৪৬. দময়ন্তীর পতি অন্বেষণ ওসুবাহু-নগরে সৈরিন্ধ্রী বেশে অবস্থিতিগভীর অরণ্যে ভৈমী করিল প্রবেশ।নানাজাতি পশু তথা দেখয়ে বিশেষ।।সিংহ কোল ব্যাঘ্র দ্বিপ খড়্গী কৃষ্ণসার।মৃগ মৃগী দেখে আর মহিষ মার্জ্জার।।শল্লকী নকুল গোধা মূষিক বানর।নানা জাতি নভোমার্গ স্পর্শে তরুবর।।শাল তাল পিয়াল যে অর্জ্জুন চন্দন।শিমুল খর্জ্জুর জাম কদম্ব কাঞ্চন।।আম্রতক বিভীতক ফল আমলকী।পলাশ ডম্বুর ভল্লাতক হরীতকী।।খদির পাণ্ডবী পিচুমর্দ্দ কোবিদার।শাখোট কপিথ বট অশ্বথ যে আর।।নোয়াড়ি বদরী বিঞ্চি বহেড়া পর্কটী।অশোক চম্পক কেন্দু তিন্তিড়ীক ঝাঁটি।।বাপী সর তড়াগ সিন্ধুর সম নদী।নানা ঋতু, রম্যস্থান বহু রত্ন নিধি।।যত যত দেখে ভৈমী অন্যে নাহি মন।স্বামী অন্বেষণে ভ্রমে গহন কানন।।যারে দৃষ্টি করে ভৈমী জিজ্ঞাসে তাহারে।দেখিয়াছ মম প্রভু গেল কোথাকারে।।সিংহগ্রীব প্রভু মম বিশাল লোচন।দীর্ঘতর যুগ্ম ভুজ অর্দ্ধেক বসন।।ওহে সিংহ মহাতেজা বনের ঈশ্বর।বনের বৃত্তান্ত যত তোমার গোচর।।সত্য কহ প্রাণনাথ গেল কোন্ দিগে।অনাথা তোমার স্থানে এই ভিক্ষা মাগে।।অনন্তর এক মহা সরিৎ দেখিল।প্রণাম করিয়া তারে ভৈমী জিজ্ঞাসিল।।তরঙ্গিণী করিয়া স্বামীর সমাচার।শীতল করহ তুমি হৃদয় আমার।।ক্ষুধায় বিশেষ শ্রমে আকুল শরীর।জলপান হেতু কি আসেন তব তীব্র।।তথা হৈতে গেল ভৈমী না পেয়ে উত্তর।অতি উচ্চতর এক দেখে গিরিবর।।তাহাকে জিজ্ঞাসে ভৈমী করিয়া রোদন।অতি উচ্চতর শৃঙ্ঘ পরশে গগন।।বহুদূর তব দৃষ্টি যায় শৈলবর।কহ মোর কোথায় আছেন প্রাণেশ্বর।।পঙ্কজকেশর অঙ্গ, কর স্পর্শে জানু।কর্ণান্তে নয়ন, মুখশোভা শীতভানু।।বীরসেনসুত প্রভু নিষধ ঈশ্বর।দেখেছ কি প্রাণনাথে কহ গিরিবর।।এইমত গিরিপৃষ্ঠে ভ্রমে কত দিন।ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ক্লিষ্টা, বদন মলিন।।যুগল নয়নে বহে জলধারা প্রায়।অর্দ্ধবাসা মুক্তকেশা ধূলি সর্ব্ব গায়।।তথা হৈতে চলি যায় উত্তর মুখেতে।মুনির আশ্রমে যায় তৃতীয় দিনেতে।।অনাহারী বাতাহারী দীর্ঘ গোঁপ দাড়ি।কর পদ সর্পবৎ, নখ যেন বেড়ি।।দেখি দময়ন্তী তাঁরে ভূমিষ্ঠ হইয়া।প্রণতি করিয়া রহে অগ্রে দাঁড়াইয়া।।ভৈমীরে জিজ্ঞাসে মুনি মধুর বচনে।কে তুমি, কি হেতু কর ভ্রমণ কাননে।।দময়ন্তী বলে, আমি পতি বিরহিণী।এই বনে হারাইনু মম পতিমণি।।অন্বেষণ করি তাঁরে, করি সেই ধ্যান।