অম্বা-অম্বিকা-অম্বালিকা

অম্বা : কাশীরাজের প্রথম কন্যা। কাশীরাজ অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকার স্বয়ংবর সভায় আয়োজন করলে দেশ-বিদেশের রাজারা স্বয়ংবর সভায় আগমন করেন। তথায় শানন্তু তনয় ভীষ্ম উপস্থিত হয়ে নিজের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের সাথে বিবাহ দেয়ার জন্য কন্যাগণকে হরণ করে হস্তিনাপুরে নিয়ে আসেন। বিবাহের আয়োজনকালে অম্বা ভীষ্মকে জানায় সে শাল্বরাজকে পূর্ব থেকেই স্বামী বলে গ্রহণ করেছেন, তিনি তাকেই বিবাহ করবেন। তখন ভীষ্ম অম্বাকে সসম্মানে ফিরে যেতে অনুমতি দেন। অম্বা শাল্বরাজের কাছে ফিরে গেলে তিনি তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।
অম্বা শাল্বরাজকে কাতরস্বরে অনেক অনুনয় করলেও তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। যেহেতু সে ভীষ্ম দ্বারা হরণ হয়েছে তাই শাল্ব তাকে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। তখন অম্বা নিরাশ হয়ে কুররী পাখির মত করণস্বরে ক্রন্দন করতে লাগলেন। তিনি তপোবনে গিয়ে দেহ ত্যাগ করার চিন্তা করতে করতে মুনিদের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। তথায় এক শৈখাবত্য নামে এক বৃদ্ধ তপস্বীকে দেখতে পেলেন। অম্বা পূর্বের সমস্ত ঘটনা প্রবাহ সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। অন্যান্য তপস্বিরা তাকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে তপস্যা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন কিন্তু অম্বা তপস্যা করতেই স্থির করলেন। এমন সময় সেখানে রাজর্ষি হোত্রবাহন উপস্থিত হন। অম্বা তাকের সব ঘটনা সবিস্তারে বললে রাজর্ষিও তাকে তপস্যা পথ পরিহার করে পরশুরামের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। রাজর্ষির পরামর্শমতে অম্বা পরশুরামের সহিত দেখা করে সমস্ত ঘটনা বলেন। পরশুরাম অম্বাকে নিয়ে হস্তিনাপুরে রওনা হন। অম্বাকে গ্রহণ করার জন্য ভীষ্মকে আদেশ দেন। ভীষ্ম তার প্রতিজ্ঞার কারণে তা করতে অস্বীকার করলে পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বধ করতে উদ্যত হন। ভীষ্ম গুরুর সাথে যুদ্ধ করতে অসম্মত হলেও পরশুরামের অনমনীয়তার কারণে গুরু শিষ্যের মধ্যে ভীষম যুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমাগত ২৩ দিন যুদ্ধ চলার পর পরশুরাম পরাজিত হন। তখন পরশুরাম অম্বাকে মহাদেবের নিকট তপস্যা করার জন্য পরামর্শ দেন। অম্বা যমুনা তীরে প্রথমে দ্বাদশ বৎসর তপস্যা করেন। পরে নন্দাশ্রমে, উলূকের আশ্রমে, চ্যবনের আশ্রমে, ব্রহ্মাশ্রমে, প্রয়াগে, বেবারণ্যে, ভোগবতী তীর্থে, কৌশিকের আশ্রমে, মান্ডব্যের আশ্রমে, দিলীপের আশ্রমে, রামহ্রদে এবং কৌরব্য প্রভৃতির আশ্রমে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। বহুকাল পর মহাদেব তুষ্ট হয়ে অম্বাকে বর দিলেন যে পরজন্মে তুমি দ্রুপদরাজার ঘরে নপুংসক হয়ে জন্ম গ্রহণ করে ভীষ্মকে বিনাশ করবে। এ বলে মহাদেব অন্তর্হিত হলেন। পরবর্তী জন্মেই দ্রুপদরাজার ঘরে শিখন্ডী নাম ধারণ করে ভীষ্ম বধের কারণ হয়েছিলেন।
অম্বিকা ও অম্বালিকা : কাশিরাজের ২য় ও তয় কন্যা। ভীষ্ম স্বয়ংবর সভা হতে তাদের হরণ করে বিচিত্রবীর্যের সাথে বিবাহ দেন। কিন্ত বিবাহের সাত বছরের মধ্যে বিচিত্রবীর্যের মৃত্যা হয়। ইতোমধ্যে চিত্রাঙ্গদ গন্ধর্ব কর্তৃক নিহত হন। বংশ রক্ষা করার জন্য সত্যবতী অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি ভীষ্মকে ভ্রাতৃভার্যার গর্ভে পুত্র উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ভীষ্ম মাতার অনুরোধ রাখতে অসমর্থ হলেন। তিনি সত্যবতীকে বলেন মাতা আপনি কোন ব্রাহ্মণকে ধন দিয়ে আপনার পুত্রবধূদের গর্ভে পুত্র সন্তান উৎপাদন করতে পারেন। ইহা ক্ষত্রিয় জাতির অধর্ম নয়, পরশুরাম এক বিংশতি বার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয় বিনাশ করেছিলেন। তাদের বিধবা স্ত্রীদের গর্ভে ব্রাহ্মণরা সন্তান উৎপাদন করে ক্ষত্রিয় বংশ রক্ষা করেছিলেন। এরকম অনেক উদাহরণ আছে মাতা। তখন সত্যবতী তার পুত্র ব্যাসদেবকে স্মারণ করলেন। ব্যাসদেবকে সত্যবতী সমস্ত ঘটনা বললেন। ব্যাসদেব বললেন মাতা এক বছর সময়ে তাদের দেহশুদ্ধির প্রয়োজন আছে। কিন্তু রাজ্যের মঙ্গলের জন্য মাতা সত্যবতীর অনুরোধে ব্যাসদেব পুত্র উৎপাদনে রাজী হলেন। এদিকে সত্যবতী তার পুত্রবধূদের সন্তান নেয়ার বিষয়টি ভালভাবে বুঝিয়ে দিলেন এবং তারা রাজী হলেন। পরদিন ব্যাসদেব ভবনে এসে তার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে প্রবেশ করেন। অম্বিকাও প্রবেশ করলেন। কিন্তু ব্যাসদেবের বিরাট চেহারা, কৃষ্ণবর্ণ, দীর্ঘ জটা ও শ্মশ্রু দেখে অম্বিকা ভয়ে চোখ মুদ্রিত করেন। মাতৃদোষে তার গর্ভে জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেভাবে অম্বালিকাও ব্যাসদেবকে দেখে ভয়ে তার মুখ পান্ডুর বর্ণ ধারণ করলে তার গর্ভে যে পুত্রের জন্ম হয় তার নাম হয় পান্ডু। উপরন্তু অম্বিকাকে আরো একবার ব্যাসদেবের নিকট প্রেরণ করার জন্য বলা হলে অম্বিকা পূর্বের ভয়ের কথা স্মরণ করে তার দাসী শূদ্রাকে প্রেরণ করলে ঐ দাসীর গর্ভে মহামতি বিদূরের জন্ম হয়।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র