মহামতি বিদূর

বিদুর : কুরুবংশ রক্ষার্থে মাতা সত্যবতী স্মরণ করা মাত্র মাতার নিকট উপস্থিত হন। সত্যবতী কুরুবংশ রক্ষার জন্য তাকে তার পুত্রবধূ অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে পুত্র জন্মদানের জন্য অনুরোধে করেন। ব্যবসদেব বলেন,“মাতা আপনার পুত্রবধুদের গর্ভে পুত্র জন্মদানের জন্য তাদের এক বছর ব্রতপালন করে শুদ্ধ হয়ে তবেই তারা আমার কাছ আসতে পারবে।” তখন সত্যবতী বলেন রাজাবিহীন রাজ্যে অরাজকতা দেখা দেয়, বৃষ্টি হয় না, দেবতা প্রসন্ন হন না। তারা যাতে দ্রুত গর্ভবতী হনা তার ব্যবস্থা করতে বলেন। তখন ব্যাসদেব বলেন মাতা রানীরা যেন তারা কুৎসিত চেহারা সহ্য করেন।

সত্যবতী অম্বিকা ও অম্বালিকাকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করালেন এবং বললেন ব্যাসদের রূপ দেখে যেন তারা ভয় না পায়। পরদিন ব্যাসদেব এলেন। অম্বিকা তার গৃহে প্রবেশ করেন। ব্যাসদেবে ভয়ংকর রূপ দেখেইচোখ বন্ধ করে দেয়। তাই মাতার দোষে তার গর্ভে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়। পরদিন অম্বালিকা তার গৃহে প্রবেশ করেই ভয়ে তার মুখ পান্ডু বর্ণের হয়ে যায়। তাই গর্ভে পান্ডুর জন্ম হয়। সত্যবতী অম্বিকাকে আবারও ব্যাসদেবের কাছে প্রেরণ করতে চাইলে অম্বিকা ব্যাসদেবের ভয়ংকর চেহারা জ্ঞাত হয়ে তিনি তার শূদ্রাদাসীকে ব্যাসদেবের কাছে প্রেরণ করেন। এ দাসীর গর্ভেই মহামতি বিদূরের জন্ম হয়।

বিদূরের জন্ম কাহিনী : মান্ডব্য নামে এক মৌনব্রতী ঊর্ধ্ববাহু তপসী মৌনব্রত ভঙ্গ না করার জন্য তার আশ্রমে তপস্যারত ছিলেন। একদিন কয়েকজন চোর রাজার রক্ষীদের তাড়া খেয়ে তার আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণ করেন। রক্ষীদের কথায় কোন উত্তর দিলেন না। তার আশ্রম থেকে ধনরত্ন বের করে তাকেসহ চোরদের রাজার কাছে সোপর্দ করেন। রাজার আদেশে তাদের শূলে চড়ানো হল। কিন্তু তার তপস্যাবলে জীবিত ছিলেন। অবশেষে রাজা তার পরিচয় জানতে ক্ষমা চাইলেন এবং তাকে শূল থেকে নামানো হল। কিন্তু শূলের অগ্রভাগ তার দেহে বিদ্ধ হয়ে রইল। শূল খন্ডের জন্য তার নাম অণীমান্ডব্য নামে খ্যাত হন। মান্ডব্য এ অবস্থায় নানা দেশ ভ্রমণ ও তপস্যা করতে লাগলেন। একদিন মান্ডব্য ধর্মরাজের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,“কোন কর্মের ফলে তার এ শাস্তি?” ধর্মরাজ বলেন,“আপনি বাল্যকালে একপি পতঙ্গের পূচ্ছদেশে তৃণ প্রবিষ্ট করেছিলেন, তার জন্য এ শাস্তি। তখন অণীমান্ডব্য বলেলেন,“লঘু পাপে আপনি আমাকে গুরুদন্ড দিয়েছেন। সকল প্রাণি বধের চেয়ে ব্রাহ্মণ বধ গুরুতর অপরাধ। আমার অভিশাপে আপনি শূদ্র হয়ে জন্ম গ্রহণ করবেন।” অণীমান্ডব্যের অভিশাপে ধর্মরাজ বিদূর রূপে জন্ম গ্রহণ করেন।

