পৃথুরাজের উৎপত্তি

মহাতেজা মহাযশা অঙ্গ মহামতী পুত্র সন্তান কামনায় যজ্ঞানুষ্ঠান করলে সেই যজ্ঞের চরু সুনীথা ঈশ্বরকে স্মরণ করে ভক্ষণ করলে তার গর্ভে বেণ নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।সেই পুত্র একজন কুলাঙ্গার।ধর্মকর্ম মানে না।প্রজাগণকে কষ্ট দেয়।ভগবান বিষ্ণুর নিন্দা শুনে ঋষিগণ হুংকার ছাড়লে বেণ ভস্মরাশি হয়ে পড়ে।তারপর যোগবলে ঋষিগণ তার মৃতদেহ তৈলাক্ত করে ভিজিয়ে রাখেন।তখন ঋষিগণ মিলে বেণের উরুযুগল মথিলে তাম্রবর্ণ কেশ, শোণিত বরণ,বামন আকৃতির এক কিম্বাকৃতির জন্ম হয়।ঋষিগণ “নিষীদ” “নিষীদ” বাক্য উচ্চারণ করেন।সেথেকে ধরায় নিষাদবংশের জন্ম হল।পুনরায় ঋষিগণ বেণের বাহুযুগল মথিলে নারায়ণ অংশে জন্ম নিল পৃথু নামে এক রতন পুরুষ। অপরদিকে লক্ষ্ণী অংশে জন্ম নিল অর্চ্চি নামে এক কণ্যা। রুপবতী গুনবতী সেই বিনোদনীর সাথে পৃথুর পরিণয় হয়।পৃথুরাজকে দেখে মুনিগনের অন্তর আনন্দে পুলকিত হল। গন্ধর্বরা মনের সুখে গান করতে লাগল। সিদ্ধ নামক দেবতারা পূষ্প বর্ষণ করতে লাগল। দেবতারা সেখানে আগমন করে এবং আনন্দে অপ্সরা নৃত্য করে। অমন-নগরে দুন্দুভি (দমামাজাতীয় প্রাচীন রণবাদ্যবিশেষ) বাজে। যক্ষ (ভূগর্ভে প্রোথিত ও সঞ্চিত ধনরাশির রক্ষক) রক্ষ (রাক্ষক) সহ অসংখ্যা ঋষিগণ আসে রাজপুরে।আসেন ব্রহ্মা তার সাতে আসেন অমরের দেবতা।পৃথুর শরীরে পদ্মচক্র চিহ্ন ছিল। তা দেখে পদ্মপলাশলোচন অত্যন্ত হরষিত হলেন।ব্রহ্মা তখন উপস্থিত সকলে পৃথুর অভিষেক আরম্ভ করার জন্য অনুমতি দিলেন। ব্রহ্মার অনুমতি পেয়ে যে যত অভিষেক দ্রব্য এনেছিল তা দিয়ে যথাবিধি পৃথুরাজকে অভিষেক করিল।পৃথুরাজ সিংহাসনে বসলেন এবং বামদিকে অর্চ্চা দেবী এমনভাবে বসলেন যেন জলের মধ্যে দামিনী(বিদ্যৎ) লুকায়।তারপর মনের আনন্দে দেবগণ একে একে পৃথু নৃপতিকে তাদের বিবিধ দ্রব্য উপহার দেন।কূবের দেন কাঞ্চন-আসন ,দেব জলপতি দেন শ্বেতচ্ছত্র ,পবন দিলেন ব্যজনী(বাতাস করার পাখা),ধর্মদেব দিলেন কীর্ত্তিমালা , দেবেন্দ্র দিলেন কিরীট, যমরাজ দিলেন অনুপম দন্ড,ব্রহ্মা দিলেন বেদময় বর্ম,বীণাপানি স্বরস্বতী দিলেন মনিময় হার,দেব নারায়ন দিলেন সুদর্শন-চক্র, লক্ষ্ণীদেবী দিলেন ধনাগার, রুদ্র মহামতি দিলেন চক্রাকার অসি, দূর্গাদেবী দিলেন চর্ম্ম,চন্দ্রদেব দিলেন অতি মনোরম অশ্ব,ত্বষ্টা (দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা)দিলেন মনোরম দিব্য রথ,অগ্নি দিলেন অজগব ধনু, সূর্য্যদেব দিলেন দিব্যবাণ,পৃথিবী দিলেন পাদুকা।রাজা হয়ে পৃথু সিংহাসনে আরোহণ করলেন।