হারাধন পাই যদি, তবে রহে প্রাণ।।আজ্ঞা কর মুনিরাজ কোন দেশে যাব।নিশ্চয় কি পুনরপি দরশন পাব।।এত শুনি মুনিরাজ আশ্বাস করিল।না কর রোদন, তব দুঃখ শেষ হৈল।।পাইবে স্বামীরে পুনঃ পাবে রাজ্যভার।পুত্র কন্যা সহ সুখে বঞ্চিবে অপার।।এত বলি ঋষিবর অন্তর্ধান হৈল।বিস্ময় মানিয়া তবে বৈদর্ভী চলিল।।নদ নদী কন্টক পর্ব্বত ঘোর বনে।রাত্রি দিন যায় নিরানন্দ মনে।।যাইতে যাইতে দেখে এক নদীকূলে।বহুদ্রব্য সঙ্গে লয়ে বহু লোক চলে।।ভৈমীকে দেখিয়া লোক বিস্ময় মানিল।বিপরীত দেখি কেহ ভয়ে পলাইল।।কভু হাসে, কভু নাচে, চিত্রের পুত্তলী।রাক্ষসী পিশাচী কিবা মানুষী বাতুলী।।জিজ্ঞাসে দয়ার্দ্র হয়ে তবে কোন জন।কে তুমি, একাকী ভ্রম নির্জ্জন কানন।।বৈদর্ভী বলিল, নহি রাক্ষসী পিশাচী।স্বামী অন্বেষিয়া ভ্রমি আমি ত মানুষী।।অরণ্যের মধ্যে স্বামী ছাড়ি গেল মোরে।সত্য কহ তোমরা কি দেখিয়াছ তাঁরে।।এতেক শুনিয়া বলে বণিকের গণ।তোমা ভ্নি এ বনে না দেখি অন্য জন।।চেদিরাজ্যে যাই মোরা বাণিজ্য কারণ।আইস মোদের সঙ্গে যদি লয় মন।।আশ্বাস পাইয়া ভৈমী চলিল সংহতি।সেই পথে অন্বেষিয়া যায় নিজপতি।।হেনমতে কত পথে এক রম্যস্থলে।একটি যে সরোবর শোভিত কমলে।।কাতর হৈয়া শ্রমে যত বণিকগণ।সেই নিশি তথায় বঞ্চিল সর্ব্বজন।।নিশাকালে হস্তিগণ জলপানে এল।নিদ্রিত আছিল পথে চরণে চাপিল।।দশনে চিরিল কারে, শুণ্ডে জড়াইল।বণিকগণের মধ্যে মহারোল হৈল।।প্রানভয়ে পলাইয়া যায় কোন জন।দময়ন্তী করিলেন বৃক্ষে আরোহণ।।বৃক্ষোপরি আরোহিয়া করেন রোদন।হায় বিধি মোর ভাগ্যে ছিল এ লিখন।।জন্মকাল হৈতে আমি জানি নিজ মনে।এমন দুষ্কৃতি আমি না করি কখনে।।তবে কেন বিধি মোর কৈল হেন গতি।অধিক সন্তাপ মোর উপজিল নিতি।।মোর স্বয়ম্বরে এসেছিল দেবগণ।নিরাশ হইয়া ক্রোধ কৈল সর্ব্বজন।।সেই হেতু আমার না দেখি শ্রেয়ঃ আর।এত কষ্টে পাপ আত্মা না যায় আমার।।রজনী প্রভাত হৈলে যে যেখানে ছিল।চারিদিক হতে আসি একত্র মিলিল।।ভয় পেলে তথা হতে যায় শীঘ্রগতি।কত দিনে চেদিরাজ্যে উত্তরিল সতী।।বিবর্ণ বদনা কৃশা অঙ্গে অর্দ্ধ বাস।ধূলিতে ধূসর কায়, ঘন বহে শ্বাস।।বন হৈতে নগরেতে করিল প্রবেশ।চতুর্দ্দিকে ধায় লোক দেখি তার বেশ।।যুবা বৃদ্ধ নগরেতে যত শিশুগণ।চতুর্দ্দিকে বেড়িয়া চলিল সর্ব্বজন।।কেহ বা কর্দ্দম দেয়, কেহ দেয় ধূলা।বৈদর্ভীরে বেড়িয়া হইল লোকমেলা।।