বিদূর দেবকরাজার শূদ্রা স্ত্রীর ব্রাহ্মণের ঔরসে এক সুন্দরী কন্যার সাথে বিদূরের বিবাহ হয়। দুর্যোধনের জন্মের সময় রাজ্যে নানা অমঙ্গল সূচক লক্ষ্মণ দেখা দিলে বিদূর তাকে পরিত্যাগ করার জন্য ধৃতরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুত্র স্নেহে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র তা করেননি। ধৃতরাষ্ট্র যখনই বিপদে পড়েছেন তখনই বিদূরের পরামর্শ নিয়েছেন। কখনও তার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন আবার কখনও তিরস্কারও করতেন। দুর্যোধনের আচার ব্যবহার বিদূরকে ক্ষোভিত করে এবং পান্ডবদের প্রতি তার দূর্বলতা বাড়তে থাকে। বারণাবতে জতুগৃহে পান্ডপদের মারার ষঢ়যন্ত্র বিদূরই ম্লেচ্ছভাষায় যুধিষ্ঠিরকে সর্তক করে দেন এবং সুড়ঙ্গ করার জন্য খনক প্রেরণ করেন। পালবার জন্য গঙ্গা নদীর তীরে নৌকার ব্যবস্থা করেন।

ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদূর দূত সভা আহ্বান করেন। শকুনী ছলনা করে যুধিষ্ঠিরকে সর্বশান্ত করেন। তখন বিদূর ধৃতরাষ্ট্র ও দুর্যোধনকে এর ভবিষ্য পরিণাম সম্পর্কে সর্তক করেন। কিন্তু কেহ বিদূরের বাক্য যথোপযুক্ত মনে না করে অহমভাবে জড়িত হয়ে অধর্মকেই আঁকড়ে ধরেন। উপরন্তু দুর্যোধন বিদূরকে দ্যুতসভায় অবজ্ঞা ও অপমান করেন।

যুধিষ্ঠির দ্যুতক্রীড়ায় পরাজিত হন এবং ১২ বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসে যাত্রা করেন। অস্থির চিত্ত ধৃতরাষ্ট্র বিদূরকে পুনরায় পরামর্শের জন্য ডাকেন। বিদূর বলেন দূর্যোধনের উচিৎ পান্ডবদের সাথে মিলেমিলে থাকা। আর তা না হলে তাকে নিগৃহীত করে পান্ডবদের রাজ্য দান করা। বিদূরের এ পরামর্শে ধৃতরাষ্ট্র অখুশী হয়ে বিদূরকে তিরস্কার করেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হস্তিনাপুরে যান তখন কৃষ্ণ দুর্যোধনের অশ্রদ্ধ প্রদত্ত অন্ন গ্রহণ না করে বিদূরের আতিথ্য গ্রহণ করেন। শত পুত্রের মৃত্যু শোকে আছন্ন ধৃতরাষ্ট্রেকে বিদূরই নানাভাবে শান্তনা দেন। পান্ডবরা রাজ্য লাভের পর বিদূরকে ধর্ম ও আইন বিষয়ে দেখা শুনা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। পান্ডবদের অধীনে থাকার সময় বিদূর ধৃতরাষ্ট্রে নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন। তারপর ধৃতরাষ্ট বানপ্রস্থ গ্রহণ করলে বিদূরও তার সাথে গমন করে। বিদূর বহুকাল আহার বর্জন করে বীটা (মুখ কাষ্ঠ দন্ড দিয়ে আহার ও কথা না বলা) গ্রহণ করেন। ব্যাসদের বিধানমতে বিদূরের সৎকার হয়েছে। ব্যাসদেব বলেন,“ধর্মই মান্ডব্যের শাপে বিদূর রূপে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্রহ্মার আদেশে বিচিত্রবীর্যে ক্ষেত্রে তোমার এ ভ্রাতাকে আমি উৎপাদন করেছিলাম। এ তপস্বী সত্যনিষ্ঠা, ইন্দ্রিয়দমন, শমগুণ, অহিংসা ও দানের ফলে বিখ্যাত হয়েছেন। যুধিষ্ঠিরও ধর্ম থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যিনি ধর্ম তিনিই বিদূর, যিনি বিদূর তিনিই যুধিষ্ঠির। যোগাবলে বিদূর যুধিষ্ঠিরের শরীরে প্রবেশ করেন।

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র