চারিদিকে মাগধেরা(স্তুতিপাঠক, বন্দনাগায়ক),স্তব আরম্ভ করিল।তখন পৃথুরাজা তাদেরকে নিবারণ করে বললেন,”আমাকে স্তব করার কোন প্রয়োজন নেই।আমি স্তবের যোগ্য নই।যার ইচ্ছায় এ জগৎ সংসার সৃষ্টি হয়েছে,সেই হরি গুণাধার হচ্ছেন এ স্তবযোগ্য।একাগ্র চিত্তে তার স্তব করলেই কেবল ভব-পারাবার হওয়া যায়। বৃথা স্তবে যে বিমোহিত হয় সে অতি মূর্খ।সংসারে যে মূর্খ হয় স্তবেতে তার মনে স্তুষ্ঠি জন্মে।প্রশংসা শুনে যে মত্ত হয় তার মত মূঢ় আম কখনও দেখেনি।তোমাদের সুকন্ঠ নয়নকাড়ে।আমার স্তব ছেড়ে নারায়ণকে ভজ। একাগ্র চিত্তে তাঁর স্তব কর, তা হলেই ইহলোক পরলোকে মংগল হবে।“ পৃথু তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন,তথাপি তারা তার কথা শুনল না।আনন্দে চিত্তে তারা তার স্তব করতে লাগল।
সূতগণ কর্তৃক পৃথুরাজার স্তুতিবাদঃ
পৃথুর অমৃত বাণী শ্রবণ করে সুতবন্দীগণ মধুর স্বরে তার গুনগান করতে আরম্ভ করল।তারা বলতে লাগল তোমার মহিমা কী বর্ণনা করব।স্বয়ং নারায়ণ অংশে তোমার জন্ম।সুরগণ তোমার কার্য দেখে সুবিম্মিত।অগ্নির মত তেজ তোমার।তুমি গুণের আধার।ইন্দ্রের মত দর্প তোমার।দাতা কর্ণের সম তুমি।যমরাজকেও তুমি জয় করেছ।সূর্য সম তেজ তুমি আকর্ষণ কর আবার সহস্র গুণেতে বর্ষণ কর।সুধারক(চন্দ্র)তোমার রুপ দেখে লজ্জা পায়।সাগরের মত তোমার গাম্ভীর্য।পৃথিবীকে তুমি দোহন করিবে।ধনুর দ্ধারা তুমি সসাগরা(পৃথিবী)কে শাসন করিবে।শত শত অশ্বমেধ যজ্ঞ তুমি করিবে এবং তুষ্ট করবে শ্রহরিকে।এভাবে বন্ধীগণ তার জয়গাণ করতে লাগল।
পৃথুরাজা কর্তৃক পৃথিবী দোহনঃ
দশ বৎসর যাবত পৃথুর রাজ্যে কোন শস্যাদি হয় না।কিন্তু পৃথুরাজ তা জানে না।ধর্ম-কর্ম লোপ পায়। যাগযজ্ঞ হয় না।তখন সকল প্রজা মিলে একদিন পৃথুরাজার সাথে দেখা করলেন।তার চরণে প্রণতি করে বলতে লাগলেন,”তোমার রাজ্যে আমরা আর স্ত্রী-পুত্রাদিসহ বাস করতে পারছিনা।শুনে রাজা জিজ্ঞাসা করেন,তোমরা এ কী কথা বলছ? তখন কতিপয় প্রজা হাত যোড়করে বলেন,তোমার রাজ্যে কোন শস্য উৎপন্ন হচ্ছে না।অনাহারে থাকতে হচ্ছে।যার ফলে যাগযজ্ঞ লোপ পাচ্ছে।যজ্ঞহীন, মন্ত্রহীন দ্বিজাতি”(ব্রাহ্মণ)।সমম্ত কিছু শুনে পৃথুরাজার হৃদয়ে ক্ষোভ সঞ্চারিত হল এবং তিনি বললেন,”বসুমতি আমার রাজ্যে শস্য লোপ করেছে,আমি অচিরেই থাকে বিনাশ করব”।পৃথুরাজা হাতে ধনু তুলে নিলেন।বসুমতি তা দেখে ধেনুরুপ ধারণ করে পলায়ন করতে লাগলেন।পৃথুরাজাও ধেনুর পিছু পিছু যেতে লাগলেন।পৃথু যাকে যাকে দর্শন করেন,ধেনুরুপ পৃথিবী তাদের কাছে ভিক্ষা মাগেন।