সনাতন ধর্মে বলীপ্রথা-৮

সনাতন ধর্মে বলিপ্রথা-৮
“বৈদিক হিংসা -হিংসা নহে”- এ যুক্তির উত্তরে স্বামীজি বলছেন-“প্রাণিদেগকে পীড়া না দিয়া মাংস প্রাপ্ত হওয়া যায় না, এবং বিনা অপরাধে পীড়া দেওয়া ধর্মের কার্য নহে।.........অশ্ব এবং গো প্রভৃতি পশু এবং মনুষ্য মারিয়া হোম করা বেদের কুত্রাপি লিখিত নাই ( যজ্ঞে যদিও এরূপ মন্ত্র পাঠ হয়, সে মন্ত্রের অর্থ ভিন্ন)। অশ্বমেধ, গো-মেধ, নরমেধ আদি শব্দের অর্থ কি? “রাষ্ট্রং বা অশ্বমেধঃ” (শঃ ১৩/১/৬/৩), “অন্নং হি গৌঃ (শতঃ ৪/৩/১২৫) “অগ্নির্বা অশ্বঃ। আজ্যং মেধঃ।” (প্রোক্ষিত মাংস খাইবার কথা- বামমার্গীয় টীকাকারদিগের লীলা। বেদের কুত্রাপি মাংস ভোজনের কথা লেখা নাই। অধুনা এ সকল কথা যেখানে দেখা যায়, সমস্তই প্রক্ষিপ্ত।” (সত্যার্থ প্রকাশ-৩৭৬/৭ ও ৫৫২পৃষ্ঠা)
শাক্তমতে ভূতযজ্ঞ বা বলি অর্থে জীবহনন (কালিকা উপপুরান ৩২) বুঝায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভূতযজ্ঞ অর্থ জীবহনন নয় বরং জীবপালন; প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ দেবতা হতে পিপীলিকাদি ক্ষুদ্র কীটকে পর্যন্ত অন্নদান। বৈশ্বদেব বলিতে আছে- যেষাং ন মাতা না পিতা ন বন্ধুর্নৈবান্নসিদ্ধি র্ন তথান্নমস্তি। তৎতৃপ্তয়েহরং বুবিদত্তমেতৎ প্রযান্তু তৃপ্তিং মুদিতা ভবন্তু।। অর্থঃ যাদের মাতা নেই, পিতা নেই, বন্ধু নেই, অন্ন নেই, অন্ন প্রস্তুত করার সামর্থ্য নেই, তাদের তৃপ্তির জন্য অন্ন প্রদান করি, তারা সুখী হোক। কি সুন্দর শাস্ত্রীয় কথন, কি উদার ভূতযজ্ঞ বা বলির বৈপরিত্য ঘটেছে কালিকাপুরাণে। উক্ত পুরাণে ভূতযজ্ঞ বা বলি অর্থে দাড় করানো হয়েছে “ছাগাদি ছেদন।” আশ্চর্য মনে হয় না।
পুরাকালে বা বৈদিক যুগে যজ্ঞে পশুহিংসাই ছিল। তবে এখনকার মত প্রতিমার সম্মুখে বলিদান ছিল না। বেদে যদিও প্রতিমা তৈরি করে পূজা করার নিদর্শন নেই। প্রতিমার পরিবর্তে আর্যগণ অগ্নি প্রজ্বলিত করে উক্ত জ্যেতিতে ভগবানের আভাস দেখতেন। পুরান-শাস্ত্র মতে ত্রেতাযুগ হতে প্রতিমার প্রচলন হয়। মনু বলেছেন-“ধর্মজিজ্ঞাসমানাণাং প্রমাণং পরমং শ্রুতি।”- ধর্মের কথা জানতে হলে শ্রুতিই প্রধান প্রমাণ। শ্রুতিতে যজ্ঞ বা জীববলি সম্পর্কে পাওয়া যায়-“অগ্নিষোমীয়ং পশুমালভেত” অর্থাৎ অগ্নিষোমীর যজ্ঞে পশু বধ করবে। আবার “মা হিংস্যাৎ সর্বাভূতানি” অর্থাৎ কোন প্রাণিরই হিংসা করবে না। শাস্ত্রীয় বচন দুটি পরস্পর বিরোধী হলেও স্মার্ত্তপন্ডিতগণ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন মূলত: পরস্পর বিরোধী নয়। কালিকাপুরাণেও (বিংশ অধ্যায়) আছে- কোন কারণে ওষধিপতি চন্দ্রের যক্ষ্মারোগ হয়, ওষধি সকল নষ্ট হয়ে যায়, ফলে যজ্ঞ লোপ পায়। দেখা যাচ্ছে যে, যজ্ঞকার্যাদিতে ওষধেই প্রয়োজন, পশু নয়।
স্বয়ং বৃহস্পতি ঠাকুর আজ্ঞা করেছেন- কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিনির্ণয়ঃ। যুক্তিহীন-বিচারে তু ধর্মহানি প্রজায়তে।। (১২।১১৩) অর্থঃ কেবল শাস্ত্রের কথা লয়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত করা উচিৎ নয়; বিচার যুক্তিহীন হলে ধর্মহানি ঘটে থাকে। অতএব আমার মনে হয় যুক্তির আশ্রয় নেয়া যায়। পঞ্চানন তর্করত্ন- জন্মভূমি ৩য় খন্ডে আছে “ যে উপাসনার বা সহায় মদ্যমাংসাদি জঘন্য পদার্থ, সে উপাসনা কখন ভাল নয়; সে উপাসনার যারা উপাসক, তারাও নিকৃষ্ট বটেই। সে রকমে উপাস্য যে দেবতা, তিনিও ভাল নন- এরূপ ধারণাও অনেকের আছে।” (চলবে)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র