মহাভারত:দ্রোণপর্ব-০২১-০২৫

২১. কৃষ্ণার্জ্জুনের ছলে দুর্য্যোধনের মুকুট আনয়ন
কৌরবের যোদ্ধাগণ চলিল শিবির।
ভীষ্মের নিকটে গেল দুর্য্যোধন বীর।।
পিতামহ পদে বীর প্রণাম করিয়া।
সবিনয়ে কহে রাজা কৃতাঞ্জলি হৈয়া।।
তোমার সমান বীর নাহিক সংসারে।
দেবতা দানবগণ সবে তোমা ডরে।।
নিঃক্ষত্র পৃথিবীকারী ‍রাম মহাশয়।
তোমার নিকটে হৈল তাঁর পরাজয়।।
হেন মহাবীর তুমি দুর্জ্জয় সংসারে।
মুহূর্ত্তেকে তিন লোক পার জিনিবারে।।
সাত দিন পাণ্ডব সহিত কর রণ।
নির্ব্বিঘ্নে গৃহেতে যায় ভাই পঞ্চজন।।
যদ্যপি রণেতে কালি না মার পাণ্ডবে।
অপযশ তোমার যে ঘুষিবেক সবে।।
রুষিয়া উঠিল শুনি ভীষ্ম মহাবীর।
তূণ হৈতে পঞ্চশর করিল বাহির।।
মহাকাল নাম তার জানে সর্ব্বজন।
সুরপতি বজ্র সম নহে নিবারণ।।
বাণ হস্তে করি কহে জাহ্নবী নন্দন।
কোন চিন্তা নাহি তব শুনদুর্য্যোধন।।
কল্য রণে পাণ্ডবে নাশিব এই শরে।
দেব দামোদর যদি ছল নাহি করে।।
কৃষ্ণের কারণ বাঁচে ভাই পঞ্চজন।
নহিলে কি শক্তি তার সহে মম রণ।।
কালি পাণ্ডুপুত্রেরে মারিব এই শরে।
তবে সে যাইব আমি আপনার ঘরে।।
দুর্য্যোধন শুনি মহা আনন্দ হইল।
দিব্য রত্নগৃহ তথা নির্ম্মাইয়া দিল।।
সেই গৃহে রহিলেন গঙ্গার নন্দন।
দুর্য্যোধন মনে ভাবে জিনিলাম রণ।।
যুধিষ্ঠির মহারাজ সহ ভ্রাতৃগণ।
যত যোদ্ধাগণ আর দেব ‍নারায়ণ।।
সভা করি বসিলেন আপন আলয়।
সহদেবে জিজ্ঞাসেন দেবকী তনয়।।
কিমতে হইবে কালি যুদ্ধের করণি।
প্রকাশ করিয়া তাহা কহ মন্ত্রিমণি।।
সহদেব বলে শুন সংসারের সার।
সকল জানহ তুমি কি বলিব আর।।
দুর্য্যোধন আদেশেতে পিতামহ বীর।
তূণ হৈতে পঞ্চশর করিল বাহির।।
পাণ্ডব বধিব বলি প্রতিজ্ঞা করিল।
দ্বারেতে রহিল অন্তঃপুরে নাহি গেল।।
পাণ্ডবের হর্ত্তা কর্ত্তা তুমি মহাশয়।
বুঝিয়া করহ কার্য্য উচিত যে হয়।।
শুনি যুধিষ্ঠির পাইলেন মহাভয়।
ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা কভু লঙ্ঘন না হয়।।
সবান্ধবে কালি সবে হইবে নিধন।
কি উপায় ইহার হইবে নারায়ণ।।
শ্রীহরি বলেন রাজা চিন্তা না করিহ।
ধনঞ্জয় বীরের আমার সঙ্গে দেহ।।
ছল করি ভীষ্মস্থানে আনি পঞ্চবাণ।
অরিষ্ট ঘুচিবে হবে সবার কল্যাণ।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন হইয়া বিস্ময়।
ছল করি কিরূপে আনিবা মহাশয়।।
কৃষ্ণ কহিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।
কাম্যবনে যখন আছিলা পঞ্চজন।।
দূতমুখে দুর্য্যোধন শুনি সমাচার।
দুষ্ট মন্ত্রিগণ সহ করিল বিচার।।
দেখাইতে ঐশ্বর্য্য করিল আগমন।
সর্ব্ব সৈন্য সাজিলেক বিনা ভীষ্ম দ্রোণ।।
করিতে প্রভাসে স্নান দিলেক ঘোষণা।
সবান্ধবে চলে আর যত পুরজনা।।
তোমার অমান্য করি প্রভাসেতে গেল।
চিত্ররথ পুষ্পোদ্যান তথায় ভাঙ্গিল।।
শুনি ক্রোধে আইল গন্ধর্ব্ব বীরবর।
দুর্য্যোধন সহ তার হইল সমর।।
কর্ণ আদি যত যোদ্ধা রণে ভঙ্গ দিল।
স্ত্রীগণ সহিত দুর্য্যোধনেরে বান্ধিল।।
প্রেষণীর মুখে বার্ত্তা করিয়া শ্রবণ।
অর্জ্জুনেরে পাঠাইয়া করিলা মোচন।।
তুষ্ট হয়ে পার্থেরে বলিল দুর্য্যোধন।
মম স্থানে চাহি লহ যাহা তব মন।।
পার্থ বলিলেন এবে নাহি মম কাজ।
সময় হইলে লব শুন কুরুরাজ।।
সেই সত্য হেতু আজি তথাকারে যাব।
ছল করি নিজ কার্য্য উদ্ধার করিব।।
এতেক বলিয়া হরি পার্থ দুই জন।
শীঘ্রগতি চলিলেন যথা দুর্য্যোধন।।
শ্রীহরি বলেন আমি থাকিব বাহিবে।
তুমি গিয়া মুকুট আনহ মাগি বীরে।।
মুকুট মস্তকে দিয়া যাহ ভীষ্ম যথা।
শরমাগি আনহ ঘুচুক মনোব্যথা।।
শুনিয়া চলিল পার্থ অতি শীঘ্রতর।
গিয়া দ্বারী জানাইল ‍নৃপতি গোচর।।
শুনি রাজা দুর্য্যোধন ত্বরিত ডাকিল।
অন্তঃপুরে দিব্যাসনে পার্থে বসাইল।।
জিজ্ঞাসিল কি হেতু তোমার আগমন।
যে বাঞ্ছা তোমার তাহা করিব পূরণ।।
অর্জ্জুন বলেন রাজা পূর্ব্ব অঙ্গীকার।
মুকুট আমারে দিয়া সত্যে হও পার।।
শুনি দুর্য্যোধন নাহি বিলম্ব করিল।
মাথার মুকুট আনি ধনঞ্জয়ে দিল।।
মুকুট পাইয়া বীর হরষিত মন।
তথা হৈতে চলিলেন ভীষ্মের সদন।।
মুকুট শিরেতে বান্ধি উপনীত পার্থ।
দেখি ভীষ্ম সমাদর করিল যথার্থ।।
ভীষ্ম কহে কহ শুনি রাজ দুর্য্যোধন।
এত রাত্রে কি জন্য হেথায় আগমন।।
