মহাভারত:দ্রোণপর্ব-০১১-০১৫

১১. অভিমন্যুর জন্ম-বৃত্তান্ত
মুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
শিবিরে গেলেন রাজা শোকাকুল মন।।
বিলাপ করেন ধর্ম্ম কুন্তীর নন্দন।
ভূমিতে বসিয়া সবে ত্যজিয়া আসন।।
হেনকালে আসি সত্যবতীর নন্দন।
দেখেন ধর্ম্মের পুত্রে শোকাকুল মন।।
ব্যাসে দেখি সর্ব্বজন নমিল উঠিয়া।
ধর্ম্মে জিজ্ঞাসেন ব্যাস আশীর্ব্বাদ দিয়া।।
কি কারণে শোক কর ধর্ম্মের নন্দন।
ইহার বৃত্তান্ত বল আমারে এখন।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের তনয়।
কান্দিয়া বলেন শুন ব্যাস মহাশয়।।
মহালোভি দুষ্টমতি আমি কুলাধম।
পৃথিবীতে পামর নাহিক আমা সম।।
রাজ্যলোভে কার্য্যে বাধা ধর্ম্মপথ রোধ।
নহে কি উচিত জ্ঞাতি সহিত বিরোধ।।
রাজ্যলোভে কার্য্যে বাধা ধর্ম্মপথ রোধ।
নহে কি উচিত জ্ঞাতি সহিত বিরোধ।।
রাজ্যলোভে করিলাম বড় অপকর্ম্ম ।
বুঝিলাম আচার সে বিচারে অধর্ম্ম।।
পাঠানু বালক, শত্রু সমূহের মাঝে।
কহিতে ফাটয়ে বুক হেট হই লাজে।।
কহিল আমারে শিশু করিয়া সম্ভ্রম।
ব্যূহ প্রবেশিতে পারি না জানি নির্গম।।
কহিল এ কথা পুত্র মোরে বারে বারে।
তথাপিও যত্ন করি পাঠাইনু তারে।।
সমরে অধিক সৈন্য বধিয়াছে সুত।
করিল প্রলয় যুদ্ধ দেখিতে অদ্ভুত।।
অন্যায় করিয়া কুরু শিশুবধ করে।
দ্রোণ আদি সপ্তরথী বেড়ি তারে মারে।।
অন্যায় সমরে বধে অভিমন্যু বীর।
নিবারিতে শোক আমি হয়েছি অস্থির।।
এত বলি কান্দিলেন রাজা যুধিষ্ঠির।
অভিমন্যু মহাশোকে হইয়া অস্থির।।
ব্যাস বলিলেন শোক ত্যজহ রাজন।
খণ্ডাইতে নারে কেহ দৈব নির্ব্বন্ধন।।
মনস্থির কর, শুন আমার বচন।
আর্জ্জুনির পূর্ব্বকথা করহ শ্রবণ।।
মুনিশাপে চন্দ্র জন্মে শুভদ্রা উদরে।
তাহার বৃত্তান্ত কহি তোমার গোচরে।।
চন্দ্রলোকে গেল গর্গ মহাতরোধন।
সঙ্গেতে আছিল তার বহু শিষ্যগণ।।
চন্দ্রের নিকটে সবে উত্তরিল গিয়া।
সেই স্থানে মুনিগণ রহে দাণ্ডহিয়া।।
রোহিণী সহিত চন্দ্র ক্রীড়ায় আছিল।
হেনকালে গর্গমুনি সেই স্থানে গেল।।
মদনে মোহিত চন্দ্র অন্য মন ছিল।
গর্গমুনি দেখি চন্দ্র পূজা না করিল।।
এতেক দেখিয়া মুনি কুপিত হইয়া।
চন্দ্র প্রতি সেইক্ষণে বলেন ডাকিয়া।।
অহঙ্কারে মত্ত হয়ে না দেখ নয়নে।
কি কারণে অমান্য করিলে মুনিগণে।।
