যোধন।।
বৈদুর্য্য মুকুতা মণি ধ্বজ মনোহর।
যেই রথধ্বজে চিত্র ধবল কুঞ্জর।।
তাহার রক্ষার্থে তার নিকটে দেখহ।
ভারত-বংশের শ্রেষ্ঠ মম পিতামহ।।
পঞ্চ গোটা কনকের তাল যাঁর ধ্বজে।
মহাযোদ্ধা শীঘ্রহস্ত সর্ব্বলোকে পূজে।।
শান্তপুর পুত্র জন্মে গঙ্গার উদরে।
সত্যবতী কন্যা আনি দিলেন বাপেরে।।
রাজ্য দারা ত্যাগ কৈল বাপের কারণ।
তুষ্ট হয়ে তারে বর দিল সেইক্ষণ।।
ইচ্ছামৃত্যু হও তুমি সংসার ভিতরে।
নাহিক মরণ, নিজ ইচ্ছা হৈলে মরে।।
ভীষ্ম বলি নাম তাঁর ঘোষে ভূমণ্ডলে।
ক্ষত্র-কুলান্তক রামে জিনিলেক বলে।।
মহাভারতের কথা অমৃতলহরী।
কাশীরাম কহে, পাপ তাপ ব্যথাহারী
৩৩. অর্জ্জুনের সহিত কর্ণের সংগ্রাম ও পলায়ন
হেনমতে যত রথ রথী মহাবীরে।
একে একে দেখালেন অর্জ্জুন উত্তরে।।
পুনরপি উত্তরেরে কহে মহামতি।
কর্ণের সম্মুখে রথ লহ শীঘ্রগতি।।
আকাশ হইতে শীঘ্র তারা যেন ছুটে।
চালাইয়া দিল রথ কর্ণের নিকটে।।
কর্ণের সম্মুখে ছিল যত রথিগণ।
অর্জ্জুন উপরে করে বাণ বরিষণ।।
শেল শূল শক্তি জাঠি মুষল মুদগর।
পরশু ভূষণ্ডী ভিন্দিপাল যে তোমর।।
বরিষাকালেতে যেন বর্ষে জলধর।
ঝাঁকে ঝাঁকে চতুর্দ্দিকে পড়িছে তোমর।।
পর্ব্বত-আকার হস্তী ভীষণ-দর্শন।
চরণে কম্পিত ক্ষিতি, জলদ গর্জ্জন।।
দেখিয়া হাসিয়া বীর কুন্তীর নন্দন।
দিব্য অস্ত্র গাণ্ডীবেতে যোড়েন তখন।।
না হতে নিমেষ পূর্ণ, ছাড়িতে নিশ্বাস।
শরজাল করি প্রপূরিল দিকপাশ।।
বরিষাকালেতে যেন বরিষয়ে মেঘে।
দিনকর-তেজ যেন সর্ব্ব ঠাঁই লাগে।।
পদাতি কুঞ্জর রথী যত হয়গণ।
জর্জ্জর করিয়ে বিন্ধে ইন্দ্রের নন্দন।।
চালায় সারথি রথ অতি বিচক্ষণ।
ক্ষিপ্রগামী মনোজব জিনিয়া পবন।।
বামে দক্ষিণেতে ক্ষণে আগে পিছে ছুটে।
ভূমিতে ক্ষণেক পড়ে, ক্ষণে শূণ্যে উঠে।।
ক্ষণেক ভিতরে যায়, ক্ষণেক বাহির।
রথবেগে পড়ি গেল বহু মহাবীর।।
মৃগেন্দ্র বিহরে যেন গজ্ন্দ্রে মণ্ডলে।
নাগে নাগান্তক যেন মারে কতূহলে।।
কাটিল রথের ধ্বজ সারথি সহিত।
খণ্ড খণ্ড হয়ে ক্রমে পড়ে চতুর্ভিত।।
ধনুর সহিত বাম হাত ফেলে কাটি।
বুকে বাজি পড়ে কেহ, কামড়ায় মাটি।।
অস্ত্রানলে দগ্ধ কেহ, করে ছটফটি।
কাটিয়া ফেলিল কারো দন্ত দুই পাটি।।
শ্রবণ নাসিকা গেল, দেখি বিপরীত।