পার্থ বলিলেন দেহ মহাকাল শর।
স্বহস্তে পাণ্ডবে বধি জিনিব সমর।।
হাসি গঙ্গাপুত্র শর দিল সেইক্ষণে।
নিলেন অর্জ্জুন তাহা হরষিত মনে।।
হেনকালে শ্রীহরি দিলেন দরশন।
দেখি ভীষ্ম জানিলেন সকল কারণ।।
কৃষ্ণ প্রতি বলিছেন শান্তনু-কুমার।
কি হেতু প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিলে আমার।।
শিব সনকাদি তব না জানে মহিমা।
দেবগণ মুনিগণ দিতে নারে সীমা।।
অখিল ব্রহ্মাণ্ডেশ্বর জগতের পতি।
আপনি হইলা তুমি পাণ্ডব সারথি।।
আমার প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গি রাখিলে পাণ্ডবে।
তোমার প্রতিজ্ঞা কালি ভাঙ্গিব আহবে।।
সান্ত্বনা করিয়া ভীষ্মে দেবকী নন্দন।
অস্ত্র লয়ে দুইজন করেন গমন।।
পাণ্ডবগণের তাহে আনন্দ হইল।
মৃতদেহে যেন ‍আসি প্রাণ সঞ্চাবিল।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
২২. অষ্টম দিনের যুদ্ধ
সঞ্জয় বলেন শুন অম্বিকা-নন্দন।
রজনী প্রভাতে তবে কুরু-পাণ্ডুগণ।।
প্রভাতে সাজিল সবে ভুবনে দুর্জ্জয়।
দিব্যরথে আরোহিলা গঙ্গার তনয়।।
কনক রচিত রথ সহোদরযুত।
আরোহিলা দুর্য্যোধন সমরে অদ্ভুত।।
দ্রোণ দ্রোণি কৃপ আদি যত বীরগণ।
যার যেই রথে আরোহিলা সর্ব্বজন।।
কপিধ্বজ রথে আরোহিলা ধনঞ্জয়।
গোবিন্দ সারথি বীর সমরে দুর্জ্জয়।।
গন্ধর্ব্ব অসুর আদি নানা অস্ত্রগণ।
যুদ্ধস্থানে আইল সবে নানা প্রহরণ।।
নকুলাদি বীরগণ কৈল আরোহণ।
যার যে বাহনেতে চড়িল যোধগণ।।
দুই দলে বাদ্য বাজে না হয় বর্ণন।
কর্ণপথ রুদ্ধ হৈল কাঁপে ত্রিভুবন।।
শঙ্খভেরী বাজে পড়া দুন্দুভি মাদল।
মেঘেতে গর্জ্জন যেন করিছে বাদল।।
ভেউরি ঝাঝরি বাজে বহু করতাল।
ঢাক ঢোল জগঝম্প বাজে ত কাহাল।।
দগড় ডিণ্ডিমি আদি বাজে বাদ্যগণ।
ধনুক টঙ্কার যেন মেঘের গর্জ্জন।।
সৈন্যের পদের ভরে কাঁপয়ে মেদিনী।
মহাশব্দ কোলাহলে কর্ণে নাহি শুনি।।
তবে ভীষ্ম মহাবল গঙ্গার নন্দন।
সোমদত্ত বাহ্লীকাদি যত বীরগণ।।
মধ্যশৃঙ্গে দুর্য্যোধন সহোদর শত।
ব্যূহঅগ্রে গঙ্গাপুত্র সমরে অদ্ভুত।।
ভগদত্ত ত্রিগর্ত্তাদি যত বীরগণ।
পূর্ব্বশৃঙ্গে বীরভাগ সংগ্রামে নিপুণ।।
ততোধিক ব্যূহ কৈল ইন্দ্রের নন্দন।
স্থানে স্থানে বুঝিয়া রাখিল সেনাগণ।।
মধ্যশৃঙ্গে রহিলেন বীর বৃকোদর।
চক্রবক্র চেকিতান সুভদ্রা কোঙর।।
বামশৃঙ্গে সাত্যকি দ্রুপদ নরপতি।
ধৃষ্টদ্যুম্ন সত্রাজিত বিরাট প্রভৃতি।।
দক্ষিণ শৃঙ্গেতে রহে ভোজবংশপতি।
বৃহন্নল ঘটোৎকচ কেকয় প্রভৃতি।।
সহস্র সহস্র রথী সঙ্গে পরিবার।
পূর্ব্ব শৃঙ্গে যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের কুমার।।
ব্যূহমুখে ধনঞ্জয় সমরে দুর্জ্জয়।
মেঘের মধ্যেতে যেন অরুণ উদয়।।
দেখাদেখি দুই দলে বাজিল সমর।
নানা অস্ত্র এড়ে যেন বর্ষে জলধর।।
এইরূপ বাণবৃষ্টি না হয় বর্ণন।
ক্রোধভরে দুই দলে করে বরিষণ।।
শরজালে অন্ধকার হইল গগন।
অস্ত্রে অস্ত্রে আচ্ছাদিল না দেখি তপন।।
তবে ভীষ্ম মহাবীর প্রতাপে তপন।
আকর্ণ পূরিয়া টঙ্কারিল ধনুর্গুণ।।
শেল শূল শক্তি জাঠি মুষল মুদগর।
নারাচ ভূষণ্ডী গদা পরিঘ তোমর।।
নিরন্তর বৃষ্টি করে সৈন্যের উপর।
বরিষা-কালেতে যেন বর্ষে জলধর।।
কাহারো কাটিল শির কুণ্ডল সহিতে।
ধনুঃশর কাটি কারে পাড়িল ভূমিতে।।
মধ্যদেশ কাটিয়া পাড়িল কত বীরে।
এইরূপে কত যোদ্ধা পড়ে রণ করে।।
কাহারো শ্রবণ কাটে কারো কাটে জানু।
কাহারো কবচ কাটো কারো কাটে তনু।।
শত শত মহারথী দিল যমঘরে।
রক্তে নদী বহে সৈন্য রক্তেতে সাঁতারে।।
শকুনি গৃধিনীগণে ছাইল অম্বর।
অসংখ্য কবন্ধ উঠে হাতে ধনুঃশর।।
না পারে সহিতে যুদ্ধ পাণ্ডু-সৈন্যগণ।
পলাইয়া নিল সবে ভীমের শরণ।।
ক্রোধ হৈল ভীমসেন সমর ভিতর।
রথ চালাইয়া দিল ভীষ্মের গোচর।।
ভীমে দেখি হাতে অস্ত্র নিল ভীষ্ম বীর।
নানা অস্ত্র মারি বিন্ধে ভীমের শরীর।।
হাসি বীর বৃকোদর পূরিল সন্ধান।
দশ বাণ মারে পিতামহ বিদ্যমান।।
বিক্রমে বিশাল বীর ভীম মহামতি।
শরেতে জর্জ্জর কৈল ভীষ্মের সারথি।।
শরে আবরিত ভীষ্মে না দেখি যে আর।
বিষাদেতে কুরুকুলে হৈল হাহাকার।।
ত্র্যস্ত হৈল লৈয়া রাজা ধাইল সত্বর।
ভীষ্মের সাহায্য হেতু বেড়িল ভীমেরে।।
