দ্রুপদরাজ

দ্রুপদ : পাঞ্চাল দেশের রাজা। তার পিতার নাম পৃষত। দ্রুপদ ও দ্রোণাচার্য পরস্পর বাল্যবন্ধু ছিলেন। তারা উভয়েই ভরদ্বাজের আশ্রমে খেলাধূলা করতেন। পাঞ্চালরাজ পৃষতের সাথে ভরদ্বাজ মুনির বেশ সখ্যতা ছিল। তার দ্রুপদ নাম এক পুত্র ছিল। ভরদ্বাজের আশ্রমে এসে পৃষত পুত্র দ্রুপদ দ্রোণের সাথে একত্রে ক্রীড়া ও অধ্যায়ন করত। তাদের মধ্যে গলায় গলায় ভাব ছিল। এমন সম্পর্ক ছিল যে একজন আরেক জনকে না দেখে থাকতে পারত না। কিছুকাল পর পৃষত দেহ রাখেন। দ্রুপদ পাঞ্চালের রাজা হন।ইতোমধ্যে দ্রোণাচার্য জানতে পারলেন যে, তার বাল্যসখা দ্রুপদ পাঞ্চালের রাজা হয়েছেন। বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে তিনি পাঞ্চালরাজ্যে উপস্থিত হলেন।পাঞ্চাল রাজ্যে আগমন করে দ্রোণাচার্য দ্রুপদরাজকে বললেন,“রাজন! আমি তোমার বাল্যসখা দ্রোণ।” দ্রোণের বাক্য শ্রবণ করে রাজা দ্রুপদ বিন্দুমাত্র সম্মান প্রদর্শন না করে রাজার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে ভ্রূকুটি প্রদর্শন করে বললেন,“ব্রাহ্মণ! তুমি হঠাৎ আমাকে সখা বলে নিতান্ত নির্বোধের কাজ করেছ।কারণ ঐশ্বর্যশালী রাজার সাথে শ্রীহীন লোকের মিত্রতা হওয়া অসম্ভব। বাল্যাবস্থায় তুমি আমার সখা ছিলে, এটা যথার্থ। কিন্তু এখন তোমার সহিত আমার কোন বন্ধুত্ব নেই এবং চিরকাল তা থাকতেও পারে না। হে দ্বিজোত্তম! পূর্বে তোমার সহিত আমার মিত্রতা ছিল বটে, যেমন পন্ডিতের সহিত মূর্খের ও শূরের সহিত ক্লীবের বন্ধুত্ব কদাচিৎ হওয়া উচিৎ নয়। তদ্রুপ বিত্তশালীর সহিত দরিদ্রের মিত্রতা হওয়া অসম্ভব। হে ব্রাহ্মণ! যারা ধনে ও জ্ঞানে আপনার সদৃশ তাদের সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ ও সখ্যতা স্থাপন করা কর্তব্য। তদ্ব্যতীত উৎকৃষ্টের সহিত নিকৃষ্টের বা নিকৃষ্টের সহিত উৎকৃষ্টের মিত্রতা বা বৈবাহিক সম্বন্ধ করা অনূচিত। হে বিপ্র! যেমন অশ্রোত্রিয়ের সহি শ্রোত্রিয়ের ও অরথীর সহিত রথীর বন্ধুত্ব হওয়া যেমন সম্ভব নয় তেমনি রাজার সহিত দরিদ্রের কখনও মিত্রতা হয় না। তবে তুমি কি মনে করে পূর্বের সম্পর্ক ধরে আমার সহিত সখ্য করতে ইচ্ছা করছ?” মহাতেজা ও মহা ধনুর্ধর দ্রোণাচার্য দ্রুপদের উপহাস বাক্য শ্রবণে ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে দ্রুপদের প্রতি তার প্রচন্ড বৈরীভাবে জন্মও হল। দ্রোণাচার্য রাগ, ক্রুধ সংযত করে তাৎক্ষনিকভাবে সে স্থান ত্যাগ করে হস্তিনাপুরে শ্যালক কৃপাচার্যের গৃহে গমন করলেন।

অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা শেষ হলে দ্রোণাচার্য শিষ্যদের কাছে গুরু দক্ষিণা দাবী করেন। তিনি বলেন,“তোমরা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে যুদ্ধে পরাজিত করে বন্ধী করে আমার সম্মুখে নিয়ে আসবে। এটাই আমার গুরুদক্ষিণা।” কৌরবগণ পাঞ্চাল রাজ্য আক্রমন করলেন। সংবাদ পেয়ে দ্রুপদরাজ ও তার ভ্রাতৃগণসহ কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করলেন। দ্রুপদের শর বর্ষণে কৌরবপক্ষ যুদ্ধে ঠিকতে পারছিলেন না। চতুর্দিক হতে বাণ বর্ষণ শুরু হলো। দূরে অপেক্ষমান পান্ডবরা কৌরবদের আর্তনাদ শুনে রথে আরোহন করে অগ্রসর হতে লাগলেন। ভীম পাঞ্চালরাজের গজসৈন্য, অশ্বারোহী বাহিনী অশ্বরাথ ইত্যাদি ধ্বংস করতে লাগলেন। দ্রুপদরাজার ভ্রাতা সত্যজিতের সাথে অর্জুনের ভীষন যুদ্ধ হলে সত্যজিত পালায়ন করলেন। অর্জুন দ্রুপদের ধনু ও রথ ধ্বংস করে সারথিকে হত্যা করে অর্জুন দ্রুপদ রাজার রথে উঠে তাকে বন্ধী করলেন। পাঞ্চাল সৈন্যরা তা দেখে পলায়ন করতে লাগল।

রাজ কুমারদ্বয় পাঞ্চালরাজকে বন্ধী করে গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে নিয়ে আসেন। তখন দ্রুপদ বাধ্য হয়েই দ্রোণাচার্যকে গঙ্গার উত্তরস্থ অহিচ্ছত্র দেশ দান করেন। কিন্তু বলপূর্বক মিত্রতা স্থাপন দ্রুপদের মনে হিংসার জন্ম দিয়েছে। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। তাই দ্রোণাচার্যের বিনাশের জন্য তিনি এক মহাতেজা পুত্র লাভের চেষ্টা করছেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধের জন্য দ্রুপদ একজন পুরোহিতকে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। ব্রাহ্মণ দূত পান্ডবদের সাথে যা যা অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ তূলে ধরেন। সর্বশেষে ধর্ম ও ন্যায়ানুসারে পান্ডবদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রার্থনা করেন। ভীষ্ম ব্রাহ্মণের সকল বক্তব্য যথাযথ বলে মত প্রকাশ করেন। ভীষ্ম ও কর্ণের কথা কাটাকাটিতে ধৃতরাষ্ট্র রুষ্ট হন। ব্রাহ্মণকে বলা হয় চিন্তাভাবনা করে পান্ডবদের কাছে সঞ্জয়কে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

কুরুক্ষেত্রের পঞ্চদশ দিবসের যুদ্ধ। রাত্রি তিন মুহুর্ত অবশিষ্ট থাকতে পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়। সূর্যের প্রভা ছড়াতে লাগল। দ্রোপদ সসৈন্যে দ্রোণকে আক্রমান করল। দ্রোণের শরাঘাতে দ্রোপদের তিন পৌত্র নিহত হল। এভাবে কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলার পর দ্রোপদ আর দ্রোণের সাথে ঠিকতে পারলেন না। দ্রোণ ভল্লের আঘাতে দ্রোপদকে বধ করলেন।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র