কাটিয়া ফেলিল মুণ্ড কুণ্ডল সহিত।।
মধ্যদেশ কাটি পাড়ে কত শত বীর।
অস্ত্রাঘাতে কোন রথী উভে হৈল চীর।।
কাটিল রথের ধ্বজ করি খণ্ড খণ্ড।
মধ্য চক্রে কাটিলেন সারথির মুণ্ড।।
তীক্ষ্ণবাণাঘাতে মত্ত কুঞ্জর সকল।
আর্ত্তনাদ করি পড়ে মন্থি বহু দল।।
চক্রাকারে ভ্রমি পড়ে ভূমে দিয়া দন্ত।
পেটেতে বাজিয়া কার, বাহিরায় অন্ত্র।।
এইমত মহামার করিল ফাল্গুনি।
সকল সৈন্যেরে বিন্ধি করিল চালনি।।
দুই দুই অঙ্গুলি অন্তরে অঙ্গ ছেদি।
পড়িল অনেক সৈন্য, রক্তে বহে নদী।।
বিচিত্র হইল শোভা ধরণীর তলে।
পড়িল অনেক সৈন্য, রক্তে বহে নদী।।
বিচিত্র হইল শোভা ধরণীর তলে।
অশোক কিংশুক যেন বসন্তের কালে।।
একেশ্বর ধনঞ্জয় কুরুসৈন্য দলি।
মহাবাতাঘাতে যেন পড়িল কদলী।।
কালাগ্নি সমান শিক্ষা দেখি পার্থ বীর।
চক্ষু মেলি কার শক্তি চাহিবারে পারে।।
মারিয়া সকল সৈন্য পার্থ ধনুর্দ্ধর।
চালাইয়া দেন রথ কর্ণের গোচর।।
কর্ণের অঙ্গজ ছিল বিকর্ণ নামেতে।
আগুলিল পার্থে আসি ধনুঃশর হাতে।।
হাসেন অর্জ্জুন বীর দেখিয়া বিকর্ণ।
ভুজঙ্গে পাইল যেন বুভুক্ষু সুপর্ণ।।
দুই বাণে ধ্বজ ধনু কাটিয়া তাহার।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণে কুণ্ড কাটিলেক তার।।
বিকর্ণ পড়িল, দেখি কর্ণে হৈল ক্রোধ।
টঙ্কারিয়া ধনুর্গুণ যায মহাযোধ।।
সিংহ দেখি সিংহ যেন করেয়ে গর্জ্জন।
দুই মত্ত হস্তী যেন হস্তিনী কারণ।।
চিরকাল স্ববাঞ্ছিত মিলাইল বিধি।
দরিদ্র পাইল যেন মহারত্ন নিধি।।
দোঁহে দোঁহে দোঁহাকার হইল হরষ।
কর্ণে চাহি ধনঞ্জয় বলেন কর্কশ।।
রাধাসুত ত্যজ গর্ব্ব, ত্যজ সিংহনাদ।
আজি তব ঘুচাইব সংগ্রামের সাধ।।
তোমারে মারিব, সবে দেখুক নয়নে।
নিস্তেজ করিব আজি রাজা দুর্য্যোধনে।।
যখন কপটে দুষ্ট খেলাইলি পাশা।
মনে জাগে যত কিছু কৈলে কটুভাষা।।
সেই সব আজি তোমা করাব স্মরণ।
বহুদিনে তব সহ হৈল দরশন।।
হাসিয়া বলিল কর্ণ, দৈব বলবান।
যারে খুঁজি সেই জন এল বিদ্যমান।।
তোরে মারি পাণ্ডবের দর্প করি চূর্ণ।
দুর্য্যোধন-মনোরথ করিব যে পূর্ণ।।
এত বলি কর্ণবীর পূরিল সন্ধান।
অর্জ্জুন উপরে প্রহারিল দশ বাণ।।
গাণ্ডীব ধনুকে চারি, চারি অশ্বে চারি।
উত্তরের দুই ভুজে দুই অস্ত্র মারি।।
ছাড়েন বিংশতি বাণ ইন্দ্রের নন্দন।