ব্রাহ্মণ হেলন কর মত্ত দুরাচার।
আজি আমি করিব ইহার প্রতিকার।।
মনুষ্যলোকেতে গিয়া জন্মহ সত্বর।
ক্রোধে এই শাপ দিল গর্গ মুনিবর।।
শুনিয়া মুনির শাপ রজনীর পতি।
অশেষ বিশেষে করে মুনিবরে স্তুতি।।
অজ্ঞানে ছিলাম আমি মুন মুনিবর।
যাইতে মনুষ্যলোকে বড় লাগে ডর।।
কৃপায় শাপান্ত মুনি আজ্ঞা কর মোরে।
কতদিনে মুক্ত হয়ে আসি হেথাকারে।।
তুষ্ট হয়ে বলে তারে গর্গ মুনিবর।
তোমার শাপান্ত এই শুন শশধর।।
অর্জ্জুনের পুত্র হবে শুভদ্রা উদরে।
করিয়া বীরের কার্য্য পড়িবে সমরে।।
সম্মুখ সংগ্রামে পড়ি ত্যজিবে জীবন।
ষোড়শ বৎচর অস্তে পুনরাগমন।।
এই হেতু চন্দ্র জন্মে সুভদ্রা উদরে।
অভিমন্যু জন্মকথা জানাই তোমারে।।
পূর্ব্বে হইয়াছে এইরূপেতে নির্ণয়।
অতএব শোক না করিহ মহাশয়।।
পুনশ্চ বলেন রাজা শুন মুনিবর।
কেমনে কহিব ইহা পার্থের গোচর।।
কি বলিয়া প্রবোধিব ভাই ধনঞ্জয়।
শুনিয়া কি বলিবেন কৃষ্ণ মহাশয়।।
কি বলিয়া প্রবোধিব সুভদ্রার মন।
বিরাটকন্যার দশা হইবে কেমন।।
রাজ্য আশে হারাই হাতের রত্ননিধি।
না পারি ধরিতে বুক বিড়ম্বিল বিধি।।
এতেক বলিয়া রাজা করেন রোদন।
ব্যাসের প্রবোধে স্থির তবু নহে মন।।
অকালে না মরে কেহ জানিহ রাজন।
কালপ্রাপ্ত হইলে না রহে কদাচন।।
অর্জ্জুনের সহিত আপনি নারায়ণ।
অর্জ্জুনের শোক করিবেন নিবারণ।।
এতেক শুনিয়া রাজা ত্যজেন রোদন।
নিরুৎসাহে বসিল যতেক যোদ্ধাগণ।।
যুধিষ্ঠিরে প্রবোধিয়া ব্যাস তপোধন।
করিলেন আপনার স্থানেতে গমন।।
দ্রোণপর্ব্ব পুণ্যকথা রচিলেন ব্যাস।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস।।
১২. অর্জ্জুনের শিবিরে আগমন ও
অভিমন্যু-নিধন-বাক্য শ্রবণ
মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
সমরেতে অভিমন্যু হইল নিধন।।
সংসপ্তকে থাকিয়া করেন পার্থ রণ।
উৎপাত অনেক দেখি করেন চিন্তন।।
করুণ ডাকিয়া কাক ধ্বজে আসি পড়ে।
শক্তিহীন সমরে, গাণ্ডীব গুণ ছিঁড়ে।।
বামচক্ষু স্পন্দে, ঘন ঘন বাম কর।
উড়ু উড়ু করে প্রাণ, রণে নাহি ডর।।
কৃষ্ণে চাহি ধনঞ্জয় বলেন তখন।
অবধানে শুন কৃষ্ণ আমার বচন।।
আজি কেন মম মন হয় উচাটন।
অবশ্য কারণ আছে দেব নারায়ণ।।
নাহি জানি কি করেন রাজা যুধিষ্ঠির।
হাহাকার করে শুন সব মহাবীর।।
হায় অভিমন্যু বলি কান্দে যোদ্ধাগণ।