সুবাহু রাজার মাতা প্রাসাদে আছিল।দময়ন্তী দেখিয়া ধাত্রীরে আজ্ঞা দিল।।দেখ দেখ নারী এক নগরে আইসে।মলিনা বিবর্ণরূপা বেষ্টিতা মানুষে।।শীঘ্র গিয়া তাহারে আনহ মোর স্থানে।আজ্ঞামাত্র ভৈমীকে আনিল সেইক্ষণে।।ভৈমীকে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল রাজমাতা।কহ নিজ পরিচয়, কাহার বনিতা।।নিজরূপ আচ্ছাদন করেছ কি কারণ।মেঘে ঢাকিয়াছে যেন রবির কিরণ।।দময়ন্তী বলে, শুন কহি রাজমাই।জাতিতে মানুষী আমি, সৈরিন্ধ্রী বলাই।।দ্যূতে হারি স্বামী মোর পশিল কাননে।অপ্রমিত শুণ তাঁর, না যায় কথনে।।সঙ্গেতে ছিলাম আমি, ছাড়িলেন মোরে।তাঁরে অন্বেষিয়া আমি আইনু নগরে।।এত বলি দময়ন্তী করেন রোদন।আশ্বাদিয়া রাজমাতা বলেন বচন।।না কান্দহ কন্যে তুমি, চিত্ত কর স্থির।তব দুঃখ দেখি মম বিদরে শরীর।।পাইবে স্বামীর দেখা, থাক মোর বাসে।লোক পাঠাইব তব পতির উদ্দেশে।।ভৈমী বলে, এত যদি করুণা আমারে।তবে সে থাকিতে পারি তোমার মন্দিরে।।পুরুষ সহিত দেখা না হবে কখন।পুরুষের স্থানে না পাঠাবে কদাচন।।না ছুঁইব উচ্ছিষ্ট, না পদে দিব হাত।পূর্ব্বাপর ব্রত মম, কহি রাজমাতঃ।।বৃদ্ধ দ্বিজ পাঠাইবে স্বামী অন্বেষণে।এতেক কহিলে রহি তোমার সদনে।।সেইরূপ হইবে বলিয়া রাজমাতা।ডাকিল সুনন্দা নামে আপন দুহিতা।।রাজমাতা বলে তবে তনয়ার প্রতি।সখ্য কর তুমি এই সৈনিন্ধ্রী সংহতি।।অসম্মান যেন না করিও কদাচন।হীনকার্য্যে না করিও কভু নিয়োজন।।মাতৃ আজ্ঞা মানি লৈল রাজার নন্দিনী।ভৈমী রৈল তথা হৈয়া সুনন্দা সঙ্গিনী।।বনপর্ব্বে পুণ্যশ্লোকে নলের চরিত্র।পুণ্যকথা ভারতের শুনিলে পবিত্র।।৪৭. কর্কোটক নাগের দংশনেনলের বিকৃতাকারহেথা ভৈমী ছাড়ি, পরি অর্দ্ধ শাড়ী,চলিল নৃপতি নল।বায়ুবেগে ধায়, পাছু নাহি চায়,অঙ্গে বহে শ্রমজল।।দেখে হেনকালে, দাবানল জ্বলে,যেন ডাকে আর্ত্তস্বরে।বলয়ে পুণ্যাত্মা নল, পোড়ায় মোরে অনল,রক্ষা করহ আমারে।।শুনি নৃপবরে, কহে উচ্চস্বরে,স্মরণ কে করে মোরে।শুনি ফণিপতি, কহে নল প্রতি,নিবেদি দুঃখ তোমারে।।আমি নাগরাজ, অনন্ত অনুজ,কর্কোট নামে ভুজঙ্গ।নারদের শাপে, সদ্য পুড়ি তাপে,অচল হইল অঙ্গ।।নিষ্পাপ যে তুমি, তোমা স্পর্শে আমি,মুক্ত হৈব শাপ হৈতে।বিলম্ব না কর, সত্বর উদ্ধার,পুড়িয়া মরি অগ্নিতে।।পর্ব্বত আকার, শরীর আমার,দেখি না করিও ভয়।পরশিতে তুমি, ক্ষুদ্র হইব আমি,না হবে শ্রম তায়।।