দশ অস্ত্রে কর্ণ বীর কাটে সেইক্ষণ।।
পুনঃ ষড়বিংশ বাণ ছাড়েন কিরীটী।
সেই অস্ত্র কর্ণ বীর ফেলাইল কাটি।।
আকর্ণ পূরিয়া কর্ণ এড়ে পঞ্চ বাণ।
অর্দ্ধপথে পার্থ করিলেন দশ খান।।
দোঁহে দোঁহা অস্ত্র মারে, যেবা যত জানে।
বরিষাকালেতে যেন বর্ষে মেঘগণে।।
বজ্রের প্রহারে যেন পড়য়ে ঝঞ্ঝনা।
ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি হয় আগুণের কণা।।
বাঁশবনে অগ্নি দিলে যথা শব্দ উঠে।
চট্ চট্ শব্দে অঙ্গে তথা অস্ত্র ফুটে।।
ঘন শঙ্খ পূরে ঘন ঘন হুহুঙ্কার।
শব্দেতে পূরিল ক্ষিতি ধনুক টঙ্কার।।
সহস্র সহস্র বাণ একবারে এড়ে।
অন্ধকার করি দোঁহাকার গায় ‍পড়ে।।
দোঁহে অস্ত্র নিবারিছে, রণে বিচক্ষণ।
বায়ুতে উড়ায় যেন মেঘ বরিষণ।।
সাধু কর্ণ, বলি ডাকে যত কুরুবল।
সাধু পার্থ, বলি ডাকে অমর সকল।।
ক্রোধে পার্থ দিব্য অস্ত্র করেন সন্ধান।
কাটিয়া কর্ণের ধ্বজ করে খান খান।।
চারি অশ্ব কাটি তবে কাটে ধনুর্গুণ।
সারথির মাথা তবে কাটেন অর্জ্জুন।।
কর্ণেরে বিরথী করি সারথিরে নাশি।
ভীষ্ম দ্রোণ প্রতি চান, মুখে মৃদু হাসি।।
শীঘ্রতর অন্য রথ যোগায় সারথি।
আর ধনু লয় কর্ণ অতি শীঘ্রগতি।।
লজ্জিত হইয়া কর্ণ সর্পবাণ এড়ে।
সহস্র সহস্র সর্প পার্থেগিয়া বেড়ে।।
এড়েন গরুড়-বাণ ইন্দ্রের নন্দন।
ধরিয়া সকল ফণী করিল ভক্ষণ।।
অগ্নিবাণ এড়িলেন বীর ধনঞ্জয়।
দশদিক মহাতেজ ধরে অগ্নিময়।।
যেমন প্রলয়কালে সংহারিতে সৃষ্টি।
ঝাঁকে ঝাঁকে সৈন্যে হৈল হুতাশন-বৃষ্টি।।
পলায় সকল সৈন্য, কেহ নাহি রয়।
মেঘবাণে নিবারিল সূর্য্যের তনয়।।
ঘোর মেঘে বর্ষে যেন মুষলের ধার।
বায়ু-অস্ত্রে উড়ালেন ইন্দ্রের কুমার।।
হাসিয়া গন্ধর্ব্ব-বাণ এড়ে ধনঞ্জয়।
সকল সৈন্যের মধ্যে হৈল পার্থময়।।
রথে রথে, গজে গজে, হৈল মারামারি।
পড়িল অনেক সৈন্য হানাহানি করি।।
এইমত দুই বীর করিল সংগ্রাম।
চক্ষু পালটিতে দোঁহে না করে বিশ্রাম।।
দোঁহে মহাবীর্য্যবন্ত, কেহ নহে ঊন।
দৈববলে বলাধিক হইল অর্জ্জুন।।
ইন্দ্রদত্ত দিব্য অস্ত্র পূরিয়া সন্ধান।
একেবারে ছাড়িলেন অষ্টগোটা বাণ।।
দুই দুই ভুজে বক্ষে যুগল ললাটে।
চর্ম্ম ছেদি মর্ম্ম ভেদি অঙ্গে অস্ত্র ফুটে।।
ফুটিয়া কর্ণের অঙ্গে বহিল শোণিত।