কিন্তু পৃথুর কথা শুনে তার থর থর করে কাপেঁ তাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না।সপ্ত সর্গ ভ্রমন করে অবশেষে পাতালেতে পলায়ন করলেন।পৃথুরাজাও পিছু পিছু তথায় গমন করেন।তারা নয়নে অশ্রুজল ঘন ঘন বহিতে লাগল।এভাবে পৃথুরাজা সতী কাতর হয়ে সপ্তসংখ্য পাতালেতে ভ্রমণ করলেন।তারপর গোলোকে গমন করে বিষ্ণুর নিকট আশ্রয় নিলেন।ধরার চঞ্চলতা দেখে মিষ্টভাষে দেবচক্রপাণী জিজ্ঞাসা করেন,” বিনোদীনি তোমার কিসের কাতরতা, কিসের জন্য হেথায় আগমন করেছ।“ শুনে ধরা কেঁদে কেঁদে বলেন,” প্রভু!আপনার পদে নিবেদন করি।পৃথু আমাকে বধিবার জন্য হেথায় আগমণ করেছে।তার ভয়ে কেহ আমাকে রক্ষা করেনি।তোমার চরণে প্রণিপাত করি কৃপা ভিক্ষা করছি প্রভু তুমি আমাকে রক্ষা কর।এ কারণে আমি তোমার কাছে এসেছি।শুনে জনার্দ্দন বলেন,পৃথুরাজা অসীম শক্তিশালী।তোমাকে তার হাত থেকে রক্ষা করবে ভুবনে এমন কেহ নেই? তোমার এই সময়ে পৃথু হয়েছে রাজা।তার সমান এরমক মহাতেজা কেহ নেই।সেই তার কাছে তুমি হয়েছে অপরাধী।কিভাবে তোমাকে রক্ষা করি।তুমি পৃথুর কাছে যাও।পৃথু তোমাকে বধিবে না।কিন্তু আমার কথা না শুনিলে তুমি এ বিপদ থেকে কিছুতেই পরিত্রান পাবে না।শ্রীহরির বাক্য শ্রবণ করে ধরা ত্বরায় পৃথুর নিকট গিয়ে বিনীতভাবে বলল,” শোন নৃপমণি।আমি তোমার শরনাপন্ন। আমাতে তুমি রক্ষা কর।তোমার গুণের কোন সীমা নেই।“ শুনে রোষভরে পৃথু কহে,” নিশ্চয় আমি তোমাকে বধ করিব।তোমার কোন কথা আমি শুনিব না। এক বাণে আমি তোমাকে বধ করিব।“ কাঁপতে কাঁপতে ধরা কহে,” আমি অবলা নারী।আমায় তুমি বধ করোনা।যদি আমায় বধ কর তবে তোমার প্রজাকে কে রক্ষা করিববে রাজন? কোথায় তারা আশ্রয় নেবে? ইহাতে তোমার কী লাভ হবে? আমি আর কী বলব।মৃদু বাক্যে পৃথু কহে,” শোন ধরা তোমায় অচিরে আমি হত্যা করিব।তপোবলে প্রজা রক্ষা করিব।তোমার জীবনের আর কী প্রয়োজন। শস্যাদি তুমি লোপ করিলে কী জন্যে? আমি তোমাকে হত্যা করিব। তপোবলে প্রজাকুল রক্ষা করিব‌। যাগযজ্ঞ নষ্ট করেছ,শস্য জন্মে না,আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ,আমি তোমাকে উচিৎ শাস্তি দিব।“ কেন্দে কেন্দে সতী কয়,” আমাকে তুমি রক্ষা করিলে তোমার কীর্তি রবে ধরায়।“ পৃথিবীর পৃষ্ঠ যদি সমতল হয়, তবে আমি ধরায় শস্য দিতে পারব।“ ঈষৎ হাসিয়া পৃথু কহেন,” তোমার প্রার্থনা মতে আমি সমান করিব বসুধা।তখন ধনু ঘুরাইয়া পৃথু সমস্ত ধরা সমতল করেন।“ সেথেকে পৃথিবীর সমতল সর্বস্থান।“ তাকে দোহন করার জন্য পৃথুকে অনুরোধ করেন।তাহলে পৃথিবীতে পূর্বের মত সবকিছু সবে।যাগ-যজ্ঞ, বেদবিদ্যা যা লোপ হয়েছে তা পুনরায় আগের মত হবে।