সমরে হইল বুঝি তাহার নিধন।।
প্রাণ স্থির নহে মম জানাই তোমারে।
না জানি কি হৈল আজি সমর ভিতরে।।
কুরুসৈন্যে কোলাহল জয়শব্দ শুনি।
বাজিছে বিবিধ বাদ্য জয় জয় ধ্বনি।।
রথ চালাইয়া দেহ অতি শীঘ্রতর।
রাজারে দেখিলে সুস্থ হইবে অন্তর।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন সখে না চিন্ত অরিষ্ট।
যোদ্ধা অভিমন্যু দেখ সবাকার শ্রেষ্ঠ।।
বালক বলিয়া শত্রু না বধিবে রণে।
দ্রোণ আদি করিয়া যতেক বীরগণে।।
তবে যদি অভিমন্যু বধে দুর্য্যোধন।
তার সম পাপী তবে নহে অন্যজন।।
অন্তর্য্যামী নারায়ণ জানেন সকলি।
পড়িয়াছে অভিমন্যু সমরের স্থলী।।
এতেক বলিয়া কৃষ্ণ প্রবোধে অর্জ্জুনে।
রথ চালাইয়া দেন পবনগমনে।।
শিবির নিকটে উত্তরিয়া ধনঞ্জয়।
বিপরীত দেখিলেন অমঙ্গলময়।।
অন্ধকার করি বসে আছেন সভায়।
শোকাকুল সর্ব্বজন দেখিল তথায়।।
অর্জ্জুন বলেন, কৃষ্ণ দেখি বিপরীত।
মোরে দেখি লোক কেন হয় অতি ভীত।।
আজি যোদ্ধাগণ কেন শোকাকুল মন।
ভূমিতে বসেছে সবে ত্যজিয়া আসন।।
এই সব দেখি মম স্থির নহে প্রাণ।
কিসের কারণে কৃষ্ণ বলহ বিধান।।
এতেক বলিয়া গেল শিবির ভিতর।
দেখিলেন রোদন করিছে নৃপবর।।
অধোমুখ করি বসিয়াছে যোদ্ধাগণ।
একে একে পার্থ করিলেন নিরীক্ষণ।।
অভিমন্যু নাহি দেখি উচাটন মন।
জিজ্ঞাসেন ডাকিয়া ভীমেরে সেইক্ষণ।।
কোথা গেল অভিমন্যু কহ বৃকোদর।
তারে না দেখিয়া মম বিদরে অন্তর।।
এতেক শুনিয়া ভীম উত্তর না দিল।
অধোমুখ হয়ে ভীম নিঃশব্দে রহিল।।
উত্তর না পেয়ে পার্থ শোকেতে আকুল।
নয়নের জলে ভিজে অঙ্গের দুকূল।।
নকুল আকুল আর সহদেব শোকে।
অশ্রুধারে বহে ধারা বসি অধোমুখে।।
রোদন করিয়া ভীম কহিল তখন।
কেমনে কহিব অভিমন্যুর মরণ।।
করিয়া অন্যায় যুদ্ধ দুষ্ট দুর্য্যোধন।
সপ্তরথী বেড়ি পুত্রে করিল নিধন।।
ব্যূহদ্বার রুদ্ধ কৈল সিন্ধুর নন্দন।
ব্যূহ প্রবেশিতে না পারিল কোনজন।।
এতেক শুনিয়া ধনঞ্জয় মহাবীর।
হইলেন অভিমন্যু শোকেতে অস্থির।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
১৩. অভিমন্যু শোকে অর্জ্জুনের বিলাপ
পার্থ মহাবীর, হইলা অস্থির,
তনয় নিধন শুনি।
হাহা পুত্রবর, মহা ধনুর্দ্ধর,
বীরগণ চূড়ামণি।।
তোমা বিনা মোর, ঘর হৈল ঘোর
কি করিব রাজ্যধনে।
আমারে ছাড়িয়া, গেলে পলাইয়া