রথেতে পড়িল কর্ণ হইয়া মূর্চ্ছিত।।
মূর্চ্ছিত দেখিয়া পার্থ সম্বরেন বাণ।
রথ লয়ে সারথি যে হৈল পাছুয়ান।।
কর্ণ-ভঙ্গ দেখি তবে যত কুরুশূর।
বেড়িল অর্জ্জুনে আসি হয়ে শতপুর।।
পদাতি মাতঙ্গ রথ রথী অতি বেগে।
নানা অস্ত্র শস্ত্র তারা ফেলে চতুর্দ্দিকে।।
পর্ব্বত আকার হস্তিগণ যূথে যূথ।
পার্থোপরি টোয়াইয়া দিলেক মাহুত।।
হাসিয়া গন্ধবর্ব-বাণ ছাড়েন কিরীটী।
পার্থরূপী মহাবীর সর্ব্বসৈন্য কাটি।।
আত্ম আত্ম সৈন্য ক্রমে হয় মারামারি।
পড়িল অনেক সৈন্য আর্ত্তনাদ করি।।
রথধ্বজ পতাকায় ঢাকিল মেদিনী।
মুকুট কুণ্ডল হার নানা রত্নমণি।।
সারি সারি পড়ে হস্তী, কত রথধ্বজ।
পড়িল দীঘলদন্ত লক্ষ লক্ষ গজ।।
মেঘ চাপ দেখি যেন পর্ব্বত উপরে।
পড়িল মাতঙ্গযূথ দারুণ প্রহারে।।
যেন মহাবাতে নিবারিল মেঘমালা।
সমুদ্র লহরী যেন নিবারিল ভেলা।।
অনন্ত ফণীন্দ্র যেন মন্থে সিন্ধুজল।
একাকী অর্জ্জুন মথিলেন কুরুবল।।
যে ছিল পলায় সবে লইয়া পরাণ।
অর্জ্জুনে দেখয়ে যেন শমন সমান।।
দেখিয়া বিরাট পুত্র মানিল বিস্ময়।
কৃতাঞ্জলি হয়ে তবে পার্থ প্রতি কয়।।
এ তিন ভুবনে এই অদ্ভুত কাহিনী।
চক্ষে কি দেখিব, কভু কর্ণে শুনিনু শ্রবণে।।
সাক্ষাতে দেখিনু আজি আপন নয়নে।
ক্ষত্র হয়ে হেন জন নহিবে নহিল।।
তোমার সারথি হৈনু, পূর্ব্বভাগ্য ছিল।।
এখন আমারে আজ্ঞা কর মহাশয়।
কোন্ ভিতে চালাইয়া দিব রথ-হয়।।
হাসিয়া কহেন পার্থ, কি কহ উত্তর।
কি দেখিলে, এখনি কি হইল সমর।।
দুরন্ত সাগরবৎ এ কৌরব-সেনা।
পার নাহি হইয়াছি, তার এক জনা।।
ওই দেখনীলবর্ণ যে রথ পতাকা।
কৃপাচার্য্য উনি হন মম পিতৃসখা।।
শীঘ্র রথ লহ মম তাঁহার সম্মুখে।
আমার হস্তের বেগ দেখাব তাঁহাকে।।
সপ্তকুম্ভ কমণ্ডলু ধ্বজ যাঁর রথে।
শীঘ্র রথ লহ মম তাঁহার অগ্রেতে।।
কুরুবংশ গুরু তিনি দ্রোণাচার্য্য নাম।
বহু বর্ষ পরে দেখা, করিব প্রণাম।।
যদি গুরুদেব মোরে করেন প্রহার।
আমিও হানিব অস্ত্র, নাহিক বিচার।।
তাঁর পাছে অশ্বত্থামা, রাজা দুর্য্যোধন।
তথা রথ লহ মম বিরাট-নন্দন।।
যে রথে বেষ্টিত শ্বেতচ্ছত্র সারি সারি।
যত রাজগণ আছে যোড়হাত করি।।
অমরকুলের যথা কর্ত্তা পিতামহ।
আমার কুলের তেন ইহারে জানহ।।
পৃথিবীর যত রাজা পদে করে পূজা।
