শর্যাতির রাজার রাণী যজ্ঞের চরু খেয়ে আনর্ত্ত, উত্তান ও ভূরিষেণ নামে তিন পুত্র সন্তান জন্ম দিল। আনর্ত্তের হাতে রাজা রাজ্য ভার দিয়া বনে গেলেন। আনর্ত্তে এক পুত্র হয় রৈবত নামে। সেই রৈবতের একশত পুত্র এবং রেবতি নামে এক কন্যা হলো। তিনি সমুদ্র মাঝে কুশস্থলী পুরী তৈরি করেন। শ্রীকৃষ্ণ এ দ্বীপেই দ্বারকাপুরী তৈরী করেন। রৈবতের পুত্রের নাম ককুদ্মী । ককুদ্মী'র পুত্রের নাম নভগ। আর নভগের পুত্রের নাম নাভাগ।নভগ ব্রহ্মচারী হয়ে কৃষ্ণ প্রেমে মজে গৃহ ত্যাগ করলেন। গুরুকূল হতে নভগ ফিরে এসে ধনের ভাগ চাইলেন। ভ্রাতৃগণ তখন বললেন,“ পিতাকে কয় ভাগ করব? তখন পিতার ইচ্ছায় নভগ আংগিরস যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন। পিতা তাকে বললেন "যষ্ঠদিনে তারা মন্ত্র বিস্মৃত হবে। তুমি ষষ্ঠ দিনে বেদমন্ত্র করবে। আর যজ্ঞের অবশিষ্ট ধন তুমি পাবে।" ষষ্ঠ দিনে নভগ যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হয়ে আনন্দের সাথে বেদমন্ত্র সূক্ত পাঠ করিল। যজ্ঞকারীরা বেদমন্ত্র শ্রবণ করে আনন্দিত হলেন এবং সকল ত্যাগ করে স্বর্গে চলে গেলেন। যজ্ঞের অবশিষ্ট ধন নিয়ে যাবার জন্য তৈরী হওয়ার মর্হুতে উত্তর হতে আগমন করে এক কৃষ্ণকায় এবং বলে,'' কে তুমি কার ধন গ্রহণ করছ; যজ্ঞ-অবশিষ্ট ধন শুধু আমার অধিকার।" তখন নভগ বলেন," যজ্ঞকারী ঋষিগণ আমাকে এ ধন দিলেন।" শুনে কৃষ্ণকায় পুরুষ বললেন," যাও পিতাকে জিজ্ঞাসা কর এ ধন কাহার প্রাপ্য। বিচারে যা হবে সেই প্রাপ্ত হবে এ ধন।" নভগ পিতাকে গিয়ে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিল। শুনে পিতা বললেন," শুন বাছাধন! শুধু রুদ্রের অধিকার এ যজ্ঞধনের।" পিতার বচন শুনে নভগ আনন্দি হয়ে যজ্ঞস্থলে এসে বিনয়ে সাথে বললেন," ওহে দ্বিজ এ ধন শুধু আপনার অধিকার। আপনি তা গ্রহণ করুন।" তখন শিব শুনে হাস্যখুলে বললেন," তোমরা পিতা-পুত্র দুজনই ধার্মিক। তত্ত্বজ্ঞান সনাতন ব্রহ্ম উপদেশ তোমাকে দিলাম। যজ্ঞ-অবশিষ্ট ধন তোমাকে দিলাম। তা গ্রহণ কর।" এ বলে রুদ্রদেব অন্তর্হিত হলেন।
নাভাগের পুত্রের নাম অম্বরীষ। সে রাজা হয়। রাজা অম্বরীষের ভক্তিপ্রীতি দেখে দেব নারায়ণ তুষ্ঠ হয়ে তার রাজ্য রক্ষার জন্য সুদর্শন চক্র প্রদান করেন। অম্বরীষ গৃহে চক্রটি রেখে দিলেন।