শুনি নরপতি, দয়ামত অতি,আনিল অনল হৈতে।পাইয়া অভয়, নাগরাজ কয়,সখ্য হৈল তব সাথে।।কর এক কাজ, শুন মহারাজ,কোলে করি মোরে লহ।বিপুল শবদে, গণি পদে পদে,কত দূরে লয়ে যাহ।।তার বাক্য শুনি, পদে পদে গণি,দশ চরণ চলিল।দশ ডাক শুনি, দংশিলেক ফণি,ছাড়িয়া অন্তর হৈল।।নল বলে ভাল, সখ্য ধর্ম্ম রৈল,সখারে দংশন কর।নাহি দোষ তব, জাতির স্বভাব,উপকারী জনে মার।।বলে নাগপতি, না ভাব দুর্গতি,করিয়াছি উপকার।কুৎসিত মূরতি, হৈলে নরপতি,অঙ্গ দেখ আপনার।।দুঃখের সময়, কভু ভাল লয়,ভূপতি লক্ষণ রূপ।কেহ না লক্ষিবে, যথায় যাইবে,সে হেতু হৈল বিরূপ।।যবে ইচ্ছা মনে, আমার স্মরণে,আপন রূপ পাইবে।না চিন্ত রাজন, তুমি পুণ্য জন,পুনঃ রাজ্যেশ্বর হবে।।কলি বাম হৈল, এ দশা সে কৈল,দ্বাপর তার সহায়।মোর এই বিষে, কলি অহর্ণিশে,জ্বলিবে জেনহ রায়।।আমার বচন, শুনহ রাজন,অযোধ্যায় ত্বরা রায়।।আমার বচন, শুনহ রাজন,অযোধ্যায় ত্বরা যাও।রাজা ঋতুপর্ণ, পালে চতুর্ব্বর্ণ,সারথি তাঁহার হও।।বৈদর্ভী রূপসী, তোমার প্রেয়সী,আরো তনয় তনয়া।কুশলে ভেটিবে, পুনঃ রাজা হবে,নিষধ রাজ্যেতে গিয়া।।এতেক কহিয়া, বস্ত্র এক দিয়া,অন্তর্ধান হয়ে গেল।নাগের বচন, শুনিয়া রাজন,অযোধ্যাপুরী চলিল।।ভারত কমল, শ্রবণ মঙ্গল,সাধুজন করে আশ।কৃষ্ণদাসানুজ, কৃষ্ণপদাম্বুজ,বন্দি কহে কাশীদাস।।৪৮. ঋতুপর্ণালয়ে বাহুক নামেনল রাজার অবস্থিতিতবে নল নরপতি দশম দিবসে।অযোধ্যায় প্রবেশিল বহু পথক্লেশে।।রাজার দুয়ারে গিয়া বলে নরপতি।মম তুল্য কেহ নাহি অশ্ব শিক্ষাকৃতী।।বাহুক আমার নাম শুন নরপতি।নিষধ রাজার আমি ছিলাম সারথি।।আর এক মহাবিদ্যা জানি যে রাজন।বিনা অনলেতে পারি করিতে রন্ধন।।এত শুনি কহে রাজা করিয়া আশ্বাস।যথোচিত বৃত্তি দিব, রহ মম পাশ।।যত অশ্বপালোপরে হবে তুমি পতি।যা বাঞ্ছিবে তাহা দিব, থাকিবে সংহতি।।এত শুনি নল রাজা রহিল তথায়।দিবস রজনী রাজা নিদ্রা নাহি যায়।।অন্ন জল নাহি রুচে পত্নীরে ভাবিয়া।সদা ভাবে দময়ন্তী কোথা গেল প্রিয়া।।গভীর কাননে তোমা ছাড়িয়া আইনু।তোমারে ছাড়িয়া হায় কি কাজ করিনু।।না জানি সে কি করিল আমার বিহনে।নিরাহারে নিরাশ্রয়ে আছে কোন স্থানে।।কতেক কান্দিল প্রিয়া মোরে না দেখিয়া।কি কুকর্ম্মা করিলাম নিষ্ঠুর হইয়া।।ভয়ঙ্কর সিংহ ব্যাঘ্র নির্জ্জন কাননে।একাকিনী বনে নারী বঞ্চিবে কেমনে।।