নানাবিধ অস্ত্রগণ বরিষে সমরে।
শক্তি জাঠি নানাচাদি পরিঘ তোমর।।
ব্রহ্মজাল রুদ্রজাল মুষল মুদগর।
নিরন্তর এড়ে অস্ত্র ভীমের উপর।
বরিষা-কালেতে যেন বর্ষে জলধর।।
হাসি বীর বৃকোদর পূরিল সন্ধান।
বাণে বাণে হানিয়া করিল খান খান।।
যেন বায়ু নিবারণ কৈল ঘোর ঘন।
বৃষ্টিজলে বিদলিত নলিনী যেমন।।
সবাকার অস্ত্র বীর কৈল খণ্ড খণ্ড।
নিজ অস্ত্র হাতে নিল যেন যমদণ্ড।।
নিমিষেতে শরজালে পূরিল আকাশ।
শূন্যপথে রুদ্ধ কৈল না চলে বাতাস।।
ভীমের বিক্রমে ভয় পাইল কুরুগণ।
ক্রোধ করি অস্ত্র নিল রাজা দুর্য্যোধন।।
জয়নাম পালিক লইল দুই বাণ।
ভীমের উপরে বীর পূরিল সন্ধান।।
এড়িলেক অস্ত্র যেন যমের সমান।
দুই বাণে বৃকোদর কৈল খান খান।।
অতি ক্রোধে ভীম এড়ে দিব্য ভল্ল শর।
নিবারিতে না পারিল কৌরব-কোঙর।।
কবচ ভেদিয়া অস্ত্র ভেদিল শরীরে।
মূর্চ্ছিত হইয়া পড়ে রথের উপরে।।
মূর্চ্ছা গেল দুর্য্যোধন ভীম পাইল আশ।
নির্ম্মল আকাশে যেন সূর্য্যের প্রকাশ।।
ক্রোধে ঘটোৎকচ বীর করে মহামার।
আষাঢ় শ্রাবণে যেন বর্ষে জলধর।।
নিমিষেকে শরজালে ছাইল আকাশ।
রুধিল মরুত-পথ না চলে বাতাস।।
ত্রাস পাইল সৈন্যগণ ভঙ্গ দিল রণে।
ক্রোধ হয়ে অলম্বুষ প্রবেশিল রণে।।
রচিয়া রাক্ষসী মায়া মহা বিচক্ষণ।
অলম্বুষ ঘটোৎকচে হৈল মহারণ।।
মহাবল ঘটোৎকচ হিড়িম্বা নন্দন।
যুদ্ধে পরাভব কৈল রাক্ষস দুর্জ্জন।।
মায়াতেজে বলবান ঘটোৎকচ বীর।
খণ্ড খণ্ড কৈল অলম্বুষের শরীর।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির ধারা হৈল অচেতন।
রথ লয়ে সারথি বাহুড়ে ততক্ষণ।।
সব কুরুসৈন্য যায় পলাইয়া বেগে।
হেন বীর নাহি যুঝে ঘটোৎকচ আগে।।
তবে দ্রোণে চাহি বলে ভীষ্ম মহামতি।
আজিকার যুদ্ধে মোর নাহি লয় মতি।।
ক্রোধ করি ভগদত্ত প্রবেশিল রণে।
সন্ধান পূরিয়া বাণ করে বরিষণে।।
দিব্য অস্ত্রশিক্ষা বীর সমরে প্রচণ্ড।
বাণে বাণে অভিমন্যু কৈল খণ্ড খণ্ড।।
শর হানি জর্জ্জরিত কৈল গজ মত্ত।
আপনা রাখিতে নারে রাজা ভগদত্ত।।
শোণিত বহয়ে ধারে মহাগজবর।
অরুণ-কিরণ যেন মেঘের উপর।।
পর্ব্বত প্রমাণ অঙ্গ ঐরাবত সম।
সুবিপুল মহাকায় বিশাল বিক্রম।।
ক্রোধে ভগদত্ত বীর গজ টোয়াইল।
সকল পাণ্ডবসৈন্য বিকল হইল।।
বেগে ধায় গজবর ক্ষিতি কাঁপে ভরে।
সকল পাণ্ডবসৈন্য ভঙ্গ দিল রড়ে।।
আকর্ণ পূরিয়া বাণ মারে বৃকোদর।
বাণবৃষ্টি করে ভগদত্তের উপর।।
বরিষা-কালেতে যেন বর্ষে জলধর।
মূর্চ্ছা হৈল ভগদত্ত গজের উপর।।
তবে কৃতবর্ম্মা শল্য আদি যত বীর।
শরজালে আবরিল ভীমের শরীর।।
ব্যস্ত হৈল যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের নন্দন।
ঘটোৎকচে ডাকি আজ্ঞা দিল ততক্ষণ।।
শীঘ্রগতি যাহ তাত যথা বৃকোদর।
ভগদত্তে সংহারহ করিয়া সমর।।
আজ্ঞামাত্র ঘটোৎকচ ধায় ততক্ষণ।
করিল রাক্ষসী মায়া অদ্ভুত রচন।।
বামশৃঙ্গে যুদ্ধ করে দ্রোণের নন্দন।
শিখণ্ডী সহিত যুঝে প্রতিজ্ঞা কারণ।।
মহাবীর শিখণ্ডী সে সমরে প্রচণ্ড।
দ্রৌণির হাতের ধনু কৈল খণ্ড খণ্ড।।
ধনু কাটা গেল বীর ক্রোধ হৈল মনে।
শক্তি ফেলে শিখণ্ডীরে হানে ততক্ষণে।।
দুই বাণে শক্তি কাটি কৈল খান খান।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণ পুনঃ পূরিল সন্ধান।।
ধ্বজচ্ছত্র সংগ্রামে কাটিয়া মহাবীর।
কবচ ভেদিয়া বিন্ধে দ্রৌণির শরীর।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে দ্রোহের নন্দন।
ক্রোধে গদা লয়ে বীর ধায় বায়ুবেগে।
সিংহ যেন মারিবারে ধায় হীন মৃগে।।
চারি অশ্ব মারিল মারিয়া গদাবাড়ি।
কোপে ধরি শিখণ্ডীরে ভূমিতলে পাড়ি।।
খড়্গ হাতে লৈল বীর হানিবার তরে।
হেনকালে ধৃষ্টদ্যুম্ন আইল সত্বরে।।
বাণে হানি খড়্গচর্ম্ম কৈল খণ্ড খণ্ড।
দ্রোণপুত্রে বিন্ধিলেক যেন যমদণ্ড।।
অবসর শিখণ্ডী পাইল কিছু তাথে।
ধেয়ে গিয়া উঠে বীর সত্রাজিত রথে।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন-দ্রৌণিতে হইল মহারণ।
ক্রোধে ধৃষ্টদ্যুম্ন করে অস্ত্র বরিষণ।।
শরজালে দ্রোণপুত্রে কৈল আবরণ।
পুত্রের সাহায্য হেতু আইল গুরু দ্রোণ।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণ দোঁহে হৈল মহারণ।
দোঁহাকার অস্ত্রবৃষ্টি না হয় বর্ণন।।
