শ্রীমদ্ভগবতগীতার ষোঢ়শ অধ্যায়ের সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

পরমেশ্বর ভগবান বললন - হে ভারত! ভয়শূন্যতা, সত্ত্বার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্য শূন্যতা, অভিমান শূন্যতা- এই সমস্ত গুণগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। হে পার্থ ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রুঢ়তা ও অবিবেক- এই সমস্ত সম্পদ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের লাভ হয়। দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল, আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ বলে বিবেচিত হয়। হে পান্ড্রুপুত্র! তুমি শোক করো না, কেন না তুমি দৈবী সম্পদসহ জন্মগ্রহণ করেছে। হে পার্থ! এই সংসারে দৈব ও আসুরিক - এই দুই প্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে। দৈব সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। এখন আমার থেকে অসুর প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রবণ কর। অসুরভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয়ে প্রবৃত্ত এবং অধর্ম বিষয়ক থেকে নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের মধ্যে শৌচ, সদাচার ও সত্যতা বিদ্যমান নেই। আসুরিক স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে যে, এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ্বরশূন্য। কামবশত এই জগৎ উনপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর অন্য কোন কারণ নেই। এই প্রকার সিদ্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে। সেই আসুরিক ব্যক্তিগণ দুষ্পূরণীয় কামকে আশ্রয় করে দম্ভ, মান ও মদমত্ত হয়ে অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহবশত অসৎ বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়। অপরিমেয় দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহণ করে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। এভাবেই শত শত আশাপাশে আবদ্ধ হয়ে এবং কাম ও ক্রোধ-পরায়ণ হয়ে তারা কাম উপভোগের জন্য অসৎ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ের চেষ্টা করে। অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা মনে করে- "আজ আমার দ্বারা এত লাভ হয়েছে এবং আমার পরিকল্পনা অনুসারে আরও লাভ হবে। এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ধন লাভ হবে। ঐ শক্র আমার দ্বারা নিহত হয়েছে এবং অন্যান্য শক্রদেরও আমি হত্যা করব। আমিই ঈশ্বর, আমি ভোক্তা। আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী। আমি সবচেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়স্বজন পরিবৃত। আমার মতো আর কেউ নেই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব, দান করব এবং আনন্দ করব"। এভাবেই অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজাল বিজড়িত হয়ে কামভোগে আসক্তচিত্ত সেই ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়। সেই আত্মাভিমানী , অনম্র এবং ধন ও মানে মদান্বিত ব্যক্তিরা অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে। অহংকার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে আসুরেরা স্বীয় দেহে ও পরদেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরুপ আমাকে দ্বেষ করে এবং সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে। সেই বিদ্বেষী, ক্রুর ও নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে অবিরত নিক্ষেপ করি। হে কৌন্তেয়! জন্মে জন্মে অসুরযোনি প্রাপ্ত হয়ে, সেই মূঢ় ব্যক্তিরা আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়। কাম, ক্রোধ ও লোভ- এই তিনটি নরকের দ্বার , অতএব ঐ তিনটি পরিত্যাগ করবে। হে কৌন্তেয়! এই তিন প্রকার তমোদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরণ করেন এবং তার ফলে পরাগতি লাভ করে থাকেন। যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না। অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।
ইতি: "দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ" নামক শ্রীমদ্ভগবত গীতার ষোড়শ অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্তের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত

ConversionConversion EmoticonEmoticon

:)
:(
=(
^_^
:D
=D
=)D
|o|
@@,
;)
:-bd
:-d
:p
:ng

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র