পতিব্রতা অনুরক্তা আমাতে সতত।হেন স্ত্রী ছাড়িয়া আমি বাঁচি মৃতবত।।বনপর্ব্বে নলাখ্যান যেই জন শুনে।অশেষ দুঃখেতে পার হয় যেই জনে।।পাপকর্ম্মে তার মন কভু নাহি যায়।মদ দম্ভ রাগ দ্বেষ তাহারে না পায়।।ব্যাসের বচন, ইথে নাহিক সংশয়।পাঁচালী প্রবন্ধে কাশীরাম দাস কয়।।৪৯. বিদর্ভ-ভূপতি ভীম কর্ত্তৃক নলদময়ন্তীর উদ্দেশে দ্বিজগণ প্রেরণ ওচেদিরাজ্যে দময়ন্তীর সন্ধান প্রাপ্তিভার্য্যাসহ গেল নল অরণ্য ভিতর।দূতমুখে বার্ত্তা পায় ভীম নৃপবর।।শুনিয়া শোকার্ত্ত বড় ভীম নরপতি।সহস্র সহস্র দ্বিজ আনি শীঘ্রগতি।।দ্বিজগণ প্রতি রাজা বলিল বচন।নল দময়ন্তী দোঁহে কর অন্বেষণ।।অন্বেষণ করিয়া কহিবে বার্ত্তা আসি।সহস্র সহস্র গবী দিব রত্নে ভূষি।।গ্রাম দেশ ভূমি দিব, নানা রত্ন ধন।দুই জন মধ্যে যে দেখিবে এক জন।।এত বলি দ্বিজগণে মেলানি করিল।সেইক্ষণে দ্বিজগণ চতুর্দ্দিকে গেল।।সুদেব নামেতে দ্বিজ ভ্রমে নানাদেশ।সুবাহু রাজার পুরে করিল প্রবেশ।।দৈবাৎ ভৈমীরে তথা কৈল দরশন।সুনন্দা সহিত সতী করেন গমন।।চন্দ্রানন বিশালক্ষী দীর্ঘ মুক্তকেশা।চারু পীনপয়োধরা সুনাসা সুবেশা।।পদ্ম যেন বিদলিত হস্তীদন্তাঘাতে।চন্দ্র যেন বিদলিত রাহুগ্রহ দাঁতে।।ক্ষিতিমধ্যে নাহিক ইহার রূপসীমা।এই যে সৈরিন্ধ্রী হবে বিদর্ভ চন্দ্রিমা।।স্বামীর বিচ্ছেদে কৃশা বিবর্ণ বদনী।ভৈমী পাশে দিয়া শেষে বলে দ্বিজমণি।।মোর বাক্যে বরাননে কর অবধান।সুদেব ব্রাহ্মণ আমি ভ্রাতৃসখা জান।।তোমারে চাহিয়া ভ্রমি দেশ দেশান্তর।চারিদিকে গিয়াছেন দ্বিজ বহুতর।।কন্যা পুত্র দুই তব আছে শুভ তরে।তব শোকে পিতা মাতা প্রাণ মাত্র ধরে।।এত শুনি দময়ন্তী করেন রোদন।শুনিয়া আইল অন্তঃপুর-নারীগণ।।ব্রাহ্মণের বাক্য শুনি সৈরিন্ধ্রী কান্দিল।বার্ত্তা পেয়ে রাজমাতা বিপ্রে জিজ্ঞাসিল।।কাহার তনয়া এই, কাহার গৃহিণী।কি কারণে স্থানভ্রষ্টা হৈল এ ভামিনী।।যদি তুমি জানহ, জানাও দ্বিজবর।শুনিয়া সুদেব তাঁরে করিল উত্তর।।বিদর্ভ ঈশ্বর ভীম, তাঁহার দুহিতা।পুণ্যশ্লোক নলরাজা তাহাঁর বনিতা।।নিজভর্ত্তা রাজ্য দেশ পাশায় হারিল।অরণ্যে পশিল গিয়া, কেহ না দেখিল।।এই হেতু সহস্র সহ্র দ্বিজগণ।দেশ দেশান্তরে গিয়া করে পর্য্যটন।।মম ভাগ্যে তব গৃহে পাই দেখিবারে।ভ্রূমধ্যেতে তিল দেখি চিনিনু ইহারে।।বিশেষতঃ ক্ষিতিমধ্যে নাহিক উপমা।