বেদে কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষি এর ব্যবহার

আপস্তম্ব, বৌধায়ন ও আশ্বালয়ন ঋষিগণ বেদের যাজ্ঞিক মন্ত্র উচ্চারণের জন্য কিছু সূত্র প্রণয়ন করেন। এদের প্রণীত সূত্রসমূহকে একত্রে ‘কল্পগ্রন্থ’ বলা হয়। কল্প গ্রন্থে যাগ-যজ্ঞ প্রয়োগ বিধি সুশৃঙ্খলভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। কিভাবে বা কি প্রণালীতে যজ্ঞ আরম্ভ করতে হবে, কোন্ মন্ত্র কখন উচ্চারণ করতে হবে, যজ্ঞের কার্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য যে সকল ভিন্ন ভিন্ন ঋত্বিক, হোতা, উদ্গাতা, অধ্বর্যু আছেন তারা কখন কে কিভাবে মন্ত্র বা ঋক প্রয়োগ করবেন তার উপদেশ এ শাস্ত্রে বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ আছে। যার উদেশ্যে যজ্ঞ করা হয় তাকে ‘যজমান’বলা হয়। যে সকল ঋষি বা ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনা করেন তাদেরকে ‘ঋত্বিক’বলা হয়। ঋত্বিক আবার দু শ্রেণিতে বিভক্ত। যে ঋষি বা ব্রাহ্মণ যজ্ঞমন্ত্র (ঋকমন্ত্র) পাঠ করেন তিনি হচ্ছেন ‘হোতা’। যিনি গান গেয়ে স্তবস্তুতি করেন তিনি হচ্ছেন ‘উদ্গাতা’(তিনি সামমন্ত্রে গান করেন)। আর যিনি যজ্ঞে আহুতি দেন তিনি হচ্ছেন ‘অধ্বর্যু’(তিনি যজুঃ মন্ত্রে আহুতি দেন)।
বেদকে সম্যকভাবে উপলদ্ধি করতে হলে বৈদিক ব্যাকরণের শরণাপন্ন হতেই হবে। ব্যাকরণ ব্যতীত বেদের বিশালত্ব হৃদঙ্গম করা অত্যন্ত দূরূহ বিষয়। ব্যাকরণ ভিন্ন বেদের নিগূঢ় অর্থ জানা সম্ভব নয়। এ জন্যেই ব্যাকরণকে বেদের মুখ বলা হয়েছে। প্রচলিত ব্যাকরণের মধ্যে পাণিনি, মুগ্ধবোধ, কলাপ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ। বৈদিক ব্যাকরণকে আবার প্রতিশাখা বলা হয়। প্রত্যেক বেদের প্রত্যেক শাখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশাখা ছিল। কিন্তু চারটি প্রতিশাখা ব্যতীত সব প্রতিশাখা বিলুপ্তপ্রায়। ঋগ্বেদের ও অথর্ববেদের প্রতিশাখা শৌনক প্রণয়ন করেন। শুক্লযজুর্বেদের প্রতিশাখা কাত্যায়ন প্রণয়ন করেন। কৃষ্ণযজুর্বেদের প্রতিশাখা বাল্মীকি প্রণয়ন করেন।
‘নিরুক্ত’ হচ্ছে বৈদিক অভিধান। বৈদিক শব্দের ও বৈদিক বাক্যসমূহের অর্থ নিরুক্ত গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে। অর্থ বোধের জন্য যাস্ক ঋষি রচিত নিরুক্তই সর্বাধিক প্রচলিত । তাছাড়া স্থৌলাষ্ঠীবী, ঔর্ণবাভ, শাকপুণি প্রভৃতি প্রণীত নিরুক্ত গ্রন্থেরও পরিচয় পাওয়া যায়। নিরুক্ত গ্রন্থকে বেদের শ্রবণেন্দ্রিয় বলে পন্ডিতগণ আখ্যা দিয়েছেন।
নিরুক্তের পর ‘ছন্দগ্রন্থ’। শিক্ষা বা স্বর বিজ্ঞানের পর ছন্দ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা বেদে বেশী অনুভূত হয়। বলা হয়ে থাকে ছন্দ গ্রন্থের বীজ বেদে, অঙ্কুরোদগম আরণ্যকে, শাখা প্রশাখা উপনিষদে নিহিত আছে। ছন্দ জ্ঞান ভিন্ন উচ্চারিত শব্দসমূহ হৃদয় আন্দোলিত করতে পারে না। তাই ছন্দের প্রাধান্য অনস্বীকার্য। বেদে প্রধানত: সাতটি ছন্দের উল্লেখ আছে। যথা- গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পংক্তি, ত্রিষ্টুভ ও জগতী। এ সাতটি ছন্দকে ‘দৈবিক ছন্দ’নামে অভিহিত করা হয়। মহর্ষি কাত্যায়ন রচিত ‘সর্বানুক্রমণিকা’ গ্রন্থে এ সাতটি দৈবিক ছন্দের উল্লেখ আছে।
তারপর হচ্ছে যষ্ঠ বেদাঙ্গ ‘জ্যোতিষ’। এ বেদাঙ্গ দ্বারা সূর্যাদির গ্রহের অবস্থান, গ্রহাদির গতিবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্যেই এ জ্যোতিষি শাস্ত্রের উৎপত্তি। যথাসময়ে যজ্ঞকর্ম আরম্ভ ও সমাপন করার জন্য ঋষিদের উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতে হতো। কোন সময়ে কোন্ যজ্ঞকর্ম আরম্ভ করতে হবে, কো্‌ন সময়ে কোন যজ্ঞকর্ম সমাপন করতে হবে, জ্যোতিষ শাস্ত্র সে বিষয়টি জানতে সহায়তা করে। যথাসময়ে কর্ম আরম্ভ না হলে বা নির্দিষ্ট সময়ে কর্ম সমাপন না হলে কর্ম পন্ড বা দোষযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণেই জ্যোতিষ শাস্ত্রের এত প্রয়োজন। যজ্ঞকর্মে সময়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই পরাশর ঋষিগণ যজ্ঞের দিনক্ষণ নির্ণয়ের জন্যেই জ্যোতিষের সূত্র রচনা করেন। পন্ডিতগণ জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বেদের চক্ষু বলে নির্ণয় করেছেন।

ConversionConversion EmoticonEmoticon

:)
:(
=(
^_^
:D
=D
=)D
|o|
@@,
;)
:-bd
:-d
:p
:ng

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র