সাত্যকি

সাত্যকি : যদু বংশীয় রাজা শিনির পৌত্র। তার পিতার নাম সত্যকি। তিনি অর্জুনের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন। সাত্যকি কিছুটা উগ্রস্বভাবের। তার ভিতর হিংস্রতা পরিলক্ষিত হয়। রাজ্যোদ্ধারের বিষয়ে পান্ডব ও যাদবদের মধ্যে আলোচনা চলাকালে এক পর্যায়ে বলরাম বলেন,“কৌরবগণ বলপূর্বক পান্ডবদের ধনসম্পত্তি অপহরণ করেছে বটে কিন্তু সকল অবস্থায় তাদেরকে দোষারুপ করা ঠিক নয়। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির যথেষ্ট সম্পদশালী ছিলেন কিন্তু দ্যূতক্রীড়ায় সুনিপুণ নয়। অক্ষপারদর্শী গান্ধাররাজ শকুনিকে দ্যূতক্রীড়ায় আহ্বান করে তিনি সর্বশান্ত হয়েছেন। তাতে শকুনির কোন অপরাধ নেই।” শেষে বললেন,“সন্ধি দ্বারা সম্পাদিত অর্থই অর্থকর হয়ে থাকে, কিন্তু যে অর্থ সংগ্রাম দ্বারা উপার্জিত তা অর্থই নয়।” বলরামের বাক্য শ্রবণ করা মাত্রই সাত্যকি ক্রুদ্ধ হলেন। বলরামের বাক্যে দোষারূপ করে সাত্যকি বললেন,“যার যেরুপ প্রকৃতি সে সেরুপ করে থাকে; অতএব তোমার যেরূপ প্রকৃতি তুমি তদ্রুপ বলছ। দেখ, এ ভূমন্ডলে শূর ও কাপুরুষ এ উভয় প্রকৃতির লোক দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন এক বৃক্ষে ফলবান ও ফলহীন শাখা সঞ্জাত হয়, তদ্রুপ এক বংশে ক্লীব ও শূর এ দুই প্রকার পুরুষ জন্মগ্রহণ করে। হে হলধর! আমি তোমার বাক্যে অসূয়া প্রকাশ করছি না কিন্তু যারা স্থিরচিত্তে তোমার এ বাক্য শ্রবণ করছে তাদের উপর আমি ক্রুদ্ধ হয়েছি। কৃষ্ণ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে কুরুসভায় যাওয়ার পূর্বে পান্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে শলাপরামর্শ হয়। তাতে সাত্যকি যুদ্ধের পক্ষে মতা প্রকাশ করেন।

শ্রীকৃষ্ণ শান্তির প্রস্তাবনা নিয়ে হস্তিনাপুরে যান। কুরুসভায় ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদূর, দুর্যোধন ও কর্ণসহ অন্যান্য সকল রাজন্যবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে পান্ডবদের নিগৃহীত করার জন্য কৌরবদের দোষারূপ করে কৃষ্ণ উভয় পক্ষের হিতের জন্য সন্ধির প্রস্তাব করেন। কিন্তু দূরাত্মা দুর্যোধনের এক পেষে মনোভাব, অহংকার, সম্পদের গরিমা, শক্তির প্রভাব সর্বোপরি এক রোখা মনোবৃত্তির জন্য কৃষ্ণের সকল প্রচেষ্টা বিফলে যায়। ফলে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। আলোচনা চলাকালে দু:শাসন দুর্যোধনকে জানায় সন্ধি না করলে পিতামহ ভীষ্ম, দ্রোণ ও পিতা আমাদের বন্ধী করবেন। এতে দুর্যোধন ক্ষিপ্ত হন এবং সভা ত্যাগ করেন। ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে দুর্যোধন পুনরায় ফিরে আসলে মাতা গান্ধারীও তাকে অনেক উপদেশ দিয়ে যুদ্ধ না করার জন্য অনুরোধ করন। কিন্তু মাতার কথা অগ্রাহ্য করে দুর্যোধন শকুনি, কর্ণ ও দূ:শাসন কৃষ্ণকে বন্ধী করার মন্ত্রণা করেন। কিন্তু সাত্যকি দুর্যোধনের দূরাভিসন্ধি আচঁ করতে পেরে সভা থেকে বের হয়ে কৃতবর্মাকে সৈন্যদের ব্যুহবদ্ধ সভাদ্বার রক্ষা করতে এবং বর্ম ধারণ করতে বলে সভায় গিয়ে সাত্যকি দুর্যোধনের দূরাভিসন্ধি ধৃতরাষ্ট্র ও বিদূরকে অবহিত করেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে কয়জন সেনানায়ক আছেন সাত্যকি তাদের অন্যতম। সাত্যকি দ্রোণের সারথি, রাজা জলসন্ধ ও সুদর্শনসহ বহু কৌরব সেনা বধ করে কৌরব ব্যুহে প্রবেশ করে অর্জুনের অভিমুখে অগ্রসর হন। কিন্তু সাত্যকির বিলম্ব দেখে যুধিষ্ঠির ভীমকে প্রেরণ করেন। কিন্তু ভীম কর্ণের নিকট পরাজিত হন। অর্জুন কর্ণকে আক্রমন করায় ভীম সাত্যকির রথে উঠে অর্জুনের দিকে অগ্রসর হন। ঠিক সে সময় ভূরিশ্রবা সাত্যকিকে বাঁধা দিয়ে যুদ্ধে পরাজিত করে শিরচ্ছেদ করতে উদ্যত হলে অর্জুন শরাঘাতে ভূরিশ্রবার ডান হস্ত ছেদন করেন। এ অন্যায় কাজের জন্য ভূরিশ্রবা অর্জুনকে তিরস্কার করে প্রায়োপবেশনে বসেন। সকলের নিষেধ উপেক্ষা করে সাত্যকি যোগমগ্ন ভূরিশ্রবার শিরচ্ছেদ করেন। যুদ্ধের পনর দিবসে ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের শিরচ্ছেদ করে আস্ফালন করেন। কিন্তু গুরূ হত্যার জন্য সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্নকে তিরস্কার করে তাক হত্যা করার জন্য উদ্যত হলে কৃষ্ণের ইশারায় ভীম ও সহদেব তাদের নিবারণ করেন। যুদ্ধের ষোল দিবসে সাত্যকি কৌরব বংশীয় যোদ্ধা বিন্দ ও অনুবিন্দকে বধ করেন।

গান্ধারীর অভিশাপে যদুবংশ বিনাশের সময় সাত্যকি সুরা পানে মত্ত হন। মাতাল অবস্থায় ঘুমন্ত পান্ডবদের হত্যার জন্য কৃতবর্মাকে নিন্দা করেন। কৃতবার্মও যোগমগ্ন ভূরিশ্রবাকে বধ করার জন্য সাত্যকিকে তিরস্কার করেন। সাত্যকি মাতাল অবস্থায় খড়গ দ্বারা কৃতবর্মাকে হত্যা করেন। অন্যান্য যাদবদের নির্বিচারে হত্যা করতে থাকেন। তখন ভোজ ও অন্ধকগণ একত্রিত হয়ে ঘিরে ভোজন থালা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র