পৃথুর সাথে যখন ধরার এ কথা হওয়ার পর ঋষিগণ,দেবতা,গন্ধর্ব,যক্ষ রক্ষ পৃথুর সদনে আসেন।ঋষিগণের চরণে প্রণাম করে পৃথিবী দোহন করার কথা ব্যক্ত করেন,পৃথিবী গোরুপ ধারণ করবে এবং বৎস নিরুপন করার জন্য বলেন।পৃথুর কথা শুনের মুনিগণ বৃহস্প্রতিকে বৎস হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং বৃহস্প্রতি তাতে রাজী হন।সর্বপ্রথম গুণের আধার পৃথুরাজা ধরাকে দোহন করেন। সেই সময় বেদ পুনঃ উঠে।পুলকিত হন পৃথুরাজা। তারপর সকল দেবতা দেবরাজ ইন্দ্রকে বৎসরুপে স্মরণ করে পৃথিবী দোহনে তেজ বল বীর্য্য উঠে আসে।অসুরেরা একত্র হয়ে প্রহ্লাদকে বৎসরুপে স্মরণ করে পৃথিবী দোহন করলে লৌহময় পাত্রে সুরা উঠে আসে।যক্ষগণ যক্ষরাজকে স্মারণ করে পৃথিবীকে দোহন করেন। পরে পাখীরা গরুড়কে স্মারণ করে পৃথিবী দোহন করিল।বৃষভকে বৎসরুপে স্মারণ করে পশুগণ পৃথিবীকে দোহন করেন তাতে তৃণময় ক্ষির হয়।পৃথুরাজ ইহা দেখে আনন্দে ভাসে।তক্ষকেরে বৎসরুপে স্মারণ করে নাগকুল পৃথিবীকে দোহন করেন, তাতে বিষ জন্মিল।পর্বমসমুহ হিমালয়কে বৎসরুপে স্মারণ করে পৃথিবীকে দোহন করলে রত্নৌষধি ধাতু জন্মিল।তারপর পাদপেরা(উদ্ভিদ) বটবৃক্ষকে বৎসরুপে স্মারণ করে দোহন করিলে বৃক্ষরাজি উৎপন্ন হল।সিদ্ধগণ কপিল মুনিকে বৎসরুপে স্মরণ করে পৃথিবীকে দোহন করলে বিদ্যাদুগ্ধ আদি সে দোহনে ফলে।তারপর মাংসভোজী জীবগণ সিংহেরে বৎসরুপে স্মরণ করে পৃথিবীকে দোহন করলে মাংসরুপ দুগ্ধ উৎপন্ন হল।গন্ধর্বেরা বিশ্ববসুকে বৎসরুপে স্মরণ করে পৃথিবীকে দোহন করলে মধু লাভ হয়।অতঃপর পৃথুরাজ দুহিল,শস্যাদি বিবিধ জন্মিল।এরুপে সকল জাতি একত্রে মনমত করে পৃথিবীকে দোহন করে লয়।তখন পৃথু বলে,”আজ হতে তুমি আমার কন্যা হলে।“ধরা সতী আনন্দে মগন হয়ে পৃথুরাজাকে প্রণাম করে গমন করেন। আর অন্যেরা নিজ নিজ সদনে গমন করেন।আনন্দে মগন হয়ে পৃথু নিজ দেশে ফিরে যান।পৃথৃর উপখ্যান যে শ্রবণ করে বা পাঠ করে,তার স্থানভ্রষ্ট বা লক্ষ্ণীভ্রষ্ট হয় না।পৃথুর উপাখ্যান লিখে গৃহেতে রাখরে সে কখনও সংকটে পড়ে না।
পৃথুরাজার অশ্বমেধানুষ্ঠানঃ
সিংহাসনে আরোহন করে পৃথুরাজা প্রজা পালন করতে লাগলেন। রানি অর্চ্চি গর্ভবতী হলেন। যথা সময়ে এক পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। পৃথুরাজার মনে আনন্দ আর ধরে না। অন্নপ্রাশন করেন।তার নাম রাখলেন বিজিতাশ্ব। পৃথুরাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করার জন্য মন স্থির করলেন। যথা নিয়মে ক্রমে ক্রমে ঊনিশত যজ্ঞ শেষ হয়। তারপর ব্রহ্মাবর্তে স্বরসতী নদী তীরে শত বেদী নির্মাণের আদেশ দেন। শত বেদী নির্মান হল। পৃথুরাজা যজ্ঞ আরম্ভ করলেন। যজ্ঞানুষ্ঠানে দেব, দৈত্য, যক্ষ ও রক্ষ সকলেই উপস্থিত হলেন। আসে কত সিদ্ধপুরুষ।