শেল শূল শক্তি জাঠি মুষল মুদগর।
নানা অস্ত্র বর্ষে দোঁহে দোঁহার উপর।।
দোঁহাকার বাণ নিবারয়ে দুইজন।
দোঁহে মহাবীর্য্যবন্ত দোঁহে বিচক্ষণ।।
কতক্ষণে বৃকোদর পূরিল সন্ধান।
বাণে বাণ কাটিয়া করিল খান খান।।
অন্য ধনু লৈল তবে দ্রোণের কোঙর।
সেই ধনু দুই বাণে কাটে বৃকোদর।।
কবচ কাটিয়া বিন্ধে তাহার শরীর।
পুনরপি দিব্য অস্ত্র এড়ে মহাবীর।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে হৈল অচেতন।
অবসর পাইল ভীম পবন-নন্দন।।
ত্রাস পেয়ে দুর্য্যোধন পলায় সত্বর।
ভীষ্মের শরণ লয়ে রাখে কলেবর।।
ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি ভীম দেখি লাগে ভয়।
কার শক্তি আছে তারে অগ্রে স্থির রয়।।
ভীষ্ম বলে স্থির হয়ে যুঝ দুর্য্যোধন।
হেন দেখ বেগে আসিতেছে কৃর্ষ্ণার্জ্জুন।।
শীঘ্র যাই আমি তার প্রবোধ কারণ।
আজিকার রণে সংহারিব পাণ্ডুগণ।।
এত বলি প্রবোধিয়া রাজা দুর্য্যোধন।
রথ চালাইয়া দিল যথা কৃষ্ণার্জ্জুন।।
দুই জন সমাগমে হৈল মহারণ।
দোঁহাকার বাণবৃষ্টি না হয় বর্ণন।।
আকর্ণ পূরিয়া দোঁহে এড়ে দিব্য শর।
কাদম্বিনী বর্ষে যেন পর্ব্বত উপর।।
ক্রোধে ভীষ্ম মহাবীর পূরিল সন্ধান।
ভৈল নামে ধনুকেতে যোড়ে দিব্য বাণ।।
শীঘ্রগতি ধনঞ্জয় ইন্দ্রের নন্দন।
বাণ সহ ভীষ্মের কাটিল শরাসন।।
আর ধনু লৈয়া ভীষ্ম বরিষয়ে শর।
বাণে আচ্ছাদিল কৃষ্ণার্জ্জুন কলেবর।।
কুজঝটিতে আচ্ছাদিল যেন গিরিবর।
দেখা নাহি যায় পার্থে সংগ্রাম ভিতর।।
বশিষ্ঠের শিক্ষা বাণ উগ্র রুদ্রজানু।
আকর্ণ পূরিয়া বিন্ধে গোবিন্দের তনু।।
সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া ধারে বহিছে রুধির।
স্ফুটিতে কিংশুক যেন কৃষ্ণের শরীর।।
ক্রোধে বীর গঙ্গাপুত্র সমরে প্রখর।
পুনরপি বিন্ধিলেক পার্থ কলেবর।।
কবচ কাটিয়া অস্ত্র রহিল শরীরে।
মূর্চ্ছা হৈয়ে পড়ে পার্থ রথের উপরে।।
ব্যস্ত হৈল নারায়ণ দেবকী-নন্দন।
অবসর পেয়ে ভীষ্ম বর্ষে অস্ত্রগণ।।
শেল শূল শক্তি জাঠা মুষল মুদগর।
পরশু ভূষণ্ডী গদা নারাচ তোমর।।
শিলীমুখ পরিঘাদি নানা অস্ত্রগণ।
সৈন্যের উপরে বর্ষে বাণ অনুক্ষণ।।
খণ্ড খণ্ড করিলেক অপ্রমিত সেনা।
রুধিরে বহিয়া যায় শোণিতের ফেনা।।
রথী মহারথিগণ পড়িল বিস্তর।
লেখা নাহি যায় কত হাতে ধনুঃশর।।
শকুনি গৃধিনীগণে ছাইল অম্বর।
হস্তী সব ভাসি বুলে রক্তের উপর।।
শৃগাল-কুক্কুরগণ করে কোলাহল।
ভয় পেয়ে ভঙ্গ দিল পাণ্ডবের দল।।
অভিমন্যু ধৃষ্টকেতু আদি বীরগণ।
শীঘ্রগতি আইল পার্থ সাহায্য কারণ।।
ভীষ্মের উপরে সবে এড়ে দিব্য বাণ।
গগনে আইসে বাণ করিয়া গর্জ্জন।।
শীঘ্রহস্ত গঙ্গাপুত্র সমরে দুর্ব্বার।
অস্ত্রে অস্ত্র কাটিয়া করিল মার মার।।
দ্বিতীয় প্রহর যুদ্ধ না হয় বর্ণন।
দোঁহে দোঁহাপরি বাণ করে বরিষণ।।
দুই দলে পড়িল অনেক সৈন্যগণ।
মহারথী পদাতিক না হয় গণন।।
হেনকালে ইলাবন্ত অর্জ্জুন-নন্দন।
স্বর্গ হৈতে আইল যেন যম-দরশন।।
বনবাস কাল যবে বীর ধনঞ্জয়।
অস্ত্রশিক্ষা হেতু গিয়াছিল ইন্দ্রালয়।।
সেইকালে জানুপদী নামে বিদ্যাধরী।
অর্জ্জুনে বরিল সেই হৈয়া স্বেচ্ছাচারী।।
তাহার গর্ভেতে জন্ম হইল নন্দন।
স্বর্গ হৈতে মর্ত্ত্যে যবে আইল অর্জ্জুন।।
বাপের অগ্রেতে সত্য ছিল সেইকালে।
যুদ্ধের সময় বুঝি যাব রণস্থলে।।
ইলাবন্ত দেখি পার্থ আনন্দিত মনে।
বাপে প্রণমিয়া বীর প্রবিশিল রণে।।
নানাবিধ অস্ত্র বর্ষে ভীষ্মের উপর।
বরিষার কালে যেন বর্ষে জলধর।।
শিলী রুদ্রমুখ ভৈল আদি অস্ত্রগণে।
বিন্ধিয়া জর্জ্জর কৈল গঙ্গার নন্দনে।।
মোহ গেল ভীষ্ম বীর খেয়ে তার বাণ।
কুরু-সৈন্যগণে বিন্ধে করিয়া সন্ধান।।
শত শত মহারথী সমরে মারিল।
তাহার বিক্রম দেখি ভীষ্মে ক্রোধ হৈল।।
ডাক দিয়া ভীষ্ম বলে শুন ইলাবন্ত।
ক্ষণেক থাকিয়া যুঝ শুনরে দুরন্ত।।
বশিষ্ঠের দত্ত এই নাম রুদ্রবাণ।
এই অস্ত্রে আজি তোর লইব পরাণ।।
এত বলি ভীষ্ম বাণ যুড়িল ধনুকে।
ক্ষণে ক্ষণে অগ্নিবৃষ্টি হয় অস্ত্রমুখে।।
আকর্ণ পূরিয়া ভীষ্ম এড়ে দিব্য শর।
নিবারিতে নারে অস্ত্র হইল ফাঁফর।।
মস্তক কাটিয়া অস্ত্র ফিরি আইল তূণে।
রথ হৈতে ইলাবন্ত পড়ে ততক্ষণে।।
