ভগবান শ্রীবিষ্ণুর দ্ধারপালদ্বয়ের বৈকুন্ঠ হতে মর্ত্ত্যলোকে আগমন

ভগবান শ্রীহরি তখন বললেন," তাপসনিকর। তোমরা শোন এ দ্ধারপালদ্বয়ের পরিচয়। এদের নাম জয় ও বিজয়। এরা আমার পার্শ্বদ এবং অতি ভক্তিমান। কিন্তু তারা তমোগুনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে আমাকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দিয়ে উচিৎ কাজ করেছে। কিঙ্কর(ভৃত্য বা চাকর) হয়ে যদি কর্তব্য কাজে অবহেলা করে অবশ্যই তাদের সমুচিৎ শিক্ষা পাওয়া উচিৎ। দেবতার মত আমি ব্রাহ্মণদের স্নেহ করি। তাদেরকে আমি হৃদয়ে ধারণ আমি ব্রাহ্মণদের মুখে ভোজন করি। আমার অঙ্গ সর্বদা দ্বিজময়। সকল দোষ আমি ক্ষমা করতে পারি। কিন্তু দ্বিজাতীর অপমান কখনো সহ্য করতে পরি না। আমার ভৃত্যু আপনাদের অপমান করেছে। তা আমার হৃদয়ে লেগেছে। কারণ কোন ভৃত্যু কোন অপরাধ করলে কার ভৃত্য সে তা সকলে আগেবলে।যার ভৃত্য তাকে সবাই দোষে। ভৃত্য সহ প্রভূ অপরাধী হয়।ধবল রোগে যেমন সারা অঙ্গ নষ্ট হয় তেমনি প্রভু দোষী হয় ভুত্যের কারণে। আর একটি কথা বলি শোন তাপসনিকর। তা হলে বুঝতে পারবে আমার স্বরুপ বচন। এই কারণেই আমার বৈকুষ্ঠেবাস। আমার পবিত্র নাম স্মারণ করলে আচন্ডাল পূত হয়।বিপ্রের মুখে আমি আহার করি আর তাই আমার মন তৃপ্তি হয়। কমলা আমার খুবই প্রিয় তবুও বিপ্রের সমান নয়। এমন বিপ্রের সাথে যারা মন্দ আচরণ করেন তাদের শেষকালে নিরয়(নিরক) জোটে। ত্রিলোকের মধ্যে বিপ্র সতত পূজ্য। তাদের যারা ভক্তি করেন না তাদরে দূগর্তি বর্ননা করার মত নয়। আমার পাদোদক মস্তকে ধারণ করে পশুপতি( শিব) সদা আনন্দে বেড়ান। ব্রহ্মা আদি সুরগণ(দেবতাগণ) আমার চরণ লাভের আশায় অনুক্ষণ ধ্যান মগ্ন থাকেন। সেই আমি বিপ্রপদ-ধুলির জন্য ব্যাকুল হয়ে ভ্রমন করি। বিপ্রপদ-রজ গ্রহণ করে আমি কিরীটে ধারণ করি। এমন বিপ্রের প্রতি যারা অসৎ আচরণ করে বার অপমান করে আমার রোষ থেকে তাদের পরিত্রান নেই। দুগ্ধবতী ধেনু , ব্রাহ্মাণ-নিকর আর সহায় জীব যত এ সংসারে তারা সবাই আমার প্রিয়। এদের যারা অপমান করে তারা সকলই মহাপাপী। এবং এদের শেষ স্থান হয় নিরয়। বিপ্র যদি কর্কশ ভাষায় কথা বলে তাও ক্ষমা করবে তাপসনিকর। আমি সর্বদা বিপ্রের বশগ( অধীন)। আমার এ দুই ভৃত্য গর্বের ভরেতে বিপ্রের মান হরণ করল। অবশ্যই তারা উচিৎ শিক্ষা পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ওহে মুনিগণ। মর্ত্ত্যলোকে অসুর যোনীতে এরা জন্ম গ্রহণ করে শক্রভাবে মুক্ত হয়ে আবার তারা শাপ মুক্ত হয়ে এখানে ফিরে আসবে। আপনারা তাদেরকে যে অভিশাপ দিলেন তা আমার বাসনাকেই পূর্ণ করেছে। তখন সনকাদি মুনিগণ কহিতে লাগিলেন," হে ঈশ্বর! দীন দাসে এত কৃপা তোমার। তুমি শ্রেষ্ট তুমি অনন্ত, অনাদি। তোমা হতে সমগ্র জগত সৃষ্টি হয়েছে। তুমিই একমাত্র এ জগতের পতি। তুমিই একমাত্র গতি। তুমিই এ বিশ্ব সংসার রক্ষা করছ। আবার তুমিই অন্তকালেই এ বিশ্ব সংসার ধ্বংস করবে। তোমার ইচ্ছাতেই আবার সৃজন হবে এ ব্রহ্মান্ড। তোমার চরণে মতি থাকে যেন সর্বক্ষণ। নিমেষে পতন হয় ব্রহ্মার আবার কোটি ব্রহ্মা সৃষ্টি হয় তোমার ভ্রুভঙ্গেতে। সেই প্রভু তুমি অনন্ত,অনাদি। তোমা হতে সৃষ্টি হয় দেবদেবী। তুমি সমগ্র জগতে অব্যক্তরুপে ব্যাপ্ত আছ। তোমার প্রভাব বর্নিতে পারে এমন কোন জন আছে ত্রিভুবনে। ব্রহ্মা শিব আদি যারা তোমার স্তুতিবাদে কোন কিছু করতে সক্ষম হন না। সে মহাপুরূষ তুমি এ তিন ভুবনের। প্রকৃতি-অতীত তুমি। তোমার কৃপায় দ্বিজাতিনিকর