আসে কত বিষ্ণু দূত। আসল নারদ, কপিল মুনি।শতযজ্ঞের জাকজমকপূর্ণ আয়োজন সম্পন্ন করে পৃথু নররায়।তাই দেখে শচীপতি(দেবরাজ ইন্দ্র)প্রকম্পিত হন। তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন যদি পৃথুরাজ শতযজ্ঞ পূর্ণ করে ফেলে তবে তার ইন্দ্রত্ব কেড়ে নেবে। তাকে কিছু একটা করতে হবে। এ ভেবে রাত্রে যজ্ঞ অশ্ব হরণ করে পলায়নকালে বিজিতাশ্বের সাথে দেবরাজ ইন্দ্রের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে দেবরাজ ইন্দ্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অশ্ব ত্যাগ করে পলায়ন করেন। তারপর বিজিতাশ্ব পিতাকে প্রণাম করে যজ্ঞ অশ্ব দেন। বিধি অনুসারে যজ্ঞ আরম্ভ হয়। দিন কয়েকপর দেবরাজ ইন্দ্র মায়াবলে অন্ধকার সৃষ্টি করে ছদ্মবেশ ধারণকরে আবার যজ্ঞের যজ্ঞের অশ্ব হরণ করেন। প্রভাতে দূতগণ রাজাকে অবহিত করেন যে, যজ্ঞের অশ্ব হরণ করা হয়েছে। রাজা পৃথু চিন্তায় পড়লেন। তিনি ভাবতে লাগলেন এ কাজটি স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের। তিনি মনে মনে ভাবলেন একবার তার ছেলে দেবরাজকে পরাজিত করেছিল। সে তখন মাথা নত করে পালয়ন করল। আবার যজ্ঞ অশ্ব চুরি করল।তার এত বড় স্পর্দা। তাকে বধ করে যজ্ঞ অশ্ব ফিরিয়ে আনা হবে। সুরপুরী ছারখার করা হবে।
ইন্দ্র-বধ্যেদ্যত পৃথুকে ব্রহ্মা কর্তৃক দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে তার চোখ রক্তের মত লাল হয়ে গেল। তিনি পুত্রকে আদেশ দিলেন যুদ্ধের আয়োজন করতে। ইতিপূর্বে তার পুত্র বিজিতাশ্ব ইন্দ্রকে পরাজিত যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে এনেছিলেন। সে থেকে ঋষিগণ তার নাম দিলেন বিজিতাশ্ব।সমর শয্যা সম্পন্ন দেখে পৃথুরাজ তার রথ আনার জন্য বললেন। আদেশ পেয়ে সমর শয্যায় সজ্জিত হন যত সৈন্যগণ। আসেন রথী মহারথী। পৃথুও সমর শয্যায় সজ্জিত হন। ঠিক তখন মুনিগণ তাকে গিয়ে বললেন,” আপনি যজ্ঞে দীক্ষিত। আপনার এখন যুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবেনা। শুনে পৃথুরাজ মুনিগণকে করজোরে বলেন,” পামর দেবরাজ ইন্দ্র যজ্ঞের অশ্ব চুরি করেছে। তাকে পরাজিত করে যজ্ঞের অশ্ব ফিরায়ে আনব। তাকে অবশ্যই উটিৎ শিক্ষা দিব।“ পৃথুরাজের কথা শুনে মুনিগণ বললেন,” যজ্ঞের অশ্বের জন্য আপনি কেন যুদ্ধ করবেন। এখন যুদ্ধের সময় নয়। আপনি রণ সাজ ত্যাগ করুন। যজ্ঞে পশু হত্যার বিধান আছে। তাই এখন অন্য কোন বধ করা চলবে না।