হাহাকার শব্দ কৈল পাণ্ডু-সৈন্যগণ।
পুত্রশোকে রুষিলেন ইন্দ্রের নন্দন।।
পুনরপি ভীষ্মের সহিত কৈল রণ।
দোঁহাকার বাণবৃষ্টি না হয় বর্ণন।।
২৩. ভীষ্ম কর্ত্তৃক শ্রীকৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ
রথী মহারথিগণ, আশোয়ার অগণন,
পাণ্ডবের যতেক বাহিনী।
সহদেব নকুলাদি, অভিমন্যু যথাবিধি,
চক্রবক্র ভীম মহামণি।।
নানাবিধ অস্ত্রগণ, ক্রোধে করে বরিষণ,
শেল শূল মুষল মুদগর।
বিষ্ণুচক্র ব্রহ্মজাল, যেন বাণ রুদ্রকাল,
নিরন্তর ভীষ্মের উপর।।
বরিষার জলধার, বরিষে পর্ব্বতোপর,
ততোধিক ফেলে অস্ত্রগণ।
নাহিক সন্দেহ মনে, সিংহ যেন মৃগগণে,
দিব্য অস্ত্র লৈল ততক্ষণ।।
মহাবল গঙ্গাসুত, এড়ে অস্ত্র যূথে যূথ,
আকর্ণ টানিয়া শরাসন।
অস্ত্রে অস্ত্রে ততক্ষণ, কাটি কৈল খান খান,
বাণে যেন ভাঙ্গে ঘোর ঘন।।
বশিষ্ঠের শিক্ষা বাণ, পুনরপি সুসন্ধান,
ক্রোধদৃষ্টে করে বরিষণ।
নিমিষেক শরজালে, সৈন্যে যেন বর্ষে ব্যালে,
অন্ধকার করিল গগন।।
রথী মহারথিগণ, পদাতিক অগণন,
শর হানি কৈল খণ্ড খণ্ড।
মধ্যদেশে কোন বীর, মুকুট সহিত শির,
বাণে কাটি পাড়ে ধ্বজদণ্ড।।
কাহার কাটিল হাত, দন্তিদন্ত শুণ্ড সাথ,
চারিপদ কত অশ্বগণ।
ছত্র দণ্ড রথ ধ্বজ, মাহুত সহিত গজ,
দুই পদ কাটে কত জন।।
রণমধ্যে রথ পড়ে, পাকা তাল যেন ঝড়ে,
আশোয়ার পত্তি অগণন।
নানা অস্ত্র হাতে আছে, রণভূমে কালী নাচে,
দেখি ভয় পাইল পাণ্ডুগণ।।
সহিতে না পারি রণ, ভঙ্গ দিল সর্ব্বজন,
প্রশংসিয়া গঙ্গার নন্দন।
সৈন্যগণ ভঙ্গ দেখি, ধনঞ্জয় বলে ডাকি,
শীঘ্র রথ লহ নারায়ণ।।
যথা আছে পিতামহ, শীঘ্রগতি রথ লহ,
আজি তারে করিব নিধন।
দেখ দেখি জনার্দ্দন, যত মহাবীরগণ,
পরাজিল গঙ্গার নন্দন।।
কেহ অগ্রে স্থির নহে, মৃগ যেন সিংহ ভয়ে,
রণে ভঙ্গ দিল সর্ব্বজন।।
ভাঙ্গিল ব্যূহের সেনা, হত খৈল কত জনা,
অস্থির করিল সৈন্যগণ।।
আজ্ঞামাত্র দামোদর, রথ লৈল শীঘ্রতর,
অতিবেগে ভীষ্মের অগ্রেতে।
হাসি ভীষ্ম হর্ষময়, দেখি কৃষ্ণ মহাশয়,
দিব্য অস্ত্র লইল করেতে।।
দোঁহাকার দোঁহে বাণ, কাটি করে খান খান,
দেখিয়া বিস্ময় সুরগণ।
হৈয়া অতি ক্রোধমন, এড়ে ভীষ্ম অস্ত্রগণ,
সহিতে না পারে কৃষ্ণার্জ্জুন।।
শেল শূল শক্তি জাঠি, ভল্ল বাণ কোটি কোটি,
নারাচ পরিঘ অগণন
বিষ্ণুচক্র ব্রহ্মজাল, রুদ্রশেল অস্ত্র কাল,
ক্রোধে ভীষ্ম করে বরিষণ।।
না চলয়ে রথখান, কৃষ্ণ পাইল অপমান,
কাতর হইল ধনঞ্জয়।
গুণ টানি বীরবর, মারে অস্ত্র দোঁহাপর,
না পারয়ে পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
পার্থ পেয়ে অপমান, ইন্দ্রদত্ত নিয়া বাণ,
গাণ্ডীবেতে সন্ধান পূরিল।
আকাশে উঠিল বাণ, কুরুগণ কম্পমান,
ধনু কাটি ভীষ্মেরে বিন্ধিল।।
আর ধনু লয়ে বীর, শীঘ্রহস্ত রণে স্থির,
মহাবল শান্তনু-নন্দন।
শুন দিয়া ধনুকেতে, দিব্য শর লৈল হাতে,
সেই ধনু কাটিল অর্জ্জুন।।
ভৃগুপতিদত্ত বাণ, শত্রুঞ্জয় অনুপা,
টঙ্কারিতে হরে রিপু-দর্প।
ঝাঁকে ঝাঁকে অস্ত্রগণে, পার্থে করে বরিষণ,
ভয়ঙ্কর যেন কাল সর্প।।
সর্ব্বাঙ্গে ফুটিল শর, মোহ গেল পার্থবর,
অবসর পাইয়া ভীষ্ম বীর।
দিব্য বাণ পূরি তন্ত্র, অভিষেক করি মন্ত্র,
বিন্ধিলেক কৃষ্ণের শরীর।।
হাসে ভীষ্ম মহামতি, ভয় পাইলা জগৎপতি,
সর্ব্বাঙ্গে ফুটিল মহাশর।
তথাপি ভ্রুক্ষেপ নহে, সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে,
মনে চিন্তে দেবকী-কোঙর।।
প্রায় বুঝি ভীষ্মহাতে, আজিকার সংগ্রামেতে,
সর্ব্ব সৈন্য হইল নিধন।
আপনি করিয়া রণ, যদি মারি কুরুগণ,
রাম-বাক্য হয়ত লঙ্ঘন।।
পূর্ব্বে মোর অঙ্গীকার, অর্জ্জুনের রণভার,
প্রকারে মারিব কুরুগণে।
অনেক প্রকার কৈনু, ভীষ্মে তবু না পারিনু,
সংহার করিতে মহারণে।।
ধর্ম্মভয় খণ্ডি রণে, যদি মারি কুরুগণে,
রামবাক্য হয়ত লঙ্ঘন।
চিন্তিয়া ত চিন্তামণি, কৈল ঘোর শঙ্খধ্বনি,
অস্থির হইল কুরুগণ।।
রাখিলে রামের ভাষ, পাণ্ডুপুত্র হয় নাশ,
না দেখি যে ইহার উপায়।
ভাঙ্গিব ধর্ম্মের সেতু, শরণ রক্ষণ হেতু,
সংহারিব গঙ্গার তনয়।।
এত ভাবি মনে মন, অতি ক্রোধে জনার্দ্দন,
লাফ দিয়া নামে রথ হৈতে।
ত্রিলোকের নাথ হরি, ক্রোধে রথচক্র ধরি,
বেগে ধায় ভীষ্মেরে মারিতে।।