মুনিগণ বলে, দোঁহে কান্ত কান্তা সমা।।নল দময়ন্তী মহাভারতোপাখ্যান।জীবাদ্ধার হেতু ব্যাসদেবের রচন।।৫০. দময়ন্তীর পিত্রালয়ে গমনএত শুনি রাজমাতা আপনা পাসরে।দময়ন্তী কোলে করি অশ্রুজল ঝরে।।এত কাল গুপ্তভাবে আছ মম ঘরে।কি কারণে পরিচয় না দিলে আমারে।।তোমার জননী হয় মম সহোদরা।সুদাম রাজার কন্যা ভগিনী আমরা।।বীরবাহু মম পতি, ভীম তব পিতা।সে কারণে তুমি মোর ভগিনী দুহিতা।।এই রাজ্য ধন যে আপন করি জান।এত বলি বৈদর্ভীর করিল সম্মান।।শুনি দময়ন্তী তাঁরে প্রণাম করিল।বিনয় পূর্ব্বক তাঁরে কহিতে লাগিল।।নন্দিনী সমান মোরে রাখিলা ভবনে।না হইব কভু মাতা মুক্ত তব ঋণে।।তোমায় আমায় আছে রক্তের যে টান।তাই মোরে এত স্নেহ করেছিলা দান।।এবে পিত্রালয়ে মাতা করিব গমন।পিতৃ মাতৃহীন আছে নন্দিনী নন্দন।।আজ্ঞা কর আমারে গো করিতে গমন।শুনি রাজমাতা আজ্ঞা দিল সেইক্ষণ।।দিব্য বস্ত্র অলঙ্কারে করিয়া সুবেশ।দিব্য রথ দিয়া পাঠাইল নিজদেশ।।সুদেব ব্রাহ্মণ সঙ্গে চলিল তখন।নানাদেশ ভ্রমি আসে পিতার ভবন।।শুনিয়া ভীমের পত্নী আইল তনয়া।ঊর্দ্ধমুখে ধায় রাণী মুক্তকেশী হৈয়া।।পিতা মাতা পুত্র কন্যা কৈল সম্ভাষণ।একে একে মিলিলেক যত বন্ধুজন।।ভোজন করিয়া ভৈমী করিল শয়ন।একান্তে মায়েরে কহে করিয়া ক্রন্দন।।জীয়ন্ত আছি যে আমি, না করিহ মনে।কেবল আছয়ে তনু নল দরশনে।।নিশ্চয় নলের যদি না পাই উদ্দেশ।অনেলের মধ্যে আমি করিব প্রবেশ।।এত শুনি মহাদেবী রাজস্থানে গিয়া।কন্যারে যতেক কথা কহিল কান্দিয়া।।শুন শুন নরপতি মোর নিবেদন।চতুর্দ্দিকে পুনর্ব্বার যাক্ দ্বিজগণ।।নলের বিচ্ছেদে কন্যা প্রাণ না রাখিবে।কন্যার বিচ্ছেদে মম প্রাণ কিসে রবে।।এত শুনি নরপতি আনে দ্বিজগণে।চতুর্দ্দিকে পাঠাইল নল অন্বেষণে।।সব দ্বিজগণে তবে বৈদর্ভী ডাকিল।সবাকারে এইরূপে বচন বলিল।।একাকী নির্জ্জন চিরি লয়ে অর্দ্ধ শাড়ী।কোন দোষে ছাড়ি গেলা অনুরক্তা নারী।।যেই দেশে যেই গ্রামে করিবে প্রয়াণ।এই কথা জিজ্ঞাসিহ সবে সেই স্থান।।ইহার উত্তর যদি দেয় কোন জন।শীঘ্র আসি মম পাশে কহিবে তখন।।ইহার সম্বাদ মোরে যেই আসি দিবে।নিশ্চয় জানহ, সেই ভৈমীকে কিনিবে।।এত শুনি চলিলেন যত দ্বিজগণ।দেশে দেশে রাজ্যে রাজ্যে করে অন্বেষণ।।মহাভারতের কথা অমৃত সমান।শুনিলে পরম সুখ, জন্মে দিব্য জ্ঞান।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon