ভগবানের নামের কি মহাত্ম!

কান্যকুব্জ দেশে অজামিল নামে এক ব্রাহ্মণ ছিল। সে দাসীকে বিবাহ করে দাসীপতি হয়েছিল। দাসীর গর্ভে তার দশটি পুত্র জন্ম নিল। সর্ব কনিষ্ট পুত্রের নাম রাখিল নারায়ণ। পুত্রগণকে দেখে ব্রাহ্মণ খূব খুশী হলো। তাদেরকে লালন পালন করার জন্য দ্বিজ নানা পাপ কার্যে নিজেকে জড়িত করে ফেলে। পুত্র স্নেহের কারণে পাপের ভয় না করে চুরি করা, জীব হত্যা করা, মানুষকে ঠকানো, জুয়াখেলা, ডাকাতী করা সহ সুরা পানে আসক্তি হয়ে পড়ে। এ ভাবে সে পরিবার-পরিজন লালন পালন করতে থাকে। তাদের প্রিয় সন্তান নারায়ণকে দুজনে মিলে আদর-যত্ন করে চুমু খেয়ে বড় করতে থাকে। এক সময় অজামিল বৃদ্ধ হয়। ক্রমে ক্রমে তার মৃত্যুকাল উপস্থিত। নারায়ণকে ডেকে বলে," বাবা নরায়ণ তোমাদের জন্য কিছূই করতে পরিনি। আমার মরণের পর তোমাদের কি হবে তাই শূধূ ভাবি।" অজামিলের মৃত্যু অতিসন্নিকটে দেখে যমরাজ তার দূত পাঠালেন অজামিলকে আনার জন্য। দূতগণ তার শিয়রে দাড়ায়। দূতগণের মাথা হতে আগুন বাহির হতে লাগল, ভয়ংকর বক্র মুখ দাত কড়মড় করে অজামিলকে ভয় দেখাল। ভয়ে পেয়ে অজামিল মলমূত্র ত্যাগ করল। নিকটেই তার কনিষ্ট সন্তান নারায়ণ খেলা করছিল। ভয়ে চিৎকার করে তার কনিষ্ট সন্তান নারায়ণকে ডাকতে লাগল," কোথা বাবা নারায়ণ আমাকে যমদূতের হাত থেকে রক্ষা কর।" নামের কি মহিমা! ভগবান শ্রীবিষ্ণু বললেন," মৃত্যুকালে অজামিল আমার নাম স্মরণ করল। আমাকে ডাকল। ভগবান বিষ্ণু দেবদুত জয়-বিজয় ও সুনন্দকে বললেন," অজামিলকে বৈকুন্ঠ নগরে নিয়ে আসার জন্য। যমদূত যেন তাকে যাতনা না দেয়। আদেশ পেয়ে বিষ্ণুদূতগণ ত্বরিত অজামিলের পাশে উপস্থিত হন। যমদূতগণ বিষ্ণুদূতগণকে দেখে ভীত হন। অজামিলকে বান্ধিতে যান যমদূতগণ। বিষ্ণূদূতগণ তাদেরকে নিবরাণ করেন। তখন যমদূতগণ বললেন," তোমার কে? কোথা হতে এসেছ? যমরাজের আদেশ অমান্য করে কেনই বা অজামিলকে নিতে বাধাঁর সৃষ্টি করছ। তোমাদের এত শক্তি কিসের। দেখতে দেবতার মত। মস্তকে কীরিট, কর্ণে কুন্ডল। গলদেশে কমলের মালা। হাতে শংখ, চক্র, গদা ধনু সহ নানা অস্ত্র। তোমার রূপে যেন কোটি সূর্য উদয় হলো। মহাপাপী অজামিলকে যমালয়ে নিতে আপনারা কেন বাধাঁর সৃষ্টি করছেন। আমরা যমের কিংকর। পাপীর দন্ড প্রদানের জন্য সব প্রস্তুত। আমরাযমরাজকে কি বলব।" বিষ্ণুদূতগণ সহাস্যে গম্ভীরভাবে বললেন," শোন যমদূতগণ। তোমরা ধর্মের কিংকর। ধর্মের পাশে তোমরা থাক। ধর্মের লক্ষ্মণ কি। যমের দন্ড কে পায়। আমাদেরকে বল।" যমদূতগণ তখন বললেন," বেদের সহিত বিহিত কর্মই ধর্ম। আর বেদের বিপরীত কর্মই অধর্ম। প্রথম জীবনে অজামিল একজন সদাচারী, সত্যবাদী, ব্রতধারী, বেদজ্ঞ, সুশীল সাধু ও পরিমিতভাষী। একদিন অজামিলের পিতা তাকে ফুল ফল আনিবার জন্য বললেন। অজামিল বনে প্রবেশ করে দেখলেন এক চন্ডল-ললনা উপ-পতির সহিত সম্ভোগেরত। ইহা দেখে অজামিলের হৃদয় চঞ্চল হলো। তার মনে কামানল উদিত হলো। জ্ঞান লোপ হলো। পাগলের ন্যায় নারী অন্বেষণ করতে লাগল। বৃদ্ধ পিতামাতা ও সুন্দর স্ত্রী ত্যাগ ক্রমে ক্রমে সুরাপানে আসক্ত হয়ে পড়ে, জীব হত্যা করে এবং চন্ডালীর ঘরে অন্ন খায়। অজামিলের পাপের সংখ্যা বলতে পারব না। যমরাজে আদেশ তাকে যমালয়ে নিতে হবে যামরাজ পাপানুসারে তাকে সাজা দিবেন। যমদূতগণের বাক্য শূনে বিষ্ণুদূতগণ বললেন," তোমাদের কথায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। অদন্ড্য জনকে তোমরা কিভাবে দন্ড দিবে। বিনা পাপে দন্ড করা শোভা পায় না। মহৎ লোক যে কর্ম করে ইতর প্রানী তা অনুসরণ করে। পাপিষ্ট অজামিল চন্ডালের সংগ ছাড়িল না। সুমহৎ প্রায়শ্চিত্ত করিল। মৃত্যুকালে পরমকারণের কারণ ভগবান নারায়ণের নাম উচ্চারণ করিল। এ কারণেই সে সকল পাপ থেকে নিষ্কৃতি পেল। পরধন হরণ করে যে, বন্ধুর সাথে যে অন্যায় আচরণ করে যে, বিপ্রকে হত্যা করে যে, গুরুপত্নী হরণ করে যে, নারী হত্যা করে যে, পিতাকে হত্যা করে যে,গর্ভবতী গাভী হত্যা করে যে, সুরাপান করে স্বর্ণ হরণ করে যে সকল মহাপাপী তারা মুত্যুকালে যদি হরিনাম উচ্চারণ করে তবে অনায়াসে তারা মুক্তি পায়। একমাত্র হরিনামেই প্রায়শ্চিত্ত হতে মুক্তি পাওয়া যায়। অন্যকোন মনষ্কামে তা পূরণ হয় না। তোমরা অজামিলকে ছেড়ে চলে যাও। কারণ অজামিল নিষ্পাপ। কারণ সে " নারায়ণ নারায়ণ" করে শ্রীহরিকে ডাকিল। আর তাতেই সে বৈকুন্ঠধাম প্রাপ্ত হবে। অপঘাতে কেহ মারা যাওয়ার সময় নারায়ণের নাম উচ্চারণ করিলে নরক যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।পাপ অনুসারে লঘু গুরু দন্ড আছে। প্রায়শ্চিত্তে পাপ নাশ হয় শাস্ত্রে তা বলে। কিন্তু তাতে মন পবিত্র হয় না। শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র স্মরণকে চিত্তশুদ্ধি হয়। শ্রীহরিকে ডাকলে জানামতে অজানামতে পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আগুনে হাত দিলে যেমন হাত পুড়ে। শুষ্ককাষ্ঠ যেমন পুড়ে যেমন অগ্নি ভস্ম হয়। ঔষধের কার্য যেমন বৃথা হয় না। তেমনি শ্রীহরির নাম স্মরণে দেহ মন থেকে পাপ দূরিভূত হয়। তোমরা অজামিলকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাও নতুন উচিৎ দন্ড দিব তোমাদিগকে। এ কথা গিয়ে বল। এভাবে বিষ্ণূদূত অজামিলকে রক্ষা করল। বিষ্ণুদূতগণ বললেন," অজামিল এখন আর তোমার কোন ভয় নেই। নিজ ঘরে যাও।" যমের পাশ থেকে অজামিল রক্ষা পেয়ে ভয়ে কম্পমানে বিষ্ণুদূতগণকে প্রণাম করতে গেলে বিষ্ণূদূতগণ তথা হতে অন্তর্হিত হন। পরে অজামিল নিজে অনুতপ্ত হয়ে বুঝতে পারল একমাত্র শ্রহরিই হচ্ছেন সার তিনি বিনা সকল অসার।আমার মত দূরাচার আর নেই। আমার সমস্ত দেহ পাপে মলিন। বৃদ্ধ পিতামাতাকে ত্যাগ করে চন্ডালের দাস হয়ে আমি পাতকী হই। হয়েছি।আমার বিরহে আমার জনক জননী কাদেঁ। চন্ডালের গর্ভে পুত্র জন্ম নিল। চন্ডালের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েছি। আমার মত মহাপাপী আর কে আছে। এ পাপ থেকে আমার উদ্ধারের কোন পথ নেই। আমাকে যারা রক্ষা করল সেই বিষ্ণুদূতগণকে কি আর দেখতে পাব। পিতামাতা কিংবা পিতামহের পূণ্যবলে আমাকে রক্ষা করল বিষ্ণুদূতগণ এবং তাদের দরশন করলাম। জন্ম-জন্মান্তরে কত পূণ্য করেছিলাম বলেই আমার সফল জন্ম হলো পাপ দূরীভূত হলো। চন্ডালের ঘরে জন্ম পুত্রের নাম রাখলাম নারায়ণ। তার নামের গুণে পেলাম পাপ থেতে পরিত্রাণ। তোমার অপার মহীমা কে বুঝতে পারে। হে দীনবন্ধু! হে করুণা সিন্ধু! তুমি জগতের পিতা। সকলকে তুমি রক্ষা কর। তোমার নামে গুণের মাহাত্ম বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নারায়ণ নাম উচ্চারণ করিলাম আর প্রভূ তুমি আমাকে রক্ষা করলে। আজ থেকে সকল কিছূ ত্যাগ করে শ্রীহরির সাধনা করিব।" পরে অজামিল হরিদ্বারে গিয়ে শ্রীহরির সাধনা আরম্ভ করল। পুনরায় বিষ্ণুদূতগণ অজামিলকে দরশদ দিয়ে বলল," শ্রীহরির আজ্ঞ পেয়ে তোমাকে আমরা বৈকুন্ঠে নিয়ে যেতে এসেছি। কত দয়াময় শ্রীহরি। তার নাম উচ্চারণ করে কৃতার্থ হলে তুমি।" বিপ্র অজামিল বিষ্ণুদূতগণকে প্রণাম করে হরিদ্বারে ত্যাগ করিল। সুবর্ণ বিমানে চড়ে বিপ্র বিষ্ণুদূতগণের সংগে বৈকুন্ঠধামে রওনা হলো। এভাবে শ্রীহরির নামে কৃপায় অজামিল উদ্ধার হলো।


Previous
Next Post »

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র