বিশ্বম্ভরূপ হরি, দেখি কুরু-অধিকারী,
হাত হৈতে খসে শরাস।
ভাবে পুলকিত বপু, নিরখিয়া মধুরিপু,
করযোড়ে করয়ে স্তবন।।
জয় জয় নারায়ণ, পূর্ণব্রহ্ম সনাতন,
নমো জয় বিধাতার ধাতা।
পুরুষ প্রকৃতি পর, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর,
তিনরূপধারী জগৎকর্ত্তা।।
সংহার পালন স্থিতি, নমস্তে শ্রীজগৎপতি,
দুষ্টধ্বংস শিষ্টের পালন।
তুমি সূর্য্য দিবাকর, তুমি যত দণ্ডধর,
যক্ষপতি জলেন্দ্র পালন।।
দুর্জ্জয় রাক্ষস যক্ষ, কীট পতঙ্গাদি পক্ষ,
সর্ব্বভূতে তুমি অনুরূপ।
ইন্দ্র আদি বায়ু শিব, চরাচর যত জীব,
কেহ নহে তোমার বিরূপ।।
তুমি কান্ত তুমি মায়া, ত্রিজগৎ তব কায়া,
তুমি উগ্র নিগ্রহ বিগ্রহ।
তুমি স্থল, তুমি শূন্য, জগন্নাথ জগজ্জন্য,
জলে স্থলে চতুর্ব্বাণ দেহ।।
আকাশ মস্তক বর, পৃথিবী চরণতল,
সুমেরুর শৃঙ্গ মধ্যস্থল।
তুমি সূক্ষ্ম দেহ ধর, বিশ্বম্ভর কলেবর,
সপ্তসিন্ধু তব পদ জল।।
এইরূপে বহু স্তুতি, কৈল ভীষ্ম মহামতি,
সদয় হইলা জনার্দ্দন।
চিত্রের পুত্তলী প্রায়, রহিলেন যদুরায়,
আগু হৈতে না চলে চরণ।।
পুনঃ ভীষ্ম বীরমণি, যুড়িয়া উভয় পাণি,
ডাকি বলে দেবকী কুমারে।
হোক মোর স্বর্গপতি, পার্থ পাবে অব্যাহতি,
শীঘ্রগতি কাটহ আমারে।।
এত বলি ভীষ্ম বীর, বাড়াইয়া দিল শির,
অধোমুখ হৈল মহাশয়।।
দেখিয়া কৃষ্ণের ক্রোধ, শীঘ্র করিবারে রোধ,
রথ হৈতে নামে ধনঞ্জয়।।
শত পদ অন্তরেতে, ধরিল কৃষ্ণের হাতে,
শীঘ্রগতি ইন্দ্রের নন্দন।
সম্বর সম্বর ক্রোধ, অখিল ভুবন নাথ,
জগৎকর্ত্তা দেব নারায়ণ।
পূর্ব্বেতে তোমার আগে, গঙ্গাপুত্র মহাভাগে,
প্রতিজ্ঞা করিনু সংহারিতে।
এত বলি ধনঞ্জয়, প্রবোধিয়া দয়াময়,
ক্রোধ ত্যজি উঠিলা রথেতে।।
হাতে করি ধনুঃশর, রণস্থলে বীরবর,
পূর্ব্বাপর লাগিল যুঝিতে।
আকর্ণ পূরিয়া ধনু, বিন্ধিল ভীষ্মের তনু,
নানা অস্ত্র লইয়া করেতে।।
পুনরপি ভীষ্মার্জ্জুন, হৈল দোঁহে মহারণ,
শরজালে ছাইল গগন।
মুষল মুদগর আদি, শক্তি শূল নানাবিধি,
দোঁহে বর্ষে হৈয়া ক্রোধমন।।
হেনকালে গগনেতে, দিনকর অস্তগতে,
দেখি সবে যুদ্ধ নিবর্ত্তিল।
দুর্য্যোধন দুঃখ চিতে, চলি গেল শিবিরেতে,
পাণ্ডুপুত্র নিজ গৃহে গেল।।
মহাভারতের কথা, ব্যাস বিরচিত গাথা,
শ্রবণেতে পাপ হয় নাশ।
হৃদয়ে চিন্তিয়া হরি, পয়ার রচনা করি,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।
২৪. নবম দিনের যুদ্ধের যুক্তি
তবে রাজা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ে পুছিল।
কহত সঞ্জয় তবে কি কর্ম্ম হইল।।
সঞ্জয় বলেন, রাজা কর অবগতি।
দুঃখচিত্তে নিজালয়ে এল কুরুপতি।।
সহোদরগণ সঙ্গে করিয়া রাজন।
ভয়ে কম্পমান গৃহে কৈল প্রবেশন।।
সিংহাসন ছাড়ি রাজা বসিল ভূমিতে।
চতুর্দ্দিকে ভ্রাতৃগণ বসিল বেষ্টিতে।।
দুই পাশে বসিল যতেক রাজগণ।
ভগদত্ত প্রতীপাদি যতেক রাজন।।
সুশর্ম্মা সৌবল আদি যত নরপতি।
সভাতে বসিলা সবে হৈয়া দুঃখমতি।।
অনেক চিন্তিয়া তবে রাজা দুর্য্যোধন।
দূত প্রেরি আনাইল ভীষ্ম আর দ্রোণ।।
ভূরিশ্রবা দ্রৌণি আদি যত বীরগণ।
যার যেই আসনে বসিল সর্ব্বজন।।
তবে পুনঃ নরপতি হৃদয়ে ভাবিয়া।
কর্ণেরে আনিল শীঘ্র দূত পাঠাইয়া।।
রাজার আদেশে কর্ণ এল ততক্ষণ।
আলিঙ্গন করি কর্ণে বলয়ে বচন।।
সেনাপতি হও তুমি কি বলিব আর।
দিনে দিনে ক্ষীণবল হইল আমার।।
আপনারে দ্বারে কাঁটা রোপিনু আপনি।
সেনাপতি না করিনু আগুপাছু গণি।।
আগে যদি তোমারে দিতাম সৈন্যভর।
তবে কেন এত দুঃখ হইবে আমার।।
মান্য করি পিতামহে কেনু সেনাপতি।
স্নেহ করি পাণ্ডবে না মারে মহামতি।।
ভীষ্ম দ্রোণ দ্রৌণি আদি বাহ্লীক রাজন।
সোমদত্ত কৃপাচার্য্য এই ছয় জন।।
স্নেহভাবে পাণ্ডবে না করয়ে নিধন।
সেনাপতি হও তুমি রণে বিচক্ষণ।।
পূর্ব্বে অঙ্গীকার কৈলে সভার ভিতরে।
পাণ্ডবেরে মারিয়া রাজত্ব দিবে মোরে।।
মোর মনস্কাম তুমি করহ পূরণ।
মহারণে মার তুমি পাণ্ডব-নন্দন।।
এতেক শুনিয়া কহে রাধার কুমার।
এখন না লব আমি সেনা-অধিকার।।
যাবত থাকিবে রণে ভীষ্ম মহামতি।
তাবত না হব আমি সৈন্য-অধিপতি।।
প্রতিজ্ঞা করিল ভীষ্ম সবার গোচর।
আমি বিদ্যমানে নাহি কর্ণের সমর।।