অসীম শক্তি শালী এবং মহাতেজোময়। তোমার পদতলে বার বার নমস্কার করি। দাসের নিকট দৈন্য প্রকাশ করায় সংকুচিত আমারদের চিত্ত। আমাদের রোষ আর এখন নেই। আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়েছে। তোমার যা ইচ্ছা আমাদেরকে আদেশ কর। কারণ তুমি জগতে রক্ষাকর্তা। তারপর শ্রহরির পদতলে প্রণাম করে নিজ নিজ স্থানে চলে গেলেন। সনকাদি মুনিগণ নিজ নিজ ধামে চলে যাবার পর শ্রীহরি জয় ও বিজয়কে ডেকে বললেন," তোমরা মন দিয়ে শোন। বিপ্রগণ তোমাদেরকে অভিশাপ দিয়েছে। বিপ্রদের অভিশাপ কখনও মিথ্যা হয় না। তোমরা আসুরী যোনীতে জন্ম গ্রহণ করে মর্ত্ত্যলোকে গিয়ে কিছুকাল প্রবল প্রতাপের সাথে রাজ্য শাসন করে আবার আসিবে বৈকুন্ঠে ফিরে। তিন জন্ম শক্রভাব ধারণ করলেই দুজন উদ্ধার পাবে এবং তা হলেই বিপ্রশাপ মোচন হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন লক্ষ্মীপতি লক্ষ্মীর সহিত নিজ ধামে প্রবেশ করলেন। দ্ধারপালদ্বয় দুইজন শ্রীভ্রষ্ট হয়ে নক্ষত্র সম ভূতরে পতিত হন। চারিদকে হাহাকার উঠিল। দিতির উদরে জনম নিল। তাদের শরীর অপূর্ব তেজ ধারণ করিল। সেই তেজে চন্দ্র সূর্য হীনতেজ হলো। নেহারিলে হৃদিমাঝে জনমে বিস্ময়। সে হেতু তোমরা ম্লান হয়েছ। কশ্যপের তেজে দুই দৈত্যের জনম। আমার সাধ্য নাই তাদেরকে নিধন করার। যার ইচ্ছায় এ দুজনের জন্ম সেই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের যিনিই কারণ তার কাছে তোমারা সকলে যাও। ব্রহ্মার কথা শ্রবণ করে সুরগণ নিজ নিজ ধামে চলে গেল। <br>পতির মুখে দিতি শুনতে পান পুত্রে বারতা। তার বাক্যতে দিতি হৃদে পান ব্যাথা। জয়-বিজয়ের জন্ম ক্রমেতে হলো। একশত বর্ষ দিতি জঠর ধরিল। একশত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে দিতি যজম দুই সন্তানে জন্ম দিল। একজনের নাম হিরণ্যাক্ষ অপর জনের নাম হিরণ্যকশিপু। যে সময় দুজনের জন্ম হয় সেই সময় ভূতলে নানা অমঙ্গল ঘটতে থাকে। ধরা ঘন ঘন কাপিতে লাগিল। রক্ত বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। চারিদিকে হঠাৎ করে অগ্নিরাশি উঠে আসে। আকাশ হতে উল্কাপাত শুরু হয়। প্রচন্ড বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। চারিদিকে ফেৎকার রব উঠে। বৃক্ষ উপড়িয়া পড়ে। আকাশ ধূলায় ছেয়ে গেল। বিদ্যুৎ চমকাতে আরম্ভ করল। চারিদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন যেন অমাবশ্যা শুরু হলো। সাগর গর্জন করছে। চন্দ্র সূর্য রাহুগ্রস্থ হয়। বিনা মেঘে বজ্রপাত। উল্কামুখী শিবাগণ(খেকশিয়ালী) দিবাভাগে শব্দ করে। দিবাভাগে পেচক সঘনে( ঘন ঘন, বারবার) রোদন করে। সারমেয়গন(কুকুর) উচ্চস্বরে রোদন করছে। গর্দভেরা চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়। পাখীরা নীড় ছেড়ে ভয়ে পালাল। পশুগণ ঘন ঘন মলমূত্র ত্যাগ করছে। গাভীর দুগ্ধ যেন হয় শোনিত-বরণ( রক্ত বর্ণ)। দেবতা-বিগ্রহ-চক্ষু নীরময়। দুষ্ট গ্রহগুলি শুভগ্রহের সাথে দ্বন্ড করে সর্বক্ষণ। গ্রহগন ঘোর যুদ্ধ করে সর্বক্ষণ। প্রলয় ভেবে সকলের হৃদয় হয় কাতর। এ ভাবে দিতির গর্ভে দৈত্যদ্বয় জন্ম গ্রহণ করে দিনে দিনে পাহাড় সম দেহ হয়।তার তেজের কাছে চন্দ্র সূর্যের কিছু নয়।বিপুল কিরীটি তার মাথায় যেন ঠেকেছে গিয়ে গগনের গায়। সন্তানের এরুপ দেহ দেখে পতিব্রতা দিতি খুবই চিন্তিত। কশ্যপ মুনি তাদের নাম রাখেন হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু।

No comments:

Post a Comment