কার্ত্তিক মাসে রাজা অম্বরীষ একাদশী ব্রত পালন করেন। এ ভাবে একবর্ষ ব্রত পালন করেন। পুনশ্চ: কার্ত্তিক মাসে একাদশী ব্রত পালন করে দ্বাদশীতে পারনে ব্রহ্মণ-ভোজন করান রাজা অম্বরীষ। সহসা দুর্ব্বাসা মুনি সেখানে উপস্থিত হয়ে পারনে "উষ্ণ পরমান্ন" গ্রহণে ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং সন্ধ্যায় আসবে বলে চলে গেলেন। কিন্তু অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করার পরও ঋষিকে না আসতে দেখে রাজা অম্বরীষকে বিপ্রগণ বলেলেন," দ্বাদশী প্রায় উর্ত্তীণ হতে চলেছে। এখন পারন শেষ করতে হবে।" রাজা অম্বরীষ তখন বললেন," মুনিবর ব্যতিত কেমনে পারন করিব। মুনিবর শিষ্যদের সাথে সন্ধ্যায় নদী তীরে ভ্রমণ করতে গেলেন। না আসলে কেমনে পারন করব। আপনার সকলেই জানেন দুর্ব্বাসা মুনির ক্রোধ জগত বিদিত।" ইহা শুনে বিপ্রগণ কহে," কুশ অগ্রে জল লয়ে মুখে দিলে শাস্ত্র মতে হবে।" তখন অম্বরীষ কুশ-অগ্র জল লয়ে রসনায় দেন কিন্তু জিহ্বা হতে কন্ঠদেশে জল নীচে যায় না। দুর্ব্বাসা মুনি ধ্যানে বসে সবকিছু জানতে পারল। ক্রুদ্ধ হয়ে এসে রাজা অম্বরীষকে জিজ্ঞাসা করলেন," আমাকে ছাড়া তুমি পারন করলে, আমার আদেশ তুমি অমান্য করলে।" মুনিবর এর বচন না শুনে রাজা অম্বরীষ উষ্ণ পায়সন্ন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন। দুর্ব্বাসার বাক্যে রাজা কোন কথা বলেনি দেখি রাজার ক্রোধ পরিপূর্ণ হলো। ক্রোধে মস্তকের জটা ছিড়িয়া ফেলিল। এতে কৃত্য নামে এক অসুর জন্ম হলো। অসুরের মুখ হতে অগ্নি বাহির হতে লাগল। চারিদিকের সব ঘর-বাড়ী ভস্ম করতে লাগল। কিন্ত রাজা অম্বরীষের এতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নিশ্চল হয়ে তিনি পায়সন্ন হাতে দাড়িয়ে আছেন। কারণ অম্বরীষ পরম বৈষ্ণব নরপতি। দৈত্য গৃহে প্রবেশ করে গৃহ ভস্ম করতে লাগল। যেখানে সুদর্শন চক্র রাখা ছিল সেখানে আগুন প্রবেশ করল। রাজপুরী রক্ষার জন্য সুদর্শন চক্রকে প্রভু আদেশ দেন। সুদর্শন চক্রের দিকে আগুন আসেতে দেখে সুদর্শন চক্র মহাক্রুদ্ধ হন এবং দৈত্যকে বিনাশ করে দুর্ব্বাসা মুনির দিকে সুদর্শন চক্র এগিয়ে যায়। ভয় পেয়ে দুর্ব্বাসা মুনি সত্ত্বর সেখান হতে পলায়ন করেন। কিন্তু সুদর্শন চক্র তার পিছু পিছু যায়। মুনিবর শিবের নৈকট্যে যায় নিজেকে রক্ষার জন্য। মুনিকে দেখে শিব জিজ্ঞাসা করেন," আপনার এমন দুর্দশা কেন? কি হয়েছে আপনার? জটা এলিয়ে গেছে মুখে কোন কথা নেই। ঘন ঘন শ্বাস।" শুনে দুর্ব্বাসা মুনি সবিনয়ে শিবকে বলেন," আমাকে মারার জন্য ঐ সুদর্শন চক্র আসছে। আপনি আমার জীবন রক্ষা করুন।" তখন পঞ্চানন বলেন," তুমি বৈষ্ণব এর উপর ক্রুদ্ধ হয়েছে। তোমাকে আমি কেমনে রক্ষা করিব। সুদর্শন চক্রকে রোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি স্বয়ং বিষ্ণুর কাছে যাও। যার অস্ত্র তিনি বিনা কে নিবারন করিবে ।" দুর্ব্বাসা মুনি শিবকে প্রণাম করে ব্রহ্মার নিকট উপনীত হন কিন্তু সুদর্শন চক্র তার পিছু পিছু ধায়। ব্রহ্মা জিজ্ঞাসা করেন," মুনিবর আজ আপনাকে কেন এত ভীত দেখাচ্ছে।" জোড় হাতে করে দুব্বার্সা বললেন," কৃপা করে আপনি আমার জীবন রক্ষা করুন।" ব্রহ্মা বলেন," সুদর্শন চক্র তোমার প্রতি ক্রদ্ধ হয়েছেন। কিরুপে আমি তোমাকে বাঁচাব।" তাহা শুনে মুনিবর নিরাশ হয়ে বৈকন্ঠ নগরে উপনীত হন। লক্ষ্মী-নারায়ণ-পদে প্রণাম করে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন," না জেনে তোমার ভক্তকে আমি অপমান করেছি। সে কারণে সুদর্শন চক্র আমাকে বধ করতে যায়। কৃপা করে তুমি আমার জীবন রক্ষা কর। নতুবা চক্রের আঘাতে প্রাণ যাবে।" তখন নারায়ন শুনে বলেন," আমি পারিব না। বৈষ্ণবের অপমানর কি করে করিব। অম্বরীষ পরম বৈষ্ণব। সুদর্শন চক্র আমি দেই তার ঘর রক্ষার জন্য। কিন্তু তুমি ক্রদ্ধ হয়ে তার পুরী করলে ভস্ম। সেই জন্যেই সুদর্শন চক্র ক্রদ্ধ হয়েছে। যখন আমার কাছে সুদর্শন চক্র ছিল তখন বারন করার শক্তিও ছিল আমার। আমি ভক্তের বশ চিরদিন। সেই জন্য মোর নাম হয় ভক্তাধীন। আমার দেহ বিক্রী হয়েছে ভক্তের কাছে। সেই ভক্তকে নিবারন করার শক্তি আমার নেই। এ মুর্হুহে সুদর্শন নিবারন করার শক্তি আমার নেই।" তখন মুনিবর কহেন," তাহলে আমি রক্ষা পাব কিভাবে।" বিষ্ণ তখন বলেন," রাজা আম্বরীষে কাছে যাও। যারা আমার ভক্ত তাদের শরীরে কখনও ক্রোধ থাকে না। যাও মুনিবর, অম্বরীষের কাছে গেলে প্রাণে বাচিবে নতুবা সুদর্শন চক্রে তোমার প্রাণ যাবে।" নারায়ণে প্রণাম করে দুর্ব্বাসা মুনি রাজা অম্বরীষের নিকট উপনীত হন। তিনি দেখেন রাজা অম্বরীষ সেইমত ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। সুদর্শন চক্রের ভয়ে মুনিবর পালিয়ে ছিল। এক বৎসর পর নৃপতির নিকট গেল। রাজাও এক বৎসর এক জাগায় দাড়িয়ে ছিল। উষ্ণ পায়সেতে এখনও ধূম্র উদ্গীরন হচেছ। কাতর কন্ঠে দুর্ব্বাসা মুনি কন রাজারে," মহারাজ তুমি রক্ষা কর আমাকে।" তখন রাজা বলেন," মুনিবর আপনি অনুধাবন করুন উষ্ণ পরমান্ন এখনও বিদ্যমান। আপনি অতিথি আমার গৃহে। আপনি না আসলে আমার পারনা না হয়।" পরম বৈষ্ণব ক্ষান্ত হন। নানা বাক্যে রাজা দুর্ব্বাসাকে মুনিকে সান্ত্বনা করায়।শ্রীভাগবতের কথা শুনে যেই জন। পাতক তাহার দেহে না রহে কখন।
Sign up here with your email
ConversionConversion EmoticonEmoticon