দাগা দিয়া মম প্রাণে।।
পুত্র মহাবীর, কন্দর্প শরীর,
চন্দ্রমুখ পরকাশ।
কটাক্ষ লাবণ্য, সবে বলে ধন্য,
অমৃত সমান ভাষ।।
কহ নারায়ণ, স্থির নহে মন,
করিব কোন উপায়।
বিনা অভিমন্যু, না রাখিব তনু,
দহিছে আমার কায়।।
বলে ধনঞ্জয়, বিদরে হৃদয়,
বিনা পুত্র অভিমন্যু।
হেন পুত্র বিনে, রহিব কেমনে,
না রাখিব এই তনু।।
অর্জ্জুনের বাণী, শুনি চক্রপাণি,
অনেক বিলাপ কৈলা।
মধুর বচনে, কহিয়া অর্জ্জুনে,
কৃষ্ণ ধরি সান্ত্বাইলা।।
ভারত চরিত, ব্যাস বিরচিত,
শ্রবণে কলুষ নাশ।
ভারত-সঙ্গীত, শ্রবণে ললিত,
বিরচিল কাশীদাস।।
১৪. অর্জ্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ ও
ব্যাসের সান্ত্বনা বাক্য
অর্জ্জুন বলেন কৃষ্ণ করি নিবেদন।
অভিমন্যু বিনা আর না রহে জীবন।।
অভিমন্যু সম নাহি দেখি ত্রিভুবনে।
কন্দর্প সমান বীর পূর্ণ রূপে গুণে।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন সখে শুনহ বচন।
স্বর্গে গেল যেই, তার না কর শোচন।।
সম্মূখ সংগ্রাম করি গেল স্বর্গলোক।
বড় কার্য্য কৈল সেই, পরিহর শোক।।
অনিত্য সংসার দেখ নিত্য কিছু নয়।
কহিনু স্বরূপ এই জানিহ নিশ্চয়।।
যতেক দেখহ সব পুত্র পরিবার।
কেহ কার নয় শুন কুন্তীর কুমার।।
এক কথা কহি তাহা শুন সাবধানে।
দেখিয়াছ বৃক্ষোপরে থাকে পক্ষিগণে।।
নিশাকালে থাকে সব বৃক্ষের উপর।
প্রভাতে উঠিয়া যায় দিগ্ দিগন্তর।।
তত্তুল্য সংসার এই দেখ ধনঞ্জয়।
কুহকের প্রায় যেন কিছুসত্য নয়।।
এইমত সান্ত্বনা করেন নারায়ণ।
হেনকালে আইলেন ব্যাস তপোধন।।
বসিবারে আসন দিলেন সেইক্ষণ।
উঠিয়া প্রণাম করিলেন সর্ব্বজন।।
পার্থ বলিলেন মুনি কর অবধান।
অভিমন্যু পুত্র বিনা স্থির নহে প্রাণ।।
ব্যাস বলিলেন ইহা শুন সর্ব্বজন।
জীবন অসার, সার কেবল মরণ।।
সৃজন করিলা ‍প্রভু এ তিন ভুবন।
পরিপূর্ণ হৈল পাপী না হয় পতন।।
পৃথিবী না সহে ভার টলমল করে।
এত দেখি নারায়ণ চিন্তিল অন্তরে।।
নিশ্বাস ছাড়েন প্রভু করি হুহুঙ্কার।
নাসাপথে কন্যা এক হৈল অবতার।।
প্রভুর নিকটে কন্যা দাণ্ডাইয়া কয়।
কি কার্য্য করিব আজ্ঞা কর মহাশয়।।
প্রভু বলিলেন তুমি মৃত্যুরূপা হও।
চতুর্দ্দশ পুরে গিয়া ভ্রমিয়া বেড়াও।।
মৃত্যুরূপে প্রাণীর সংহার কাল পেয়ে।
প্রভুর আদেশে কন্যা হরষিতা হয়ে।।