মম পিতৃ-জ্যেষ্ঠতাত ভীষ্ম মহাতেজা।।
তথাপিও বশ তিনি কুরু-নৃপতির।
এই হেতু ভয়ে বড় কাঁপিছে শরীর।।
দুর্য্যোধন রক্ষা হেতু যদি করে রণ।
কিমতে তাঁহার অঙ্গে করিব ঘাতন।।
অতি বড় দয়া তাঁর আমা পঞ্চ জনে।
পিতৃশোক না জানিনু তাঁহার পালনে।।
নির্দ্দয় ক্ষত্রিয় জাতি, নাহি উপরোধ।
পরাপর নাহি জ্ঞান যুদ্ধে হৈলে ক্রোধ।।
বেদব্যাস বিমন্থন করি বেদসিন্ধু।
জগতের হিতে জন্মালেন ভারতেন্দু।।
মূঢ় মূর্খ অজ্ঞান যতেক অন্ধজনে।
সর্ব্বশাস্ত্র জ্ঞাত হয় যাহার শ্রবণে।।
গণেশে লেখক করি বিরচিল ব্যাস।
মনোগত অন্ধকার করয়ে বিনাশ।।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর ছন্দে।
পীয়ে সাধুজন নিঙ্গড়িয়া সেই চান্দে।।
৩৪. সংগ্রামস্থলে দেবগণের আগমন
একা পার্থ মহা আর্ত্ত করিল কৌরবে।
দেখিবারে সুরাপুর আসিলেন সবে।।
হংস-পৃষ্ঠে অষ্ট দৃষ্টে চাহে প্রজাপতি।
বৃষারূঢ় শশীচূড় ভূষণ বিভূতি।।
গজস্কন্ধে সুরবৃন্দে আসিল সুরেন্দ্র।
রবি করি সঙ্গে সৌরী সহ গ্রহবৃন্দ।।
বায়ু মৃগে, অগ্নি ছাগে নরে বৈশ্রবণ।
মৎস্যোপর জলেশ্বর, মহিষে শমন।।
সিংহ শিখী মূষে থাকি সপুত্র পার্ব্বতী।
অষ্টবসু কোলে শিশু ষষ্ঠী অরুন্ধতী।।
কাদ্রবয় বৈনতেয় অশ্বিনী-কুমার।
শুনি রস চতুর্দ্দশ মর্ত্ত্যে আগুসার।।
স্বায়ম্ভূব আদি সব এল প্রজাপতি।
হৃষ্টমন সর্ব্বজন আসিলেন ক্ষিতি।।
প্রশান্ত মূরতি অশ্বিনীকুমার দ্বয়।
চতুর্দ্দশ রস যতেক শূন্যেতে রয়।।
স্বায়ম্ভূব আদি যত সব প্রজাপতি।
শূন্য হতে হৃষ্ট মনে চাহে ‍পার্থ প্রতি।।
যক্ষেশ্বর বিদ্যাধর আর রক্ষেশ্বর।
এইরূপে আসিলেন যতেক অমর।।
মধুর সৌরভেতে দশদিক পূরিল।
দেবদেবী সবে মিলি পুষ্পবৃষ্টি কৈল।।
দিব্যগন্ধেতে সমর-ভূম আমোদিল।
কাশীরাম দাস পয়ার ছন্দে গাহিল।।
৩৫. অর্জ্জুনের সহিত কৃপাচার্য্যের যুদ্ধ ও পলায়ন
অর্জ্জুনের বাক্য শুনি বিরাট নন্দন।
বায়ু বেগে নিল রথ কৃপের সদন।।
প্রদক্ষিণ করি ক্রমে সব সৈন্যগণ।
মৎস্য যেন জালমধ্যে করিল বন্ধন।।
কৃপের সম্মুকে রথ লইল বৈরাটী।
দেবদত্ত শঙ্খনাদ করেন কিরীটী।।
গজ যেন রোষে শুনি গজের গর্জ্জন।
কুপিল গৌতমী শুনি শঙ্খের নিঃস্বন।।
আগু হয়ে আপনার শঙ্খ বাজাইল।
দুই শঙ্খ-নিনাদেতে ত্রিলোক কাঁপিল।।
