১৬. যুধিষ্ঠির কর্ত্তৃক শ্রীকৃষ্ণের স্তত্রহৃষ্ট হৈয়া করিছেন কৃষ্ণের স্তবন।তব মায়া কে বুঝিতে পারে নারায়ণ।।সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের তুমি হর্ত্তা কর্ত্তা।প্রধান পুরুষ তিন ভুবনের ভর্ত্তা।।মীনরূপে বেদ উদ্ধারিলা তুমি জলে।কূর্ম্মরূপে ধরণী ধরিলা অবহেলে।।ধরিয়া বরাহ কায় দন্তে কৈলে ক্ষিতি।হিরণ্যকশিপু হন্তা নৃসিংহ মুরতি।।বামন আকারে বলি নিলা রসাতলে।তিন পদে ত্রিভুবন ব্যপিলা সকলে।।রামরূপে রাবণের সবংশে সংহার।নিঃক্ষত্র করিলা ভৃগুরাম অবতার।।বলরামরূপে সূর্য্যসুতা আকর্ষিলে।বুদ্ধরূপে আপন কারুণ্য প্রকাশিলে।।কল্কিরূপে বিনাশ করিলা ম্লেচ্ছ ভূপে।প্রতিকল্পে বিনাশ করিলা ম্লেচ্ছ ভূপে।।প্রতিকল্পে অবতার হলে এইরূপে।ঋষি মুনি যোগী যাঁর নাহি পায় অন্ত।।চারিবেদে যাঁহার ক্রিয়ার নাহি অন্ত।মোরে উদ্ধারিলা মহা বিপদ তরনী।রহিল অদ্ভূত কীর্ত্তি যাবত ধরণী।।এত স্তুতি নৃপতি করেন নারায়ণে।সন্তুষ্ট করেন হরি তারে আলিঙ্গনে।।গোবিন্দ বলেন রাজা তুমি মম প্রাণ।স্বশরীরে আইলা আমার বিদ্যমান।।কৃষ্ণের আদেশে রাজা পরিজন লৈয়া।রহিলেন হরিপুরে হরষিত হৈয়া।।অশ্বমেধ সাঙ্গ হৈল স্বর্গ আরোহণ।পাইল পরম পদ পাণ্ডুরপুত্রগণ।।মহামুনি ব্যাসদেব করেন রচন।পয়ার প্রবন্ধে কাশীরাম বিরচন।।১৭. মহাভারত শ্রবণে ব্রহ্মহত্যা পাপহইতে রাজা জন্মেজয়ের মুক্তিবলেন বৈশম্পায়ন শুন জন্মেজয়।অষ্টাদশ পর্ব্ব সাঙ্গ পাণ্ডব বিজয়।।ব্রহ্মবধ পাপে মুক্ত হৈলে অতঃপরে।দান তপ দ্বিজসেবা পূজ বৈশ্বানরে।।শুক্লবর্ণ চান্দোয়া দেখেন বিদ্যমানে।কৃষ্ণ বর্ণ দূর হৈল ভারত শ্রবণে।।দেখি সব সভাসদ হরিষে বিস্ময়।ব্রহ্মহত্যা পাপে মুক্ত হৈল জন্মেজয়।।সাধু শব্দ, জয় শব্দ হৈল দশ দিকে।আকাশে কুসুম-বৃষ্টি করে দেবভাগে।।সুগন্ধি পবন বহে ঝরে মকরন্দ।ভারত সম্পূর্ণ হৈল, দেবের আনন্দ।।জন্মেজয় প্রশংসিয়া গেল দেবগণে।কিন্নর গন্ধর্ব্ব গায়, নাচে হৃষ্টমনে।।দুন্দুভি মৃদঙ্গ শঙ্খ কাংস্য করতাল।ঝাঁঝরি মুহুরি বাজে শুনিতে রসাল।।পটহ ডিমক ডঙ্কা শানি বীণা বেণু।চন্দনের ছড়া দিয়া নিবারিল রেণু।।তবে জন্মেজয় রাজা পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া।মুনির চরণে পড়ি কহে লোটাইয়া।।নিস্তার করিলে মোরে মহাপাপ হৈতে।বিখ্যাত তোমার কীর্ত্তি রহিল জগতে।।