ক্ষত্রিয় প্রতিজ্ঞা না রাখিলে পাপ হয়।
তেকারণে অবধানে শুন মহাশয়।।
যে আজ্ঞা করিবে তাহা করিব পালন।
মেলানি করহ যাই আপন ভবন।।
এত বলি কর্ণ বীর গেল নিজালয়।
ভীষ্মেরে চাহিয়া বলে গান্ধারী তনয়।।
পূর্ব্বে অঙ্গীকার তুমি করিলে আপনে।
রণমধ্যে সংহারিবে পাণ্ডুপুত্রগণে।।
স্নেহ-ভাব করি নাহি করহ নিধন।
কি করিব এবে মোর অদৃষ্ট লিখন।।
এই ভিক্ষা মাগি আমি করি পরিহার।
সেনাপতি যোগ্য হয় রাধার কুমার।।
এত শুনি কহে ক্রোধে গঙ্গার কুমার।
অরুণ লোচন দুই ঘূর্ণিত আকার।।
বহু বাখানহ তুমি কর্ণ ধনুর্দ্ধরে।
নিমিষেকে সংহারিবে পাণ্ডুর কুমারে।।
কোন ছার কর্ণ বীর সংহারিবে তারে।
ইন্দ্র নারে জিনিবারে পাণ্ডুর কুমারে।।
দুই দনি আমি আর থাকিব সমরে।
তবে তুমি সেনাপতি করিহ কর্ণেরে।।
দেখিব কেমনে জিনে পাণ্ডুপুত্রগণ।
মুহূর্ত্তেকে প্রাণ দিবে পতঙ্গ সমান।।
পূর্ব্বেতে তোমারে আমি কহিনু বিস্তর।
না শুনিলে কারো বোল করি অনাদর।।
অর্জ্জুনের পরাক্রম দেখেছ নয়নে।
জানিয়া আমারে দোষ দেহ অকারণে।।
খাণ্ডব-দাহনে অগ্নি পরিত্রাণ কৈল।
বাহুযুদ্ধে পঞ্চাননে সমরে জিনিল।।
কালকেয় নিবাতকবচ দৈত্যগণ।
মারি নিষ্কণ্টক কৈল যত দেবগণ।।
দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে জিনিলেক রণে।
একেশ্বর পরাজিল যত রাজগণে।।
তদন্তর সংগ্রামে জিনিল যদুবলে।
সুভদ্রা হরিয়া নিল নিজ বাহুবলে।।
ভীমের বিক্রম যত খ্যাত ত্রিভুবন।
হিড়িম্ব রাক্ষস আদি করিল নিধন।।
রাক্ষস দানব যক্ষ অগ্রে নহে স্থির।
যক্ষ রক্ষ মারিলেক বৃকোদর বীর।।
উত্তর-গোগৃহ রণে বীর ধনঞ্জয়।
একেশ্বর সবারে করিল পরাজয়।।
কর্ণবীর তখন কি করিল তোমার।
দৃষ্টিমাত্র চূর্ণ কৈল সবার অহঙ্কার।।
তদন্তরে বনমধ্যে গন্ধর্ব্বের পতি।
শূন্যপথে বান্ধি তোমা লৈল মহামতি।।
রাখিতে নারিল তাহে কর্ণের শকতি।
ছাড়াইয়া দিল তবে পার্থ মহামতি।।
প্রতিজ্ঞা করিনু আমি তোমার গোচরে।
কালি যুদ্ধে পরাজিব পাণ্ডুর কুমারে।।
কৃষ্ণ সহ অর্জ্জুনে জিনিব কালি রণে।
শোক ত্যাগ কর রাজা আমার বচনে।।
শোকের সময় এই নহে মহাশয়।
শত্রুর বাড়য়ে বল বিক্রম হরয়।।
এত শুনি দুর্য্যোধন হরিষ অন্তর।
কৌরবের দলে দুঃখ নাহি অতঃপর।।
চরমুখে বার্ত্তা পেল ধর্ম্ম নৃপমণি।
কৃষ্ণার্জ্জুন ভীমে আনি বলয়ে কাহিনী।।
প্রতিজ্ঞা করিল পার্থ গঙ্গার নন্দন।
সাবধান হৈয়া সবে করিবেক রণ।।
এত শুনি ভীম কহে রাজার গোচর।
কালি দুর্য্যোধনের হরিব অহঙ্কার।।
এত বলি সিংহনাদ কৈল মহাবল।
পাণ্ডবের দলে হৈল জয় কোলাহল।।
ভীষ্মপর্ব্ব ভারতের অপূর্ব্ব কথন।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে ব্যাসের বচন।।
মস্তকে বন্দিয়া ব্রাহ্মণের পদরজ।
কহে কাশীদাস গদাধর দাসাগ্রজ।।
২৫. নবম দিনের যুদ্ধারম্ভ
সঞ্জয় বলেন, শুন অন্ধ নরপতি।
রজনী প্রভাতে কুরু-পাণ্ডবের পতি।।
দুই দলে সাজিল অনেক যোধগণ।
রথী মহারথী পত্তি না যায় লিখন।।
দুই দলে বাদ্য বাজে না হয় বর্ণন।
দুই দলে ভয়ঙ্কর হৈল ঘোর রণ।।
রথীকে ধাইল রথ গজ ধায় গজে।
আশোয়ারে আশোয়ার মল্লে মল্ল যুঝে।।
মাহুতে মাহুতে যুঝে ঘোর দরশন।
নানারূপে দুই দলে বাণ বরিষণ।।
তবে ভীষ্ম মহাবীর গঙ্গার নন্দন।
আকর্ণ পূরিয়া টঙ্কারিয়া ধনুর্গুণ।।
বশিষ্ঠের শিক্ষা যত দিব্য অস্ত্র ছিল।
ক্রোধে বীর পাণ্ডু- সৈন্য উপরে বর্ষিল।।
এক অস্ত্রে প্রসবয়ে লক্ষ লক্ষ শর।
মুষল মুদগর শেল পরিঘ তোমর।।
কালান্তক যম ভীষ্ম রণ অবতার।
শত শত রহারথী করিল সংহার।।
লক্ষ লক্ষ গজ বাজি পত্তি অগণন।
সংহার করিল ভীষ্ম রণে বিচক্ষণ।।
ভয় পেয়ে পাণ্ডুসৈন্য রণে ভঙ্গ দিল।
সিংহ দেখি পশু যেন ভয়ে পলাইল।।
সৈন্যগণ ভঙ্গ দেখি দেব জনার্দ্দন।
অর্জ্জুনে চাহিয়া তবে বলয়ে বচন।।
প্রতিজ্ঞা করিলে তুমি ভীষ্মেরে মারিতে।
না মারিলে অপযশ হৈবে ত্রিজগতে।।
তাহার সময় এই শুন সাবধানে।
ক্ষত্রধর্ম্ম রাখি মার গঙ্গার নন্দনে।।
আজি যদি ভীষ্মেরে সংগ্রামে দেহ আশ।
প্রায় বুঝি সর্ব্ব সৈন্য করিবেক নাশ।।
আপনার সত্য বাক্য করহ পালন।
উপরোধ এড়ি মার গঙ্গার নন্দন।।
দেখ সর্ব্বসৈন্য আজি ভঙ্গ দিল রণে।
উপহাস করয়ে কৌরব দুষ্টগণে।।
এত শুনি ক্রোধ করি ইন্দ্রের তনয়।