কালপ্রাপ্ত জনেরে যে মৃত্যুরূপে হরে।
অনিত্য সংসার এই জানাই তোমারে।।
এত বলি ব্যাসদেব করেন গমন।
সবে মেলি করে তাঁর চরণ বন্দন।।
১৫. জয়দ্রথ বধে অর্জ্জুনের প্রতিজ্ঞা
তার পরে বাসুদেব কমললোচন।
যুধিষ্ঠির রাজা চাহি বলেন বচন।।
কহ শুনি অভিমন্যু যুদ্ধের কথন।
কিরূপে কৌরব সহ করিলেক রণ।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন শুন বিবরণ।
চক্রব্যূহ করি দ্রোণ করে মহারণ।।
ব্যুহ ভেদি যুদ্ধ করে নাহি হেন জন।
অভিমন্যু প্রতি কহিলাম সে কারণ।।
এতেক শুনিয়া পুত্র কহিল তখন।
ব্যূহে প্রবেশিতে জানি, না জানি নির্গম।।
তথাপি পাঠানু তারে করিয়া বিচার।
ব্যূহে প্রবেশিল শিশু করি মহামার।।
তার পাছে যাই সবে হেন করি মনে।
ব্যুহদ্বার রুদ্ধ করে সিন্ধুর নন্দনে।।
জয়দ্রথে জিনিতে নারিল কোন জন।
সে কারণে মরিলেন অর্জ্জুন নন্দন।।
কুরুবল বিনাশিল অভিমন্যু রথী।
তবে তারে বেড়িলেন সপ্ত সেনাপতি।।
এমত অন্যায় করে দুষ্ট দুর্য্যোধন।
সমরেতে বিনাশিল আমার নন্দন।।
এত শুনি নারায়ণ ক্রোধে হুতাশন।
এমত অন্যায় যুদ্ধ করে দুষ্টগণ।।
জয়দ্রথ হেতু মরে অভিমন্যু বীর।
শুনি ধনঞ্জয় ক্রোধে হইল অস্থির।।
মহাক্রোধে বলিলেন ইন্দ্রের নন্দন।
আমি যাহা কহি তাহা শুন সর্ব্বজন ।।
জয়দ্রথ হেতু মরে অভিমন্যু বীর।
এক বাণে নিপাতিব তাহার শরীর।।
কালি যদি জয়দ্রথে নাহি মারি রণে।
পিতা পিতামহ গতি না পায় কথনে।।
বিনা জয়দ্রথ বধে সূর্য্য অস্ত হয়।
করিব শরীর ত্যাগ জানিহ নিশ্চয়।।
জয়দ্রথে না মারিয়া না আসিব ঘর।
আমার প্রতিজ্ঞা এই সভার ভিতর।।
এত শুনি যোদ্ধাগণ হরিষ অন্তর।
মহানাদে গর্জ্জিয়া উঠিল বৃকোদর।।
পাঞ্চজন্য আপনি বাজান নারায়ণ।
মহানাদে বাজিতে লাগিল বাদ্যগণ।।
বড় বড় শঙ্খ বাজে নাহি লেখাজোখা।
দামামা দগড় বাজে নাহি তার সংখ্যা।।
কোটি কোটি ডম্ফ বাজে মৃদঙ্গ বিশাল।
ভেউরি ঝাঝরি বাজে মুহুরী কাহাল।।
নানাজাতি বাদ্য বাজে কত কব নাম।
সুমধুর বীণা বাজে অতি অনুপম।।
মহাকোলাহল শব্দ হইল গর্জ্জন।
শুনিয়া হইল এস্ত কুরুসৈন্যগণ।।
দূতমুখে শুনি তবে সিন্ধুর নন্দন।
শরীর হইল কম্প নহে নিবারণ।।
শ্রীঘ্রগতি গিয়া কহে যথা দুয্যোধন।
প্রতিজ্ঞা করিল পার্থ আমার কারণ।।
কালি রণে মোরে পার্থ করিবেক ক্ষয়।
প্রতিজ্ঞা করিল এই শুন মহাশয়।।