ক্রোধে কৃপাচার্য্য যেন জ্বলিয়া উঠিল।
আকর্ণ পূরিয়া ধনুর্গুণ টঙ্কারিল।।
দশ বাণ প্রহারিল অর্জ্জুন উপর।
কাটিয়া ফেলিল তাহা পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
দশ বাণ কাটি বীর করে কুড়ি খান।
তবে দিব্য অস্ত্র পার্থ করেন সন্ধান।।
জলদগ্নি সম অস্ত্র দেখি লাগে ভয়।
বাণাঘাতে আচার্য্যের কম্পিত হৃদয়।।
বিচলিতাসন কৃপাচার্য্যে দেখি ব্যস্ত।
গৌরব করিয়া পার্থ না মারেন অস্ত্র।।
ক্ষণেক সম্বরি কৃপ নিল ধনুর্ব্বাণ।
অর্জ্জুন উপরে অস্ত্র করিল সন্ধান।।
না মারিতে অস্ত্র পার্থ এড়িলেন বাণ।
কৃপের ধনুক করিলেন খান খান।।
আর অস্ত্রে কাটিলেন অঙ্গের কবচ।
অঙ্গ হৈতে খসে যেন সর্প-জীর্ণ-ত্বচ।।
পুনঃ অন্য ধনু কৃপ লইলেন হাতে।
সেইক্ষণে দিল গুণ চক্ষু পালটিতে।।
গুণ দিয়া বাণ বীর করিল সন্ধান।
সেই ধনু কাটি করিলেন খান খান।।
পুনঃ অন্য ধনু কৃপ লইলেন হাতে।
সেইক্ষণে দিল গুণ চক্ষু পালটিতে।।
গুণ দিয়া বাণ বীর করিল সন্ধান।
সেই ধনু কাটি করিলেন খান খান।।
পুনঃ কৃপ দিব্য ধনু লইলেন হাতে।
সে ধনু কাটেন পার্থ গুণ নাহি দিতে।।
দেখিয়া গৌতমী যেন অগ্নি হেন জ্বলে।
কাটা ধনু ফেলাইয়া দিল ভূমিতলে।।
শক্তি এক তুলি নিল ভীষণ দর্শন।
নানা রত্ন ভূষা যেন দীপ্ত হুতাশন।।
ছাড়িলেন শক্তি, আসে হয়ে শব্দবান।
অর্দ্ধপথে পার্থ তাহা করেন দুখান।।
দিব্যাস্ত্র সন্ধান করি তবে ধনঞ্জয়।
কাটিলেন কৃপের রথের চারি হয়।।
ছয় বাণে কাটি তবে ফেলে শর তূণ।
সারথির মাথা কাটি ফেলেন অর্জ্জুন।।
সারথি মুকুট হয় রথ হৈল ছন্ন।
চতুর্দ্দিকে কুরুগণ হৈল ছিন্নভিন্ন।।
চাহিয়া দেখিল কৃপ কিছু নাহি পাশে।
হাতে গদা লয়ে তবে আসে ক্রোধবশে।।
হাসিয়া অর্জ্জুন বীর করেন সন্ধান।
হাতের গদাতে মারিলেন দশ বাণ।।
খণ্ড খণ্ড করি ফেলিলেন গদা কাটি।
সব গদা গেল, শুধু রহে বজ্রমুষ্টি।।
নিরস্ত্র হইল কৃপ সর্ব্বাঙ্গ বিকল।
পরিধান ধুতি আর উত্তরী কেবল।।
করযোড়ে বলিলেন কুন্তীর নন্দন।
এ বেশে আচার্য্য কোথা করিছ গমন।।
অম্বরে অমরবৃন্দ দেখেন কৌতুক।
লাজে শরদ্বান-পুত্র হন অধোমুখ।।
চতুর্দ্দিক হৈতে তবে আসি যোদ্ধাগণ।
রথে চড়াইয়া কৃপে করিল গমন।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র