ঘুষিবে তোমার যশ এই ভূমণ্ডলে।মর্ত্ত্যে মর্ত্ত্যবাসী স্বর্গে দেবতা-মণ্ডলে।।লক্ষ শ্লোক ভারত রাখিলে কলিযুগে।কত পাপী পার হবে এই পাপভোগে।।এত বলি পদে পূজা কৈল কায়মনে।বস্ত্র অলঙ্কার মাল্য কুসুম চন্দনে।।পাদোদক পান কৈল গোষ্টীর সহিত।সভাখণ্ড মুনিরে পূজিল যথোচিত।।বিদায় হইয়া গেল যত মুনিগণ।তপোবনে চলিলেন শ্রীবৈশম্পায়ন।।মুক্ত হয়ে কৈল রাজা পঞ্চ তীর্থে স্নান।দ্বিজগণে স্বর্ণ গবী ভূমি দান।।অনলে ঢালিল ঘৃত সহস্র কলস।মিষ্টান্ন ভোজনে বিপ্রগণে কৈল বশ।।দিলেন অপূর্ব্ব বস্ত্র, দিব্য আভরণ।দক্ষিণা পাইয়া গৃহে গেল দ্বিজগণ।।করাইল জ্ঞাতি গোত্র সবারে ভোজন।রাম-নাম মহামন্ত্র করিল কীর্ত্তন।।দুন্দুভি শব্দেতে নৃত্য করে বিদ্যাধরী।ভারত সম্পূর্ণ হৈল, বল হরি হরি।।নিষ্পাপ শরীর রাজা পাত্র-মিত্র লয়ে।রাজ্য করে জন্মেজয় হরষিত হয়ে।।অধিকারে চোর দস্যু নাহি একজন।পাণ্ডবের রাজ্যে সবে হরি-পরায়ণ।।সদা সাধু সঙ্গে করি হরিকথা শুনে।সকল হইল বশ নৃপতির গুণে।।১৮. মহাভারত পাঠের ফলজন্মেজয় কহিলেন, শুন তপোধন।শ্রীমহাভারত-গ্রন্থ অপূর্ব্ব-রচন।।পূর্ব্বে যেই চন্দ্রাতপ কৃষ্ণবর্ণ ছিল।ক্রমে ক্রমে দেখি তাহা শুক্লবর্ণ হৈল।।শ্রীমহাভারত-গ্রন্থ করিলে শ্রবণ।পাপক্ষয় হয়, ইহা বুঝিনু এখন।।আর কি কি ফল হয়, শুনিতে বাসনা।কহ কহ মুনিবর করিয়া করুণা।।(মিসিং২০. গ্রন্থকারের পরিচয়ইন্দ্রাণী নামেতে দেশ বাস সিদ্ধিগ্রাম।প্রিয়ঙ্কর দাস পুত্র সুধাকর নাম।।তৎপুত্র কমলাকান্ত কৃষ্ণদাস পিতা।কৃষ্ণদাসাত্মজ গদাধর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।।পাঁচালী প্রকাশি কহে কাশীরাম দাস।অলি হব কৃষ্ণপদে মনে অভিলাষ।।হরিধ্বনি কর সবে গোবিন্দের প্রীতে।অন্তকালে স্বর্গপুরে যাবে আনন্দেতে।।সর্ব্বশাস্ত্র বীজ হরিনাম দ্বি-অক্ষর।আদি অন্দ নাহি যার, বেদে অগোচর।।কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিতে মজিবে কৃষ্ণে দেহ।কৃষ্ণের মুখের আজ্ঞা, নাহিক সন্দেহ।পাঁচালী বলিয়া মনে না করিহ হেলা।অনায়াসে পাপ নাশে গোবিন্দের লীলা।।নীচগৃহে থাকিলে ভারত নহে দুষ্ট।অনায়াসে শুনিলে পাতক হয় নষ্ট।।সম্পূর্ণ হইল হরি বল সর্ব্বজন।এত দূরে সাঙ্গ হৈল স্বর্গ-আহোরণ।।।। স্বর্গারোহন সমাপ্ত।।
Subscribe to:
Posts (Atom)
ConversionConversion EmoticonEmoticon