শ্রীমদ্ভগবতগীতার দশম অধ্যায়ের সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে মহাবাহো! তুমি আমার বাক্য শ্রবণে আনন্দিত হচ্ছ। তাই তোমার হিতকামনায় আমি পূর্বে যা বলেছি, তার থেকেও উৎকৃষ্ট তত্ত্ব বলছি, তুমি তা শ্রবণ কর। আমার প্রভাব ও শক্তির কথা দেবতারও জানেনা মহর্ষিরাও জানে না কারণ সর্ব প্রকারেই অর্থাৎ যে দিক দিয়েই দেখা যাক না কেন, আমিই দেবতা ও মহর্ষিদের আদি কারণ।যিনি আমাকে জন্মরহিত, অনাদি ও সর্ব গ্রহলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, তিনিই কেবল মানুষদের মধ্যে মোহবর্জিত হয়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন।আমা হতেই ভূতবর্গের (প্রাণিবর্গের) বুদ্ধি, জ্ঞান, সংশয় ও মোহ থেকে মুক্তি, ক্ষমা, সত্যবাদিতা, ইন্দ্রিয়-সংযম, মন:সংযোগ, সুখ, দু:খ, জন্ম,ভয়,অভয়,অহিংসা,সমতা, সন্তোষ, তপস্যা, দান, যশ ও অযশ নানা প্রকার ভাব উৎপন্ন হয়। সৃষ্টির আদিতে ভৃগু প্রভৃতি সপ্ত মহর্ষি, তাঁদের পূর্বজাত সনকাদি চার কুমার ও চতুর্দশ মনু আমার সঙ্কল্পজাত (মানসপুত্র) এবং মদগতচিত্ত বলে আমার শক্তিসম্পন্ন। মনুগণ ও ভৃগু প্রভৃতি মহর্ষি এ জগতে স্থাবরজঙ্গমাদি সকল প্রজা সৃষ্টি করেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন যিনি আমার এ বিভূতি এবং যোগকে অর্থাৎ আমার সৃষ্টির বিস্তার এবং ঐশ্বর্যকে এবং কি প্রকার কর্মকৌশলরূপ যোগের দ্বারা আমি নিজে নির্লিপ্ত থেকে সৃষ্টিকর্তা হয়েছি তা যাথর্থরূপে উপলব্ধি করেন তিনি তিনি অবিচলিতভাবে ভক্তিযোগে যুক্ত হন। সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তির কারণ এবং আমা হতেই সকলের বুদ্ধি ও জ্ঞান উৎপন্ন হয়। এরূপ অবগত হয়ে পন্ডিতগণ শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন। যাঁরা মন ও প্রাণ সম্পূর্ণভাবে আমাতেই সমর্পণ করেছেন, তারা পরস্পরের মধ্যে আমার কথা সর্বদাই আলোচনা করে এবং আমার সম্পর্কে পরস্পরকে উপদেশ প্রদান করে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করেন। যাঁরা সতত ভক্তিযুক্ত হয়ে প্রীতিপূর্বক আমার ভজনা করেন, আমি তাদেরকে বুদ্ধিযোগ প্রদান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমাকে অনায়াসে লাভ করতে পারেন। সেই ভক্তগণের প্রতি অনুকম্পাবশেই আমি তাদের আত্মভাবস্থ হয়ে অর্থাৎ তাঁদের অন্ত:করণে অধিষ্ঠিত হয়ে উজ্জ্বল জ্ঞানদীপের দ্বারা অজ্ঞান-জনিত অন্ধকার নাশ করি।
অর্জুন বললেন, হে ভগবান! তুমি পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম ও পরম পবিত্র । তুমি সর্বব্যাপী, সনাতন, জন্মরহিত, দিব্যপুরুষ ও আদিদেব। বশিষ্ঠাদি ঋষিগণ, দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ। হে কেশব ! তুমি আমাকে যা বলেছ, তা আমি সত্য বলে মনে করি। হে ভগবন! দেবতাদের প্রতি অনুগ্রহার্থ তোমার আবির্ভাব (অবতারত্ব) দেবগণ জানে না এবং অসুরদের নিগ্রহের জন্য তোমার আবির্ভাব (অভিব্যক্তি) আসুরগণও জানে না, সামান্য মানুষের তো কথাই নেই। হে পুরুষোত্তম! হে ভুতভাবন! হে ভূতেশ! হে দেবদেব! হে জগৎপতে! তুমি স্বয়ংই নিজে নিজেকে জান। হে ভগবান! তুমি যে যে বিভূতি দ্বারা এ লোকসমূহে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছ, তোমার সে সকল দিব্য বিভূতিসমূহ কেবল তুমিই সম্যকরূপে বর্ণনা করতে সমর্থ। (অসমাপ্ত)

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র