গোবিন্দে বলিল শীঘ্র বাহ রথ-হয়।।
আজ্ঞামাত্র জনার্দ্দন রথ চালাইল।
ভীষ্মেরে অগ্রেতে রথ শীঘ্রগতি নিল।।
অর্জ্জুনে দেখিয়া ভীষ্ম সিংহনাদ করি।
বরিষয়ে দিব্য অস্ত্র গগন আবরি।।
মুহূর্ত্তেকে শরজালে অর্জ্জুনে ছাইল।
কুজ্ঝাটিতে গিরিবর যেন আচ্ছাদিল।।
দশদিক অন্ধকার রোধিল বাতাস।
শূন্যপথ নাহি দেখি রবির প্রকাশ।।
সম্ভ্রম পাইলা বড় কৃষ্ণ মহাশয়।
মনে ধৈর্য্য হৈয়া চলাইলা রথ-হয়।।
হাসিয়া গাণ্ডীব হাতে কৈল ধনঞ্জয়।
আকর্ণ পূরিয়া ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া।।
মহাশব্দে মোহিত হইল কুরুগণ।
দিব্য অস্ত্র এড়ে তবে ইন্দ্রের নন্দন।।
খুরুপা নামেতে বাণ এড়িল অর্জ্জুন।
হাত হৈতে ভীষ্মের কাটিল ধনুর্গুণ।।
গুণ সহ ধনুক পড়িল ভূমিতল।
অন্য ধনু হাতে নিল ভীষ্ম মহাবল।।
গুণ দিয়া ধনুকেতে যোড়ে দিব্য শর।
সেই ধনু কাটি ফেলে পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
প্রশংসিয়া অর্জ্জুনেরে গঙ্গার নন্দন।
অন্য ধনু লৈয়া করে বাণ বরিষণ।।
ভৃগুপতিদত্ত ধনু শত্রুঞ্জয় নাম।
দশব্যাম-তালসম বলে অনুপাম।।
সেই ধনু লৈয়া ভীষ্ম নাম অস্ত্র এড়ে।
অন্ধকার করি গিয়া পার্থ গায়ে পড়ে।।
নির্ভয় শরীর পার্থ সমরে প্রখর।
পুনরপি শরজালে ছাইল অম্বর।।
নানা অস্ত্র বৃষ্টি করে ভীষ্মের উপর।
বরিষা কালেতে যেন বর্ষে জলধর।।
ততোধিক ভীষ্মবীর এড়ে অস্ত্রগণ।
বাণে হাণি শরজাল কৈল নিবারণ।।
দোঁহে দোঁহাপরি বাণ করে বরিষণ।
মহাবলবন্ত দোঁহে মহা বিচক্ষণ।।
দিব্য অস্ত্রশিক্ষা দোঁহে বিক্রমে সোসর।
দুই বৃষ যুঝে যেন গোঠের ভিতর।।
দুই মত্ত হস্তী যেন করে মহারণ।
দোঁহে দোঁহাকারে অস্ত্র এড়ে প্রাণপণ।।
শেল শূল শক্তি জাঠি মুষল মুদগর।
ইন্দ্রজাল ব্রহ্মজাল আদি অস্ত্রগণ।
জলবৃষ্টি হয় যেন বাণ বরিষণ।।
শত শত বাণ দোঁহে একেবারে এড়ে।
অন্ধকার করি বাণ দোঁহে গায়ে পড়ে।।
ক্রোধে ভীষ্ম মহাবীর পূরিল সন্ধান।
বশিষ্ঠের শিক্ষা অস্ত্র সূচীমুখ নাম।।
আকর্ণ পূরিয়া বিন্ধে পার্থের শরীর।
দারুণ প্রহারে মোহ গেল পার্থবীর।।
সর্ব্বাঙ্গে বহিয়া পড়ে রুধিরের ধার।
ব্যগ্র হৈল সংগ্রামেতে দেবকী-কুমার।।
অবসর পেয়ে তবে ভীষ্ম মহাবীর।
জর্জ্জরিত কৈল বাণে কৃষ্ণের শরীর।।
শরে আবরিল ভীষ্ম পার্থ মহাবীরে।
দৃষ্ট নাহি হয় পার্থ সমরে ভিতরে।।
ত্রস্ত হৈল যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের নন্দন।
ভীমসেনে ডাকি রাজা বলয়ে বচন।।
দেখ দেখ কৃষ্ণার্জ্জুনে ভীম মহাযোধ।
শরে আবরিল ভীষ্ম দৃষ্টি করি রোধ।।
শীঘ্রগতি যাহ ভাই সাহায্য কারণ।
যেই মতে রক্ষা পায় ইন্দ্রের নন্দন।।
চক্রবক্র অভিমন্যু আদি বীরচয়।
সৌমক পাঞ্চাল ভোজ নির্ভীক হৃদয়।।
লইয়া সহস্র রথী বেড়ি ভীষ্মবীর।
মারহ তাহারে হয়ে নির্ভয় শরীর।।
যুধিষ্ঠির বাক্যে ভীম লয়ে বীরদলে।
গঙ্গার কুমারে আবরিল মরজালে।।
হাসিয়া লইল ভীষ্ম হাতে শরাসন।
বাণে কাটি শরজাল কৈল নিবারণ।।
শীঘ্রহস্ত মহাবলী ভীষ্ম মহাবীর।
দশবাণে বিন্ধে ভীমসেনের শরীর।।
অষ্টবাণে সাত্যকিরে কৈল অচেতন।
দশবাণে অভিমন্যু বিন্ধে ততক্ষণ।।
একে একে বাণেতে জিনিল সর্ব্বজন।
সহিতে না পারি ভঙ্গ দিল সৈন্যগণ।।
নানা শক্তি করি পার্থ রাখিতে না পারে।
ভঙ্গ দিয়া সর্ব্বসৈন্য পলায় সত্বরে।।
অস্ত্রে অস্ত্রে হানাহানি অতি ঘোর রণ।
সহস্র সহস্র রথী হইল নিধন।।
পাণ্ডবের ভাগ্যে হৈল দিবা অবসান।
নহে সর্ব্ব সৈন্য ভীষ্ম করিত নিধন।।
বিষাদিত চিত্ত হৈল রাজা যুধিষ্ঠির।
সর্ব্ব সৈন্যে চলি গেল আপন মন্দির।।
হইয়া সানন্দ চিত্ত রাজা দুর্য্যোধন।
সর্ব্ব বলে চলি গেল আপন ভবন।।
দুই দলে পড়ি গেল বহু সৈন্যগণ।
রথী মহারথী পত্তি না হয় লিখন।।
অলঙ্কারে সুশোভন হৈল রণস্থল।
কোলাহল করে যত কুক্কুর শৃগাল।।
অসংখ্য কবন্ধ নাচে গগন উপর।
ভয়ঙ্কর রণস্থল দেখি লাগে ডর।।
মুনি বলে, জন্মেজয় কর অবধান।
নবম দিবস যুদ্ধ হৈল সমাধান।।
মহাভারতের কথা অমৃত- লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে হেলে ভব তরি।।
মস্তকে বন্দিয়া ব্রাহ্মণের পদরজ।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র