সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-১

সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-১
পূজাবিধিতে আছে পরিপূর্ণ পূজা করতে হলে অর্থাৎ পূজার কোন অঙ্গহানি না করতে চাইলে পূজায় পশু বলি দিতে হবে। বলি শব্দটির কি অর্থ অভিধানে পাওয়া যায় তা আমরা দেখব। অভিধানে আছে বলি শব্দের অর্থ- “কর, রাজগ্রাহ্য ভাগ, উপহার, পূজার সামগ্রী, পঞ্চমহাযজ্ঞান্তর্গত ভূতযজ্ঞ, দেবপূজায় বধ্য প্রাণিসমূহ।” আর বলিদান অর্থে আমার পাই- দেবতার উদ্দেশে পূজার উপহার দান, সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ বা উৎসর্গ করা, দেবতার উদ্দেশে বিধিপূর্বক পশুঘাতন। শব্দকল্পদ্রুম এ আছে-
১. শ্রীকৃষ্ণপার্ষদেভ্যন্তন্নিবেদিত নৈবেদ্যাংশদানং
২. দেবোদ্দেশেন যথাবিধি পূজোপহারত্যাগ:
৩. দূর্গাদি দেবতোদ্দেশেন সঙ্কল্পপূর্বক চ্ছাগাদিপশুঘাতনং।
দেখা যাচ্ছে বলি অর্থে আমরা দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূজা-উপহার মাত্রকেই বুঝি। নৈবেদ্যও বলি, নৈবেদ্য-নিবেদনও বলিদান। বলিদান অর্থে শুধু ছাগাদি বুঝায় না।

বলির উপকরণঃ কালিকাপুরাণ-৫৫ অধ্যায়ে আছে-
পক্ষিণঃ কচ্ছপা গ্রাহাশ্ছাগলাশ্চ বরাহকাঃ
মহিষো গোধিকাশোষা তথা নববিধা মৃগাঃ।।৩।
চামরঃ কৃষ্ণসারশ্চ শশঃ পঞ্চাননস্তথা।
মৎস্যাঃ স্বগাত্ররুধিরৈশ্চাষ্টধা বলয়ো মতাঃ।।৪।
অভাবে চ তথৈবৈষাং কদাচিদ্ধয়হস্তিনৌ।
ছাগলাঃ শরভাশ্চৈ নরশ্চৈব যথাক্রমাৎ।
বলির্মহাবলিরিতি বলয়ঃ পরিকীর্ত্তিতা।।৫।

অর্থঃ পক্ষী সকল, কচ্ছপ, কুম্ভীর, বরাহ, ছাগল, মহিষ, গোসাপ, শশক, বায়স, চমর, কৃষ্ণসার, শশ, সিংহ, মৎস্য, স্বগাত্র-রুধির এই সমস্ত বলি; ইহাদের অভাবে কদাচিত ঘোটক ও হস্তী। ছাগল, শরভ ও মনুষ্য যথাক্রমে বলি, মহাবলি ও অতিবলি নামে প্রসিদ্ধ।
দূর্গোৎসব তত্ত্বে আছে-
পশুঘাত পূর্বক রক্তশীর্ষয়োর্বলিত্বং
স্থানে নিযোজয়েদ্রক্তং শিরশ্চ সপ্রদীপকম্।
এবং দত্ত্বা বলিং পূর্ণং ফলং প্রাপ্নোতি সাধকঃ।।

অর্থঃ পশু হনন করে তার রক্ত ও মুন্ড বলি অর্থাৎ উপহার দিতে হয়। কেন না বিধি আছে- হত পশুর রুধির ও মুন্ড প্রদীপের সহিত যথাস্থানে স্থাপন করবে; সাধক এরূপ বলি প্রদান করলে পূর্ণ ফল প্রাপ্ত হয়।

কালিকাপুরাণে (৫৫ অধ্যায়) আছে-
বলিদানং ততঃ পশ্চাৎ কুর্য্যাদ্দেব্যাঃ প্রমোদকম্।
মোদকৈর্গজবক্ত্রঞ্চ হবিষা তোষয়েদ্রবিম্।।১।
তৌর্যত্রিকৈশ্চ নিয়মৈঃ শঙ্করং তোষয়েদ্ধরিম্।
চন্ডিকাং বলিদানেন তোষয়েৎ সাধকঃ সদা।।২।

অর্থঃ সাধক মোদক দ্বারা গণপতিকে, ঘৃত দ্বারা শ্রী হরিকে, নিয়মিত গীতবাদ্য দ্বারা শঙ্করকে এবং বলিদান দ্বারা চন্ডিকাকে সতত সন্তুষ্ট করবে।”
দেখা যাচ্ছে কোন দেবতাকে মোয়া দ্বারা, কোন দেবতাকে ঘৃত দ্বারা, কোন দেবতা আবার গীতবাদ্য দ্বারা সন্তুষ্ট হন। কিন্তু মহামায়া, যিনি কিনা জগদ্ধাত্রী, নারায়ণী, পরম বৈষ্ণব, দুর্গতিহারিনী, দয়াময়ী, মাতৃস্বরূপিনী, বিশ্বেশ্বরী, বিশ্বমাতা, সর্বলোক ভয়হারিণী, তিনি সন্তানের কাছ থেকে রুধির দানে সন্তুষ্ট হন! (চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র