যদি পার্থ কালি মোরে বধিবারে নারে।
আপনি মরিবে সেই পুড়ি বৈশ্বানরে।।
এইমত প্রতিজ্ঞা করিল পুনঃ পুনঃ।
কালি সত্য যুদ্ধে মোরে মারিবে অর্জ্জুন।।
ইহার উপায় কিছু না দেখি যে আমি।
নিজদেশে যাই আমি আজ্ঞা কর তুমি।।
এত শুনি হরষিত হৈল দুর্য্যোধন।
জয়দ্রথে বলে শুন আমার বচন।।
কি শক্তি অর্জ্জুন তোমা করিবে সংহার।
তোমারে রাখিবে যোদ্ধা যতেক আমার।।
এত বল দুর্য্যোধন জয়দ্রথে লয়ে।
যথা দ্রোণগ্রুরু গৃহ উত্তরিল গিয়ে।।
প্রণাম করিয়া তবে বলে দুর্য্যোধন।
অবধান কর গুরু এক নিবেদন।।
প্রতিজ্ঞা করিল পার্থ কুন্তীর নন্দন।
কালি যুদ্ধে জয়দ্রথে করিবে নিধন।।
জয়দ্রথ বধ বিনা সূর্য্য অস্ত হয়।
অগ্নিতে শরীর ত্যাগ করিবে নিশ্চয়।।
এত শুনি জয়দ্রথ মহাভয় পেয়ে।
আমারে কহিল, আমি যাই পলাইয়ে।।
সাক্ষাতে দেখহ ভয়ে কাঁপিছে শরীর।
তুমি ভয় ভাঙ্গিলে সে হয়ত সুস্থির।।
কালি যদি ধনঞ্জয় মারিতে না পারে।
অবশ্য মরিবে পার্থ কহি যে তোমারে।।
এত শুনি দ্রোণ জয়দ্রথে আশ্বাসিল।
নাহিক তোমার ভয় বলিতে লাগিল।।
কর্ণি আদি করিয়া যতেক যোদ্ধাগণ।
তোমারে রাখিবে সবে করিয়া যতন।।
কালি আমি এক ব্যূহ করিব রচন।
যাহা লঙ্ঘিবারে নাহি পারে দেবগণ।।
ব্যূহ মধ্যে তোমাকে রাখিব লুকাইয়া।
দুর্য্যোধন আগুহয়ে থাকিবে বেড়িয়া।।
কর্ণ বলে জ,য়দ্রথ না করিহ ভয়।
অবশ্য মরিবে কালি বীর ধনঞ্জয়।।
হেন বুঝি অনুকূল হইবেক ধাতা।
সে কারণে অর্জ্জুন কহিল হেন কথা।।
এত শুনি জয়দ্রথ ত্যজিলেক ভয়।
অব্শ্য হইবে কালি অর্জ্জুনের ক্ষয়।।
হরষিত দুর্য্যোধন জয়দ্রথে নিয়া।
আপনার গৃহে গেল আনন্দিত হৈয়া।।
কৃপাচার্য্য বলে তবে দ্রোণাচার্য্য প্রতি।
এক কথা কহি আমি কর অবগতি।।
নিশ্চয় জানিল এই রাজা দুর্য্যোধন।
অবশ্য হইবে কালি পার্থের নিধন।।
ত্রিদশের নাথ কৃষ্ণ সহায় যাহার।
হেনজন নাহি ‍পায় কদাচ অপার।।
অবশ্য হইবে জয়দ্রথের নিধন।
কহিলাম জান মম স্বরূপ বচন।।
এত শুনি দ্রোণাচার্য্য হরষিত মন।
যতেক কহিলা তুমি বেদের বচন।।
দ্রোণপর্ব্ব সুধারস অপূর্ব্ব কথন।
আয়ুর্যশ পুণ্য বাড়ে শুনে যেই জন।।
ব্যাস বিরচিত হয় অপূর্ব্ব ভারত।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর মত।।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র