মন্ত্র উচ্চারণ করে ইন্দ্র নামে আহুতি দেব। দেবরাজ ইন্দ্রকে অশ্বসহ এখানে আনব। বৃথা তুমি কেন যুদ্ধ করবে? তুমি ক্ষান্ত হও।মুনিগণের কথা মন দিয়ে শ্রবণ করল এবং যুদ্ধ সাজ ত্যাগ করল। মুনিগণ মন্ত্রপাঠের উদ্যোগ নেওয়ার মুর্হুতে সেখানে ঘটল এক ঘটনা। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন।তাহাকে দেখে সকলে তাড়াতাড়ি ভূতলে পতিত হয়ে প্রণাম করলেন।পিতামহ ব্রহ্মাকে পূজা করে পৃথুরাজা বললেন”আপনার আগমনে আমার যজ্ঞ সফল হয়েছে।পূন্যের ফল ফলিল।শত অশ্বমেধ যজ্ঞ পূরণ করিবার প্রাক্কালে ইন্দ্র যজ্ঞ-অশ্ব হরণ করেছে।যজ্ঞে আহুতি দিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে বধ করিব। দেবরাজ হয়ে কেন এমন ব্যবহার। তাকে উচিৎ শিক্ষা দিব। পৃথুরাজার কথা শুনে ব্রহ্মা বললেন”,পৃথুরাজ এবং উপস্থিত সকল ব্রাহ্মণগণ আমার কথা শুনুন।কেন তুমি দেবরাজ ইন্দ্রকে বধ করার ইচ্ছা করছ।”দেবরাজ ইন্দ্র কোন কালও বধ্য নয়।শাস্ত্রমতে ইন্দ্র যজ্ঞরুপী হন।শাস্ত্রের বিধান যজ্ঞেতে যজ্ঞের বধ হয় না।তুমি উনিশত যজ্ঞ করেছ। তাতেই তোমার শতযজ্ঞের ফল পূর্ণ হবে। যজ্ঞের আর কোন প্রয়োজন নেই।যদি তুমি ইন্দ্রকে বধ কর তবে দেবতাগণ তোমার প্রতি রুষ্ট হবেন।তুমি যুদ্ধ হতে ক্ষান্ত হও।যারা বেদজ্ঞানী তারা কখনো হিংসা করেনা।আমার কথায় তুমি ক্ষান্ত হও। উপদেশ দিয়ে ভগবান খগরাজ চড়ে তাঁর বৈকন্ঠ ধামে চলে গেলেন।তারপর পৃথুরাজ প্রজাগণকে ধর্ম শিক্ষা দিয়ে গঙ্গার তীরে নিবিঘ্নভাবে পুনযজ্ঞ সমাপন করলেন।ব্রহ্মার মানস পুত্র সনৎকুমার পৃথুরাজাকে দরশন দেন।পৃথুরাজ ভূতলে লুটায়ে অষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন। বসিরার জন্য দিব্য সিংহাসন দিলেন।বিবিধ বচনে তার স্তব করলেন।ব্রহ্মার নন্দন তখন বললেন”,আমি যোগবলে জ্ঞাত আছি যে তুমি পরম ধামিক।তুমি অনেক যজ্ঞ করেছ। শ্রাস্ত্রের বিধানমতে তুমি তার অক্ষয় ফল লাভ করবে। পৃথৃরাজ বলেন”,বিষ্ণুর উদ্দেশ্য যজ্ঞ করি। না হলে মুক্তি পাব কি করে।”শুনে সনৎকুমার বলেন”,যজ্ঞে ক্ষান্ত হও।দেহ ও স্ত্রীপুত্র্র্র্রাদির মোহ ত্যাগ করে আমার সাথে চল।অচিরেই তুমি মুক্তি পাবে।সনৎকুমারের বাক্য শ্রবণ করে মুনির সংগে বনে প্রবেশ করলেন।তথায় পৃথুরাজ যোগবলে দেহ ত্যাগ করে মনের হরিষে বৈকন্ঠ ভূবনে যাত্রা করলেন।
Previous
Next Post »

বেদ সম্পর্কে সামান্য ধারণা

শ্রীমদ্ভগবতগীতার সম্পূর্ণ শ্লোকের অর্থ

বিবিধ


মহাভারতের প্রধান প্রধান চরিত্র